রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪  |   ১৯ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।

প্রকাশ : ০৯ আগস্ট ২০২১, ০০:০০

মা হওয়ার পরে করণীয়

মা হওয়া প্রতিটি নারী ও পরিবারের জন্যে ভীষণ আনন্দের। কিন্তু মা হওয়ার পর চাই জরুরি কিছু সতর্কতা। সামান্য সচেতনতাবোধ একজন নারীকে দ্রুত সুস্থ হতে সাহায্য করবে। আমাদের সমাজের অধিকাংশ পরিবারে দেখা যায় যে, মা হওয়ার পরে সবাই সন্তানের দিকেই মনোযোগী থাকে বেশি, বিভিন্ন কারণে মায়ের প্রতি অবহেলা হয়ে যায়।

শিশু জন্ম নেয়ার পরে আত্মীয়-স্বজন অনেকেই হাসপাতাল বা ক্লিনিকে দেখা করতে যায়। নবজাতকের কাছে মানুষজন যতো কম যাবে ততো ভালো। অনেকেই মনে করেন, দেখতে না গেলে নবজাতকের মা হয়তো মন খারাপ করবে বা অন্যরা রাগ করবে। কিন্তু নবজাতকের চল্লিশ দিন পার হওয়ার পরে বা নাভি শুকিয়ে যাওয়ার পরে দেখতে গেলে বেশি ভালো। যেসব আত্মীয়-স্বজন একেবারে না গেলেই নয়, তারা ছাড়া অন্যরা নবজাতকের জন্মের কিছুদিন পরে তাকে দেখতে গেলে ঝুঁকির পরিমাণ কমবে।

নরমাল ডেলিভারি বা সিজারিয়ান দুটিই কষ্টকর। তবে সিজারিয়ান ডেলিভারিতে হাসপাতালে থাকতে হয় বেশিদিন। নরমাল ডেলিভারিতে কোনো জটিলতা না থাকলে তার প্রয়োজন হয় না। নবজাতককে দেখতে যাওয়ার পূর্বে অবশ্যই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অবলম্বন করতে হবে। তার গালে, ঠোঁটে, মুখে চুমু দেবেন না। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকার পরও বড়দের মুখের জীবাণু শিশুর মুখে লেগে যেতে পারে।

অনেকেই নবজাতকের হাতে টাকা বা নবজাতকের মায়ের হাতে উপহার হিসেবে টাকা গুঁজে দেয়। টাকার মধ্যে বিভিন্ন ধরণের রোগ-জীবাণু লেগে থাকতে পারে। করোনাভাইরাসের টিকা নেয়ার পরও আমাদের সচেতন হতে হবে খুব বেশি। নবজাতকের কাছে যাওয়ার পূর্বে হ্যান্ড স্যানিটাইজার বা সাবান দিয়ে হাত পরিষ্কার করে তারপর যেতে হবে।

নবজাতকের মা যেনো পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে পারেন, সেই বিষয়ে সবাইকে খেয়াল রাখতে হবে। আত্মীয়-স্বজন এতো বেশি দেখা করতে আসছেন যে, মা সঠিকভাবে ঘুমাতে পারছেন না বা দীর্ঘ সময় বসে কথা বলার জন্যে পিঠে-কোমরে ব্যথা শুরু হয়ে যাচ্ছে, এমন যেনো না হয়। সিজারিয়ান ডেলিভারির সময় কোমড় থেকে পা পর্যন্ত অবশ করার জন্যে পিঠের নিচের দিকে অবশ করানোর ইনজেশন দিতে হয়। ডেলিভারির পরে একজন মায়ের সঠিকভাবে ঘুম না হলে, পর্যাপ্ত বিশ্রামের অভাবে হঠাৎ ভয়াবহ মাথা ব্যথা হতে পারে। চোখে ঝাপসা দেখাসহ বমিভাব থাকতে পারে। এই সমস্যার নাম স্পাইনাল হেডেক, এই অবস্থায় প্রচ- মাথা-ঘাড়ে ব্যথাসহ বমি বমি ভাবও হতে পারে। আবার অনেক রোগী দেখা যায়, হয়তো কখনোই উচ্চ রক্তচাপ ছিলো না কিন্তু হাসপাতাল থেকে সুস্থভাবে বাসার ফেরার পরে রক্তচাপ বাড়তে শুরু করেছে। এমন সমস্যাও হতে পারে।

