প্রকাশ : ২৫ মে ২০২৩, ২২:৩৮
শিশু সোহানের ঘাতক আহাদের আদালতে স্বীকারোক্তি
প্ ফরিদগঞ্জের চাঞ্চল্যকর শিশু আদিল মোহাম্মদ সোহানের হত্যা মামলায় অভিযুক্ত ও ঘাতক গৃহশিক্ষক এসএসসি পরীক্ষার্থী আঃ আহাদ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ফরিদগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ আঃ মান্নান। ২৪ মে বুধবার বিকেলে চাঁদপুর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কার্ত্তিক চন্দ্র ঘোষের আদালতে সে তার ছাত্র আদিল মোহাম্মদ সোহানকে অপহরণ ও হত্যার বিষয়ে জবানবন্দি প্রদান করে। পরে আদালত তাকে অপ্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ায় গাজীপুরের কিশোর সংশোধনাগারে পাঠানোর নির্দেশ প্রদান করে। এর আগে একই দিন দুপুরে জেলার আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচনপূর্বক ঘাতককে আটকের বিষয়ে প্রেসব্রিফিং করেন চাঁদপুরের পুলিশ সুপার।
|আরো খবর
ওই প্রেসব্রিফিং ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত ১৫ মে মাগরিবের নামাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে শিশু আদিল মোহাম্মদ সোহান নিখোঁজ হয়। তার বাবা আনোয়ার হোসেন পরদিন থানায় জিডি করেন। নিখোঁজের ৪ দিন পর গত ১৯ মে শুক্রবার সকালে বাড়ির পাশের একটি জমি থেকে মাটিচাপা অবস্থায় সোহানের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ব্যাপারে ওইদিনই সোহানের পিতা আনোয়ার হোসেন হত্যা মামলা দায়ের করেন।
পুলিশ ঘটনার তদন্তের এক পর্যায়ে সোহানের গৃহশিক্ষক ও এসএসসি পরীক্ষার্থী আঃ আহাদকে সন্দেহজনক হিসেবে আটক করে। পরে জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে আঃ আহাদ (১৮) হত্যার কথা স্বীকার করে।
পুলিশের কাছে সে জানায়, ভারতীয় টিভি সিরিয়াল সিআইডি দেখে সে অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়ের কৌশল বাস্তবায়নে অনুপ্রাণিত হয়। ঘটনার দিন ১৫ মে মাগরিব নামাজের পর সোহান বাড়ি ফেরার সময় সে বাড়ির পাশের একটি পুকুরের সামনে বসে মোবাইল ফোন দেখছিল। এই সময়ে সোহানকে কৌশলে অপহরণ করে পাশর্^বর্তী নার্সারিতে নিয়ে মুখ ও গলা চেপে ধরলে সে নিস্তেজ হয়ে পড়ে। অজ্ঞান হয়েছে মনে করে সে সেখান থেকে উঠে গিয়ে তার নিজের মায়ের মুঠোফোনের মধ্যে নতুন সীমকার্ড সংযুক্ত করে। পরে মুঠোফোন দিয়ে সোহানের মা ফাতেমা বেগমের মুঠোফোনে মুক্তিপণ আদায়ের জন্যে কল করে। কিন্তু সোহানের মা কল রিসিভ না করায় সে ফিরে গিয়ে সোহানের নিস্তেজ দেহ দেখে তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত এবং মরদেহ নার্সারীতে ফেলে রাখে। পরে সেও সোহানের পরিবারের অন্য সদস্যদের মতো সোহানকে খুঁজতে বের হয়। রাত গভীর হলে আহাদ তার চাচীর রান্না ঘর থেকে হাত দা নিয়ে বাড়ির পাশের একটি জমিতে গর্ত খুঁড়ে মাটিচাপা দেয় সোহানকে। পরবর্তীতে
সে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হয় এবং পুকুরের মধ্যে নতুন সীমকার্ডটি ফেলে দেয়।
পুলিশ জানায়, আহাদকে নিয়ে হত্যার সময় ব্যবহৃত জামা-কাপড় ও হাত দা উদ্ধার করা হয়েছে। এদিকে শিশু সোহান নিখোঁজ হওয়ার পর এবং পরবর্তীতে লাশ উদ্ধারের পর থেকে পুলিশ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচনে মাঠে নামে। পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস) পলাশ কান্তি নাথের নেতৃত্বে ফরিদগঞ্জ থানার ওসি আঃ মান্নান, ওসি (তদন্ত) প্রদীপ মণ্ডল, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই জামাল, এসআই রুবেল ফরাজী, এএসআই আবু নঈম টানা ৫দিন এই মামলার রহস্যভেদ করতে দিনরাত পরিশ্রম করে। অবশেষে তারা সফলতার মুখ দেখে।
এ ব্যাপারে ফরিদগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ আঃ মান্নান জানান, ক্লুলেস এই হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে সফলতার সাথে রহস্যভেদ করতে সক্ষম হয়েছি। এখন মামলার অন্যান্য কাজ চলছে।