প্রকাশ : ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ১৯:২৮
ফরিদগঞ্জে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মিল্টন দস্তিদারের আছে ‘আলাদিনের চেরাগ’!
সরকারি প্রকল্পের বাইরেও বাস্তবায়ন করেছেন নিজের প্রকল্প ॥ চাকরির এক দশকে গড়লেন সম্পদের পাহাড়
ফরিদগঞ্জ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মিল্টন দস্তিদারের কাছে ‘আলাদিনের চেরাগ’ আছে! অবিশ্বাস্য মনে হলেও ঘটনা এমনই। রূপকথার সোনার কাঠি, রূপার কাঠির কারিশমাতে সরকারি চাকরির মাত্র ১২ বছরে অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন তিনি। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন এই উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা নিজ এলাকায় রাজকীয়ভাবে চলাফেরা করেন বলে এলাকা সূত্রে জানা যায়। অনিয়মকে নিয়মে পরিণত করে তিনি কোটি কোটি টাকা অবৈধ পথে কামিয়েছেন। ফরিদগঞ্জে প্রায় সময়ই তার বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ উঠতো। সেসব অনিয়মের চিত্র এই সংবাদের ২য় পর্বে তুলে ধরা হবে।
সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে তার বিরুদ্ধে রয়েছে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ। অনিয়মের এসব অর্থ দিয়ে গড়েছেন তিনি অঢেল সম্পদ।
অভিযোগ রয়েছে, চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলায় মিল্টন দস্তিদারের নিজের নামে, স্ত্রী, নিজের ভাই ও স্ত্রীর ভাইয়ের নামে রয়েছে বাড়ি, ফ্ল্যাট ও ভূমি। এছাড়াও বেনামে রয়েছে কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র ও এফডিআর। অথচ তার আয়ের উৎস শুধুমাত্র চাকরির বেতন। কিন্তু বেতনের টাকা দিয়ে কম সময়ে এতো কিছুর মালিক হওয়া অসম্ভব।
জানা যায়, চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার ৫নং ইউনিয়নের মধ্যম হাইদগাঁও-এর আশুতোষ দস্তিদারের পুত্র মিল্টন দস্তিদার। ২০১২ সালের শুরুতে ফেণী জেলাতে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন। ১৬ অক্টোবর ২০১৯ সালে তিনি ফরিদগঞ্জ উপজেলায় যোগদান করেন। যোগদানের শুরু থেকে তৎকালীন ক্ষমতাসীনদের ম্যানেজ করে তিনি দুর্নীতির সর্বোচ্চ স্তরে উন্নীত হন। ৫ আগস্টের পর তারও চরিত্র পরিবর্তন হয়ে যায়। বিএনপি ক্ষমতায় না এলেও তার অফিসে বিএনপির কয়েকজন নেতাকে প্রায়ই দেখা যায়। মানে হলো, তিনি এখনই বিএনপির নেতাদের তোয়াজ করা শুরু করে দিয়েছেন। উদ্দেশ্য তার দুর্নীতি আর অনিয়মকে জায়েজ করা।
সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম নগরের দেব পাহাড় এলাকায় মিল্টন দস্তিদার সিএ প্রপার্টি ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড (সিপিডিএল) থেকে প্রায় দেড় কোটি টাকা মূল্যের ডুপ্লেক্স ফ্ল্যাট কিনেছেন। ফ্ল্যাট নম্বর ফাইভ-সি। এই ফ্ল্যাট কেনার পর সেখানে প্রায় অর্ধ কোটি টাকা খরচ করে সাজসজ্জা করানো হয়।
মিল্টন দস্তিদারের চট্টগ্রামের পটিয়ার নিজের গ্রামের বাড়িতে দৃষ্টিনন্দন ‘অরণ্য নীড়’ নামে তিনতলা বাড়ি রয়েছে। পটিয়া পৌরসভার বাইপাস এলাকায় ও নগরের বেশ কয়েকটি এলাকায় রয়েছে নিজের নামে ও পরিবারের সদস্যদের নামে জায়গা। দুই বছর পূর্বে পটিয়ায় নিজ বাড়িতে কিনেছেন কোটি টাকা দামের পৃথক দুটি ১৮ শতকের ভূমি। এসব তথ্য- উপাত্ত অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ইউনিয়ন ব্যাংক হাটহাজারী রোড সরকারহাট শাখা, ন্যাশনাল ব্যাংক জুবলী রোড শাখাসহ দেশের অন্যান্য আরও কয়েকটি ব্যাংকে কোটি কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র রয়েছে তার নিজ নামে, তার স্ত্রী ও বাবার নামে। এছাড়া তার স্ত্রীর ভাইয়ের নামে কয়েক কোটি টাকার ডিপিএস ও এফডিআর রয়েছে। গ্রাম ও নগরে তার স্ত্রী, বাবা ও ভাইদের নামে বেশ কিছু দোকান ও জায়গাতে বিনিয়োগ করার তথ্যও পাওয়া গেছে। একই সঙ্গে মিল্টনের বিরুদ্ধে ভারতে অর্থ পাচারের গুঞ্জনও রয়েছে। তার দুর্নীতি এবং অনিয়ম নিয়ে ২০২১ সালের ১৫ জুন সকালের সময় পত্রিকায় একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। সংবাদ প্রকাশের পরও তিনি দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরেননি। বরং অনিয়ম আর দুর্নীতির গতি বাড়িয়ে দেয়েছেন রেসের পাগলা ঘোড়ার মতো। অন্য মাধ্যমে সাংবাদিকদের তিনি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলেন, আমার নামে এর আগেও নিউজ হয়েছে, কিন্তু আমার কিছুই হয়নি।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মিল্টন দস্তিদারের অফিসে প্রায় ১০ দিন গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। মুঠোফোনে কল দিলে তিনি তা গ্রহণ করেন নি, হোয়াটস্যাপে ম্যাসেজ দিলে তার জবাব দেননি। তাই তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।