মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪  |   ২৮ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   মিশরে ঈদে মিলাদুন্নবীর ঐতিহ্য ‘আরুসাত-আল-মোলিদ’ : জন্মদিনের পুতুল
  •   'বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের চেতনার রাজনৈতিক শক্তির বিকাশ অপরিহার্য'
  •   চাঁদপুরের ২৪তম পুলিশ সুপার মুহম্মদ আব্দুর রকিব
  •   ফরিদগঞ্জে ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে শোভাযাত্রা
  •   ওয়াইফাই সংযোগ দিতে গিয়ে প্রাণ গেল যুবকের

প্রকাশ : ০৭ জুন ২০২৪, ০০:০০

আমার জীবন পাল্টে দিয়েছে চাঁদপুর কণ্ঠ

শহীদ পাটোয়ারী
আমার জীবন পাল্টে দিয়েছে চাঁদপুর কণ্ঠ

সবেমাত্র ‘চাঁদপুর কণ্ঠ’ পত্রিকাটি সাপ্তাহিক থেকে দৈনিক হিসেবে পথচলা শুরু করেছে। শ্রদ্ধেয় কাজী শাহাদাতের নেতৃত্বে একঝাঁক সাংবাদিক এবং উদীয়মান কম্পিউটার অপারেটরদের নিয়ে এই পথচলা। এ সময় প্রায়শ দেখতাম, ভোরে কম্পিউটার অপারেটররা কালীবাড়ি এলাকার হোটেলগুলোতে নাস্তা সেরে যার যার গন্তব্যে চলে যায়। এদের ২/৩ জনের সাথে আমার ছিলো সাংগঠনিক সম্পর্ক। যাক সেসব কথা।

আমার সাংবাদিকতা বা সংবাদ লেখা মূলত দৈনিক ইত্তেফাকে প্রকাশিত ‘কচি-কাঁচার আসর’ দিয়ে। ওই সময়কালে চাঁদপুর অংকুর কচি-কাঁচার মেলার বিভিন্ন অনুষ্ঠানের সংবাদ (ছবিসহ) দৈনিক ইত্তেফাকের কচি-কাঁচার আসরে নিয়মিত পাঠাতাম। এরপর এমএ মাসুদ ভূঁঞার মালিকানাধীন সাপ্তাহিক রূপসী চাঁদপুর এবং ঢাকা থেকে প্রকাশিত জাতীয় দৈনিক রূপালীর জেলা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ শুরু করি। শখের বসে কাজ শুরু করলেও এক পর্যায়ে এটি মনের অজান্তে নেশায় পরিণত হয়ে যায়। বর্তমানে এটিকে বলা যায় আমার পেশাই।

বর্তমানে চাঁদপুর কণ্ঠে কর্মরত না থাকলেও সবসময় এটির মঙ্গল কামনা করে থাকি। চাঁদপুর কণ্ঠ আমার জীবন পাল্টে দিয়েছে। সেজন্যে এ পত্রিকা কর্তৃপক্ষের কাছে চিরঋণী। এ পত্রিকায় যোগদানের বিষয়টি ছিলো আমার জন্যে নাটকীয় ঘটনা। হয়তো মঞ্চ নাটকের একজন কর্মী হিসেবে দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠের পরমশ্রদ্ধেয় প্রতিষ্ঠাতা, সম্পাদক ও প্রকাশক আলহাজ্ব অ্যাডভোকেট ইকবাল-বিন-বাশার এবং শ্রদ্ধেয় প্রধান সম্পাদক কাজী শাহাদাত আমাকে ডেকে এনে খানিকটা কুশল বিনিময় শেষে কাজ করার জন্যে বললেন। অবশেষে একদিন বার্তা সম্পাদক পদে শুধু নিয়োগ নয়, তাৎক্ষণিক আমাকে চেয়ারে বসিয়ে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিলেন। পরদিন আমাকে কেন্দ্র করে আয়োজন করা হলো চাঁদপুর শহর ও মাঠ পর্যায়ে কর্মরত সকল সাংবাদিকের উপস্থিতিতে পরিচিতি সভা। যদি ভুল না হয় তারিখটি ছিলো ২০০১ সালের ১১ মে। আমাকে বার্তা সম্পাদক এবং বিএম হান্নানকে চীফ ফটোগ্রাফার ও চীফ রিপোর্টার করা হয়। অবশ্য বিএম হান্নান পূর্ব থেকেই চাঁদপুর কণ্ঠে কর্মরত ছিলেন। এরপর থেকে দুজনেই জুটি বেঁধে সংবাদ সংগ্রহের জন্যে মাঠে নেমে পড়ি। কয়েক বছর একটানা বার্তা সম্পাদক হিসেবে কাজ করার সুবাদে প্রতিটি উপজেলায় কর্মরত সহযোদ্ধাদের সাথে আমার সখ্যতা গড়ে উঠতে থাকে এবং সে সাথে আমার সাংবাদিকতার পরিসরও বৃদ্ধি পায়।

দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠে দায়িত্ব পালনে ছিলো অফুরন্ত স্বাধীনতা। সে কারণে কচি-কাঁচার মেলা ও অনন্যা নাট্যগোষ্ঠীর কর্মকাণ্ড চালাতে কখনো ব্যাঘাত ঘটেনি। পত্রিকার প্রধান সম্পাদক কাজী শাহাদাত নিজে পরিপূর্ণ একজন সংস্কৃতি সংগঠক হওয়ার সুবাদে আমি পেতাম সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের স্বাধীনতা।

