প্রকাশ : ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৪:০৫
'গ্রাম আদালত সক্রিয়করণে স্থানীয় প্রশাসনের ভূমিকা ও করণীয়' শীর্ষক বিভাগীয় সম্মেলন

‘গ্রাম আদালত’ একটি সরকারি সেবা। ২০০৯ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার স্থানীয় বিচার ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতায় বাংলাদেশে গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ প্রকল্পটি চালু করে। প্রকল্পটি শুরুর পর থেকে তৃণমূল পর্যায়ে দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠী বিশেষ করে নারী ও পিছিয়ে পড়া মানুষের ন্যায়বিচার সহজলভ্য করে লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবনকে পরিবর্তন করেছে।’ - বলেছেন বক্তারা। শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫) চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় ও স্থানীয় সরকার বিভাগ আয়োজিত ‘গ্রাম আদালত সক্রিয়করণে স্থানীয় প্রশাসনের ভূমিকা ও করণীয়’ শীর্ষক বিভাগীয় সম্মেলনের মূল লক্ষ্য অল্প সময়ে ও স্বল্প খরচে স্থানীয় ছোটখাটো বিরোধ মীংমাসা এবং গ্রামীণ জনগণের মাঝে বিচারিক সেবা গ্রহণের সুযোগ বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে চট্টগ্রাম বিভাগীয় প্রকল্প এলাকার ৮টি জেলার ৮৩৫ ইউনিয়নে গ্রাম আদালতগুলোকে আরো সক্রিয় করতে বিভাগীয় পর্যায়ে দিক-নির্দেশনা লাভ করা।
|আরো খবর
ড. মো. জিয়াউদ্দীন, বিভাগীয় কমিশনার, চট্টগ্রাম বিভাগ, চট্টগ্রাম-এর সভাপতিত্বে আয়োজিত এ সম্মেলনে পার্বত্য চট্টগ্রাম ব্যতীত ৮টি জেলার প্রতি উপজেলা হতে ২ জন করে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান/প্যানেল চেয়ারম্যান, প্রতি জেলা হতে ৪ জন করে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সকল উপপরিচালক, স্থানীয় সরকার উপস্থিত ছিলেন।
বিভাগীয় সম্মেলনের প্রধান অতিথি এ.কে.এম. তারিকুল আলম, অতিরিক্ত সচিব, স্থানীয় সরকার বিভাগ ও বাংলাদেশে গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ - ৩য় পর্যায় প্রকল্পের জাতীয় প্রকল্প পরিচালক বলেন, ‘গ্রাম আদালত বিচারিক সেবার একটি কার্যকর মাধ্যম, যা তৃণমূল পর্যায়ে জনগণের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে’। তিনি গ্রাম আদালত কার্যক্রমকে আরও জোরদার করার বিষয়ে দিকনির্দেশনা প্রদান করেন এবং স্থানীয় সরকার, ইউএনডিপি ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নকে এ প্রকল্পে সহযোগিতার জন্যে ধন্যবাদ জানান।
সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন হেসোইন মোহাম্মদ কবির ভুইয়া, ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (পশ্চিম), চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটান পুলিশ; মো. আহসান হাবীব পলাশ, ডিআইজি, চট্টগ্রাম রেঞ্জ; ফরিদা খানম, জেলা প্রশাসক ও বিজ্ঞ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, চট্টগ্রাম। এছাড়া স্বাগত বক্তব্য দিয়েছেন মুহাম্মদ আনোয়ার পাশা, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) ও পরিচালক, স্থানীয় সরকার, চট্টগ্রাম। দাতা সংস্থা ইউএনডিপি’র পক্ষে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশে গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ - ৩য় পর্যায় প্রকল্পের টিম লিডার (প্ল্যানিং এমএন্ডই এন্ড রিপোর্টিং) মোহাম্মদ সিরাজুল হক।
