মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪  |   ২৭ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   মিশরে ঈদে মিলাদুন্নবীর ঐতিহ্য ‘আরুসাত-আল-মোলিদ’ : জন্মদিনের পুতুল
  •   'বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের চেতনার রাজনৈতিক শক্তির বিকাশ অপরিহার্য'
  •   চাঁদপুরের ২৪তম পুলিশ সুপার মুহম্মদ আব্দুর রকিব
  •   ফরিদগঞ্জে ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে শোভাযাত্রা
  •   ওয়াইফাই সংযোগ দিতে গিয়ে প্রাণ গেল যুবকের

প্রকাশ : ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০

বন্যায় সুরক্ষিত ও সুস্থ থাকার উপায়

বন্যায় সুরক্ষিত ও সুস্থ থাকার উপায়

ভারি বর্ষণ ও ভারত থেকে আসা পাহাড়ি ঢলের পানি নোয়াখালী, ফেনী, কুমিল্লাসহ বিভিন্ন জায়গায় বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। ফলে নদীর পানি উপচে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটিয়েছে। পানি বেড়ে যাওয়ায় উৎকণ্ঠার মধ্যে রয়েছে নদীর চরাঞ্চলের কৃষকসহ সাধারণ মানুষ। ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতিতে উত্তেজিত না হয়ে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। কিছু বিষয় অনুসরণ করে নিরাপদ স্থানে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করতে হবে। জেনে নিন করণীয়-

বন্যার পানি বেড়ে গেলে দ্রুত পরিবারের সবার সঙ্গে কথা বলে আশ্রয় স্থানের সন্ধান খুঁজুন। প্রয়োজনে বাড়ি ছেড়ে নিরাপদ স্থানে কোনো আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা করুন। একা কোনো সিদ্ধান্ত নেবেন না। এ পরিস্থিতিতে সবার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কাজ করুন। তা ছাড়া আশ্রয় স্থানের জন্য স্থানীয় জরুরি ব্যবস্থাপনা অফিস, পরিকল্পনা ও জোনিং বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ রাখুন।

বন্যা পরিস্থিতিতে বাড়িতে বিদ্যুৎ ছাড়া কীভাবে আলোর ব্যবস্থা করা যায়, তা নিশ্চিত করুন। তবে এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, তা হলো- প্রধান পাওয়ার সুইচের ইউটিলিটিগুলো বন্ধ করে দেওয়া। কারণ বৈদ্যুতিক সংযোগ পানির সংস্পর্শে এলেই ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

গুরুত্বপূর্ণ নথিগুলো প্লাস্টিকের ফোল্ডারে রাখার চেষ্টা করুন। এছাড়া প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বিশেষ করে টাকা-পয়সা, জমির দলিল, শিক্ষা সনদ নিরাপদ স্থানে রাখুন। পাসপোর্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্স, জন্ম নিবন্ধন, ব্যাংকের কাগজপত্র, নগদ অর্থ পানিরোধী পাত্রে সংরক্ষণ করতে পারেন।

শুকনো খাবার বিশেষ করে মুড়ি, চিড়া, গুড়, চিনি সংরক্ষণ করতে হবে। বিশুদ্ধ খাবার পানি সংরক্ষণের জন্য চৌবাচ্চার ব্যবস্থা করতে হবে।

সহজে বহনযোগ্য চুলা ও রান্না করার জন্য শুকনো জ্বালানির ব্যবস্থা করতে হবে।

বৃদ্ধ, শিশু, শারীরিক প্রতিবন্ধী ও অন্তঃসত্ত্বা নারীর ওপর বিশেষ নজর দিতে হবে। বিশেষ করে শিশুদের দিকে। অনেক সময় শিশুরা পানিতে নেমে যায় খেলতে, এতে বড় কোনো বিপদ হতে পারে।

একটি ব্যাগ গুছিয়ে রাখুন। যেখানে কমপক্ষে তিন দিনের জন্য পর্যাপ্ত খাবার ও পানি নিন। প্রত্যেকের জন্য একটি করে পোশাক, প্রয়োজনীয় ওষুধ রাখুন।

এ সময় উঁচু স্থান দেখে কোনো সেতুতে আশ্রয় নেবেন না। কারণ বন্যার পানি সেতুর ওপর দিয়েও প্রবাহিত হতে পারে।

সাপ ও বিভিন্ন প্রাণী আপনার বাড়িতে থাকতে পারে, তাই সতর্ক থাকুন। সম্ভব হলে গ্লাভস ও বুট পরুন।

বন্যায় ডায়রিয়া প্রতিরোধে খাওয়ার আগে এবং পায়খানা করার পর হাত ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে। ডায়রিয়া শুরু হলে পরিমাণমতো খাওয়ার স্যালাইন খেতে হবে। খাওয়ার স্যালাইন না থাকলে বিকল্প হিসেবে লবণ-গুড়ের শরবত খাওয়াতে হবে। পাশাপাশি ভাতের মাড়, চিড়ার পানি, ডাবের পানি, কিছু পাওয়া না গেলে শুধু নিরাপদ পানি খাওয়ানো যেতে পারে। এ সময় শিশুর পুষ্টিহীনতা রোধে খিচুড়ি খাওয়ানো যেতে পারে।

বন্যায় সময় পচা-বাসি খাবার খেতে বাধ্য হয় অসংখ্য মানুষ। ফলে ছড়িয়ে পড়ে ডায়রিয়াসহ অন্যান্য রোগ। খিচুড়ি খাওয়া এ সময় স্বাস্থ্যোপযোগী। খাবার প্লেট সাবান ও নিরাপদ পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। পানি বেশি খরচ হয় বলে অনেকে প্রথমে একবার স্বাভাবিক পানিতে থালাবাসন ধুয়ে তারপর ফুটানো পানিতে ধুয়ে নেন। কিন্তু এটা ঠিক নয়। এতে থালাবাসনে অনেক ধরনের জীবাণু ছড়িয়ে থাকতে পারে।

বন্যার সময় যেখানে-সেখানে মলত্যাগ করা উচিত নয়। এতে পেটের পীড়া ও কৃমির সংক্রমণ বেড়ে যায়। মলত্যাগের পর সাবান বা ছাই দিয়ে ভালো করে হাত ধুয়ে ফেলতে হবে। এ সময় বাসার সবাইকে কৃমির ওষুধ খাওয়ানো উচিত। তবে দুই বছর বয়সের নিচের শিশুদের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

বন্যার দূষিত পানি পান করা যাবে না। পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, ফিটকিরি ব্যবহার করে পানি পান করতে হবে। বন্যার পানিতে গোসল করা, জামাকাপড় ধোয়া যাবে না।

বন্যার পানিতে টিউবওয়েল তলিয়ে গেলে এক কলস পানিতে তিন-চার চা চামচ ব্লিচিং পাউডার মিশিয়ে টিউবওয়েলের ভেতর এই পানি ঢেলে দিন। এবার আধা ঘণ্টা রেখে এরপর একটানা আধা ঘণ্টা চেপে পানি বের করে ফেলে দিলে সেই পানি খাওয়ার উপযোগী হয়। ব্লিচিং পাউডার না থাকলে এক ঘণ্টা টিউবওয়েলের পানি চেপে বের করে ফেলতে হবে। তবে নিরাপত্তার জন্য টিউবওয়েলের পানিও ভালোমতো ফুটিয়ে নেওয়া উচিত।

পানি ফোটানোর ব্যবস্থা না থাকলে প্রতি দেড় লিটার খাওয়ার পানিতে ৭.৫ মিলিগ্রাম হ্যালোজেন ট্যাবলেট (হ্যালোট্যাব), তিন লিটার পানিতে ১৫ মিলিগ্রাম ট্যাবলেট এবং ১০ লিটার পানিতে ৫০ মিলিগ্রাম ট্যাবলেট আধা থেকে এক ঘণ্টা রেখে দিলে পানি বিশুদ্ধ হয়। আবার বাসার পানির ট্যাঙ্কের প্রতি এক হাজার লিটার পানিতে ২৫০ গ্রাম ব্লিচিং পাউডার এক ঘণ্টা রাখলে পানি বিশুদ্ধ হবে। এ ক্ষেত্রে অবশ্য ভাইরাস জীবাণু ধ্বংস হয় না।

বন্যার দূষিত পানি পানে হতে পারে কলেরা, আমাশয়, জন্ডিস, ডায়রিয়া এবং টাইফয়েডের মতো মারাত্মক পানিবাহিত রোগ। বাড়ে মৃত্যুঝুঁকি। তাই প্রয়োজন বিশুদ্ধ পানি পান করা। পানি ফুটিয়ে পান করতে হবে। উচ্চতাপে ১০-২০ মিনিট পানি ভালোভাবে ফোটাতে হবে। ফলে পানিতে থাকা রোগজীবাণু ধ্বংস হয়ে যায়, ধাতব লবণ থিতিয়ে পড়ে ও দ্রবীভূত গ্যাস বের হয়ে যায়। পানির সর্বোচ্চ বিশুদ্ধতা নিশ্চিত করার জন্য ফোটানোর পর ফিল্টার ব্যবহার করতে হবে।

বৃষ্টির পানির গুণমান উন্নত করতে দুটি কাজ করতে পারেন। বৃষ্টির পানি ফুটিয়ে নেওয়া বা পানি ফিল্টার করে পান করা। পানি ফোটানো হলে প্যাথোজেনগুলো ধ্বংস হয়ে যায়। ফিল্টারের ফলে ধূলিকণাসহ অন্যান্য দূষক দূর হয়ে যাবে। বৃষ্টির পানি কীভাবে সংগ্রহ করছেন তার ওপরও পানির মান নির্ভর করে। বৃষ্টির পানি পরিষ্কার বালতি বা বাটিতে সংগ্রহ করতে পারেন। বৃষ্টি শুরু হওয়ার ১০ মিনিট পর থেকে পরিষ্কার পাত্রে পানি সংগ্রহ করে রাখলে পানি পানের উপযোগী হয়।

বন্যার সময় বৈদ্যুতিক দুর্ঘটনা, পানিতে ডুবে যাওয়া, সাপ ও পোকামাকড়ের কামড়ের ঘটনাগুলো বেশি ঘটে। বৈদ্যুতিক তার ছিঁড়ে গেলে বা পানিতে পড়ে থাকতে দেখলে তা স্পর্শ না করে বিদ্যুৎকর্মীদের জরুরি খবর দিন। সাপে কাটলে ভয়ের কিছু নেই। তবে বিষধর সাপে কাটলে সাপে কাটা স্থানের সামনে মোটা কাপড় বা গামছা বা রশি দিয়ে গিঁট দিতে হবে। এরপর দ্রুত হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। হাসপাতালে জরুরি ভিত্তিতে অ্যান্টিভেনম এবং টিটেনাস প্রতিষেধক দিতে হবে। ইঁদুরে কাটলেও অবহেলা না করে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

তথ্যসূত্র : কালবেলা।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়