জনজীবনে স্বস্তি নিশ্চিতে নিরলস কাজ করছেন পুলিশ সুপার

আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বজায় রাখা, অপরাধ প্রতিরোধ এবং সমাজের শান্তিশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় পুলিশ বাহিনীর ভূমিকা অপরিসীম। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা অনেকটা ভেঙ্গে পড়ে। সেখান থেকে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর আবারও ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। চাঁদপুরে ওই সময়ে থাকা পুলিশ সুপারকে বদলি করা হয়। পরে পুলিশ সুপার (এসপি) পদে মুহম্মদ আব্দুর রকিব, পিপিএম যোগদান করে পুলিশের সার্বিক কার্যক্রম এগিয়ে নিতে নিরলস প্রচেষ্টা চালান। সে কারণে পূর্বের তিন-চার মাসের তুলনায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবশ্যই উন্নতি হয়েছে বলে মনে করেন সাধারণ মানুষ।

বর্তমান পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে জেলা পুলিশ এখন প্রধানত কাজ করছে জনজীবনে স্বস্তি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে। সে জন্যে চিহ্নিত ডাকাতি ও ছিনতাইর স্পটগুলোতে টহল-নজরদারি, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারসহ নানা অপরাধ দমনে ধারাবাহিক কাজ করছে।

সারাদেশের ন্যায় চাঁদপুর জেলাতেও ডাকাতি, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মধ্যে অন্যতম মাথা ব্যাথার হওয়ার কারণ হয়ে দাঁড়ায় কিশোর গ্যাং। জেলা শহর জুড়ে কিশোর গ্যাংয়ের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে প্রতিনিয়ত ঝরতো রক্ত। এ সময় পুলিশ সুপার মুহম্মদ আব্দুর রকিবের সুদৃঢ় মানসিকতা ও বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে এবং সুন্দর পরিকল্পনা গ্রহণের মাধ্যমে শুরু হয় কিশোর গ্যাং দমনের নানা ব্যবস্থা। তাঁর তীক্ষ্ণ বুদ্ধিমত্তার কারণে অল্প কিছুদিনের মধ্যে কিশোর গ্যাং দমনে দারুণ সফলতা অর্জন করে চাঁদপুর জেলা পুলিশ প্রশাসন।

চাঁদপুর জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে ২০ মার্চ পর্যন্ত মাত্র তিনমাসের মধ্যে চাঁদপুর জেলায় ৭১ জন কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য এবং ৩২ জন ডাকাত গ্রেফতার করেছে চাঁদপুর জেলা পুলিশ।

কিশোর গ্যাং দমন বিষয়ে সাথে কথা হয় পুলিশ সুপার (এসপি) মুহম্মদ আব্দুর রকিবের সাথে। জানতে চাওয়া হয় কিশোর গ্যাং দমন করতে কী পন্থা অবলম্বন করা হয়েছে। তিনি জানান, আমি চাঁদপুরে আসার পর কিছুদিনের মধ্যে এ ব্যাপার পর্যালোচনা করি। অল্প সময় পর্যালোচনা করে নিজের বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে জরুরি সভার আয়োজন করি। সেখানে আমার অফিসারদের বিভিন্ন ধরনের নির্দেশনার পাশাপাশি আমি ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে ঘোষণা দেই কিশোর গ্যাং দমনে বিশেষ উপহারের কথা। বিভিন্ন নির্দেশনা ও উপহারের কথা মাথায় রেখে আমার চৌকষ বাহিনী কিশোর গ্যাং দমনে তাদের কার্যক্রম শুরু করে।

তিনি আরো জানান, আমরা অনেকের কাছ থেকে তথ্য পেয়েছি কিশোর গ্যাংয়ের আনাগোনার কথা। এ ব্যাপারে আমরা স্পেশাল ড্রাইভ দিয়ে বেশ কিছু কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যকে আটক করতে সক্ষম হয়েছি। গত ৩ মাসে আমরা ৭১ জন কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যকে আটক করতে সক্ষম হয়েছি। এ ব্যাপারে জেলা পুলিশ প্রশাসনসহ যৌথবাহিনীও কাজ করে যাচ্ছে। এছাড়াও উচ্চ শব্দে মোটরসাইকেল চালানোরও একটা প্রবণতা দেখা দিয়েছিলো, সে ব্যাপারেও আমরা বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। যার ফলে আমরা সফলতাও লাভ করেছি। কিশোর গ্যাং ও উচ্চ শব্দে মোটরসাইকেল চালানোটা আমরা একটা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে নিয়ে এসেছি।

বিধ্বস্ত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা প্রসঙ্গে এসপি জানান, জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্যে জেলা পুলিশের পক্ষে ব্যাপক নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

আসন্ন ঈদ উপলক্ষে চাঁদপুরবাসীসহ বিভিন্ন জেলা থেকে আগত মানুষের ব্যাপক নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। বিশেষ করে চাঁদপুরে প্রবাসীর সংখ্যা অনেক বেশি। তাদের নিরাপত্তার জন্যে চাঁদপুর জেলা পুলিশ বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। ঈদের সময় প্রবাসীদের কেউ যদি নিজের জানমাল সুরক্ষার প্রশ্নে নিরাপদ না ভাবে, সেক্ষেত্রে আমাদেরকে জানালে আমরা তার জন্যে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থার অংশ হিসেবে গন্তব্যস্থলে নিরাপদে পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করবো। নির্বিঘ্নে বাড়ি পৌঁছে দেয়ারও ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। অনেকে ঈদের সময় মূল্যবান জিনিসপত্র ও টাকা পয়সা বহন করে থাকেন, সে সময় যদি কেউ নিরাপত্তাহীনতায় থাকেন, সেক্ষেত্রে আমাদেরকে জানালে বিশেষ টিম স্কট দিয়ে তাদের গন্তব্যস্থলে পৌঁছে দিবে।

যানজট প্রসঙ্গে এসপি বলেন, ঈদের সময় যানজট নিয়ন্ত্রণে ট্রাফিকিং জোরদার করা হয়েছে। যানজট নিরসনে আমরা জনবল বাড়ানোরও পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি।