প্রকাশ : ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ১৮:২৬
মমতার বোমা ফাটানো মন্তব্য: ‘বাংলাদেশের খবর রাখেন না মোদি’!
ওয়াকফ বিল ঘিরে দক্ষিণ এশিয়ায় উত্তেজনা: মোদিকে মমতার তীব্র প্রশ্ন, বাংলাদেশেও প্রতিক্রিয়া

“বাংলাদেশের পরিস্থিতি জানেন না? এত তাড়াহুড়োর কী ছিল?” – এই প্রশ্ন এখন শুধু ভারতীয় রাজনীতিতেই নয়, দক্ষিণ এশিয়ার কূটনৈতিক অঙ্গনেও প্রবল আলোচনার জন্ম দিয়েছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে এই ভাষায় তীব্র সমালোচনা করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর তার এই বক্তব্য ঘিরে শুরু হয়েছে নতুন বিতর্ক, যার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে বাংলাদেশেও।
|আরো খবর
মোদি সরকারের অধীনে পাস হওয়া সংশোধিত ওয়াকফ বিলকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে দুই প্রতিবেশী দেশে। বিশেষত বাংলাদেশের সামাজিক ও রাজনৈতিক মহলে প্রতিক্রিয়ার ঢেউ উঠেছে। ইতোমধ্যে ইসলামি দলগুলোর প্রতিবাদ, বিএনপি নেতাদের উদ্বেগ এবং কূটনৈতিক পর্যায়ে আলোচনা শুরু হয়ে গেছে।
ভারতে কী আছে এই বিতর্কিত ওয়াকফ আইনে?সংশোধিত ‘ওয়াকফ (সংশোধনী) বিল ২০২৫’-এ মুসলিম সম্প্রদায়ের ধর্মীয় সম্পদ নিয়ন্ত্রণে সরকারের হস্তক্ষেপের সুযোগ বাড়ানো হয়েছে। নতুন আইনে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনা হয়:
রাজ্য ওয়াকফ বোর্ড ও কেন্দ্রীয় ওয়াকফ কাউন্সিলে নন-মুসলিম সদস্য অন্তর্ভুক্তির বাধ্যবাধকতা
ওয়াকফ সম্পত্তি নিয়ে কোর্টে মামলা নিষিদ্ধ করে প্রশাসনের মাধ্যমে নিষ্পত্তির বাধ্যবাধকতা
জমির সার্ভে ও রেজিস্ট্রেশনের ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসকের হাতে বাড়তি ক্ষমতা
ধর্মীয় উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত জমির ব্যবহার নির্ধারণে সরকারি হস্তক্ষেপের সুযোগ
গতকাল কলকাতার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে ইমাম-মোয়াজ্জেমদের এক সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন:“বাংলাদেশের পরিস্থিতি জানেন না? এত তাড়াহুড়োর কী ছিল? পশ্চিমবঙ্গ বাংলাদেশের সীমান্ত লাগোয়া রাজ্য। আপনি ইউনূসের সঙ্গে গোপনে মিটিং করছেন, চুক্তি করছেন। করেছেন করুন। তাতে দেশের ভাল হলে আমার কিছু বলার নেই।”
তিনি আরও বলেন: “আমি মোদিজিকে অনুরোধ করছি, ওই লোকটাকে (অমিত শাহকে) নিয়ন্ত্রণ করুন। একটা লোকের হাতে সব এজেন্সি, যেমন পারছে ব্যবহার করছে। আপনি কোনও দিন প্রধানমন্ত্রী হবেন না। মোদিজির প্রধানমন্ত্রীত্ব গেলে আপনাকে তো হামাগুড়ি দিতে হবে।”
বাংলাদেশে উদ্বেগের ছায়া, নীরব সরকারের সমান্তরালে বিস্ফোরিত হচ্ছে জনমত
ভারতের এই বিল নিয়ে বাংলাদেশে ইসলামি দলগুলো মুখ খুলেছে।
হেফাজতে ইসলাম বিলটিকে ‘মুসলিম অস্তিত্বের ওপর আঘাত’ হিসেবে অভিহিত করেছে।ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ বলেছে, “ভারতীয় মুসলমানদের জন্য ভয়ঙ্কর সময়। আমাদের প্রতিবেশী হিসেবে এ দায় এড়াতে পারি না।”
বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “আঞ্চলিক সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির স্বার্থে ভারত সরকারকে এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করতে হবে।”
সরকারি স্তরে এখনও বাংলাদেশ সরকার কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশন সূত্রে জানা গেছে, একটি ‘সফট কূটনৈতিক চিঠি’ এরই মধ্যে পাঠানো হয়েছে। ভারতজুড়ে আন্দোলন: পার্ক সার্কাস থেকে দিল্লি পর্যন্ত বিক্ষোভের আগুন
কলকাতার পার্ক সার্কাস ময়দানে গত তিনদিন ধরে ধর্ণায় বসেছেন কয়েক হাজার মুসলিম নারী ও পুরুষ।
চেন্নাই, বেঙ্গালুরু, হায়দরাবাদ, লখনউ ও দিল্লিতে জুমার নামাজের পর মিছিল হয়েছে।
বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ: “ধর্মীয় বিশ্বাসের ওপর সরকারের সরাসরি আঘাত।” ওয়াকফ সম্পদের পরিসংখ্যান: একটি বিশ্লেষণভারতে প্রায় ৮.৭ লক্ষ ওয়াকফ সম্পত্তি রয়েছে, যার আর্থিক মূল্য প্রায় ১.২ লক্ষ কোটি রুপি।
উত্তরপ্রদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে রয়েছে সর্বোচ্চ ওয়াকফ সম্পত্তি
এ সম্পত্তিতে রয়েছে স্কুল, হাসপাতাল, মসজিদ, মাদ্রাসা
আইন পরিবর্তনের ফলে সম্পদ ব্যবস্থাপনায় নতুন প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ শুরু হবে
বিশ্লেষণ: শুধু ভারতে নয়, সারা অঞ্চলে অস্থিরতা তৈরি হতে পারেবিশেষজ্ঞদের মতে, ভারত সরকারের এই পদক্ষেপ শুধুমাত্র অভ্যন্তরীণ বিষয় নয়, দক্ষিণ এশিয়ার মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোতেও এটির প্রভাব ফেলবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহবুবুল করিম বলেন,
“এই আইন বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে ভারতের প্রতি এক ধরনের অনাস্থা সৃষ্টি করতে পারে, বিশেষ করে যখন ইসলাম নিয়ে অতিসংবেদনশীল আবহ চলছে।”ভারতের ওয়াকফ সংশোধনী বিল নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মমতার প্রকাশ্য সমালোচনা এবং বাংলাদেশের রাজনৈতিক–সামাজিক প্রতিক্রিয়া আরও একবার দেখিয়ে দিল, ধর্মীয় ইস্যু কোনো দেশের একক অভ্যন্তরীণ ব্যাপার নয়। প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সংবেদনশীলতা, কূটনৈতিক ভারসাম্য এবং জনগণের বিশ্বাস–এসব মিলিয়েই গড়ে ওঠে দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতি।
দক্ষিণ এশিয়ার জনসংখ্যার বড় একটি অংশ মুসলিম। ভারতে নেওয়া সিদ্ধান্ত যদি সঠিক রাজনৈতিক ও সামাজিক চিন্তাভাবনা ছাড়া বাস্তবায়ন হয়, তাহলে তা শুধু প্রতিবেশী সম্পর্ক নয়, উপমহাদেশের স্থিতিশীলতাও ঝুঁকির মুখে ফেলবে।
ডিসিকে/এমজেডএইচ