প্রকাশ : ১৫ এপ্রিল ২০২২, ২৩:০৫
বালু সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ : সংঘর্ষের আশংকা
মুন্সিগঞ্জের সীমানায় ইজারা কিন্তু বালু উত্তোলনে ঢুকে পড়ছে মতলবের মেঘনায়
মুন্সিগঞ্জ জেলার সদর উপজেলার চর আবদুল্লাহ বালুমহল ইজারা নিয়ে সেখানেই বালু উত্তোলন করার কথা ইজাদারের। কিন্তু মুন্সিগঞ্জের সীমানায় ইজারা নিয়ে বালু উত্তোলনে ঢুকে পড়ছেন চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার ষাটনল এলাকার মেঘনা নদীতে।
|আরো খবর
চাঁদপুর ও মুন্সিগঞ্জ জেলার মেঘনা নদীর সীমানা নির্ধারণ করে দেওয়া হলেও মুন্সিগঞ্জের বালুমহল ইজারাদারের পক্ষ থেকে তা মানা হচ্ছে না। তারা রাত-দিন যখনই সুযোগ পাচ্ছে চাঁদপুর জেলায় ঢুকে বালু উত্তোলন করছেন। বালু উত্তোলন করার কারণে তীব্র নদী ভাঙনের হুমকির মুখে পড়েছে চরের আশ্রয়ণ প্রকল্প, মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ, ইকোনমিক জোন’সহ চরাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকার বাড়ি-ঘর ও ফসলি জমি।
প্রদক্ষদর্শিরা জানান, মতলব উত্তর উপজেলার ষাটনল ইউনিয়নের বাবু বাজার সংলগ্ন মেঘনা নদীতে অবৈধভাবে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করে যাচ্ছে একটি চক্র। ভলগেট, কার্গো ও ট্রলারযোগে বালু ভর্তি করে নিয়ে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। প্রতিবাদ করলে সাময়িক বন্ধ রাখে, তারপর আবার শুরু করে। তারা যেনো চোর-পুলিশ খেলে। এ এলাকায় চক্রটির নেই কোনো বালু উত্তোলনের অনুমতি বা অনুমোদন। পেশি শক্তি ব্যবহার করে প্রতিদিন কেটে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকার বালু। সরকার বঞ্চিত হচ্ছে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব থেকে। অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ করতে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় থেকে একাধিকবার নির্দেশ দেয়া হলেও তা কার্যক্রর হয়নি। বালু উত্তোলন করার কারণে তীব্র ভাঙনের হুমকির মুখে পড়েছে চরের আশ্রয়ণ প্রকল্প, মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ, ইকোনমিক জোন’সহ চরাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকার বাড়ি-ঘর ও ফসলি জমি।
১৪২৯ বাংলা সনে চর আবদুল্লাহ বালুমহল এটি মুন্সিগঞ্জ জেলার মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার ইউনিয়নে অবস্থিত। গত ৩ এপ্রিল ২০২২ইং তারিখে মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার কোর্টগাঁও গ্রামের হাজী মো. ফারুক ৩৭ লাখ ২০ হাজার টাকার বিনিময়ে জেলা বালুমহল ও মাটি ব্যবস্থাপনা কমিটি ইজারা প্রদান করেন। ৬ এপ্রিল ২০২২ইয় তারিখে মুন্সিগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ০৫.৩০.৫৯০০.৩০৩.০৪.০০১.১৭-১০২ নং স্মারকে রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর মো. এরশাদ মিয়া স্বারিত পত্রে এ ইজারা দেয়া হয়।
মেঘনা নদীতে চাঁদপুর-মুন্সিগঞ্জ জেলার সীমানা নির্ধারণ করা ছিল না। চাঁদপুর জেলার মতলব উত্তর উপজেলার চর চারআনি মৌজা ও মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার চর আব্দুল্লাহ মৌজার সীমানা নির্ধারণ করার জন্য চাঁদপুর জেলা প্রশাসন ও মুন্সিগঞ্জ জেলা প্রশাসন উদ্যোগ গ্রহণ করে।বুধবার (১৩ এপ্রিল) চাঁদপুর ও মুন্সিগঞ্জ জেলার মেঘনা নদীর সীমানা নির্ধারণ করা হয়। মেঘনা নদীর মাঝখানে দুই জেলার উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা পরিমাপ করে সীমানা নির্ধারণ সীমানা বয়া ও লাল নিশান দেন। মতলব উত্তর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) গাজী শরিফুল হাসান, সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. হেদায়েত উল্লাহ, মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার সহকারী কমিশনর (ভূমি) কামরুল হাসান মারুফ, সার্ভেয়ার বাদশাহ মিয়া, মতলব উত্তর উপজেলার সার্ভেয়ার আবুববর সিদ্দিক, মতলব উত্তর উপজেলার ষাটনল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফেরদাউস আলম সরকার’সহ গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে চর আব্দুল্লাহ বালুমহলের সীমানা নির্ধারণ করা হয়।
চর আব্দুল্লাহ বালুমহলের সীমানা নির্ধারণ করা হলেও এখনও মতলব উত্তর উপজেলার ষাটনল ইউনিয়নের বাবু বাজার সংলগ্ন মেঘনা নদীতে অবৈধভাবে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করে যাচ্ছে বলে দাবী এলাকাবাসীর।এ নিয়ে ক্ষুব্ধ সাধারণ মানুষ। সাধারন মানুষ বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ঝড় তুলেছে। তারা নদীতে নেমে বালু উত্তোলনকারীদের দাওয়া করছেন। বালু উত্তোলনকারীদেও পক্ষ থেকেও নদীতে মহড়া দেওয়া হচ্ছে। বালু উত্তোলন বন্ধ না হলে আগামীতে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ও প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে। অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ এবং উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে দ্রুত আরো কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে ভাঙন রোধ করা যাবে না। বাঁধবাসী দ্রুত অবৈধ বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, কোস্টগার্ড ও নৌ-পুলিশের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।