প্রকাশ : ২০ ডিসেম্বর ২০২১, ০০:০০
কাশিতে রক্ত : কারণ ও প্রতিকার
ডাঃ পীযূষ কান্তি বড়ুয়া
কাশি মানবদেহের শ্বাসতন্ত্রের একটি সাধারণ শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া। এটি কখনো কখনো নিরাপত্তামূলক প্রতিক্রিয়ার অংশবিশেষ কিংবা কখনো শ্বাসনালী পরিষ্কারকরণ প্রক্রিয়ার প্রতিক্রিয়াও বটে। কাশি অনৈচ্ছিক ও হতে পারে আবার ঐচ্ছিকও হতে পারে। কাশি হলো শ্বাসতন্ত্রের মাংশপেশির সমন্বিত ক্রিয়া। কাশি কখনো কখনো শুকনো হতে পারে,আবার কখনো কাশিতে কফও যায়। কফের রঙও হতে পারে বিভিন্ন। কফ ছাড়াও কাশিতে কখনও কখনও রক্ত নির্গত হয়। হাল্কা রক্তের বর্ণ কিংবা ঢালা রক্ত। কাশিতে রক্ত দেখলেই আমাদের আতঙ্ক তৈরি হয়। হওয়াটাও স্বাভাবিক।
|আরো খবর
কাশিতে ২০ মিলিলিটারের কম রক্ত গেলে তাতে জীবন আতঙ্কিত হয় না। ২০ থেকে ২০০ মিলি রক্ত নির্গত হলে জীবন সংশয়ের মাঝারি আশঙ্কা থাকে। ২০০ থেকে ৬০০ মিলি বা তার বেশি রক্ত গেলে তা জীবন সংশয় ঘটানোর কারণ হয়।
কখনো জোর করে কাশি দিতে গেলে কিংবা কাশির দমক বেশি হলে ছোট ছোট রক্তনালী ফেটে গিয়ে কাশিতে হাল্কা রক্ত যেতে পারে। এটাতে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। এক-দুবার এর পর আর রক্ত দেখা যায় না। এর জন্যে কাশি নিরাময়কারি ঔষধ সেবনই যথেষ্ট। কাশিতে টাটকা রক্ত যেতে পারে যক্ষ্মা রোগে। এর সাথে ঐ রোগীর ঘুষঘুষে জ্বর, ওজন কমে যাওয়া, রাতে বিছানা ঘামে ভেজানোর উপসর্গ থাকতে পারে। আবার ফুসফুসের চূড়ান্ত পর্যায়ের ক্যান্সারে কাশিতে ঢালাও রক্ত যায়। এতে বুকে ব্যথা হয়, ব্যথা হাড়ে ছড়িয়ে পড়ে, নিঃশ্বাসে কষ্ট হয়। হার্ট ফেইলিওরের কাশিতে ফেনা ফেনা কফের সাথে রক্ত নির্গত হয়। এদের শ্বাসকষ্টের পাশাপাশি হাতে-পায়ে ফুলে যাওয়া বা জেনারালাইজ্ড ইডিমা দেখা দেয়।
যক্ষ্মা রোগের কাশিতে রক্ত বন্ধ করতে যক্ষ্মার ফিক্সড্ ডোজ কম্বিনেশনের ঔষধ নিয়মিত সেবন জরুরি। বিনামূল্য ডটস্ সেন্টারে এসব ঔষধ ও সেবা পাওয়া যায়। ফুসফুসের ক্যান্সারের চূড়ান্ত পর্যায়ের কাশিতে রক্ত নির্গমণের কারণ রোধ করা সম্ভব নয়। কেননা তা সারা শরীরে ছড়িয়ে যাওয়ায় আর ফুসফুসের আক্রান্ত অংশবিশেষ শৈল্যচিকিৎসায় ফেলে দিয়েও লাভ হয় না। হার্ট ফেইলিওর এর কারণ নির্ণয় করে চিকিৎসা গ্রহণ করলে কাশিতে রক্ত নির্গমণ বন্ধ হতে পারে। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা, ফুসফুসের জলস্ফীতি বা ইডিমা নিয়ন্ত্রণে রাখা, রক্তস্বল্পতা বিদূরণ করে হার্ট ফেইলিওরের কাশিতে রক্ত নির্গমণ রোধ করা যায়।