সোমবার, ২৮ জুলাই, ২০২৫  |   ২৯ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ২৮ জুলাই ২০২৫, ১৪:০৮

শিশুর অস্বাভাবিক শারীরিক ভাষা

ডা. টুম্পা ইন্দ্রানী ঘোষ
শিশুর অস্বাভাবিক শারীরিক ভাষা

কোনো কোনো শিশু বারবার কাঁধ ঝাঁকানো, চোখ টেপা বা পিটপিট করা কিংবা বারবার গলা খাঁকারি দেওয়ার মতো অস্বাভাবিক কিছু কাজ করে। এগুলো কি তার বদভ্যাস, নাকি কোনো মানসিক সমস্যা? চিকিৎসাবিজ্ঞানে অনেক সময় এগুলোকে বলা হয় টিক ডিজঅর্ডার (ঞরপ উরংড়ৎফবৎ)। এটি একটি স্নায়ুবিক বিকাশজনিত অবস্থা, যা মূলত শৈশবেই প্রকাশ পায়।

টিক ডিজঅর্ডার কী?

টিক হলো অনিচ্ছাকৃত, হঠাৎ ঘটে যাওয়া এবং পুনরাবৃত্তিমূলক শরীরী ভাষা বা শব্দ। টিক দুই ধরনের হতে পারেÑ

মোটর টিক: চোখ টেপা, মাথা নাড়ানো, কাঁধ ঝাঁকানো, মুখ বাঁকানো ইত্যাদি।

ভোকাল টিক : গলা খাঁকারি দেওয়া, হাঁচির মতো শব্দ ও অপ্রাসঙ্গিক শব্দ বের করা ইত্যাদি।

অনেক সময় এগুলো কয়েক মাস পর আপনা-আপনিই চলে যায়। তবে যদি একটি টিক এক বছরের বেশি সময় ধরে থাকে, তাকে ক্রনিক টিক ডিজঅর্ডার বলে। আর যদি একসঙ্গে মোটর ও ভোকাল টিক উভয়ই এক বছরের বেশি স্থায়ী হয়, তখন একে বলা হয় টোরেট সিনড্রোম।

কেন হয়?

গবেষণায় টিকের সুনির্দিষ্ট কারণ এখনো পুরোপুরি জানা যায়নি, তবে সাধারণভাবে মনে করা হয় যে মস্তিষ্কের বাসাল গ্যাংলিয়া নামক অংশের কার্যক্রমের অসামঞ্জস্যের কারণে এটি হতে পারে। বংশগত ঝুঁকি, চাপ ও নিউরোকেমিক্যাল ভারসাম্যহীনতা এই সমস্যাকে প্রভাবিত করতে পারে।

সাধারণভাবে মনে করা হয় যে মস্তিষ্কের বাসাল গ্যাংলিয়া নামক অংশের কার্যক্রমের অসামঞ্জস্যের কারণে টিকে হতে পারে।

এটি শিশুর দোষ নয়। সে নিজের অজান্তেই, অনিচ্ছাতেই এমনটা বারবার করতে থাকে। অনেক সময় মা-বাবা বা শিক্ষকেরা মনে করেন যে শিশু ইচ্ছাকৃত বা অন্যকে আকর্ষণ করতে এমনটা করছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, অধিকাংশ সময়ই টিকগুলো একেবারেই অনিচ্ছাকৃত এবং অনেক শিশু তা নিজেও লুকাতে চেষ্টা করে। শিশুকে তিরস্কার না করে বরং তার কষ্টটা বোঝা জরুরি।

কী করবেন?

বোঝার চেষ্টা করুন : শিশুর কোন পরিবেশে বা মানসিক অবস্থায় টিক বাড়ে, সেটা পর্যবেক্ষণ করুন। পরীক্ষার সময়, নতুন পরিবেশে বা মানসিক চাপে টিক বাড়তে পারে।

পরিবার ও স্কুলের সহানুভূতি : শিশু যেন লজ্জা বা অপমান বোধ না করে, সেদিকে খেয়াল রাখা জরুরি। স্কুলে শিক্ষকদের এ বিষয়ে সচেতন করতে হবে যাতে তাঁরা শিশুর প্রতি সংবেদনশীল হন।

কখন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেবেন?

যদি টিকÑ

* শিশুর দৈনন্দিন জীবনকে ব্যাহত করে।

* সামাজিক বা একাডেমিক সমস্যার কারণ হয়।

* আত্মবিশ্বাসে প্রভাব ফেলে।

* অন্যান্য মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা যেমন এডিএইচডি, ওসিডি বা উদ্বেগের সঙ্গে যুক্ত হয়, তবে শিশু ও কিশোর মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

চিকিৎসা কী?

টিক ডিজঅর্ডার চিকিৎসাযোগ্য। সব ক্ষেত্রে ওষুধের প্রয়োজন পড়ে না। কিছু কার্যকর পদ্ধতি নিচে দেওয়া হলো :

সিবিআইটি : এটি একটি বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত মনোচিকিৎসা পদ্ধতি, যেখানে শিশু নির্দিষ্ট টিকগুলো নিয়ন্ত্রণে অভ্যস্ত হয়।

ওষুধ : গুরুতর বা ব্যথাদায়ক টিক কমাতে কিছু নির্দিষ্ট ওষুধ ব্যবহার করা হয়।

স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট : রিল্যাক্সেশন এক্সারসাইজ, মাইন্ডফুলনেস বা শ্বাসপ্রশ্বাসের ব্যায়াম সহায়ক হতে পারে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়