উক্ত সম্মেলনে চাঁদপুর থেকেও যোগদান করা হয়।চাঁদপুর থেকে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক মো. গোলাম জাকারিয়া, চাঁদপুর সদর উপজেলার ইউএনও শাখাওয়াত জামিল সৈকত, হাজীগঞ্জ উপজেলার ইউএনও মো. ইবনে আল জায়েদ, কচুয়া উপজেলার ইউএনও হেলাল চৌধুরী ও মতলব উত্তর উপজেলার ইউএনও মাহমুূদা কুলসুম মনি এবং প্রতি উপজেলা থেকে ২ জন করে মোট ১৪ জন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান অংশগ্রহণ করেন। সদর উপজেলায় কোনো চেয়ারম্যান না থাকায় মোট ১৪ জন অংশগ্রহণ করেন। এছাড়া আরো উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকারের গুরুত্বপূর্ণ অংশীজন, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, জেলা রির্সোস টিমের সদস্যগণ, জেলা তথ্য ও লিগ্যাল এইড অফিসার, বিভাগীয় কমিশনার অফিসের কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন গণমাধ্যম প্রতিনিধি। গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ-৩য় পর্যায় প্রকল্পের চট্টগ্রাম বিভাগের কার্যক্রম ও এর অগ্রগতি নিয়ে উপস্থাপনা করেন মো. নোমান হোসেন, উপপরিচালক, স্থানীয় সরকার, চট্টগ্রাম।
সম্মেলনে বক্তারা বলেন, স্থানীয় প্রশাসন বিশেষত জেলা প্রশাসক, উপপরিচালক, স্থানীয় সরকার ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারগণের নেতৃত্ব এবং নির্দেশনায় চট্টগ্রাম বিভাগের ৮টি জেলার (চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, কুমিল্লা, নোয়াখালী, চাঁদপুর, লক্ষীপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও ফেনী, পার্বত্য চট্টগ্রামের ৩টি জেলা ব্যতীত) ৭৮টি উপজেলায় প্রকল্পটির স্থানীয় পর্যায়ের বিভিন্ন কার্যক্রম সফলভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়েছে। এর পাশাপাশি স্থানীয় জনগণের মাঝে গ্রাম আদালত সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং এর সেবা গ্রহণে জনগণকে উদ্ধুদ্ধ করতে প্রকল্প এলাকার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানগণের নেতৃত্ব ও ভূমিকা প্রশংসনীয়। বক্তারা প্রকল্প এলাকাসহ দেশের সব ইউনিয়ন পরিষদের আওতায় গ্রাম আদালতগুলোকে আরো সক্রিয় করতে জেলা উপজেলা পর্যায়ে গ্রাম আদালত ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা নিয়মিতকরণ ও এর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের সুপারিশ করেন। একই সঙ্গে তারা গ্রাম আদালতে নারীবান্ধব পরিবেশ তৈরিতে চেয়ারম্যানদের অনুকরণীয় উদ্যোগ গ্রহণ করার উপরও জোর দেন। সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী চেয়ারম্যানগণ গ্রাম আদালতের কার্যকরীকরণে গ্রাম আদালতের আর্থিক বিচারিক এখতিয়ার বৃদ্ধি, সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে প্রশাসনের সকল পর্যায়ে সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন।
উল্লেখ্য, এ প্রকল্প স্থানীয়ভাবে সহজে, কম খরচে, দ্রুত এবং স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় বিরোধ নিষ্পত্তি করা এবং অন্যায়ের প্রতিকার লাভের লক্ষ্যে তৃণমূলের দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠী বিশেষত নারী ও পিছিয়ে পড়া মানুষদের ন্যায় বিচার প্রাপ্তির জন্যে কাজ করছে। প্রকল্পটি বর্তমানে এর ৩য় পর্যায়ে দেশের ৮টি বিভাগের ৬১ জেলার (পার্বত্য চট্টগ্রামের ৩টি জেলা ব্যতিত) ৪৬৮টি উপজেলার ৪,৪৫৩ টি ইউনিয়নে গ্রামীণ জনগণের কাছে সেবা পৌঁছে দেয়ার জন্যে কাজ করছে।
প্রকাশ থাকে যে, ইউরোপীয়ান ইউনিয়ান ও ইউএনডিপি উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক, বিশেষ করে গ্রামীণ জনগণের কাছে গণতান্ত্রিক সুশাসন ও বিচারিক সুবিধা নিশ্চিত করতে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে কাজ করে থাকে।