শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬  |   ২৯ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর শহরের পাঁচ রাস্তার মোড়ে 'আল্লাহু চত্বর'
  •   চাঁদপুর কণ্ঠৈর কলামিস্ট এএসএম শফিকুর রহমানের ইন্তেকাল
  •   নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব পেল সেনাবাহিনী
  •   জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনে’ প্রধান উপদেষ্টার ১০০ কোটি টাকার অনুদান
  •   মেঘনায় নিখোঁজ দুই ভাইয়ের মরদেহ উদ্ধার

প্রকাশ : ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০

চাঁদপুর শহরে স্বর্ণের দোকানে দুর্ধর্ষ চুরি ॥ অর্ধ কোটি টাকার স্বর্ণালঙ্কার লুট

চাঁদপুর শহরে স্বর্ণের দোকানে দুর্ধর্ষ চুরি ॥ অর্ধ কোটি টাকার স্বর্ণালঙ্কার লুট
গোলাম মোস্তফা ॥

সূর্য ওঠার আগেই ভোরের আলোতে চাঁদপুর শহরের একটি স্বর্ণের দোকানে দুর্ধর্ষ চুরির ঘটনা ঘটেছে। শহরের কুমিল্লা রোডস্থ ঘোষপাড়ার পুলের পাশের ৪তলা বিল্ডিংয়ের নিচতলার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান স্বর্ণ ভূবনে এ দুর্ধর্ষ চুরির ঘটনায় ৫০ ভরির বেশী স্বর্ণ চুরি হয়েছে। যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় অর্ধ কোটি টাকা। গতকাল সোমবার ভোর আনুমানিক ৬টায় এ ঘটনা ঘটে।

ঘটনার বিবরণে জানা যায়, ভবনের মালিক মানিক কর্মকারের নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান স্বর্ণ ভূবন। ভবনের নিচতলায় স্বর্ণ ভূবনসহ আরো কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এক পাশ জুড়ে পুরোটা স্বর্ণ ভূবন। অপর পাশের প্রথম ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটি জনৈক বাদলের নিকট ভাড়া দেয়া হয়েছে। তিনি মেহজাবিন স্টোর নামে একটি মুদি দোকান চালিয়ে আসছেন। তিনি প্রতিদিন ভোর ৭টা থেকে সাড়ে ৭টার মধ্যে দোকান খুলেন। তাই ৪তলা ভবনের মূল গেটের একটি চাবি তার কাছে থাকে। সে কারণে অধিকাংশ দিন তিনি নিজে মূল গেটের তালা খুলে দোকানে প্রবেশ করেন। সে হিসেবে গতকাল সকাল ৭টায় দোকান খুলতে এসে দেখেন মূল গেটের একটি তালা ভাঙা। এটি দেখে তিনি তাৎক্ষণিক উক্ত বিল্ডিং ও স্বর্ণ ভূবনের মালিক মানিক কর্মকারকে বিষয়টি অবহিত করেন। মালিক খবর শুনে সাথে সাথে নিচে নেমে এসে সবকিছু দেখে আবার বাসায় ফিরে যান। কিন্তু এদিকে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যে চুরি হয়ে সব শেষ হয়ে গেছে এটিও তার কোনো খবর নেই। পরে মালিক ভাড়াটিয়া বাদলকে সবকিছু ঠিক আছে বলে চলে যান।

সকাল ৯টার দিকে স্বর্ণ ভূবনের ম্যানেজার রিপন সাহা প্রতিদিনের ন্যায় দোকানে এসে দোকানের সার্টার খুলতে গিয়ে দেখেন, তিনি প্রতিদিন যে তালাটি প্রথম খুলে দোকানে প্রবেশ করেন সেটিসহ দুটি তালা কাটা এবং তালা নেই। এটি দেখে তাৎক্ষণিক মালিককে অবহিত করে মালিকসহ দোকানে প্রবেশ করে দেখেন, চোর চক্র দোকানে সাজানো এবং বিশেষ স্থানে থাকা সকল স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে গেছে।

