শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬  |   ৩৩ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর শহরের পাঁচ রাস্তার মোড়ে 'আল্লাহু চত্বর'
  •   চাঁদপুর কণ্ঠৈর কলামিস্ট এএসএম শফিকুর রহমানের ইন্তেকাল
  •   নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব পেল সেনাবাহিনী
  •   জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনে’ প্রধান উপদেষ্টার ১০০ কোটি টাকার অনুদান
  •   মেঘনায় নিখোঁজ দুই ভাইয়ের মরদেহ উদ্ধার

প্রকাশ : ১৪ নভেম্বর ২০২২, ০০:০০

মানবিক চিকিৎসক ডাঃ মোঃ মনিরুল ইসলাম

ছোটবেলা থেকেই মানুষের সেবক হওয়ার স্বপ্ন দেখতাম

ছোটবেলা থেকেই মানুষের সেবক হওয়ার স্বপ্ন দেখতাম
আলআমিন হোসাইন ॥

অসুস্থ হলে মানুষ সৃষ্টিকর্তার পরে যাঁদের উপর ভরসা রাখেন তাঁরা হলেন চিকিৎসক। এই চিকিৎসক সমাজ নিয়ে সুনামণ্ডদুর্নাম দুটাই আছে। অনেক বদনামণ্ডদুর্নামের মাঝেও কিছু কিছু চিকিৎসক খুঁজে পাওয়া যায় মানবিক চিকিৎসক হিসেবে। যাঁরা তাঁদের সামর্থ্যরে সবটুকু দিয়ে মানুষের সেবায় ব্রত হন। তাঁদেরই একজন ডাঃ মোঃ মনিরুল ইসলাম।

ছোটবেলা থেকেই মানুষের সেবক হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন ডাঃ মোঃ মনিরুল ইসলাম। সে স্বপ্নপূরণও করেছেন নিজের পেশাদারিত্ব এবং কর্তব্যনিষ্ঠার মাধ্যমে। ফলে চিকিৎসক হিসেবে আত্মনিয়োগের প্রথমদিন থেকেই সাধারণ মানুষের দোয়া আর ভালোবাসা তাকে আরো অনুপ্রাণিত করে, সেবা প্রদানে সাহস ও শক্তি জোগায়। বর্তমানে তিনি আড়াইশ শয্যাবিশিষ্ট চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালে জুনিয়র কনসালটেন্ট (সার্জারি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এই হাসপাতালে কোনো গরিব-অসহায় রোগী ডাঃ মনিরুল ইসলামের কাছে আসলে তাদেরকে তিনি হাসপাতালেই যথাযথ চিকিৎসার ব্যবস্থা করে থাকেন। প্রাইভেট হাসপাতালে যাওয়া থেকে বা প্রাইভেট চিকিৎসা নেয়া থেকে তিনি তাদেরকে কঠোরভাবে বারণ করেন। এজন্যে তিনি গরিবের এবং মানবিক চিকিৎসক হিসেবে পরিচিতি।

ডাঃ মোঃ মনিরুল ইসলাম সম্প্রতি দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠের চিকিৎসাঙ্গন বিভাগের মুখোমুখি হন।

সাক্ষাৎকার নেন আলআমিন হোসাইন।

চাঁদপুর কণ্ঠ : কেমন আছেন?

ডাঃ মোঃ মনিরুল ইসলাম : আলহামদুলিল্লাহ। মহান আল্লাহর অশেষ রহমতে খুব ভালো আছি।

চাঁদপুর কণ্ঠ : আপনার শৈশব-কৈশোর কেটেছে কোথায়?

ডাঃ মোঃ মনিরুল ইসলাম : আমার বাবা একজন সরকারি চাকরিজীবী ছিলেন। বাবার চাকরির সুবাদে দেশের বিভিন্ন জেলা বিশেষ করে নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, বগুড়া, মাদারীপুর, খাগড়াছড়ি এবং সর্বশেষ কুমিল্লা জেলায় আমার শৈশব ও কৈশোর কেটেছে এবং পড়াশোনা করেছি।

চাঁদপুর কণ্ঠ : আপনার শিক্ষাজীবন সম্পর্কে জানতে চাই।

ডাঃ মোঃ মনিরুল ইসলাম : ১৯৯৩ সালে আমি খাগড়াছড়ি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করি। চট্টগ্রাম সরকারি সিটি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করি। এরপর কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করি। বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ানস্ এন্ড সার্জনস্ (বিসিপিএস), ঢাকা থেকে এফসিপিএস ডিগ্রি অর্জন করি।

চাঁদপুর কণ্ঠ : চিকিৎসক হওয়ার ভাবনাটির সূচনা হলো কীভাবে?

