মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৪  |   ১৯ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জ পাকহানাদার মুক্ত দিবস পালন
  •   যৌথ অভিযানে কচুয়া থানার লুণ্ঠিত পিস্তলের ৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার
  •   দৈনিক ইনকিলাবের প্রশাসনিক কর্মকর্তা শহীদুল্লাহ্ মিজির দাফন সম্পন্ন
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা

প্রকাশ : ১৫ আগস্ট ২০২২, ০০:০০

স্থাপনের এক বছরেই বন্ধ, চার বছরেও ঠিক হয়নি ডিজিটাল এক্স-রে মেশিন
আলআমিন হোসাইন ॥

আড়াইশ’ শয্যাবিশিষ্ট চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের ডিজিটাল এক্স-রে মেশিনটি গত চার বছরের অধিক সময় বন্ধ রয়েছে। ফলে হাসপাতালে আসা রোগীদের তিন থেকে চার গুণ বেশি টাকা খরচ করে বাইরে থেকে এক্স-রে করাতে হয়। এতে লাভবান হচ্ছে বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন রোগীরা। এদিকে প্রতি মাসে কয়েক লাখ টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। এছাড়াও এক্স-রে বিভাগে রেডিওলজিস্ট এবং জুনিয়র কনসালটেন্ট রেডিওলজিস্ট পদটি খালি রয়েছে দীর্ঘদিন।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ডিজিটাল এই এক্স-রে মেশিনটি স্থাপনের এক বছরের মাথায় ফিল্ম সঙ্কট দেখা দেয়। এতে বন্ধ হয়ে যায় এক্স-রে মেশিন। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় এক পর্যায়ে মেশিনটি বিকল হয়ে পড়ে। বিকল হওয়া এই মেশিনটি এখনো মেরামত করে দেয়নি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

হাসপাতাল সূত্রে আরো জানা যায়, সেন্ট্রাল মেডিকেল স্টোর অ্যান্ড ডিপো (সিএমএসডি) থেকে দরপত্রের মাধ্যমে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বেঙ্গল সায়েন্টিফিক অ্যান্ড সার্জিক্যাল কোম্পানি থেকে ২০১৭ সালের ১ জানুয়ারি ওরিস এসএস-১ মডেলের এক্স-রে মেশিনটি সরবরাহ করা হয়। এর সঙ্গে তিন সাইজের ২ হাজার পিচ ফিল্মও দেয়া হয়। প্রতি প্যাকেট (১০০ পিচ) ফিল্মের মূল্য ১২ হাজার টাকা। এরপর ২০১৭ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর এক্স-রেটি চালু করা হয়। এক্স-রে চালুর এক বছরের মাথায় অর্থাৎ ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ফিল্মগুলো শেষ হয়ে যায়। এরপর থেকে মূল্যবান এ যন্ত্রটি পড়ে আছে।

এক্স-রে বিভাগের দায়িত্বে থাকা হাসপাতালের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট নাজির আহমেদ বলেন, ফিল্ম সঙ্কটে ডিজিটাল এক্স-রে মেশিনটি বন্ধ হয়ে যায়। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় এক পর্যায়ে মেশিনটি বিকল হয়ে পড়ে। সেটি মেরামতের জন্যে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করে। তাদের প্রকৌশলীরা কয়েকবার এসে ডিজিটাল এক্স-রে মেশিনটি মেরামতের চেষ্টা করেন। তবে মেশিনটি সচল করতে পারেননি তারা। বিকল হওয়া যন্ত্রাংশ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রিপ্লেস করে দিবে বলেছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত তারা তা দেয়নি। তাই এক্স-রে করানো যাচ্ছে না।

টেকনোলজিস্ট নাজির আহমেদ বলেন, হাসপাতালে অ্যানালগ এক্স-রে মেশিন দিয়েই বর্তমানে কাজ করতে হচ্ছে। অ্যানালগ এক্স-রে মেশিনটি ১৯৮৪ সালে স্থাপন করা হয়। এ মেশিন দিয়ে প্রতিদিন গড়ে ২৫ থেকে ৩০টি এক্স-রে করা হয়। কিন্তু হাসপাতালের সবচেয়ে দামি ও ভালো ডিজিটাল এক্স-রে যন্ত্রটি নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। এটি সচল থাকলে আরও এক্স-রে করা সম্ভব হতো। এতে গরিব রোগীদের সুবিধা হতো।

অপরদিকে সাদাকলো এক্স-রে পানিতে ধোয়া-মোছা ও পরিষ্কার করায় অনেকটা অস্পষ্টতা দেখা দেয়। এতে রিপোর্ট প্রদানের ক্ষেত্রেও চিকিৎসকদের বিড়ম্বনা পোহাতে হয়। চিকিৎসাসেবার মান বৃদ্ধিতে ডিজিটাল এক্স-রে যন্ত্রটি চালু করা জরুরি হয়ে পড়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, হাসপাতালের বহির্বিভাগের নারী ও পুরুষ কাউন্টারে রোগীর ভিড়। জেলার ৮ উপজেলাসহ আশপাশের জেলা থেকে আসা রোগীদের একমাত্র ভরসা আড়াইশ’ শয্যাবিশিষ্ট চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতাল। এ হাসপাতালে পার্শ্ববর্তী শরীয়তপুর ও নোয়াখালী জেলা থেকেও মানুষ সেবা নিতে আসেন। টিকিট কেটে তারা চিকিৎসকের কক্ষে যাচ্ছেন। অনেককেই ডিজিটাল এক্স-রে করানোর পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসক। হাসপাতালে সেই ব্যবস্থা না থাকায় তারা ছুটছেন বিভিন্ন বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের দিকে।

