প্রকাশ : ১১ ডিসেম্বর ২০২১, ২০:০০
এসডিজি অর্জনে জেন্ডার-রেসপন্সিভ সেবা
জাতিসংঘের জনসেবা পদক পাচ্ছে বাংলাদেশের ’দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়’
ঘুর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) নারী ক্ষমতায়ন উদ্যোগের স্বীকৃতি হিসেবে ‘এসডিজি অর্জনে জেন্ডার-রেসপন্সিভ সেবা’ ক্যাটাগরিতে জাতিসংঘের "জনসেবা পদক" পেয়েছে বাংলাদেশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়।
দুর্যোগ ঝুঁকি মোকাবিলায় বিশ্বের ‘আদর্শ দেশ’ হিসেবে সুনাম-সুখ্যাতি রয়েছে বাংলাদেশের। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের লালিত ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আনুকূল্যপুষ্ট ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি (সিপিপি)’র গৌরবময় ৫০ বছর পূর্তিও ইতোমধ্যেই উদযাপন করেছে দেশটি। ‘সিপিপি’-এর আওতায় নারী ও পুরুষ স্বেচ্ছাসেবকরা সমানভাবে দুর্যোগ মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছেন।
এবার এই অবদানের জন্য মিলেছে আন্তর্জাতিক এক স্বীকৃতি। মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও পিতা মুজিবের জন্মশতবার্ষিকীর সময়টিতে জাতিসংঘের "জনসেবা পদক" পেয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের ঘুর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) নারী ক্ষমতায়ন উদ্যোগের স্বীকৃতি হিসেবে ‘এসডিজি অর্জনে জেন্ডার-রেসপন্সিভ সেবা’ ক্যাটাগরিতে তারা পেয়েছে এই পদক। শ্রেষ্ঠত্বের এই পদকের মাধ্যমে বিশ্ব পরিমন্ডলে নতুনভাবে উচ্চারিত হচ্ছে হ্যাট্টিক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের নাম।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, আগামী সোমবার (১৩ ডিসেম্বর) সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই শহরে জাতিসংঘ আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এই পদক হস্তান্তর করা হবে। এই পদক গ্রহণ করতে ইতোমধ্যেই দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান ও সচিব মোঃ মোহসীন দুবাই গেছেন। ‘এসডিজি অর্জনে জেন্ডার-রেসপন্সিভ সেবা’ ক্যাটাগরিতে গত বছর এই পদকটি পেয়েছিল বাংলাদেশের ভূমি মন্ত্রণালয়।
জানা যায়, দুর্যোগ ঝুঁকি মোকাবেলায় বাংলাদেশের নেওয়া নানামুখী কার্যক্রম এবং স্বেচ্ছাসেবক ও স্থানীয় জনসাধারণের অংশগ্রহণমূলক সংস্কৃতি সারাবিশ্বে দেশটিকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় ‘রোল মডেল’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। দুর্যোগ ঝুঁকি বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় বিশেষ অবদান রাখার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর আগে জাতিসংঘের ‘চ্যাম্পিয়ন অব দ্য আর্থ’ পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।’
সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের সময়ে প্রাকৃতিক এবং মানবসৃষ্ট দুর্যোগজনিত কারণে জনগণের জীবন ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতিরোধে ব্যাপক সাফল্য মিলেছে। হালনাগাদ করা হয়েছে দুর্যোগ বিষয়ক স্থায়ী আদেশাবলী।
দুর্যোগকে অন্তর্ভুক্ত করে ‘ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০’ গ্রহণ করেছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান ও সচিব সচিব মো. মোহসীনের নেতৃত্বে বিভিন্ন কার্যক্রম ও কর্মসূচিতে অনুপ্রাণিত হয়েছেন দেশের মানুষ। শুধু তাই নয়, দুর্যোগে নিজেদের জীবন ও সম্পদ সুরক্ষায় সচেষ্ট এবং প্রস্তুত থাকার মনোবলও অর্জন করেছে তাঁরা।
একই সূত্র জানায়, ইতোপূর্বে দুর্যোগ মোকাবেলায় ধারাবাহিক সাফল্যের গতিধারায় মুজিব শতবর্ষেই এশিয়া দুর্যোগ প্রস্তুতি কেন্দ্রের (এডিপিসি) মর্যাদাপূর্ণ নেতৃত্ব পেয়েছে বাংলাদেশ। এই পদটিতে সভাপতি পদে নির্বাচিত হয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোহসীন। চীন, ভারত, পাকিস্তানসহ ২৪ টি দেশের মধ্যে থেকে এশিয়া দুর্যোগ প্রস্তুতি কেন্দ্রের গুরুদায়িত্বে বাংলাদেশের এই সচিবের দায়িত্বভার গ্রহণও ছিল বিরল এক সম্মান।
বিশ্লেষকরা বলছেন, জাতিসংঘের মর্যাদাপূর্ণ জনসেবা পদক প্রাপ্তির মধ্যে দিয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় বিশ্ব আসরে নতুনভাবে উপস্থাপন করেছে বাংলাদেশ। আর এসবই সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী ও বিচক্ষণ নেতৃত্বের দৌলতেই।
জানতে চাইলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোহসীন উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে কালের আলোকে বলেন, জাতিসংঘের পাবলিক সার্ভিস অ্যাওয়ার্ড হল জনসেবায় শ্রেষ্ঠত্বের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি।
তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি (সিপিপি) প্রতিষ্ঠা বাংলাদেশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার ইতিহাসে এক বিরল দৃষ্টান্ত। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭০ সালের ভয়াবহ ঘূর্নিঝড়ের প্রেক্ষাপটে সিপিপি প্রতিষ্ঠা করেন।
সচিব আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রাজ্ঞ গতিশীল নেতৃত্বে এতো ঘনবসতির দেশেও দুর্যোগ মোকাবেলায় বিশ্বে বাংলাদেশ অনুকরণীয় উদাহরণ তৈরি করেছে। বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদুরপ্রসারী পরিকল্পনায় সিপিপি বহুমাত্রিক দুর্যোগ মোকাবেলায় সক্ষম হয়ে ৫০ বছরে পা দিয়েছে।একটি নিবেদিতপ্রাণ স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর মাধ্যমে সমাজভিত্তিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমের জন্য প্রতিষ্ঠানটি সারা বিশ্বে খ্যাতি অর্জন করেছে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিববর্ষে বিজয়ের মাসে এই আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির মাধ্যমে বাংলাদেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিশ্ব পরিমন্ডলে নতুন মর্যাদায় অধিষ্ঠিত হয়েছে।