সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৮ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জ পাকহানাদার মুক্ত দিবস পালন
  •   যৌথ অভিযানে কচুয়া থানার লুণ্ঠিত পিস্তলের ৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার
  •   দৈনিক ইনকিলাবের প্রশাসনিক কর্মকর্তা শহীদুল্লাহ্ মিজির দাফন সম্পন্ন
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা

প্রকাশ : ৩০ মে ২০২২, ০০:০০

রোগীর সুস্থতার চেয়ে বড় সুখের স্মৃতি আর কিছু নেই
অনলাইন ডেস্ক

ডাঃ কামরুল হাসান। তিনি ফরিদগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার হিসেবে কর্মরত। সদা হাস্যোজ্জ্বল রোগী-বান্ধব ডাঃ কামরুল হাসান অসহায় রোগীদের কাছে ভরসাস্থলে পরিণত হয়েছেন। তিনি ফরিদগঞ্জ উপজেলার কৃতী সন্তান। সম্প্রতি তিনি দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠের পাক্ষিক আয়োজন ‘চিকিৎসাঙ্গন’ বিভাগের মুখোমুখি হন। এ সময় তিনি তাঁর শৈশব-কৈশোরকালীন স্মৃতি, চিকিৎসক হওয়ার ভাবনা এবং চিকিৎসা-ব্যবস্থার সার্বিক দিক নিয়ে খোলামেলা কথা বলেন। সাক্ষাৎকার নেন শামীম হাসান।

চাঁদপুর কণ্ঠ : কেমন আছেন?

ডাঃ কামরুল হাসান : আলহামদুলিল্লাহ, মহান আল্লাহর অশেষ রহমতে ভালো আছি।

চাঁদপুর কণ্ঠ : আপনার শৈশব-কৈশোর কেটেছে কোথায়?

ডাঃ কামরুল হাসান : আমার শৈশব-কৈশোর গ্রামেই কেটেছে। ফরিদগঞ্জের পশ্চিম বড়ালী আমার গ্রাম। আমি গ্রামণ্ডবাংলার ছেলে।

চাঁদপুর কণ্ঠ : আপনার শিক্ষাজীবন সম্পর্কে জানতে চাই।

ডাঃ কামরুল হাসান : ঘরে মায়ের হাতে শিক্ষায় হাতেখড়ি। এরপর মক্তবে যাওয়া শুরু করি। গ্রামের স্কুলে আমার প্রাইমারি শিক্ষাজীবন শুরু হয়। ফরিদগঞ্জ এ.আর. পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় হতে এসএসসি পাস করি। এরপর উচ্চ মাধ্যমিকের জন্যে ঢাকায় চলে যাই। ঢাকা দনিয়া কলেজ থেকে আমি এইচএসসি পাস করি। এইচএসসি পাস করার পর খুলনা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হই। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ইন্টার্নশীপ শেষ করে কর্মজীবনে প্রবেশ করি।

চাঁদপুর কণ্ঠ : চিকিৎসক হওয়ার ভাবনাটি সূচনা হলো কীভাবে?

ডাঃ কামরুল হাসান : আমি যখন ছোট তখন আমার বাবার ঔষধের দোকান ছিলো। মাঝে মাঝে আসতাম। সেখানে আগত রোগীদের দেখে মনে হতো, আমি বড় হয়ে রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিবো। সেখান থেকে চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন। এছাড়া পরিবার থেকেও চিকিৎসক হওয়ার জন্যে উৎসাহ ছিলো।

চাঁদপুর কণ্ঠ : চিকিৎসক হিসেবে প্রথম দিনের অভিজ্ঞতার কথা বলুন।

ডাঃ কামরুল হাসান : চিকিৎসক হওয়ার পরে মানবতার সেবা দেয়ার জন্যে প্রস্তুত হই। মানবতার জন্যে সেবা দেয়া সত্যি অন্যরকম ভালো লাগা কাজ করে। চিকিৎসক হওয়ার পর আমি সর্বপ্রথম খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগে যোগ দিই। সেখানে অনেক রোগী লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলো। খুব উৎসাহের সাথে রোগী দেখেছিলাম। কখনো ক্লান্তি অনুভব করিনি।

চাঁদপুর কণ্ঠ : নিজ উপজেলা তথা ফরিদগঞ্জে যোগদান করেছেন কবে?

ডাঃ কামরুল হাসান : চাঁদপুরে যোগদান করেছি ২০১৪ সালে। পরবর্তীতে ২০১৮ সালে পোস্টিং নিয়ে ফরিদগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসেছি, এখনো আছি।

চাঁদপুর কণ্ঠ : চাঁদপুরের চিকিৎসাব্যবস্থার সার্বিক দিক নিয়ে কিছু বলুন।

ডাঃ কামরুল হাসান : ফরিদগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আগের চেয়ে এখন অনেক ভালো মানের সেবা প্রদান করা হচ্ছে। আমাদের হাসপাতালে প্রেসার ও ডায়াবেটিস রোগীদের জন্যে আলাদা এনসিডি কর্ণার আছে। এছাড়া মাতৃস্বাস্থ্যের জন্যে রয়েছে এএনসি কর্ণার। শিশুদের জন্যে রয়েছে আইএমসিআই কর্ণার। হাসপাতালে জরুরি বিভাগ চালু হওয়ার পর রোগীদের চব্বিশ ঘণ্টা চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হচ্ছে। বহির্বিভাগে পর্যাপ্ত সংখ্যক মেডিকেল অফিসার রয়েছেন। কিন্তু আমাদের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সঙ্কট রয়েছে। আমাদের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক থাকলে ফরিদগঞ্জ এলাকাবাসীকে আরো ভালোভাবে সেবা দেয়া সম্ভব হতো। ফলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দেখানোর জন্যে রোগীদের চাঁদপুর যাওয়ার প্রয়োজন হতো না।

চাঁদপুর কণ্ঠ : আপনার কাছে কোন্ ধরনের রোগী বেশি আসে?

