করোনাভাইরাস সামাল দেয়ার পর এখন প্রতিবেশী দেশ ভারতের জন্য মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে অ্যাডিনোভাইরাস। বাংলাদেশেও এ রোগের আশঙ্কা বাড়ছে। তবে কোভিশিল্ডের অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিন এ ভাইরাস প্রতিরোধেও কার্যকর। এটি ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো। হঠাৎ বেড়ে গেলে উদ্বেগের বিষয়। বিশেষ করে বয়স্ক ও শিশুদের জন্য বিপদের কারণ হতে পারে।

এ ভাইরাসে মূলত বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। ভারতে চলমান অ্যাডিনোভাইরাস আক্রমণের কারণে হাসপাতালগুলোর শিশু বিভাগের বেড খালি নেই বললেই চলে।

রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল বা যাদের আগে থেকেই শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা ও হৃদরোগ রয়েছে তাদের এ ভাইরাসে মারাত্মক অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকি বেশি।

অ্যাডিনোভাইরাসের উপসর্গ

* তিন দিনের বেশি জ্বর।

* সর্দি-কাশি, নাক ও গলা ব্যথা, তীব্র ব্রংকাইটিস।

* পাকস্থলী বা অন্ত্রের প্রদাহ, পেট খারাপ ও বমি, গা-হাত পায়ে ব্যথা।

* শ্বাসকষ্টের সমস্যা, নিউমোনিয়া। শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি দ্রুত বেড়ে যাওয়া।

* চোখ ওঠা বা কনজাঙ্কটিভাইটিস।

এছাড়া মূত্রাশয়ে প্রদাহ বা সংক্রমণ, নিউরোলজিক ডিজিজ যেমন- ব্রেইন ও স্পাইনাল কর্ডেও সমস্যা হতে পারে। তবে এটি সাধারণ লক্ষণ নয়।

কখন রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে?

তিন থেকে পাঁচ দিন টানা জ্বর থাকলে এবং সেইসঙ্গে শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি দ্রুত বেড়ে গেলে। অক্সিজেনের মাত্রা ৯২ শতাংশের কম থাকলে, খাওয়ার ইচ্ছে কমে গেলে এবং প্রস্রাব দিনে পাঁচবারের কম হলে। খিঁচুনি ও হৃদযন্ত্রজনিত সমস্যা থাকলেও ভর্তি করাতে হতে পারে।

বাড়িতে করণীয়

রোগী বাড়িতে থাকলে তাকে পরিমাণমতো পানি এবং পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। ডায়রিয়া হলে ওআরএস খাওয়াতে হবে, নিয়মিত দেহের তাপমাত্রা পরীক্ষা এবং খাওয়া এবং প্রস্রাব ঠিকমতো হচ্ছে কিনা, তা দেখতে হবে।

যেভাবে ছড়ায়

অ্যাডিনোভাইরাস অনেকটা করোনার মতোই ছড়ায়। স্পর্শ, হাঁচি-কাশি এমনকি আক্রান্ত শিশুদের পয়ঃবর্জ্য থেকেও ছড়াতে পারে। তাই আক্রান্ত শিশুর ডায়াপার পরিবর্তনের সময়ও এ ঝুঁকি থাকে। যুক্তরাষ্ট্রের সিডিসি বলছে, অ্যাডিনোভাইরাসে আক্রান্ত কেউ সুস্থ হয়ে উঠলেও ওই ব্যক্তির মাধ্যমে দীর্ঘ সময় এ ভাইরাস ছড়াতে পারে। বিশেষ করে যাদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কম তাদের মাধ্যমে এটি হতে পারে। এ ছাড়া অ্যাডিনোভাইরাসে আক্রান্ত, কিন্তু উপসর্গ বা লক্ষণ নেই, এমন ব্যক্তির মাধ্যমেও এটি ছড়াতে পারে।

প্রতিরোধ

* সাবান-পানি দিয়ে অন্তত ২০ সেকেন্ড ভালোভাবে হাত ধোয়ার অভ্যাস করাতে হবে শিশুদের।

* অপরিষ্কার হাতে চোখ, নাক ও মুখ স্পর্শ না করা।

* অসুস্থ ব্যক্তির সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা।

* নিজে আক্রান্ত হলে বাড়িতে অবস্থান করা।

* হাঁচি-কাশির সময় নাক-মুখ আটকানো।

অন্যের ব্যবহৃত জিনিস যেমনÍকাপ ও খাবারের থালাবাটি ব্যবহার না করা হলো এ ভাইরাসের বিস্তার ঠেকানোর উপায়।

চিকিৎসা

অ্যাডিনোভাইরাসে আক্রান্তদের জন্য সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা বা ভাইরাসপ্রতিরোধী ওষুধ নেই। আক্রান্তদের হাসপাতালে রেখে নিবিড় পরিচর্যার প্রয়োজন হতে পারে। বেশিরভাগ সংক্রমণ মৃদু হয় এবং বিশ্রাম ও তরল খাবারেই রোগ সেরে যায়। উপসর্গগুলো সারাতে জ্বরের ওষুধ কাজে লাগতে পারে, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ মেনেই তা সেবন করতে হবে।

যেহেতু দূষণের দিক দিয়ে আমাদের রাজধানী ও শহরগুলো অনেক এগিয়ে, তাই সব সময়ই মাস্ক পরে থাকতে হবে। জনবহুল এলাকায় শিশুদের নিয়ে যাওয়া যাবে না ও তাদের পরিচ্ছন্নতায় বাড়তি জোর দিতে হবে।