সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৬ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জ পাকহানাদার মুক্ত দিবস পালন
  •   যৌথ অভিযানে কচুয়া থানার লুণ্ঠিত পিস্তলের ৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার
  •   দৈনিক ইনকিলাবের প্রশাসনিক কর্মকর্তা শহীদুল্লাহ্ মিজির দাফন সম্পন্ন
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা

প্রকাশ : ১৭ জুন ২০২৩, ০০:০০

মাঠ পর্যায়ের সংবাদকে হট কেক বানিয়ে যেভাবে পৌঁছে দেয়া হয় পাঠকের কাছে--

মাঠ পর্যায়ের সংবাদকে হট কেক বানিয়ে যেভাবে পৌঁছে দেয়া হয় পাঠকের কাছে--
উজ্জ্বল হোসাইন

২০১৪ সালের ডিসেম্বরে যখন চাঁদপুর কণ্ঠে যোগদান করি তখন চাঁদপুর প্রেসক্লাব সড়কের সম্মুখস্থ রেড ক্রিসেন্ট ভবনের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলা পর্যন্ত বিস্তৃত ছিলো চাঁদপুর কণ্ঠ অফিস। আমি এবং পত্রিকার সহ-সম্পাদক নজরুল ইসলাম স্বপন ভাই একই কক্ষে বসতাম। পাশেই ম্যানেজার সেলিম রেজা ভাই এবং পাশের কক্ষে যুগ্ম সম্পাদক গিয়াসউদ্দিন মিলন ভাই বসতেন। তৃতীয় তলার দক্ষিণ পাশে বিশাল কক্ষে প্রধান সম্পাদক কাজী শাহাদাত আংকেল বসতেন। তবে সবসময় পত্রিকা সংশ্লিষ্ট বা বাইরের কেউ কক্ষে প্রবেশ করতেন না। প্রধান সম্পাদক কাজী শাহাদাত আঙ্কেল বেল বাজালে অফিস পিয়ন তাপস বা শিমুল ছুটে যেতো। আর অফিসিয়াল কাউকে প্রয়োজন হলে আংকেল নিজেই ইন্টারকমে কল করতেন। তৃতীয় তলার মাঝখানে নির্বাহী সম্পাদক মির্জা জাকির ভাই, পাশে বার্তা সম্পাদক এএইচএম আহসান উল্লাহ ভাই এবং ভেতরে কম্পিউটার বিভাগ। এভাবেই সাজানো গোছানো একটি অফিস ছিলো। তবে দ্বিতীয় তলায় রিপোর্টারগণ এসে রাফ কাগজে যে নিউজগুলো লিখতেন, সেগুলো প্রাথমিকভাবে সম্পাদনার পর চলে যেতো কম্পিউটার বিভাগে। সেখানে টিটু রায়, সাব্বির-১, সাব্বির-২, রিয়াজ উদ্দিন ও জয়ন্ত কাজ করতেন। তারা কম্পিউটার কম্পোজে এক একজন ছিলেন দুর্দান্ত। কপি হাতে পেয়ে মুহূর্তে কম্পিউটার কম্পোজ করে নির্বাহী সম্পাদক ও বার্তা সম্পাদকের টেবিলে পৌছে দিতেন। এরপর রুটিন অনুযায়ী একেকজনের দায়িত্ব থাকতো প্রুফ রিডিং করার। নিউজগুলো প্রুফ রিডিং শেষ হয়ে গুরুত্বপূর্ণ নিউজগুলো প্রধান সম্পাদকের কক্ষে যেতো, আর বাকিগুলো নির্বাহী সম্পাদক ও বার্তা সম্পাদক মিলে ট্রেসিং অর্ডার দিতেন।

