প্রকাশ : ১০ জানুয়ারি ২০২৩, ১৯:১৪
পদ্মা-মেঘনায় চলছে মাছের পোনা নিধনের মহোৎসব
চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনা নদীতে চলছে নির্বিচারের মাছের রেণু-পোনা নিধনের মহোৎসব। বিভিন্ন প্রভাবশালী ব্যক্তি ও প্রশাসনকে হাত করে দিন-রাত নিষিদ্ধ জাল দিয়ে এসব পোনা ধরছে অসাধু জেলেরা। আর নিধনকৃত মাছের পোনা বেচতে হাঁকডাকে শহরের অলিগলি মুখরিত করে তুলছে ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতারা।
|আরো খবর
মৎস্য গবেষকরা বলছেন, এভাবে নির্বিচারে মাছের পোনা নিধন করার কারণে নদ-নদীতে হ্রাস পাচ্ছে ইলিশসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছের উৎপাদন। এখনই কার্যকর কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হলে ভবিষ্যতে নদীগুলো মাছশূন্য হয়ে পড়ার আশঙ্কা তাদের। এদিকে প্রশাসন বলছে, নদীতে মাছের উৎপাদনের ধারা অব্যাহত রাখতে এই অসাধু চক্রের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।
নদীতে থাকা অধিকাংশ মাছই শীত মৌসুমের আগে ডিম ছাড়ে। শীতের এই সময়টাতে ইলিশ, বাইলা, চিংড়ি, পাঙ্গাস, আইড়, রিটা, পাবদা, পোয়া, টেংরাসহ নানা ধরনের মাছের পোনায় ভরপুর নদীগুলো। কিন্তু কিছু অসাধু জেলে বিভিন্ন ধরনের নিষিদ্ধ জাল ব্যবহার করে নির্বিচারে নিধন করছে এসব মাছের রেণু-পোনা।
জোয়ার-ভাটার সময় বুঝে মধ্যরাতে পাতাজাল, বেহুন্দীজাল, মশারী জালসহ নানা ধরনের নিষিদ্ধ জাল নিয়ে নেমে পড়ছে নদীতে। আর এসব জালে শুধু মাছের রেণুই নয়, উঠে আসছে কাঁকড়াসহ উপকারী বিভিন্ন জলজ প্রাণী। নিধনকৃত মাছের রেণু পুরানবাজারসহ বিভিন্ন চরাঞ্চলে নদীর পাড়েই দাদনদারদের কাছে বিক্রি করে দেয়। প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় থেকে ডিসেম্বর থেকে শুরু করে মার্চ মাস পর্যন্ত শতশত নৌকায় হাজারো জেলে এই রেণু নিধন করে থাকে।
পুরান বাজার রণগোয়াল এলাকার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক জেলে বলেন, শীতের সময়টাতে নদীতে প্রচুর পরিমাণে বিভিন্ন মাছের পোনা পাওয়া যায়। গুঁড়া মাছ ধরতে নদীতে নামার আগে প্রভাবশালী ব্যক্তি ও নৌ-পুলিশকে হাত করা লাগে। এরপর জোয়ার-ভাটার সময় বুঝে বিভিন্ন ধরনের নিষিদ্ধ জাল নিয়ে নদীতে নেমে পড়ে তারা।
নিধনকৃত এসব মাছের পোনা নিয়ে সকাল থেকে বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় হাঁকডাকে মুখর করে তোলে ভ্রাম্যমাণ মাছ বিক্রেতারা। ভ্যানগাড়িতে বড় বড় পাত্রে সাজিয়ে বিক্রি করে বাইলা, চিংড়ির সাথে বিভিন্ন প্রজাতির মাছের পোনা। কেউ-বা আবার মাথায় নিয়ে হেঁটে হেঁটে বিক্রি করে। দাম কম থাকার কারণে ক্রেতারাও লুফে নিচ্ছে তা। শহরের প্রতিটি অলিগলিতেই চোখে পড়ছে এমন দৃশ্য।
জেলা মৎস্য বণিক সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. সবেবরাত সরকার বলেন, নির্বিচারে রেণু-পোনা নিধনের ফলে চাঁদপুরে প্রতিনিয়তই কমছে মাছের উৎপাদন। আর এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী এই চক্রের সাথে জড়িত থেকে গুড়া মাছ ধরাচ্ছে। আগে সারা বছরই নদীতে ছোট-বড় মাছ পাওয়া যেত। এখন ভরা মৌসুমেও জেলেরা মাছ পায় না। এভাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যতে নদীগুলো মাছ শূন্য হয়ে পড়তে পারে। যে করেই হোক নদীতে গুঁড়া মাছ ধরা বন্ধ করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে কর্তৃপক্ষকে।
প্রখ্যাত ইলিশ গবেষক ড. আনিসুর রহমান বলেন, পদ্মা-মেঘনা নদী দেশের মৎস্যশিল্পের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক মৎস্যভাণ্ডার। প্রতিবছর শীতের মৌসুমে কয়েক হাজার টন বিভিন্ন প্রজাতির মাছের রেণু নিধন করা হয়ে থাকে। একই সাথে প্রতিবছর প্রচুর পরিমাণে জাটকা নিধন করে। যার ফলে মৌসুমে নদীতে নেমে কাঙ্ক্ষিত মাছের দেখা পাচ্ছে না জেলেরা। এভাবে রেণু নিধন অব্যাহত থাকলে একদিকে মাছের উৎপাদনের ধারা ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি ভবিষ্যতে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ বিলুপ্তির শঙ্কা রয়েছে।
জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান বলেন, মাছের রেণু নিধনকারী জেলেদের বিরুদ্ধে প্রশাসন তৎপর। জানুয়ারির শুরু থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নদীতে সমন্বিত অভিযান চালানো হবে। যাতে করে কোনোভাবে নিষিদ্ধ জাল দিয়ে নদীতে মাছের রেণু-পোনা নিধন করতে না পারে। তবে প্রশাসনের কেউ যদি এই কাজের সাথে জড়িত থাকে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। একই সাথে সকলকে আরো সচেতন হতে হবে। যাতে করে আগামীতে মাছের উৎপাদনের ধারা বৃদ্ধি পায়। সূত্র : অনলাইন।