প্রকাশ : ২৩ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সুসম্পর্ক জরুরি
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাকে দীর্ঘ ৩১ বছর শিক্ষকতার মতো মহৎ পেশায় নিয়োজিত রেখেছেন এজন্যে আমি শোকরিয়া আদায় করছি। দীর্ঘ এ শিক্ষকতা জীবনে নানা চড়াই-উতরাই পার করেছি কিন্তু কখনোই হাল ছাড়িনি। মহান আল্লাহর উপর ভরসা রেখে নিজের ওপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেছি। কখনো অন্যায়ের কাছে মাথানত করিনি।
আমার বাবা ছিলেন শিক্ষক। বাবা যখন পড়াতেন, তখন আমার কাছে মনে হতো শিক্ষার্থীরা খুব ভালোভাবে তা আত্মস্থ করতে পারছে। শিক্ষার্থীরা আমার বাবাকে খুবই সম্মান করতো। এজন্যে আমি নিজেও শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন দেখি। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স-মাস্টার্স পাস করে ১৬তম বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিয়ে শিক্ষকতা পেশায় আত্মনিয়োগ করি।
শিক্ষক হিসেবে প্রথম দিন আনন্দ ও ভয়ে কেটেছে। দীর্ঘ ছাত্রজীবনের অবসান ঘটিয়ে শিক্ষক হিসেবে পদার্পণ করি। শিক্ষার্থীদের মাঝে নিজের আহরিত-অর্জিত জ্ঞান বিতরণে নিজেকে প্রস্তুত বলে মনে আনন্দ অনুভব করি। নিজের স্বপ্নপূরণের সেদিনের স্মৃতি আজও বয়ে বেড়াই। বাবার মতো শিক্ষক হয়েছি, সে আনন্দ ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। একই সাথে খুবই ভয়ে ছিলাম। কারণ, ঠিকমতো শিক্ষার্থীদের পাঠ বোঝাতে পারবো কি না সে ভয় মনে ছিলো। তবে মহান আল্লাহ আমাকে সে ভয় কাটিয়ে বিজয়ের দিশা দিয়েছেন। শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত পাঠগ্রহণ আমার সেই ভয় দূর করতে সক্ষম হয়।
চাঁদপুর সরকারি কলেজ জেলার সবচেয়ে বড় বিদ্যাপীঠ। কলেজের নান্দনিক পরিবেশসহ শিক্ষাদানের পরিবেশ বেশ উন্নত, মানসম্মত ও সুন্দর। মেঘনাপাড়ের এ বিদ্যাপীঠে জেলার অসংখ্য শিক্ষার্থীসহ আশপাশের জেলার শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করছে। কলেজের মনোরম পরিবেশে শিক্ষার্থীরা এখানে আনন্দের সাথে পাঠগ্রহণ করে থাকে। কলেজে সুবিশাল মাঠসহ রয়েছে ইনডোর-আউটডোর খেলার ব্যবস্থা। রয়েছে দৃষ্টিনন্দন বাস্কেটবল গ্রাউন্ড। বিপুল বই-সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার রয়েছে। শিক্ষার্থীরা নিয়মিত উল্লেখযোগ্য জাতীয় দৈনিকসহ স্থানীয় পত্রিকার মাধ্যমে প্রতিদিনের বিশ্ব সম্পর্কে জানতে পারছে। গ্রন্থাগারে বসে শিক্ষার্থীরা তাদের জ্ঞানের পিপাসা নিবারণের সুযোগ পাচ্ছে। সবচেয়ে বড় কথা, চাঁদপুর সরকারি কলেজ ছাত্ররাজনীতির প্রভাব থেকে মুক্ত। কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর অসিত বরণ দাশ স্যারের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় শিক্ষকবৃন্দ নিরলসভাবে দায়িত্ব পালন করছেন।
সমাজকর্ম বিভাগ চাঁদপুর সরকারি কলেজের অন্যতম একটি বিভাগ। এ বিভাগে আসনসংখ্যা ২০০। উক্ত আসন পরিপূর্ণ হয়েও অনেক শিক্ষার্থী এ বিভাগে ভর্তির জন্য আবেদন করে, এটা আনন্দের খবর। তবে এ বিভাগে শ্রেণিকক্ষ ও শিক্ষক সঙ্কট রয়েছে। উল্লেখযোগ্য এ দুটি প্রতিবন্ধকতা দূর করা জরুরি। তাহলে বিভাগটি আরো অগ্রসর হবে বলে আমি বিশ্বাস করি।
