প্রকাশ : ০৬ জুন ২০২৪, ০০:০০
একটি দীপ্তিমান সংগঠন
পত্রিকার জন্ম আছে, মৃত্যুও আছে। নানা কারণে পত্রিকা জন্ম নেয় আবার মরেও যায়। পাঠকের কাছে গ্রহণযোগ্যতা না পেলে শুধু বিজ্ঞাপন পত্রিকাকে বাঁচিয়ে রাখতে পারে না। শত প্রতিকূলতা ডিঙ্গিয়ে চাঁদপুরে যে দৈনিকটি এখনো পাঠকপ্রিয়তা অর্জন করে নিজের শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রেখেছে তার নাম দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠ। চাঁদপুর জেলার প্রথম দৈনিক এটি। চাঁদপুরে পত্রিকার নতুন ডিক্লারেশন পেয়ে ঢাক-ঢোল পিটিয়ে বহু পত্রিকার পথচলা শুরু হয়েছিলো। অনেকেই রাতারাতি ‘চাঁদপুর কণ্ঠ’ হতে চেয়েছিলো। কেউ সুচেষ্টায়, কেউ অপচেষ্টায়। সকল চেষ্টা হার মেনেছে বাস্তবতার কাছে। কারণ, চাঁদপুর কণ্ঠকে যারা শুধুই পত্রিকা মনে করেছিলেন তারাই ভুল করেছেন। মূলত ‘চাঁদপুর কণ্ঠ’ একটি প্রতিষ্ঠিত সংগঠনের নাম।
চাঁদের মাঝের কালো দাগ দেখে দূর থেকে বিভিন্ন জন বিভিন্ন মন্তব্য করে থাকেন। কেউ বলেন ওটা চাঁদের বুড়ি। কেউ বলেন চাঁদের মাঝে আছে ইয়া বড় বট গাছ, কেউ বলেন এটি চাঁদের কলঙ্কের দাগ। প্রকৃত অর্থে চাঁদে যারা গিয়েছেন তারাই জানেন আদৌ কোনো বুড়ি বা বটগাছের সাথে দেখা হয়েছে কি না। তেমনি দূর থেকে চাঁদপুর কণ্ঠকে দেখে, এর জনপ্রিয়তা দেখে ঈর্ষণীয় হয়ে অনেকেই অনেক মন্তব্য করতে পারেন। প্রকৃত অর্থে যারা চাঁদপুর কণ্ঠ পরিবারের সাথে কাজ করেছেন, তারাই জানেন চাঁদপুর কণ্ঠ শুধু পত্রিকা নয়, এটি একটি দীপ্তিমান সংগঠন।
পত্রিকাটি লেখক সৃষ্টি ও লেখার দৃষ্টিকোণে, বিভাগীয় নানান আয়োজনে, শুদ্ধ বানান ও শিরোনামের চিত্তাকর্ষণে, সংবাদ সম্পাদনায় ও পরিবেশনায়, মান সম্পন্ন সংবাদ নির্বাচন ও সাংবাদিকতায়, সামাজিক কর্মসূচি গ্রহণ ও তা পরিচালনায় যে অনন্য ভূমিকা রেখে যাচ্ছে তাতে মধুরূপ দৈনিকটিতে মৌরূপ পাঠকের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছেই। ডিজিটাল বাংলাদেশের ডিজিটাল পাঠকগণ দেশ ও দেশের বাইরে থেকে পত্রিকার অনলাইনে নিয়মিত ব্রাউজ করছে। বর্তমানে অনলাইন পাঠক সংখ্যাই কয়েক লাখ ছাড়িয়েছে। জেলাভিত্তিক একটি পত্রিকা পাঠকের কাছে কতোটা জনপ্রিয় তার জন্যে ছোট্ট এই পরিসংখ্যানটিই যথেষ্ট।
আবারো বলছি, ত্রিশ বছর বয়সী চাঁদপুর কণ্ঠ শুধুমাত্র একটি দৈনিক পত্রিকাই নয়, চাঁদপুর কণ্ঠ যুগপৎ একটি সংবাদপত্র ও একটি সংগঠন। সংবাদপত্রের ক্ষেত্রে বিবেচনা করতে হয় সেটি সমাজের সার্বিক চৈতন্যে প্রভাব বিস্তার করার ক্ষমতা রাখে কতোটা। যে পত্রিকা যতো বেশি প্রভাব বিস্তারের ক্ষমতা রাখে, তা ততো বেশি সার্থক। চাঁদপুর কণ্ঠ যে বৃহত্তর জেলাবাসী তথা সমাজের চেতনাকে ধারণ করতে পারছে, তার প্রমাণ তার ক্রমবর্ধমান পাঠকসংখ্যা।
চাঁদপুর কণ্ঠ শুধু পাঠক সমাজ নিয়েই ভাবেনি, ভেবেছে আগামী দিনের যৌক্তিক সমাজ বিনির্মাণে করণীয় নিয়ে। তাইতো দেড় দশকেরও বেশি সময় ধরে কাজ করছে বাচিক শিল্পী বিনির্মাণের প্লাটফর্ম হিসেবে। আগামীর বাক্যোদ্ধা তৈরি করতে গঠন করেছে একটি পৃথক ফাউন্ডেশন, যা ‘চাঁদপুর কণ্ঠ বিতর্ক ফাউন্ডেশন’ তথা ‘সিকেডিএফ’ নামে পরিচিত। পত্রিকার এই একটি উদ্যোগের কারণে প্রতিবছর শত শত প্রতিভা বিকশিত হচ্ছে। যারা যুক্তিতে মুক্তি পাওয়ার শপথ নিয়ে, পরমতসহিষ্ণুতার মানসিকতায়, সবিনয়ে মত প্রকাশের ধারাবাহিকতায়, তত্ত্ব ও তথ্য প্রদানের প্রাঞ্জলতায় নিজেদের দেশ ও দশের কাছে বিতার্কিক হিসেবে উপস্থাপন করছে।
পত্রিকাটি শুধু এক শ্রেণির পাঠকের কথা ভাবেনি, ভেবেছে সব শ্রেণির পাঠকের কথা। তাইতো শিশুদের জন্যে শিশুকণ্ঠ, সাহিত্যিকদের জন্যে সাহিত্য পাতা, পাঠকদের ভাবনা নিয়ে পাঠক ফোরাম, সংস্কৃতিমনা মানুষদের জন্যে সংস্কৃতি অঙ্গন, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ভাবনা নিয়ে শিক্ষাঙ্গন, কৃষকদের জন্যে কৃষিকণ্ঠ, প্রবাসীদের সুখ-দুঃখের কথা নিয়ে প্রবাসীকণ্ঠ, অসুস্থ মানুষদের অজানা প্রশ্ন সমাধানে চিকিৎসাঙ্গন, নারীদের অগ্রযাত্রা নিয়ে নারীকণ্ঠ, ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ের সমকালীন ভাবনা নিয়ে ইসলামীকণ্ঠ, প্রযুক্তির নিত্য নতুন আপডেট নিয়ে তথ্য-প্রযুক্তি কণ্ঠ, খেলাধুলার খবরাখবর নিয়ে ক্রীড়াকণ্ঠ, বিতর্কের জানা-অজানা বিষয় নিয়ে বিতর্কায়ন, বিশিষ্টজনদের ভাবনা নিয়ে সুচিন্তা নিয়মিত পরিবেশন করে যাচ্ছে। এছাড়া বিশেষ দিবসের বিশেষ ক্রোড়পত্র তো আছেই। যা বিভিন্ন শ্রেণির পাঠকের পাঠের ক্ষুধা মেটাচ্ছে নিয়মিত। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, সমাজের অসঙ্গতির প্রতিবাদ ও সঙ্গত বিষয়ে সমর্থন জানিয়ে যে সম্পাদকীয় ছাপা হয় তা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। দ্বিতীয় পাতার সম্পাদকীয় ও উপ-সম্পাদকীয় পত্রিকাটিকে নিয়ে গেছে অনন্য উচ্চতায়।
আমেরিকান অর্থনীতিবিদ প্রফেসর লুইস এইচ হ্যানি বলেছিলেন, ‘কোনো নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য বা উদ্দেশ্যাবলি অর্জনের জন্যে বিশেষ বিশেষ অংশসমূহের সুষ্ঠুভাবে সমন্বয় সাধনকে সংগঠন বলে।’ যেহেতু চাঁদপুর কণ্ঠ পাঠকসেবা নিশ্চিত করার জন্যে, পাঠকের সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে মানসম্পন্ন সংবাদ পরিবেশনের পাশাপাশি পত্রিকার প্রতিটি বিভাগীয় পাতাকে সুষ্ঠুভাবে সমন্বয় সাধন করে ক্রমাগত পাঠকপ্রিয়তা অর্জন করে চলছে, তাই নির্দ্বিধায় বলা যায় চাঁদপুর কণ্ঠ একটি সংগঠনের নাম।
লেখক : পাঞ্জেরী-চাঁদপুর কণ্ঠ বিতর্ক প্রতিযোগিতায় কলেজ পর্যায়ে হ্যাট্রিক চ্যাম্পিয়ন দলের দলপ্রধান; উপাধ্যক্ষ, চাঁদপুর বিতর্ক একাডেমি; আকিজ গ্রুপের কর্মকর্তা।