সোমবার, ১৬ জুন, ২০২৫  |   ২৯ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ১৬ জুন ২০২৫, ১৩:৫৫

বিগত ঈদের তুলনায় সড়ক দুর্ঘটনা ২২.৬৫ শতাংশ, নিহত ১৬.০৭ শতাংশ, আহত ৫৫.১১ শতাংশ বেড়েছে

ঈদুল আজহায় ৩৭৯ টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৯০ জন নিহত ১১৮২ জন আহত : যাত্রী কল্যাণ সমিতি

অনলাইন ডেস্ক
ঈদুল আজহায় ৩৭৯ টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৯০ জন নিহত ১১৮২ জন আহত : যাত্রী কল্যাণ সমিতি

পবিত্র ঈদুল আজহায় সারাদেশে ৩৭৯ টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৯০ জন নিহত ও ১১৮২ জন আহত হয়েছে। একই সময়ে রেলপথে ২৫টি দুর্ঘটনায় ২৫ জন নিহত ও ১২ জন আহত হয়েছে। নৌ-পথে ১১টি দুর্ঘটনায় ১২ জন নিহত ও ০৬ জন নিখোঁজ রয়েছে। সড়ক, রেল ও নৌ-পথে সর্বমোট ৪১৫ টি দুর্ঘটনায় ৪২৭ জন নিহত ও ১১৯৪ জন আহত হয়েছে। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির সড়ক দুর্ঘটনা মনিটরিং সেলের প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

১৬ জুন ২০২৫ (সোমবার) সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে যাত্রী কল্যাণ সমিতি আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী এই তথ্য তুলে ধরে বলেন, সড়কে দুর্ঘটনা ও মানুষের যাতায়াতের ভোগান্তি কমিয়ে ঈদযাত্রা স্বস্তিদায়ক করতে হলে ঈদের আগে কমপক্ষে ৪ দিনের সরকারি ছুটি থাকা দরকার। ঈদের যাতায়াত ব্যবস্থাপনা নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রয়োজন। সবার আগে আমাদের গণপরিবহন ও ব্যবস্থাপনার সক্ষমতা বাড়াতে হবে, ছোট যানবাহন মহাসড়ক থেকে উচ্ছেদ করতে হবে। প্রশিক্ষিত দক্ষ চালক, ফিটনেসবিহীন যানবাহন, মানসম্মত সড়কের পাশাপাশি আইনের সুশাসন নিশ্চিত করা জরুরি। যাত্রী কল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, দেশের সড়ক-মহাসড়কের বৃষ্টির কারণে ছোট-বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এসব গর্তে বেপরোয়া যানবাহন দুর্ঘটনায় পতিত হয়েছে। ঈদের পরে বেশিরভাগ দুর্ঘটনা বিরামহীন ও বিশ্রামহীনভাবে যানবাহন চালাতে গিয়ে সংঘটিত হয়েছে। ফলে এসব দুর্ঘটনায় সিংহভাগ খাদে পড়ে ও দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকের পেছনে লেগে যাওয়ার ঘটনা বেশি ঘটেছে। অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য ও পথে পথে যাত্রী হয়রানি এবারের ঈদেও চরমে ছিলো। গণপরিবহনগুলোতে ঈদকে কেন্দ্র করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্যের কারণে বাসের ছাদে, ট্রেনের ছাদে, খোলা ট্রাকে, পণ্যবাহী পরিবহনে যাত্রী হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দরিদ্র লোকজনদের ঈদে বাড়ি যাতায়াত করতে হয়েছে।

ঈদযাত্রা শুরুর দিন ৩১ মে থেকে ঈদ শেষে কর্মস্থলে ফেরা ১৪ জুন পর্যন্ত বিগত ১৫ দিনে ৩৭৯ টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৯০ জন নিহত ও ১১৮২ জন আহত হয়েছে। বিগত ২০২৪ সালের ঈদুল আজহায় ৩০৯ টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৩৬ জন নিহত ও ৭৬২ জন আহত হয়েছিলো। বিগত ঈদুল আজহার সাথে তুলনা করলে সড়ক দুর্ঘটনা ২২.৬৫ শতাংশ, প্রাণহানি ১৬.০৭ শতাংশ ও আহত ৫৫.১১ শতাংশ বেড়েছে।

প্রতিবেদনে দেখা যায়, বরাবরের মতো এবারও দুর্ঘটনার শীর্ষে রয়েছে মোটরসাইকেল। এবারের ঈদে ১৩৪ টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১৪৭ জন নিহত ও ১৪৮ জন আহত হয়েছে। যা মোট সড়ক দুর্ঘটনার ৩৫.৩৫ শতাংশ। এই সময় সড়কে দুর্ঘটনায় আক্রান্ত ৬১ জন চালক, ৫০ জন পরিবহন শ্রমিক, ৫৮ জন পথচারী, ৪০ জন নারী, ৩০ জন শিশু, ৩২ জন শিক্ষার্থী, ০৭ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, ৫ জন শিক্ষক, ১ জন চিকিৎসক, ১ জন প্রকৌশলী, ০৮ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীর পরিচয় মিলেছে।

সংঘটিত দুর্ঘটনা বিশ্লেষণে দেখা যায়, মোট যানবাহনের ২৬.৫৪ শতাংশ মোটরসাইকেল, ১৯.১১ শতাংশ ট্রাক-কাভার্ডভ্যান, ১৮.৫৮ শতাংশ বাস, ১৩.৬২ শতাংশ ব্যাটারীচালিত রিক্সা, ৭.৪৩ শতাংশ কার-মাইক্রো, ৭.৬১ শতাংশ নছিমন-করিমন ও ৭.০৭ শতাংশ সিএনজিচালিত অটোরিক্সা এসব দুর্ঘটনায় জড়িত ছিলো। দুর্ঘটনার ২৮.২৩ শতাংশ মুখোমুখি সংঘর্ষ, ৪০.৬৩ শতাংশ পথচারীকে গাড়ি চাপা দেয়ার ঘটনা, ২০.০৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ার ঘটনায়, ০.৭৯ শতাংশ ট্রেন-যানবাহনে ও ১০.২৯ শতাংশ অন্যান্য অজ্ঞাত কারণে দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়েছে।

দুর্ঘটনার ধরণ বিশ্লেষণে দেখা গেছে, মোট সংঘটিত দুর্ঘটনার ৩৭.২০ শতাংশ জাতীয় মহাসড়কে, ২৮.২৩ শতাংশ আঞ্চলিক মহাসড়কে, ২৮.৪৯ শতাংশ ফিডার রোডে সংঘটিত হয়। এছাড়াও সারাদেশে সংঘটিত মোট দুর্ঘটনার ৪.৪৮ শতাংশ ঢাকা মহানগরীতে, ০.৭৯ শতাংশ চট্টগ্রাম মহানগরীতে ও ০.৭৯ শতাংশ রেলক্রসিংয়ে সংঘটিত হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন প্রচার সম্পাদক মোহাম্মদ আলাউদ্দিন মাসুদ, সংগঠনের অর্থ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান রাসেল, সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ ইয়াছিন চৌধুরী, নির্বাহী কমিটির সদস্য অধ্যক্ষ রফিকা আফরোজ, ড্রাইভারস ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মো. বাদল আহমেদ, জিএম মোস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ।

যাত্রী কল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণে ঈদে সংঘটিত দুর্ঘটনার কারণসমূহ : ১. ঈদের আগে ছুটি কম থাকায় একসাথে বেশি মানুষ রাস্তায় নামায় বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি; ২. সড়ক-মহাসড়কে মোটরসাইকেল, ব্যাটারিচালিত রিক্সা, অটোরিক্সা অবাধে চলাচল; ৩. জাতীয় মহাসড়কে রোড সাইন বা রোড মার্কিং, সড়কবাতি না থাকায় হঠাৎ ফিডার রোড থেকে যানবাহন উঠে আসা; ৪. সড়কে মিডিয়ান বা রোড ডিভাইডার না থাকা, সড়কে গাছপালায় অন্ধবাঁকের সৃষ্টি; ৫. মহাসড়কের নির্মাণ ক্রটি, যানবাহনের ক্রটি, ট্রাফিক আইন অমান্য করার প্রবণতা; ৬. উল্টোপথে যানবাহন, সড়কে চাদাঁবাজি, পণ্যবাহী যানে যাত্রী পরিবহন; ৭. অদক্ষ চালক, ফিটনেসবিহীন যানবাহন, অতিরিক্ত যাত্রীবহন; ৮. বেপরোয়া যানবাহন চালানো এবং বিরামহীন ও বিশ্রামহীনভাবে যানবাহন চালানো; ৯. বৃষ্টিতে সড়কের মাঝে গর্তের সৃষ্টি ও ভাঙ্গাচুরা সড়ক।

ঈদে দুর্ঘটনা প্রতিরোধে যাত্রী কল্যাণ সমিতির সুপারিশসমূহ : ১. মোটরসাইকেল ও ব্যাটারিচালিত রিক্সা আমদানি ও নিবন্ধন নিয়ন্ত্রণ করা ; ২. জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে রাতের বেলায় অবাধে চলাচলের জন্যে আলোকসজ্জার ব্যবস্থা করা; ৩. দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ, যানবাহনের ডিজিটাল পদ্ধতিতে ফিটনেস প্রদান; ৪. গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় মহাসড়কে ফুটপাতসহ সার্ভিস লেইনের ব্যবস্থা করা; ৫. সড়কে চাদাঁবাজি বন্ধ করা, চালকের বেতন ও কর্মঘন্টা সুনিশ্চিত করা; ৬. মহাসড়কে ফুটপাত ও পথচারী পারাপারের ব্যবস্থা রাখা, রোড সাইন, রোড মার্কিং স্থাপন করা; ৭. সড়ক পরিবহন আইন উন্নত বিশ্বের আদলে ডিজিটাল প্রযুক্তিতে প্রয়োগ করা; ৮. সারাদেশে উন্নতমানের আধুনিক বাস নেটওর্য়াক গড়ে তোলা, নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধি করা; ৯. মানসম্মত সড়ক নির্মাণ ও মেরামত সুনিশ্চিত করা, নিয়মিত রোড সেইফটি অডিট করা; ১০. মেয়াদোত্তীর্ণ গণপরিবহন ও দীর্ঘদিন যাবৎ ফিটনেসহীন যানবাহন স্ক্যাপ করার উদ্যোগ নেওয়া; ১১. ঈদের আগে ঈদের ছুটি ৪ দিন বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া; ১২. ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ গ্রহণকারী চালকের ওপর চাপিয়ে দেওয়া ভ্যাট ও আয়কর অব্যাহতি দেওয়া।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়