প্রকাশ : ১৩ জুলাই ২০২২, ২০:৩২
মতলব দক্ষিণে যুবকের রহস্যজনক মৃত্যু
আদালতের নির্দেশ ২ দিন পর কবর থেকে লাশ উত্তোলন
মতলব দক্ষিণে এক যুবকের রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। তবে পরিবারের দাবি পরিকল্পিতভাবে ওই যুবককে হত্যা করা হয়েছে। এ মৃত্যুর ঘটনায় নিহত ওই যুবকের মা জাহানারা বেগম বাদী হয়ে গত ১২ জুলাই মঙ্গলবার মতলব দক্ষিণ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার প্রেক্ষিতে একই বাড়ির অবসরপ্রাপ্ত সৈনিক ওসমান গনি এবং অটোরিকশা চালক আল আমিনকে আটক করা হয়। পরে দুইদিন পর গতকাল বুধবার সকালে আদালতের নির্দেশে ময়নাতদন্তের জন্য কবর থেকে লাশ উত্তোলন করে মতলব দক্ষিণ থানা পুলিশ।
|আরো খবর
নিহত ফারুক মিয়া মতলব দক্ষিণ উপজেলার
নারায়ণপুর ইউনিয়নের বাড়ৈগাঁও গ্রামের জলেমান্দ বাড়ির মো. বাচ্চু ভান্ডারীর বড় ছেলে। ব্যক্তিগত জীবনে ফারুক মিয়া বিবাহিত এবং তিন ছেলের জনক।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, ফারুক মিয়া নারায়ণপুর বাজারে ভাড়া বাসায় স্ত্রী সন্তান নিয়ে বসবাস করতেন। ঘটনার সময় ঈদুল আজহার দিবাগত রাতে অটোরিকশা চালক আল আমিন দাওয়াত দিয়ে তাদের বাড়িতে নিয়ে যায়। রাতে খাবার খাওয়ার পর ফারুক মিয়া নারায়ণপুরে তার বাসায় চলে আসতে চাইলে আল আমিন যেতে নিষেধ করে তাদের থাকার ব্যবস্থা করে দেয়। ওইদিন রাতের কোন সময় ফারুক মিয়ার রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।
এদিকে ফারুক মিয়ার (৩৮) মৃত্যু নিয়ে এলাকায় রহস্য তৈরি হয়েছে। পরিবারের দাবি, তাঁকে হত্যা করে গাছে লাশ ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, গত রোববার (ঈদের দিন) ফারুক মিয়া বাড়িতে যান। ওই দিন রাত ১০টার পর একই বাড়িতে তাঁর ফুফুর ঘরে ঘুমাতে যান। গত সোমবার সকালে ওই ঘরে ফুফুর পরিবারের লোকজন ফারুককে দেখতে না পেয়ে বিষয়টি তাঁর (ফারুক) বাবা বাচ্চু ভান্ডারিকে জানান।
এর কিছুক্ষণ পর ওই বাড়ীর অবসরপ্রাপ্ত সৈনিক ওসমান গনি এবং অটোরিকশাচালক মো.আল আমিন এসে ফারুকের বাবাকে জানান, ফারুক বাড়ির পাশের একটি আমগাছের সঙ্গে গলায় রশি দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। পরে তাঁরা দুজন তড়িঘড়ি করে ওই গাছ থেকে লাশটি নামিয়ে পুলিশকে না জানিয়ে দ্রত কবরস্থ করার জন্য ফারুকের পরিবারকে চাপ দেন। তাঁদের কথায় রাজি হয় ফারুকের পরিবার। দাফন করতে গিয়ে ফারুকের বাবা ও স্থানীয় লোকজন লাশটির গলা, বুক ও পা সহ বিভিন্ন অংশে আঘাতের চিহ্ন দেখতে পান। এরপরও লাশটি দাফন করেন তাঁরা।
নিহত ফারুক মিয়ার গোসলদানকরী মাদরাসা পড়ুয়া শিক্ষার্থী একই বাড়ির মো. রাকিব বলেন, সে লাশ গোসল করানোর জন্য প্রস্তুতি নিয়ে দেখে লাশের গলার পাশে, বুকে এবং পায়ে আঘাতের চিহ্ন। তখন সে লাশ গোসল দিতে অস্বীকৃতি জানায়। তখন অবসরপ্রাপ্ত সৈনিক ওসমান গনি এটা কিছুই না বলে রাকিবকে গোসল করানোর জন্য চাপ দেয় এবং এ বিষয়ে কাউকে কিছু না বলতে নিষেধ করেন।
আটক ওই দুই ব্যক্তির সন্দেহজনক আচরণ, দ্রত লাশ দাফনে তাঁদের তৎপরতা এবং লাশের বিভিন্ন অংশে আঘাতের চিহ্নের কথা মনে করে ফারুকের পরিবারের লোকজন বিষয়টি নিয়ে সন্দেহ হয়। স্থানীয় এক ব্যক্তির মাধ্যমে ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে বিষয়টি পুলিশকে জানান ফারুকের বাবা বাচ্চু ভান্ডারী। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায় এবং পরিবার ও আশপাশের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে ঘটনাটির সঙ্গে জড়িত সন্দেহে মো.আল আমিন ও অবসরপ্রাপ্ত সৈনিক ওসমান গনিকে তাঁদের বাড়ি থেকে আটক করে।
মতলব দক্ষিণ থানার (ওসি) মোহাম্মদ মহিউদ্দিন মিয়া বলেন, আটক দুই সন্দেহভাজন আসামীকে কোর্টে চালান দেয়া হয়েছে। আর কবর থেকে উত্তোলন করা ফারুক মিয়ার লাশ ময়নাতদন্তের জন্য চাঁদপুর মর্গে পাঠানো হয়েছে।