ডাঃ মোঃ মনিরুল ইসলাম : ছোটবেলা থেকেই মানুষের সেবায় নিজেকে যুক্ত রাখার মনোবাসনা ছিলো। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে চিকিৎসক হিসেবে মানুষকে খুব কাছ থেকে সেবা প্রদান সহজ। তাই চিকিৎসা পেশাটি আমার কাছে উত্তম বলে মনে হয়। শিক্ষাজীবনে মানুষের সেবা করার মনোবাসনাটি প্রবলভাবে অনুভব করি। আর সে থেকেই চিকিৎসক হওয়ার ভাবনার সূচনা। মহান আল্লাহ আমার মনোবাসনা পূরণ করেছেন। আমি মানুষের সেবায় নিয়োজিত রয়েছি। আমৃত্যু মানুষকে চিকিৎসা সেবা দিয়ে যেতে চাই।

চাঁদপুর কণ্ঠ : চিকিৎসক হিসেবে প্রথমদিনের অভিজ্ঞতার কথা বলুন।

ডাঃ মোঃ মনিরুল ইসলাম : শিক্ষানবিশ চিকিৎসক হিসেবে যখন কুমিল্লা মেডিকেল কলেজে রোগীদের সেবা দিতে যুক্ত হই, সেদিন ছিলো আমার জীবনের সবচেয়ে খুশির দিন। চেষ্টা করেছি রোগীদের যথাযথভাবে সেবা দিয়ে দ্রুত সুস্থ করে তুলতে। বেশ কিছু অসহায় দুঃস্থ রোগীকে সেবা প্রদানের মাধ্যমে দ্রুত সুস্থ করে তোলার পর তাদের মুখের হাসি ও দোয়া আমাকে অনুপ্রাণিত করে। যেটা আমাকে পরবর্তীতে আরো ভালো করার শক্তি ও সাহস যুগিয়েছে।

চাঁদপুর কণ্ঠ : চাঁদপুরে যোগদান করেছেন কবে?

ডাঃ মোঃ মনিরুল ইসলাম : ২০১০ সালের জানুয়ারি মাসে।

চাঁদপুর কণ্ঠ : চাঁদপুরের চিকিৎসাব্যবস্থার সার্বিক দিক নিয়ে কিছু বলুন।

ডাঃ মোঃ মনিরুল ইসলাম : বর্তমানে চাঁদপুরের চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতি হয়েছে। আড়াইশ শয্যাবিশিষ্ট চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালে রোগীদের সেবার মান উন্নত হয়েছে। আগে যেসব সমস্যায় রোগীদের ঢাকা রেফার করা হতো এখন চাঁদপুরে এ হাসপাতালে সেসবের চিকিৎসা প্রদান করা হয়। এছাড়া বেসরকারি স্বাস্থ্য খাতেরও উন্নতি হচ্ছে। এতে রোগীরা হাতের নাগালে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছেন।

চাঁদপুর কণ্ঠ : আপনার কাছে কোন্ ধরনের রোগী বেশি আসে?

ডাঃ মোঃ মনিরুল ইসলাম : আমি যেহেতু একজন সার্জন, তাই অপারেশন সংক্রান্ত জটিলতার রোগী বেশি আসেন।

চাঁদপুর কণ্ঠ : রোগীদের কাছে আপনার প্রত্যাশা কী?

ডাঃ মোঃ মনিরুল ইসলাম : শরীরে অসুস্থতা অনুভব করলে কোনো প্রকার গড়িমসি না করে সরাসরি চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন। বিশেষ করে শারীরিক যে সকল সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে রোগীরা কবিরাজ কিংবা কথিত চিকিৎসকের কাছে যান, এতে রোগমুক্তির পরিবর্তে রোগাক্রান্ত বেশি হয়ে শেষ মুহূর্তে হাসপাতালে আসেন। এতে কিন্তু একজন চিকিৎসক খুব বেশি সময় পান না। ফলে রোগীর জীবন সঙ্কটাপন্ন হয়ে পড়ে। তাই আমি বলবো, রোগীদের সচেতন হতে হবে। দালাল কিংবা লোভের বশবর্তী হয়ে নিজের জীবনের ক্ষতি করা যাবে না। জীবন খুবই সুন্দর।