রাত ১০-১১টা পর্যন্ত চলতো এসব কর্মযজ্ঞ। কখনো কখনো কোনো স্পেশাল ঘটনার জন্যে ভোররাতও হয়ে যেতো। তবে গভীর রাত পর্যন্ত সবাই অফিসে থাকতেন না। যেদিন যার পেস্টিং থাকতো সেদিন তিনিই নৈশকালীন দায়িত্ব পালন করতেন। রাত ১১টার মধ্যে পেস্টার জাহাঙ্গীর আলম বা আঃ মালেক পেস্টিং টেবিল সাজাতেন। তারা চিকন স্কচটেপ ও নিউজের প্রিন্টকৃত ট্রেসিং পেপার কেটে রেডি করতেন। এরপর ১১টার পর শুরু হতো নিউজ পেস্টিং করার কাজ। অবশ্য আমি সে সময় তৃতীয় তলায় খুব একটা যেতাম না। প্রধান সম্পাদক মহোদয় মাঝে মাঝে কিছু অ্যাসাইনমেন্ট দিতেন, সেগুলো নিয়েই থাকতাম। বাকি সময়টা অনলাইনে নিউজ আপলোড বা সোস্যাল মিডিয়াতে নিউজ শেয়ার করতাম। এছাড়া ইলাস্ট্রেটরে বিজ্ঞাপন তৈরি করতাম। আমার একটাই অ্যাসাইনমেন্ট থাকতো কম্পিউটার বিভাগে সকলে যেখানে শেষ করতো, আমি সেখান থেকে শুরু করতাম। অর্থাৎ আমি চাঁদপুর কণ্ঠে যোগদানের পর থেকে সিস্টেম উন্নয়নে একের পর এক প্রচেষ্টা চালিয়েছি। হঠাৎ একদিন কম্পিউটার বিভাগে শূন্যতা দেখা দিলে প্রধান সম্পাদক মহোদয় আমাকে বললেন, আজ থেকে তুমি কম্পিউটার বিভাগেও কাজ করো। সেই থেকে কম্পিউটার বিভাগেও যুক্ত হলাম। কাজের মাঝে আনন্দ ও বেদনা দুটোই আছে। কারণ আমার এই পেশার বাইরে আমার মূল পেশা আছে। সেখানে আমাকে সকাল ৮টায় অফিসে যেতে হয়। তাই যেদিন নৈশকালীন দায়িত্বে থাকতাম, সেদিন আমার কষ্ট আরো বেড়ে যেতো। কিন্তু রাতের কষ্ট ভুলে যেতাম যখন সকাল বেলা নিজের হাতে গোছানো পত্রিকাটি হাতে পেতাম।

একদিনের ঘটনা আমার সারাজীবন মনে থাকবে। সেদিন আহসান উল্লাহ ভাইসহ আমার নৈশকালীন দায়িত্ব ছিলো। কাজ প্রায় শেষদিকে। এমন সময় আমাদের কাছে খবর আসলো বঙ্গবন্ধু সড়কে আগুন লেগেছে। তখন আহসান ভাই বিভিন্ন দিকে আমাদের প্রতিনিধিদের নিউজটি কভার করার জন্য বললেন। কিন্তু নিউজ আসছিল না। অবশেষে পেস্টার জাহাঙ্গীর আলমের মোটরসাইকেলে করে আহসান উল্লাহ ভাইসহ আমরা বঙ্গবন্ধু সড়কে চলে আসলাম। নিজের চোখে যা দেখলাম তা বর্ণনা করার মতো নয়। অনেকেই আগুনে ঝলসে গেছে। রাতে ছবি ও নিউজের তথ্য সংগ্রহ করে আমরা অফিসে যখন ফিরে গেলাম রাত তখন ২টা বাজে। সেই নিউজ কম্পোজ ও ট্রেসিং বের করে পেস্টিং করতে করতে ভোরে ফজরের আজান দিয়ে ফেলেছে। পেস্টার ট্রেসিং নিয়ে প্রেসে (বিপণীবাগ আনন্দ অফসেট প্রেসে) চলে গেলেন। আর আমি আর আহসান ভাই যার যার বাসায় চলে গেলাম। তখন থেকে মনে মনে ভাবলাম, এভাবে ট্রেসিং বের করে কেটে কেনো পত্রিকা বের করতে হবে? মাথায় আসলো এই কাজটিতো কম্পিউটারে ইলাস্ট্রেটরের মাধ্যমেই করা যায়। বিষয়টি প্রধান সম্পাদক মহোদয়কে জানালাম। সাথে সাথে এভাবে পেজ মেকাপের উপকারিতাও জানালাম। তিনি বললেন, তুমি একা কীভাবে করবে? তোমার সাথে আরেকজন লাগবে। তখন সিদ্ধান্ত হলো, কম্পিউটার অপারেটরদের দু-একজনকে ইলাস্ট্রেটর বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করাতে হবে। আমার যেহেতু পূর্বে কম্পিউটারের গ্রাফিক্স ডিজাইন সম্পর্কে অভিজ্ঞতা ছিলো, তাই কম্পিউটার বিভাগের মোঃ আলআমিন হোসাইন ও কাজী আজিজুল হাকিম নাহিনকে এ বিষয়ে দক্ষতা অর্জনের জন্যে পত্রিকা অফিসের নিজস্ব খরচে মাই কম্পিউটারের আসিফ ইসলামের কাছে পাঠানো হলো। কয়েক মাস পরে সহকর্মী আল-আমিন বললো, পেজ মেকাপ করতে পারবে। প্রধান সম্পাদক মহোদয়কে বললাম, প্রথম দিন যেহেতু রিস্ক নিবো না, দুটো অপশন রাখবো। যেই কথা সেই কাজ। শুরু করলাম আল-আমিনকে নিয়ে কম্পিউটারে পেজ মেকাপের কাজ। প্রথমদিন পেজ মেকাপে আমাদের সময় একটু বেশি লেগেছিলো। চাঁদপুর কণ্ঠ আরেক নতুন অধ্যায়ে যুক্ত হলো। তবে পেজ মেকাপে কোনোভাবেই সহকর্মী মোস্তফা কামাল সুজন ও কাজী আজিজুল হাকিম নাহিনকে আনতে পারলাম না। কাজটি করার জন্যে একজন যোগ্য সহকর্মী হিসেবে স্নেহের আল-আমিনকে পেয়েছি। তাই রুটিন করে আমি ও সহকর্মী আল-আমিন পেজ মেকাপের কাজটি করে চলছি। এতে প্রয়োজন নেই পেস্টিংয়ের মতো ঝামেলা, সহজেই একজন শিল্পীর তুলির আঁচড়ে যেমন দৃশ্য ফুটে উঠে, ঠিক তেমনি একজন ডিজাইনারের মননশীলতায় এলোমেলো কথামালা সাজিয়ে পাঠকদের কাছে পৌঁছে দেয়া হয়। মাঠ পর্যায়ের সংবাদকে হট কেক হিসেবে পাঠকের হাতে পৌঁছে দেয়ার নেপথ্যে কত যে গল্প-কাহিনী জড়িত। অন্যরা যেটি চিন্তা করে না, চাঁদপুর কণ্ঠ সেটি বাস্তবায়ন করে ফেলে। আর এজন্যেই সেরা দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠ।