সরেজমিনে আরো দেখা গেছে, অর্থোপেডিক বহির্বিভাগের সামনে রোগীদের ভিড়। গাদাগাদি করে দাঁড়িয়ে আছেন রোগী ও তাদের স্বজনেরা। তাদের অধিকাংশের হাতে রয়েছে বিভিন্ন বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে করে আনা ডিজিটাল এক্স-রে রিপোর্ট। এছাড়া হাসপাতালের অন্যান্য বিভাগেও একই দৃশ্য লক্ষ করা গেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ক’জন রোগী ও তাদের স্বজনেরা বলেন, হাসপাতালে ডিজিটাল এক্স-রে করার ব্যবস্থা নেই। তাই বাধ্য হয়ে বেসরকারি ক্লিনিক থেকে বাড়তি টাকা দিয়ে এক্স-রে করে আনা হয়েছে।

হাসপাতালে সেবা নিতে আসা ফরিদগঞ্জ উপজেলার ধানুয়া এলাকার ইমাম হোসেন বলেন, সিএনজি অটোরিকশার ধাক্কায় হাতে ব্যথা পেয়েছি। এজন্যে চিকিৎসক এক্স-রে করাতে বলেছেন। হাসপাতালের ডিজিটাল এক্স-রে মেশিন নষ্ট থাকায় একটি ডায়াগনস্টিক ক্লিনিকে ৫শ’ টাকা দিয়ে এক্স-রে করতে হয়েছে। অথচ সরকারি হাসপাতালের ডিজিটাল মেশিনে এই এক্স-রে পরীক্ষার মূল্য ২শ’ টাকা। এছাড়া বাইরের ক্লিনিক থেকে এক্স-রে করাতে গেলে অনেক কষ্ট ও ভোগান্তি পোহাতে হয়।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, হাসপাতালে অ্যানালগ এক্স-রে (সাদাকালো) বড় ফিল্মের মূল্য ৭০ টাকা এবং ছোট ৫৫ টাকা। ডিজিটাল এক্স-রে বড় ফিল্মের মূল্য ২শ’ টাকা এবং ছোট ১শ’ ৫০ টাকা। হাসপাতালে প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত এক্স-রে সেবা দেয়া হয়। কিন্তু ডিজিটাল এক্স-রে মেশিন নষ্ট থাকায় প্রতিদিন অনেক রোগী ফেরত যায়।

এদিকে হাসপাতাল সংলগ্ন একাধিক ডায়াগনস্টিক ক্লিনিক ঘুরে জানা যায়, কোনো কোনো ক্লিনিকে ডিজিটাল এক্স-রে বড় ফিল্মের মূল্য ৫শ’ টাকা, কোথাও ৮শ’ টাকা, মাঝারি ফিল্মের মূল্য কোথাও ৪শ’ টাকা, কোথাও ৬শ’ টাকা। ছোট ফিল্মের মূল্য কোথাও ৩শ’ টাকা, কোথাও ৫শ’ টাকা।

হাসপাতালের সহকারী রেজিস্ট্রার (অর্থোপেডিক সার্জারী) ডাঃ ফরিদ আহমেদ চৌধুরী বলেন, দীর্ঘদিন হাসপাতালের ডিজিটাল এক্স-রে মেশিন বন্ধ রয়েছে। তাই অ্যানালগ মেশিনে এক্স-রে করতে হচ্ছে। অ্যানালগ এক্স-রে দিয়ে ফ্র্যাকচার নির্ণয় করা যায় না। তাই ডিজিটাল এক্স-রে প্রয়োজন। এছাড়াও এক্স-রে বিভাগে রেডিওলজিস্ট পদটি খালি রয়েছে।

আড়াইশ’ শয্যাবিশিষ্ট চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ একেএম মাহাবুবুর রহমান বলেন, ডিজিটাল এক্স-রের জেনারেটর কনসোল পার্টস্ না থাকায় মেশিনটি বন্ধ রয়েছে। কানাডা থেকে পার্টস্টি আনা হচ্ছে। বর্তমানে দুটো অ্যানালগ এক্স-রে চালু রয়েছে। ডিজিটাল এক্স-রে মেশিনটি মেরামতের জন্যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে। আশা করছি, খুব শীঘ্রই ডিজিটাল এক্স-রে মেশিনটি চালু করা হবে।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বেঙ্গল সায়েন্টিফিক অ্যান্ড সার্জিক্যাল কোম্পানির ম্যানেজার (সার্ভিস) মোঃ আঃ আলিম বলেন, আমিসহ আমাদের সার্ভিস টিম কয়েকবার ডিজিটাল এক্স-রে মেশিনটি মেরামতের জন্যে এসেছি। রুমের আর্দ্রতায় এক্স-রে মেশিনটির কয়েকটি পার্টস্ নষ্ট হয়ে যায়। এ পার্টস্গুলো কানাডা থেকে সরবরাহ করতে হয়। ইতোমধ্যে আমাদের প্রিন্সিপাল অফিসারকে জানিয়েছি, অর্ডারও সাবমিট করেছি। কানাডা থেকে পার্টস্ আসলেই আমরা খুব দ্রুত এক্স-রে মেশিনটি চালু করতে পারবো।

ফিল্ম সঙ্কটের বিষয়ে আঃ আলিম বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠানে ফিল্মের সরবরাহ রয়েছে। টেন্ডার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আমরা সরকারি হাসপাতালে ফিল্ম সরবরাহ করে থাকি।

‘কবে নাগাদ ডিজিটাল এক্স-রে মেশিনটি চালু করা হবে’-এমন প্রশ্নের জবাবে আঃ আলিম বলেন, এক্স-রে মেশিনটি মেরামতের ব্যাপারে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আশা করি, দু সপ্তাহের মধ্যে মেশিনটি সচল করা সম্ভব হবে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়