অধিকাংশ নবজাতক জন্মের পরে দিনের বেশির ভাগ সময় ঘুমায়, রাতে জেগে থাকে। এই সমস্যার জন্যে মা সঠিকভাবে ঘুমাতে পারে না। বাসার যারা আছেন তারা মাকে বিশ্রাম নেয়ার জন্যে সহযোগিতা করবেন। তা না হলে দিনের পর দিন সঠিক বিশ্রামের অভাবে উচ্চ রক্তচাপসহ ভয়াবহ মাথা ব্যথা হতে পারে।

যারা প্রথমবার মা হন, তারা শিশুকে খাওয়ানোর বিষয়ে অনেক কিছুই জানেন না। পরিবারের বড়দের দায়িত্ব হলো সেই বিষয়গুলো বুঝিয়ে দেয়া। নবজাতককে বুকের দুধ খাওয়ানোর আগে এক গ্লাস পানি, খাওয়ানোর পরে এক গ্লাস পানি খেতে হবে, বিশ্রামের যতোটা অভাব হবে, নবজাতক ততোটাই কম খেতে পাবে। সেজন্যে একজন মাকে পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার পাশাপাশি নিয়মিত বিশ্রাম নিতে হবে।

নরমাল ডেলিভারি ও সিজারিয়ান অপারেশন দুটিতেই একজন মায়ের শরীরে কাটা-সেলাই থাকে। নরমাল ডেলিভারিতে অধিকাংশ মায়ের থাকে ছোট্ট সেলাই। আর সিজারিয়ান অপারেশানে কিছু কাটা জায়গার উপরে থাকে সাপোর্টিং সেলাই। আবার অনেক রোগীর সিজারিয়ান অপারেশানের সময় তলপেটের নিচের দিকের কাটা জায়গায় ত্বকের ভেতর দিয়ে সেলাই করা থাকে। সব সিজারিয়ান অপারেশনের রোগীকে কাটা জায়গার উপরে ব্যান্ডেজ লাগানো অবস্থায় হাসপাতাল থেকে ছুটি দেয়া হয়। বাসায় খুব সাবধানে থাকতে হবে, ব্যান্ডেজ যেনো ভিজে না যায়। নিজে থেকে ব্যান্ডেজ টেনে খোলা ঠিক নয়। ক্লিনিক বা হাসপাতালের ছাড়পত্রে ব্যান্ডেজ খোলার তারিখ দেয়া থাকে। চিকিৎসাপত্রের সব ওষুধ নিয়ম মেনে খেতে হবে এবং ব্যান্ডেজের কোথাও রক্ত, পুঁজ বা রক্ত মেশানো পানি গড়িয়ে পড়ছে কি না সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

ব্যান্ডেজ যদি নিজে থেকেই খুলে যায়, তাহলে নিজে থেকে কাটা জায়গার উপরে কোনো ওষুধ না লাগিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। হাসপাতাল থেকে বাসায় যাওয়ার পরে সব সময় পরিষ্কার কাপড় পড়তে হবে। যে বিছানায় মা ও নবজাতক ঘুমাবে, সেই বিছানাও হতে হবে পরিষ্কার। মা ও নবজাতককে সাহায্য করার জন্যে যিনি পাশে থাকবেন, তাকেও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। নরমাল ডেলিভারি বা সিজারিয়ান অপারেশন দুটির পরেই অনেক মায়ের পায়ে পানি চলে আসতে পারে। হাত-পায়ের আঙুল ফুলে গেলে, মাথা ব্যথা, ঘাড়ে ব্যথা, ভয়ানক মাথা ঘোরানো, চোখে ঝাপসা দেখা, হঠাৎ অতিরিক্ত রক্তপাত, ভয়ানক পেটে ব্যথা, পেট ফুলে যাওয়া, প্রসাব বন্ধ হয়ে যাওয়া, কাটা জায়গার সেলাই খুলে যাওয়া, এই ধরণের সমস্যাগুলোতে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।

অনেক নারীকে গর্ভাবস্থায় হরমোনের ওষুধ খেতে হয়। যেমন : হাইপার থাইরয়ডিজম, হাইপোথাইরয়ডিজম। সন্তান জন্ম নেয়ার পরে এই ওষুধগুলোর ডোজ বাড়তে বা কমতে পারে। তাই হরমোন রোগ বিশেষজ্ঞ বা স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের কাছ থেকে এই ওষুধগুলোর ডোজ কেমন হবে, তা জেনে নেয়া উচিত।