খবরটি তাৎক্ষণিক চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে ঘটনাটি জানানো হয় চাঁদপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ শেখ মুহসীন আলমকে। তিনি তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে ফোর্স পাঠিয়ে ঘটনার বিষয় পুরো অবগত হয়ে নিজে ঘটনাস্থলে আসেন এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেন। খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুদীপ্ত রায়সহ জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ঘটনাস্থলে আসেন। এছাড়া পিবিআইসহ সকল গোয়েন্দা সংস্থা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে।

অপরদিকে এ ঘটনার ক্লু উদ্ঘাটনে ভবনসহ আশপাশের সিসিটিভির ফুটেজ উদ্ধার করা হয়। ফুটেজে দেখা যায়, চোর চক্রের ৮/১০ জন সদস্য ঘটনাটি ঘটায়। তারা কেউ রাস্তার দুপাশে ২ জন, কেউ একা দোকানের সামনের সিঁড়িতে বসাসহ নানাভাবে বিভক্ত। ফুটেজে দেখা যায়, চোর চক্র দোকানের তালা কেটে ভেতরে প্রবেশের পূর্বে একটি কাপড় দিয়ে কৌশলে আড়াল করে একজনকে তালা কাটতে সহযোগিতা করে।

তবে চোর চক্রের সকলে মুখোশ পরা এবং তাদেরকে যেনো কেউ শনাক্ত করতে না পারে এমনভাবে নিজেদের নিরাপত্তা বেষ্টনী করে দুর্ধর্ষ চুরিটি করে।

এদিকে চুরির ঘটনার বিষয়ে মালিক পক্ষ জানায়, প্রতিদিন তিনি দোকান বন্ধ করার পূর্বে মালামালগুলো নির্দিষ্ট গোপন স্থানে রেখে যান। গতকাল রাতে তিনি সেভাবে মালামালগুলো যথাস্থানে না রেখে বাসায় চলে যান। ফলে চোর চক্র মালামালগুলো চুরি করতে গিয়ে বেশি বেগ পোহাতে হয়নি।

এদিকে মালিক পক্ষ থেকে মালামালের পরিমাণ সম্পর্কে জানানো হয়, চোরাইকৃত মালামাল ৫০ ভরির বেশি হবে। আর এই মালামালের মূল্য প্রায় অর্ধ কোটি টাকার মতো হবে।

ঘটনার বিষয়ে সিসিটিভির ফুটেজ দেখে দেখা যায়, চোর চক্র ভোর ছয়টা থেকে সাড়ে ছয়টায় পুরোপুরি ভোরের আলোতে ঘটনাটি ঘটিয়েছে।

এদিকে ঘটনার খবর শুনে শহরের ব্যবসায়ী সমাজ বিশেষ করে স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা অনেকটা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন এবং ব্যবসায়ীরা প্রশাসনের প্রতি ঘটনাটির ক্লু উদ্ঘাটন করে অবিলম্বে ঘটনার সাথে জড়িতদের গ্রেফতারের দাবি জানান।

এদিকে ঘটনার বিষয়ে চাঁদপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ মুহসীন আলমের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক আমরা ঘটনাস্থলে যাই। পাশাপাশি আমরা আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করি।

তিনি এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, বিষয়টি নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সকল বিভাগ কাজ করছে। ঘটনার সাথে জড়িতদের গ্রেফতার না করা পর্যন্ত আমাদের কাজ অব্যাহত থাকবে। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে এবং মামলা প্রক্রিয়াধীন।

ঘটনার বিষয়ে চাঁদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুদীপ্ত রায় বলেন, ঘটনাস্থলে গিয়ে আমরা সকল বিষয় জেনেছি এবং দেখেছি। শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানের সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহসহ ঘটনার সাথে জড়িতদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। আশা করছি সহসাই ভালো কিছু শুনবেন।

এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত পুলিশের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট জড়িতদের গ্রেফতারে কাজ অব্যাহত রেখেছে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়