চাঁদপুর কণ্ঠ : চিকিৎসাজীবনের একটি সুখের এবং একটি দুঃখের স্মৃতির কথা বলুন।

ডাঃ মোঃ মনিরুল ইসলাম : আমি একজন সার্জারি চিকিৎসক। জটিল বিভিন্ন অপারেশন করতে হয়। যখন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থাকা রোগীকে চিকিৎসা সেবা প্রদানের মাধ্যমে সুস্থ করে তোলা হয় তখন মনে সুখ পাই। মহান আল্লাহর প্রতি শোকরিয়া জ্ঞাপন করি। আর যখন শত চেষ্টা করেও কোনো রোগীকে বাঁচাতে না পারি তখন মনে ভীষণ দুঃখ পাই।

চাঁদপুর কণ্ঠ : চিকিৎসাসেবা দিতে গিয়ে কী কী প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হচ্ছেন?

ডাঃ মোঃ মনিরুল ইসলাম : চিকিৎসাসেবা দিতে গিয়ে প্রধান যে প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হই সেটি হলো, নির্ভেজাল রিপোর্ট। কেননা রোগ নির্ণয়ে চিকিৎসক যে স্বাস্থ্যগত পরীক্ষাগুলো দেন সেগুলো অনেক সময় ভালো হয় না। ফলে রোগীর সঠিক রোগ নির্ণয় করা কঠিন হয়ে পড়ে এবং রোগীর অবস্থা জটিল হয়ে পড়ে। তাই আমি বলবো, যেসব ডায়াগনস্টিক ক্লিনিক এসব পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজ করে থাকে, তাদেরকে ব্যবসায়িক মনমানসিকতা পরিহার করে মানুষের সেবায় মনোনিবেশ করতে হবে।

চাঁদপুর কণ্ঠ : আপনি স্বাস্থ্যমন্ত্রী হলে প্রথম যে তিনটি কাজ করতেন?

ডাঃ মোঃ মনিরুল ইসলাম : সঠিক ও কার্যকর স্বাস্থ্যসেবা সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে এলাকাভিত্তিক জনগণের সংখ্যার তারতম্যের ভিত্তিতে চিকিৎসক নিয়োগ করতাম। মানুষের রোগমুক্তির জন্যে রোগভিত্তিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে রেফারেন্স ব্যবস্থা করতাম। অর্থাৎ একজন মেডিকেল অফিসার রোগীর রোগের অবস্থা নির্ণয় করে উক্ত রোগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে রোগীকে পাঠানোর ব্যবস্থা করতাম। এতে রোগীরা দ্রুত আরোগ্য লাভ করবেন বলে আমি বিশ্বাস করি।

চাঁদপুর কণ্ঠ : রোগমুক্ত জীবনযাপন করতে সাধারণ মানুষের উদ্দেশ্যে কিছু বলুন।

ডাঃ মোঃ মনিরুল ইসলাম : সুস্থ-সুন্দর জীবনের জন্য আমাদের নিজেদের বদলাতে হবে। স্বাস্থ্য সম্পর্কে আমাদের সচেতন হতে হবে। আমরা লাইফস্টাইল পরিবর্তন করে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ওষুধ ছাড়াই সুস্থ-সুন্দর জীবনযাপন করতে পারি। স্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাস, সঠিক ও পুষ্টিকর খাবার খাওয়া, নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে হবে।

চাঁদপুর কণ্ঠ : অবসরে কী করেন?

ডাঃ মোঃ মনিরুল ইসলাম : অবসরে বই পড়ি। ভ্রমণ করি।

চাঁদপুর কণ্ঠ : আপনার স্ত্রী-সন্তানের পরিচয় সংক্ষেপে দিন।

ডাঃ মোঃ মনিরুল ইসলাম : আমার স্ত্রী ডাঃ শারমিন সিদ্দিকী। তিনি গাইনী ও অবস্ বিশেষজ্ঞ। আমার এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। মেয়ে নবম শ্রেণি এবং ছেলে ষষ্ঠ শ্রেণিতে অধ্যয়নরত।

চাঁদপুর কণ্ঠ : উপরোক্ত প্রশ্ন ও কথোপকথনের বাইরে আপনার বিশেষ কিছু বলার থাকলে বলুন।

ডাঃ মোঃ মনিরুল ইসলাম : প্রত্যেকে যার যার উপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করলে দেশ ভালো থাকবে। দেশের উন্নতি ত্বরান্বিত হবে।

* চিকিৎসাঙ্গন বিভাগে লেখা পাঠানোর ই-মেইল : [email protected]

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়