প্রকাশ : ০৭ জুন ২০২৪, ০০:০০
স্মৃতিতে অম্লান প্রিয় দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠ
ভালোবাসার প্রিয় দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠ পত্রিকাটি স্মৃতিতে অম্লান হয়ে আছে। চাঁদপুর কণ্ঠের ভালোবাসা এবং স্মৃতি ভুলবার মতো নয়। দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠে প্রথম যখন যোগদান করি, পত্রিকা অফিস থেকে সরবরাহকৃত নিউজ প্রিন্টের কাগজে নিউজ লিখে পাঠাতাম। প্রথম ১ মাসে টানা প্রায় ১৫/১৬টি নিউজ দিয়েও দেখি আমার কোনো সংবাদ প্রকাশিত হয় না। তখন নিজের কাছে খুবই খারাপ লেগেছিল। মনে মনে ভাবতাম মনে হয় আমার নিউজ লিখাই হয় না। এদিকে প্রতিদিন চাঁদপুর কণ্ঠ পত্রিকায় খুঁজতাম নিজের নামের লিখা সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে কিনা। যা হোক, মাসখানেক পর একদিন একটা নিউজ প্রকাশিত হয়েছিল, তাও আবার নাম ছাড়া নিজস্ব সংবাদদাতা নামে। তার ২দিন পর একই দিনে আমার ৪টি নিউজ প্রকাশিত হয়েছিলো। যার মধ্যে ২টা নিজ নামে, অপর দুটি নিজস্ব সংবাদদাতা দিয়ে। ঐদিন নিজ নামে সংবাদ প্রকাশ দেখে খুবই উচ্ছ্বসিত ছিলাম। নিজ নামের সংবাদ আব্বাকে, আম্মাকে দেখালাম। আব্বা খুবই খুশি হয়েছেন। আমার আব্বা পত্রিকাপ্রেমী ছিলেন এবং চাঁদপুর কণ্ঠ নিয়মিত পড়তেন।
অনেক নিউজই স্মৃতিতে ভাসে। তন্মধ্যে বিজয় মেলার টুকিটাকি লিখা সংবাদ, চাঁদপুর বড় স্টেশন মোলহেড ভাঙ্গনের সংবাদ সংগ্রহ, স্টার আলকায়েদ জুট মিলে আগুন লাগা, সারাদেশের মধ্যে একমাত্র বাগাদীতে পোলিও রোগী শনাক্ত, ইচলী ফেরি ও লঞ্চঘাটে যানজট এবং মাদকের হিড়িক, চাঁদপুর সরকারি কলেজের সাইরেন মেশিন নষ্ট, সাপদীতে সীমানা পিলার চুরি, হাজীগঞ্জ-ফরিদগঞ্জ ডাকাতিয়া নদীতে স্পিডবোট দিয়ে কোরবানির গরু চুরির হিড়িক, ট্রাকরোডে বালু ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য, বিদ্যুতের ভালকিবাজি, ওয়াপদার অবৈধ বিদ্যুৎ লাইন, ডাকাতিয়ায় কচুরিপানা, চাঁদপুর-হাইমচর বেড়িবাঁধ এলাকায় জলাবদ্ধতা, বাঘড়াবাজার পোস্ট অফিসের দুর্দশা, বাঘড়া বাজারে রাস্তা সংলগ্ন বালু ব্যবসা ইত্যাদি। আমাদের বাগাদী চৌরাস্তার মোড়ে সোহাঈদ খান জিয়ার নেতৃত্বে চাঁদপুর কণ্ঠের স্টিল পাতের স্ট্যান্ড সাইনবোর্ড লাগানোর স্মৃতি মনে পড়ে।
বিজ্ঞাপন সংগ্রহের ক্ষেত্রে গ্রাহকের নিকট প্রথমে বিজ্ঞাপন প্রদানের অনুরোধপত্র দেওয়া হতো। তারপর বিজ্ঞাপন সংগ্রহ করা হতো। বিজ্ঞাপন অনুরোধপত্রের চিঠিগুলো সাদা, লাল, হলুদসহ বর্ণিল কালারের অফসেট পেপারের ছিল। একবার কোরবানির ঈদ এবং পত্রিকার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী দু-একদিন আগ-পর ছিল। ঐ বছর পত্রিকার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সংগৃহীত বিজ্ঞাপন থেকে প্রাপ্ত কমিশনের টাকা দিয়ে ঈদের কোরবানি দিয়েছিলাম। এখনো প্রতি বছর পত্রিকার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আসলে আমার কোরবানির স্মৃতিটি মনে পড়ে।
বিগত ৩০ এবং ৩১ আগস্ট ২০০৪ সালে দুদিনব্যাপী চাঁদপুর রোটারী ভবনে চাঁদপুর কণ্ঠ সংবাদদাতা সম্মেলন ও সাংবাদিকতা প্রশিক্ষণ কর্মশালাটি ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সকল উপজেলার প্রতিনিধিকে নিয়ে অনুষ্ঠিত কর্মশালায় প্রশিক্ষক ছিলেন চাঁদপুর কণ্ঠের সিনিয়র সাংবাদিকগণ। প্রশিক্ষণের মূল প্রশিক্ষক ছিলেন চাঁদপুর কণ্ঠের প্রধান সম্পাদক জনাব কাজী শাহাদাত। প্রশিক্ষণে সংবাদ লিখার পদ্ধতি, ৫ড১ঐ সূত্র, বানান শুদ্ধতা, সংবাদ সংগ্রহে ব্যবহারিক কৌশলসহ আরো অনেক বিষয় আয়ত্ত করা হয়েছে। যার অনেক কিছু আমার বাস্তব জীবনে, এমনকি বর্তমান পেশাগত জীবনের অভিজ্ঞতায় কাজে লাগছে।
সর্বোপরি দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠ একটি শেখার প্রতিষ্ঠান। চাঁদপুর কণ্ঠ থেকে আমি অনেক কিছু শিখেছি এবং অনেক কিছু পেয়েছি। কিন্তু চাঁদপুর কণ্ঠ পরিবারের জন্যে কিছুই করতে পারেনি। চাঁদপুর কণ্ঠের সাবেক এবং কর্মরত সাংবাদিকদের মাসিক বা বার্ষিক চাঁদার মাধ্যমে চাঁদপুর কণ্ঠ পরিবার কল্যাণ ট্রাস্ট/সমিতি চালু করার জোর দাবি জানাচ্ছি। এই ব্যানারে প্রতি ৪/৫ বছর পরপর মিলন মেলা করা হলে চাঁদপুর কণ্ঠের গতি আরো বৃদ্ধি পাবে।
আবু বকর মানিক : সাবেক প্রতিনিধি, দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠ।