প্রকাশ : ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২১, ২০:০৪
ফরিদগঞ্জে হাত বাড়ালেই মিলছে বিভিন্ন অপরেটরের অবৈধ সিম
রেজিস্ট্রেশন বিহীন সিমে সক্রিয় হচ্ছে অপরাধচক্র
ফরিদগঞ্জ বাজারসহ উপজেলা ইউনিয়ন পর্যায়ের বাজারগুলোর মোবাইল রিচার্জ বা মোবাইলের পার্টস বিক্রি করা টেলিকম দোকানগুলোতে অবাদে বিক্রি হচ্ছে অন্যের নামে রেজিস্ট্রেশনকৃত চোরাই সিম। গ্রামীনফোন, রবি, এয়ারটেল, বাংলালিংকসহ প্রায় সব অপারেটরের সিমই পাওয়া যায় এসব দোকদনগুলোতে। প্রতিটি অবৈধ সিমের মূল্য নেওয়া হচ্ছে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত। তবে ক্ষেত্র বিশেষে পছন্দের নাম্বার পেতে হাজার টাকাতেও বিক্রি হচ্ছে এসব সিম কার্ড।
|আরো খবর
বাংলাদেশ ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী জাতীয় পরিচয়পত্র ও ফিঙ্গার প্রিন্ট দেয়ার পর বায়োম্যাট্রিক পদ্ধতিতে রেজিস্ট্রেশন করে সিম ক্রয় করা ব্যতিত কোন সিম কার্ড সচল হওয়ার বিধান নেই। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী অন্য গ্রহকের নামে রেজিস্ট্রেশন হওয়া পরিত্যক্ত সিম বিক্রি করছেন নতুন গ্রহকদের কাছে। আর এসব সিম ক্রয় করেই কিশোর তরুণরা জড়িয়ে পড়ছে অপরাধচক্রে। সরেজমিনে ফরিদগঞ্জ বাজারে বিভিন্ন দোকানে ঘুরে দেখা যায় এমন চিত্র। দোকানগুলোতে সঠিক নিয়ম মেনে গ্রাহকের কাছে সিম বিক্রির সাইনবোর্ড টানানো হলেও বৈধ সিম বিক্রির অন্তরালে বিক্রি হচ্ছে অন্যের নামে পূর্বে রেজিস্ট্র্রেশন করা পরিত্যক্ত সিম। অপরাধচক্রের সদস্যরা দোকানে গিয়ে ইশারা-ইঙ্গীত দিলেই চড়া দাম পরিশোধের শর্তে গোপনে বিক্রি হচ্ছে অবৈধ সিম কার্ড।
ফরিদগঞ্জ বাজারের বিভিন্ন দোকানে এসব সিমের খোঁজ নিলে দেখা যায়, অবৈধ প্রক্রিয়ায় সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে এয়ারটেল সিম। সিমগুলোর অধিকাংশ পূর্বেই অন্যের নামে রেজিস্ট্রেশন হয়ে আছে। মূল্য পরিশোধ করলেই জাতীয় পরিচয়পত্র, ফিঙ্গার প্রিন্ট ছাড়াই গ্রাহকের হাতে তুলে দেয়া হচ্ছে সিমগুলো। বাজারের আরেকটি দোকানে ক্রেতাবেশে সিম কেনার ইঙ্গিত দিলে দোকারদার আগেই ইঙ্গীত দেন, কোনটি নিবো? অবৈধ নাকি বৈধ। জানান গ্রামীন অপারেটরের অবৈধভাবে রেজিস্ট্রেশনকৃত সিমের মূল্য একদাম ২শ' টাকা। শুধু এয়ারটেল কিংবা গ্রামীন নয় অন্যান্য প্রায় সব অপারেটরগুলো একই পদ্ধতিতে অবাদে বিক্রির করছেন সিম এমন অভিযোগও রয়েছে। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী জাতীয় পরিচয়পত্র ও হাতের আঙ্গুলের ছাপ ব্যতিত যদি সিম ক্রয় করা এবং সচল করা না যায়, তবে এসব সিম আসে কোথা থেকে? সে বিষয়ে জানতে চাইলে দ্রুত প্রসঙ্গ পাল্টান এই ব্যবসায়ী।
বিশ্বস্ত এক সূত্র থেকে জানা যায়, পূর্বে সিম অনলাইন রেজিস্ট্রেশনের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কোনো সময়সীমা নির্ধারণ করা ছিলো না। সেজন্যে বিভিন্ন অপারেটরের কর্মী ও দোকানদাররা কোম্পানির বেধে দেয়া সিম বিক্রির টার্গেট পূর্ণ করার জন্য বৈধ পন্থায় সিম কিনতে আসা ব্যাক্তির ফিঙ্গার প্রিন্ট ও এনআইডি কার্ডের তথ্য সংগ্রহ করে সেই তথ্য দিয়েই একাধিক সিম রেজিস্ট্রেশন করে ফেলতো কিছু অবৈধ ব্যবসায়ী। কিন্তু পরবর্তীতে সরকারিভাবে একই ব্যক্তির জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে সিম রেজিস্ট্রেশনের বিষয়ে ৩ ঘন্টার বাধ্যবাধকতা দিয়ে দেয়া হয়। এই নিয়মের পর থেকে বৈধ সিম রেজিস্ট্রেশনের জন্য একটি