শুক্রবার, ০৮ আগস্ট, ২০২৫  |   ২৮ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ০৭ আগস্ট ২০২৫, ১৫:৫১

জুলাই গণঅভ্যুত্থান

শহীদ আমির হোসেনের মায়ের কান্না থামছেই না

প্রবীর চক্রবর্তী
শহীদ আমির হোসেনের মায়ের কান্না থামছেই না

বাড়িতে থাকলে প্রতিদিন বাড়ির সামনে আদরের ছোট ছেলে শহীদ আমির হোসেনের কবরের সামনে গিয়ে বিলাপ করেন তার মমতাময়ী মা রাহিমা বেগম। মৃত্যুর একবছর পেরিয়ে গেলেও কোনো সান্ত্বনাই এখন পর্যন্ত তার পুত্র হারানোর শোকের বিলাপ থামাতে পারেনি। ক'দিন পর পর আমির হোসেনের বাবা খোরশেদ আলম যখন ছেলের কবরস্থান পরিষ্কার করেন, তখন পাশে দাঁড়িয়ে মায়ের কান্নার রোল প্রতিবেশীদের মনও ভারী করে ফেলে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ৫ আগস্ট রাজধানী ঢাকার উত্তরায় একটি ডেভেলপমেন্ট কোম্পানির গাড়িচালক আমির হোসেন (৩২) শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর সেখানকার লোকজনের সঙ্গে উত্তরা মডেল টাউন এলাকায় বিজয় মিছিলে যোগ দেন। সেখানেই বুকে ও গলায় মোট ৯টি বুলেট বিদ্ধ হয়ে শহীদ হন তিনি। আমির হোসেন ফরিদগঞ্জ উপজেলার সুবিদপুর পশ্চিম ইউনিয়নের বড়গাঁও গ্রামের খোরশেদ আলমের ছেলে। তিন ভাই ও চার বোনের মধ্যে আমির হোসেন তৃতীয়। মা রাহিমা বেগম বলেন, ২০২৪ সালের আগস্টের শুরুতে আমি ও আমার স্বামী চট্টগ্রামে থাকা ছেলেদের বাসায় বেড়াতে যাই। ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে আমার আদরের ছোট ছেলে আমির হোসেন ফোন করে বলে, শেখ হাসিনার গদি নাই, বিজয় মিছিল হচ্ছে, আমিও যাচ্ছি। এটাই তার সাথে আমার শেষ কথা। এরপর সন্ধ্যার পর জানতে পারি, আমার বাবা আর নাই। তিনি আরো বলেন, ছেলে আমার পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তো। ছোট বেলা থেকেই সে ধার্মিক। গেল বছর ঈদুল আজহার পরে বড়ো নাতি ইয়াছিনকে নিয়ে বাড়িতে এসেছিলো। সময় পেলে বাড়িতে আসতো আমাদের সঙ্গে দেখা করার জন্যে। সব সময় ফোন করে খোঁজ নিতো আমাদের। তার বাবার চাকরি চলে যাওয়ায় আমাদের সংসারের সব খরচই দিতো আমার ছেলে। কেন আমার ছেলেকে গুলি করে হত্যা করা হলো তার বিচার চাই। আমির হোসেনের বাবা খোরশেদ আলম (৫৮) এক সময় ঢাকায় একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করতেন। করোনার সময় তিনি চাকরি হারিয়ে বাড়িতে চলে আসেন। এখন বাড়িতেই কৃষি কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। ৫ আগস্ট বিকেলে সর্বশেষ আমাদের সঙ্গে কথা বলে আমির। সন্ধ্যার পরে চট্টগ্রাম থেকেই জানতে পারি, আমার ছেলে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছে। মডেল টাউন এলাকায় মিছিলে গেলে তার গলায় ও বুকে নয়টি গুলি লাগে। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়। তারপর লোকজন তার লাশ উত্তরা মডেল টাউন এলাকার মেডিকেল কলেজ ফর ওমেন এন্ড হসপিটালে নিয়ে যায়। সেখান থেকে আমাকে ফোন করেন হাসপাতালের লোকজন। তিনি জানান, আমির স্থানীয় বড়গাঁও উচ্চ বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছেন। নিজের পছন্দে বিয়ে করেন কর্মস্থল এলাকার পরিচিত কুমিল্লা জেলার লাকসামের মেয়ে জেসমিন আক্তার রুপাকে। তাদের দুই ছেলে। বড়ো ছেলে ইয়াছিন (৪) ও ছোট ছেলে ইব্রাহীমের বয়স দেড় বছর। গ্রামে আমিরের নিজের দুই চালা একটি ঘর থাকলেও স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে থাকতেন আব্দুল্লাপুর এলাকায় একটি ভাড়া বাড়িতে। আমির হোসেন উত্তরা মডেল টাউনের ৪ নম্বর সেক্টরের ডেভেলপমেন্ট কনস্ট্রাকশন লিমিটেড নামে একটি কোম্পানিতে গাড়িচালক হিসেবে কাজ করতেন। তিনি আরও বলেন, ছেলের মৃত্যুর পর ছেলের বউ বাড়িতে চলে আসে নাতিদের নিয়ে। শহীদ আমির হোসেনের স্ত্রী জেসমিন আক্তার কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, আমরা কী নিয়ে বাঁচবো এখন? ছোট দুটো বাচ্চা। কী করে সামনে আমি তাদের খাওয়াবো পরাবো, আমার স্বামী আমাকে এবং আমাদের সন্তানদের খুব ভালোবাসতো, কতো স্বপ্ন ছিলো বাচ্চাদের পড়াশোনা করিয়ে মানুষ করবে, তা আর হলো না।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়