অনেকের মাতৃত্বজনিত ডায়াবেটিস, হেপাটাইটিস, হাঁপানি, লুপাস পজেটিভসহ আরও অসুখ থাকতে পারে। এই ধরনের কোনো অসুখ থাকলে চিকিৎসকের কাছে লুকাবেন না। এতে হিতে বিপরীত হবে। কোনো চর্মরোগ থাকলে, সেই বিষয়েও চিকিৎসককে জানাবেন। অনেক ত্বকের অসুখ থাকে ছোঁয়াচে। মায়ের কাছ থেকে সন্তানকে আক্রমণ করতে পারে। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো ওষুধ খাবেন না। কারণ অনেক ওষুধ বুকের দুধের মাধ্যমে শিশুর দেহে পৌঁছে যায়। যা শিশুর জন্যে হয়ে উঠতে পারে ক্ষতিকর।

গর্ভাবস্থায় রক্তচাপ বা রক্তে চিনির মাত্রা বেড়ে যাওয়ার ইতিহাস থাকলে অবশ্যই একজন মাকে হাসপাতাল থেকে বাসায় যাওয়ার পর ব্লাড প্রেশার, ব্লাড সুগার মাপার চেষ্টা করতে হবে। ব্লাড সুগার ও ব্লাড প্রেশার হাই বা লো যেটাই হোক লিখে সংরক্ষণ করবেন। চিকিৎসকের সাথে দেখা করার সময় সেই রেকর্ড সঙ্গে নিয়ে যাবেন। মাকে খেয়াল রাখতে হবে, হঠাৎ করে প্রসাব খুব ঘন ঘন হচ্ছে কি না, সন্ধ্যার পর থেকেই জ্বর জ্বর ভাব, তলপেটে ব্যথা বা খুব দুর্গন্ধযুক্ত প্রসাব হলে, ইউরিনে ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে খুব বেশি। নরমাল ও সিজারিয়ান এই দুই ধরনের ডেলিভারির পরে ইউরিনে ইনফেনশন হতে পারে। সেজন্যে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে।

মায়ের জন্যে বাড়তি যত্ন

প্রতিদিন এক-দেড় লিটার পানি পান করতে হবে। তাহলে খাবার হজমে সুবিধা হবে, কোষ্ঠকাঠিন্যও দূর হবে। কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্যে কাটা জায়গাতে যেনো চাপ না পড়ে, সেটা খেয়াল রাখতে হবে।

হাঁচি-কাশির সময় কাটা জায়গাতে হাত দিয়ে ধরে রাখতে হবে। তাহলে পেটে ব্যথা কম লাগবে। কোমরে বেল্ট ব্যবহার করলে, ঝুলে যাওয়া পেট নড়াচড়া করবে কম, ব্যথাও কম হবে।

পেট ও শরীরের ওজন কমিয়ে আনার জন্যে ফিজিওথেরাপিস্টের দেখানো ব্যয়াম করবেন। নরমাল ও সিজারিয়ান দুই ধরনের ডেলিভারির পরে দুই সপ্তাহ থেকে একমাস পর্যন্ত অল্প অল্প করে ঋতু স্রাবের মতো রক্তপাত হতে পারে। এই সময় যথেষ্ট পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। নিজে ও নবজাতকের জন্যে সবসময় মশালি ব্যবহার করা উচিত। বাসায় নেট থাকলেও মশা ঢুকতে পারে।

শুধু নবজাতক নয় মাকেও নিজের যত্ন নিতে হবে। মৌসুমী শাক-সবজি, ফল, পানি জাতীয় খাবার, কালোজিরা নিয়মিত খেতে হবে। মাথার চুলে উঁকুন-খুশকি থাকলে তা দূর করার জন্যে পরিচর্যা করা উচিত। মা ও নবজাতক উভয়েরই হাতের নখ ছোট রাখা জরুরি। নবজাতকের ও মা নিয়মিত রোদে ১৫-২০ মিনিট থাকলে, রক্তে ভিটামিন ডি-এর পরিমাণ বাড়বে। ত্বকের রোগ-জীবাণু দূর হবে।

* চিকিৎসাঙ্গন বিভাগে লেখা পাঠানোর

ই-মেইল : [email protected]

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়