আমার জীবনটা ছিলো অনেকটা ছন্নছাড়া। সংসার কী আমি তা কখনও অনুভব করিনি। ২০০৩ সালে আমার ছোট বোনের জামাই, যে কিনা আমার বন্ধুও বটে, সে আমার বিয়ের ব্যাপারে চাঁদপুর কণ্ঠের মালিক শ্রদ্ধেয় ইকবাল ভাইয়ের সাথে প্রায়শ যোগাযোগ করে চলেছেন। হঠাৎ তিনি একটি মেয়ের ছবি দেখালেন এবং আমার সম্মতিও নিলেন। এতোটুকুই আমি জানি। ওই বছরের ৪ সেপ্টেম্বর একটি কাজে চট্টগ্রাম গেলাম। সেখান থেকে পরদিন দুপুরে সড়কযোগে চাঁদপুর আসার পর শ্রদ্ধেয় ইকবাল-বিন-বাশার আমাকে খবর পাঠালেন অফিসে আসতে। তাৎক্ষণিক অফিসে চলে আসলাম। রাত ৮টায় শ্রদ্ধেয় ইকবাল ভাই, প্রধান সম্পাদক কাজী শাহাদাত, লায়ন কাজী মাহাবুব, লায়ন জাকির এবং আমার ছোট বোনের জামাইসহ আমার বড়ো দু ভাইয়ের সামনে ডেকে বললেন, কাল তোমার বিয়ে। আমরা সব ব্যবস্থা করে ফেলেছি। তুমি এখন বিয়ের কেনাকাটা সেরে ফেলো। তখন রাত সাড়ে ৯টা। আমার বাল্যবন্ধু সাহির পাটোয়ারী, কামাল পাটোয়ারী, বিএম হান্নান ও আমার ছোট বোনের জামাই মনির তালুকদারসহ নেমে পড়লাম মার্কেটিং করতে। পরদিন ৬ সেপ্টেম্বর শুক্রবার বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হলাম। বিষয়টি এজন্যে উল্লেখ করলাম, তখন চাঁদপুর কণ্ঠের ভূমিকার কারণেই আমার জীবনটা পাল্টে গেছে।

দীর্ঘ সময়ের পথচলায় চাঁদপুর কণ্ঠকে আমি কী দিতে পেরেছি সেটি আমার কাছে মুখ্য নয়, বরং চাঁদপুর কণ্ঠের মাধ্যমে আমি অর্জন করেছি শৃঙ্খলাবোধ এবং সাংবাদিকতা। আমার কাছে চাঁদপুর কণ্ঠ পত্রিকা ‘আইডল’, সাংবাদিক তৈরির ইনস্টিটিউট। পত্রিকার মালিক যদি নিরপেক্ষ দৃষ্টি রাখেন, তাহলে সে পত্রিকা কখনো পাঠকপ্রিয়তা হারাবে না, হারাতে পারে না। একপেশে এবং লেজুড়বৃত্তিক পত্রিকা পাঠকপ্রিয়তা কখনো পায় না। বর্তমান সময়ে মার্কেটে টিকে থাকতে হলে নিরপেক্ষতার কোনো বিকল্প নেই। চাঁদপুর কণ্ঠ এখনো সেই নিরপেক্ষতা ধরে রেখেছে। ‘সাদাকে সাদা বলা, কালোকে কালো বলা’ নীতিতে চলছে বলেই আজও পত্রিকার পাঠকপ্রিয়তা অর্জন ও বজায় রাখতে পেরেছে। পত্রিকার বয়স এখন ত্রিশ ছুঁই ছুঁই করছে। এটি চাঁদপুরবাসীর মুখপত্র হিসেবে সর্বদা টিকে থাকবে, এমনটিই প্রত্যাশা করছি।

যেহেতু চাঁদপুর কণ্ঠ একটি বৃহৎ পরিবার, চলার পথে অনেক ঘটনা-রটনা থাকাটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। এটিকে স্বাভাবিক দৃষ্টিতে দেখে পথ চললে সবার জন্যেই মঙ্গল। অতীতের ঘটনা-রটনাকে মুছে ফেলে সামনের দিনগুলোতে আমরা এক-অভিন্ন হয়ে পথ চললে সেটিই হবে আমাদের সবার জন্যে কল্যাণকর। আমি বলবো, যে পথ দেখায়, সে থাকে সবার দৃষ্টিতে এগিয়ে। চাঁদপুর কণ্ঠ আমাকে সে পথ দেখিয়েছে এখন সে পথেই আমি হাঁটছি। কাউকে সম্মান দেখালে সে নিজেই সম্মানিত হয়।

সবশেষে বলতে চাই, সব কাজের কাজী, শ্রদ্ধেয় প্রধান সম্পাদক কাজী শাহাদাত ভাইয়ের মতো লোক যেখানে রয়েছে, সে পত্রিকা পাঠক থেকে হারিয়ে যাবে না। বরং দিনদিন এটির আরো পাঠকপ্রিয়তা বাড়বে। ৩০ বছরপূর্তিতে চাঁদপুর কণ্ঠ পত্রিকায় কর্মরত সকলকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।

লেখক : সাবেক বার্তা সম্পাদক, দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠ; ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক, দৈনিক চাঁদপুর বার্তা; শিশু, সংস্কৃতি ও নাট্য সংগঠক।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়