আমার সহকর্মীরা খুবই আন্তরিক ও বন্ধুবৎসল। তাঁরা সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে কাজ করেন। বিভাগীয় দায়িত্ব পালনে তাঁরা আমাকে আন্তরিকভাবে সহযোগিতা করেন। শিক্ষার্থীদের সহজ ও সাবলীলভাবে পাঠদানে আমরা সমন্বিতভাবে কাজ করি। নিজেদের মধ্যে অভিজ্ঞতা বিনিময় করি। এতে পরস্পর সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি হয়। এ বিভাগে আমার সহকর্মী হিসেবে রয়েছেন সহকারী অধ্যাপক আলমগীর হোসাইন, সহকারী অধ্যাপক নাশিদ সিফাত ও প্রভাষক নূরুন নাহার। সহকর্মীদের সহযোগিতায় আমি খুব সহজেই অর্পিত দায়িত্ব পালন করতে পারছি। অফিস সহকারী মোঃ মিজানুর রহমান নিষ্ঠার সাথে নিজের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করে থাকেন।
সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষার্থীরা সহ-পাঠক্রমিক বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে কৃতিত্বের সাক্ষর রাখছে। দেয়ালিকা, বির্তক, আবৃত্তি, শিক্ষা সফর, ফুটবল, ভলিবল, বিষয়ভিত্তিক রচনা প্রতিযোগিতা, কুইজ প্রতিযোগিতায় শিক্ষার্থীরা নিয়মিত অংশ নিয়ে থাকে। এতে শিক্ষার্থীদের মনোজগতের উন্নতি হচ্ছে। এছাড়া রোভার স্কাউটসহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে আমাদের শিক্ষার্থীরা যুক্ত রয়েছে। প্রতি বছর সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষার্থীরা ভালো ফলাফল অর্জন করছে। প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণসহ মেধাতালিকায় কৃতিত্বের সাক্ষর রাখছে। যারা দেশের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন পদে ভূমিকা রাখছে।
শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্পর্ক ভালো হওয়া খুবই জরুরি। এতে শিক্ষার মান উন্নত হয়। একই সাথে ভালো ফলাফল অর্জন করা সম্ভব হয়। আমাদের সমাজকর্মে ‘র্যাপো’ তথা পেশাগত সম্পর্ক নামে একটি কথা আছে। ঠিক আমি মনে করি, শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সম্পর্ক র্যাপোর মতো হওয়া উচিত। আমার বিশ্বাস, শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সম্পর্ক যতোই মধুর হবে সেই বিভাগের লেখাপড়াসহ সার্বিক অবস্থার মান ততোই বৃদ্ধি পাবে। একজন শিক্ষার্থীর পাঠগ্রহণের যে কোনো সমস্যায় শিক্ষকের শরণাপন্ন হওয়া জরুরি। একই সাথে একজন শিক্ষকেরও উচিত, শিক্ষার্থীর সমস্যার কথা অনুধাবন করে সে অনুযায়ী সমাধানের পথ বাতলে দেয়া। তবেই পড়ার প্রতি শিক্ষার্থীর আগ্রহ বাড়বে এবং শিক্ষকের প্রতি শিক্ষার্থীর ভক্তি-শ্রদ্ধা বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে।
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলবো, শিক্ষার্থীর প্রধান কাজই হলো পড়াশোনা করা। তাই পড়াশোনায় মনোনিবেশ করতে হবে। পাশাপাশি পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রতি তার দায়বদ্ধতা পূরণ করতে হবে। কারো ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করা যাবে না। নিজের ধর্ম যথাযথভাবে পালন করতে হবে। সহপাঠী বন্ধুদের সাথে ভালো আচরণ করতে হবে। পরস্পর সহযোগিতামূলক পরিবেশ বজায় রেখে পড়াশোনা করতে হবে। যে কোনো সমস্যায় শিক্ষকদের শরণাপন্ন হতে হবে। শিক্ষকদের দিকনির্দেশনা ও পরামর্শ অনুযায়ী চলতে হবে। শিক্ষকদের সাথে অসদাচরণ করা যাবে না। শিক্ষার্থীদের পরমতসহিষ্ণু হতে হবে। মানুষের সাথে আন্তরিক ও সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণ করতে হবে। একই সাথে জঙ্গিবাদসহ দেশবিরোধী কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে।
মুহাম্মদ ইয়াহ্-ইয়া খান : বিভাগীয় প্রধান, সমাজকর্ম বিভাগ, চাঁদপুর সরকারি কলেজ।