ডাঃ কামরুল হাসান : আমার কাছে শিশু ও মেডিসিন রোগী বেশি আসে।

চাঁদপুর কণ্ঠ : রোগীদের কাছে আপনার প্রত্যাশা কী?

ডাঃ কামরুল হাসান : রোগীরা সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা এবং পরামর্শ নিবেন। অনেকেই গ্রামের হাতুড়ে ডাক্তার (চিকিৎসক) ও কবিরাজের কাছে গিয়ে প্রতারণার শিকার হন। আমাদের পর্যাপ্ত সংখ্যক এমবিবিএস চিকিৎসক রয়েছে। রোগীদের কাছে প্রত্যাশা-হাতুড়ে চিকিৎসকের দেয়া অ্যান্টিবায়োটিক খেয়ে যেনো ড্রাগ রেজিস্টেন্সের কবলে না পড়ে।

চাঁদপুর কণ্ঠ : চিকিৎসাজীবনের একটি সুখের এবং একটি দুঃখের স্মৃতির কথা বলুন।

ডাঃ কামরুল হাসান : চিকিৎসাজীবনের সুখের এবং দুঃখের স্মৃতি অনেক। চিকিৎসা পাওয়ার পরে যখন কোনো রোগী সুস্থ হয়ে যায়, তার চেয়ে বড় সুখের স্মৃতি আর কিছু নাই। একদিন ভোরবেলা হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কাজ করছিলাম, হঠাৎ অচেতন অবস্থায় একজন রোগী আসলো। পরীক্ষা করে দেখলাম রোগীটি হাইপোগ্লাইসেমিয়াতে আছে। তাকে স্যালাইন দেয়ার পর ৫ মিনিটের মধ্যে জ্ঞান ফিরে আসলো। খুবই ভালো লাগলো। অন্য একদিনের একটি দুঃখজনক ঘটনা বলি। সেদিনও সকালবেলা ডিউটিতে ছিলাম। ডিউটিতে থাকাবস্থায় একটি পানিতে পড়া সাত-আট বছরের বাচ্চা আসলো। পরীক্ষা করে দেখলাম বাচ্চাটি মৃত। মাঝে মাঝেই পানিতে পড়া বাচ্চা আসে। এটা খুবই দুঃখজনক। এজন্যে বাবা-মা ও অভিভাবকদের আরো সচেতন হওয়া প্রয়োজন।

চাঁদপুর কণ্ঠ : চিকিৎসাসেবা দিতে গিয়ে কী কী প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হচ্ছেন?

ডাঃ কামরুল হাসান : স্বাস্থ্যসেবা একটি সমন্বিত টিমওয়ার্ক। এখানে ক্লিনার, সুইপার, ওয়ার্ডবয়, নার্স ও চিকিৎসক সবার সমন্বিত অংশগ্রহণ প্রয়োজন। বর্তমানে আমাদের হাসপাতালে ক্লিনার সঙ্কট রয়েছে। এজন্যে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে আমাদেরকে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

চাঁদপুর কণ্ঠ : আপনি স্বাস্থ্যমন্ত্রী হলে প্রথম যে তিনটি কাজ করতেন?

ডাঃ কামরুল হাসান : যেহেতু সরকারি কর্মকর্তাদের জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার সুযোগ নেই, তাই স্বাস্থ্যমন্ত্রী হওয়ার সুযোগ নেই। অবসর-পরবর্তী সময়ে আল্লাহতা’য়ালা যদি বাঁচিয়ে রাখেন তখন সেটা চিন্তা করা যাবে।

চাঁদপুর কণ্ঠ : রোগমুক্ত জীবনযাপন করতে সাধারণ মানুষের উদ্দেশ্যে কিছু বলুন।

ডাঃ কামরুল হাসান : সকল রোগবালাই থেকে বাঁচার জন্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা খুবই জরুরি। করোনাকালীন আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলেছিলাম। এখন আবার তার কিছুটা ব্যত্যয় আমরা লক্ষ্য করি। যদি আগের মতোই আমরা স্বাস্থ্যবিধিগুলো মেনে চলি, ঘরের তৈরি খাবার খাই, বাইরের খাবার বর্জন করি, তাহলে ইনশাআল্লাহ আমরা সুস্থ থাকতে পারবো। অনিয়মিত খাদ্যাভাস আমাদেরকে পরিত্যাগ করতে হবে। প্রতিদিন শাকসবজি এবং ফল খেতে হবে।

চাঁদপুর কণ্ঠ : অবসরে কী করেন?

ডাঃ কামরুল হাসান : অবসর সময় খুব একটা হয় না। সুযোগ পেলে বাইরে কোথাও ঘুরে আসি ও বই পড়ি।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়