পত্রিকার পেজ মেকআপ যে এতো গুরুত্বপূর্ণ তা এ কাজে যুক্ত না থাকলে বুঝতে পারতাম না। একটি ‘সস্তা’ পত্রিকাকেও হট কেকের মতো বানিয়ে বাজারে বিক্রির উপযোগী করে তুলতে পারে দুর্দান্ত পেজ মেকআপ বা পৃষ্ঠাসজ্জা। পেজ মেকআপের গুরুত্ব নিয়ে প্রথমে একটি কৌতুক গল্প শোনাই। নববিবাহিত স্বামী-স্ত্রীর এক চোট ঝগড়া হলো। স্ত্রী অভিমানে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিলেন। এরপরই স্ত্রী মেকআপের বাক্স নিয়ে বসেছেন সাজগোজ করতে। স্বামী খুবই সুরসিক। তিনি পরিস্থিতি বুঝে এক পর্যায়ে ইয়র্কার দিলেন স্ত্রীর দিকে। আত্মহত্যা যেহেতু করতেই যাবে, সেখানে মেকআপের কি আদৌ কোনো দরকার আছে গো? স্ত্রী এমনিতেই খেপে টনটন করছিলো। তারপরও এমন উস্কানিমূলক বক্তব্যে রীতিমত হুঙ্কার দিয়ে উঠলেন। বললেন, আরে মূর্খ! আমি আত্মহত্যা করলে কালকে পত্রিকায় আমার যে ছবি ছাপা হবে, সে ছবি খারাপ ছাপা হলে তোমার তাতে খুব শান্তি লাগবে, তাই না? তুমি এরকমই চাও ? এই যে আজকের যুগের নব প্রজন্মও আত্মহত্যার আগে মেকআপ করার গুরুত্ব বুঝে গেছে, তাতে মেকআপের মাহাত্ম্যই আসলে ফুটে উঠেছে।

মেকআপ তাই সর্বত্র, সর্বব্যাপী এবং সর্বগ্রাসী হয়ে উঠেছে দিনে দিনে। নিজের চেহারার অসঙ্গতি লুকাতে আমরা মেকআপ করি। পাসপোর্টের জন্য একটা ছবি তুলতে হবে, তার জন্যেও মেকআপ করি। একটা সেলফি তুলতে হবে, মেকআপ করি, একটু বাইরে বেড়াতে যাবো আমরা, মেকআপ করি। আসলে মেকআপ আমাদের মনে স্বস্তি এনে দিয়েছে। নিজের দুর্বলতাকে লুকানোর এমন একটা আশ্রয় অন্য কোথাও নেই। মেকআপ অন্যের দৃষ্টি কাড়তে যেমন সাহায্য করছে, তেমনি দুর্বলতা ঢাকতেও এর জুড়ি নেই। পত্রিকার মেকআপও সেই অর্থে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নতুন পত্রিকা হলেতো কথাই নেই।

পরিশেষে গত ২৯ বছর পথ চলে ৩০ বছরে চাঁদপুর কণ্ঠের পদার্পণে প্রত্যাশা, আমি যেনো বাকি সময়টুকু এই পত্রিকার সাথে সংশ্লিষ্ট থাকতে পারি।

লেখক : উজ্জ্বল হোসাইন, সিস্টেম ডেভলপার, দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠ।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়