এনআইডি কার্ড দিয়ে একটি সিম রেজিস্ট্রেশন করার পরবর্তী ৩ ঘন্টায় একই এনআইডি কার্ড দিয়ে অন্য কোনো সিম রেজিস্ট্রেশন করা যায় না। তবে ফরিদগঞ্জের বিভিন্ন দোকানে কোথা থেকে আসে এতো সিম? কোথায় পায় তারা এত এনআইডি কার্ড? প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজতে বিভিন্ন অপরেটরের কর্মরত মার্কেটিংয়ে কাজ করা বেশ কজনের সাথে কথা বলে বিষয়টি জানার চেষ্টা করা হয়। সংবাদকর্মী পরিচয় পেয়ে মুখ খুলেননি কোনো মার্কেটিং সেলসম্যান।
ফরিদগঞ্জ বাজারের কয়েকজন ব্যবসায়ীর সাথে সুহৃদবেশে কথা বলে এ বিষয়ে পাওয়া যায় চাঞ্চল্যকর কিছু তথ্য। জানা যায়, পূর্বের সিম রেজিস্ট্রেশনের নিয়ম পরিবর্তনের ফলে অসাধু ব্যবসায়ী প্রতারকদের প্রতারণার কৌশল পাল্টে যায়। বর্তমানে জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে কেউ সিম ক্রয় করে দোকান থেকে চলে গেলে। ওই ব্যক্তির ফিঙ্গার প্রিন্ট ক্লোন করে, ৩ ঘণ্টা পর একই এনআইডি কার্ড দিয়ে পর্যায়ক্রমে একাধিক সিম রেজিস্ট্রেশন করে দোকানে রেখে দেয়া হয়। এভাবে অবৈধ রেজিস্ট্রেশনকৃত সিমগুলো পরবর্তীতে ছেড়ে দেয়া হয় বাজারে। অধিক মূল্য পরিশোধ করলে এনআইডি কার্ড বা ফিঙ্গার প্রিন্ট ছাড়া নতুন গ্রাহকের হাতে তুলে দেয়া হচ্ছে এসব অবৈধ সিম।
এসব সিম দিয়েই বিপদগামী তরুণরা বিকাশ অ্যাকাউন্ট খুলে পাতছে প্রতারণার ফাঁদ। কেউ করছে চাঁদাবাজিও। এসব অবৈধ সিম বিক্রি বন্ধে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে তরুণদের বড় একটি অংশ অপরাধপ্রবণ হয়ে পড়বে। তরুণদের এই প্রতারণার মাশুল দিতে হবে অজ্ঞাত যে সকল ব্যক্তির নামে সিম রেজিস্ট্রেশন হচ্ছে তাদেরকে।
এ বিষয়ে ফরিদগঞ্জ গ্রামীনফোন কাস্টমার কেয়ারের দায়িত্বরত ইনচার্জ বাজারে এ ধরনের সিম পাওয়া যায় তা স্বীকার করলেও দোকানগুলোতে কিভাবে আসে এসব সিম সে বিষয়ে তিনি অবগত নয় বলে জানান। গ্রামীনফোন অপারেটরের এমন অবৈধ সিম যেহুতু বাজারে পাওয়া যাচ্ছে তাহলে সিমগুলো আসে কোথা থেকে? এমব প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান আমরা নিয়ম মেনে সঠিক পদ্ধতি অনুসর করেই মাঠ পর্যায়ে কাজ করা ডিস্টিবিউটরদের সিম প্রদান করি। মাঠ পর্যায়ে কাজ করা কর্মীরা বায়োমেট্রিক পদ্ধতির নিয়ম মেনে রেজিস্ট্রেশন সস্পন্ন করে সিম এক্টিভ করেন এবং আমাদেরকে প্রাপ্ত তথ্য দেন এর বেশি কিছু আমি বলতে পারবো না।
ফরিদগঞ্জ পৌরসভা মোবাইল ফোন রিচার্জ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোহাম্মদ রাসেল জানান, আমাদের অ্যাসোসিয়েশনের রেজিস্ট্রেশনকৃত যত দোকানদার আছে আমরা সবাইকে এ ধরনের সিম বিক্রির ক্ষেত্রে সম্পূর্ণভাবে নিষেধ করেছি। এরপরও যদি কোন দোকানদার নির্দেশনা অমান্য করে এমন সিম বিক্রি করে থাকে তাহলে আমাদের অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে তাদেরকে কোন প্রকার সহযোগিতা করা হবে না এবং ওই দোকানের মালিকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের ক্ষেত্রে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো।
এ বিষয়ে ফরিদগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ শহীদ হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি চাঁদপুর কণ্ঠকে জানান, এর আগে এরকম কোন তথ্য আমরা পাইনি। আমি যেহুতু বিষয়টি অবগত হয়েছি অভিযোগের ভিত্তিতে অপরাধের প্রমাণ পেলে বাজারের ওইসব অসাধু ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবো।