প্রকাশ : ০৩ জুন ২০২৪, ০০:০০
মানবদেহে ইলেকট্রোলাইটের ভূমিকা
মানুষের দেহ এক আজব রাসায়নিক কারখানা। প্রতিনিয়ত এতে ঘটছে বিভিন্ন ক্রিয়া-বিক্রিয়া। এ শারীরবৃত্তীয় রাসায়নিক ক্রিয়া-বিক্রিয়ায় উৎপন্ন হয় বিভিন্ন আয়ন বা ইলেকট্রোলাইট। ইলেকট্রোলাইট বা আয়নের ধনাত্মক বা ঋণাত্মক বৈদ্যুতিক চার্জ থাকে। এই ইলেকট্রোলাইটগুলো আসলে বিভিন্ন খনিজ উপাদান যারা খুব স্বল্প পরিমাণে দেহে বিরাজ করে শরীরে বিভিন্ন উপকার কিংবা অপকার সাধন করে।
আমাদের দেহে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ইলেকট্রোলাইট : সোডিয়াম, পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ক্লোরাইড, বাইকার্বোনেট, ফসফরাস ইত্যাদি ইলেকট্রোলাইট অম্লীয়, ক্ষারকীয় বা নিরপেক্ষ হতে পারে। রক্তে এদের মান পরীক্ষার জন্যে নিম্নলিখিত উপায় অবলম্বন করা যায় :
আয়নাইজড ক্যালসিয়াম, সিরাম ক্যালসিয়াম, সিরাম ক্লোরাইড, সিরাম ম্যাগনেসিয়াম, সিরাম পটাশিয়াম, সিরাম সোডিয়াম, সিরাম ফসফেট, সিরাম ইলেকট্রোলাইট ইত্যাদি।
মানবদেহে ইলেকট্রোলাইটের ভূমিকা : শরীরের পেশির সংকোচন-প্রসারণ নিয়ন্ত্রণ, হৃদপেশির সংকোচন-প্রসারণ নিয়ন্ত্রণ, শরীরে পানি-সাম্য নিয়ন্ত্রণ, স্নায়ুতন্ত্রের সংবেদন পরিবহন নিয়ন্ত্রণ রক্তের পিএইচ নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি।
শরীরে ইলেকট্রোলাইট ভারসাম্যহীনতার কারণ : অতিরিক্ত তাপ ও তাপমাত্রা, পানিশূন্যতা, বমি, পাতলা পায়খানা, রক্তক্ষরণ, কিডনি ফেইলিওর, অগ্নিদাহ, ইটিং ডিজঅর্ডার।
ইলেকট্রোলাইট ভারসাম্যহীনতার উপসর্গ : অবসন্নতা, দ্রুত ও অনিয়মিত হৃৎস্পন্দন, ত্বকের সংবেদনহীনতা ও ঝিনঝিন অনুভূতি, ঘোর ও অচেতনতা, প্রলাপ বকা, বেশি কথা বলা, অস্থিরতা, অস্বাভাবিক আচরণ করা, মাংশপেশির দুর্বলতা ও কামড়ে ধরা মাথাব্যথা, খিঁচুনি।
ইলেকট্রোলাইট ভারসাম্যহীনতায় করণীয় : শরীরে বিভিন্ন ইলেকট্রোলাইটের রক্তমান পরীক্ষা করা, ইলেকট্রোলাইট ভারসাম্যহীনতার কারণ বের করা, ইলেকট্রোলাইট কমে গেলে তা দ্রুত শুধরে নিয়ে স্বাভাবিক মানে ফিরিয়ে আনা, ইলেকট্রোলাইট বেড়ে গেলে ওই ইলেকট্রোলাইট বৃদ্ধির উৎস বন্ধ করে দেওয়া।
ইলেকট্রোলাইট ভারসাম্য স্বাভাবিক করার কয়েকটি প্রক্রিয়া : মাত্রাভেদে শিরাপথে নরমাল স্যালাইনের মাধ্যমে বা ওরাল স্যালাইন পান করে সেডিয়াম ও ক্লোরাইডের মান স্বাভাবিকীকরণ করা যায়। শিরাপথে ল্যাক্টোরাইডের মাধ্যমে ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, সোডিয়াম, ক্লোরাইড ইত্যাদি ইলেকট্রোরাইডের রক্তমান স্বাভাবিক করা যায়।
ট্যাবলেট সোডিয়াম ক্লোরাইড ওষুধ হিসেবে, আলগা লবণ পাতে যোগ করে সোডিয়াম ও ক্লোরাইড ঘাটতি পূরণ করা যায়।
ইলেকট্রোকে সিরাপের মাধ্যমে পটাশিয়াম ঘাটতি দূর করা যায়।
ইঞ্জেকশন কে-২০ এর মাধ্যমে রক্তে পটাশিয়ামণ্ডঘাটতি পূরণ করা যায়।
ক্যালসিয়াম গ্লুকোনেট ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে ক্যালসিয়াম ঘাটতি পুরানো যায়।
যদি রক্তে সোডিয়াম, ক্লোরাইড বেড়ে যায়, তবে লবণ গ্রহণে সচেতন হতে হবে এবং আলগা লবণ খাওয়া বন্ধ করতে হবে।
যদি রক্তে পটাশিয়াম বেড়ে যায়, তবে তাজা ফল খাওয়া বন্ধ করে দিতে হবে।