বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১, ১৫ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬  |   ২৮ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর শহরের পাঁচ রাস্তার মোড়ে 'আল্লাহু চত্বর'
  •   চাঁদপুর কণ্ঠৈর কলামিস্ট এএসএম শফিকুর রহমানের ইন্তেকাল
  •   নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব পেল সেনাবাহিনী
  •   জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনে’ প্রধান উপদেষ্টার ১০০ কোটি টাকার অনুদান
  •   মেঘনায় নিখোঁজ দুই ভাইয়ের মরদেহ উদ্ধার

প্রকাশ : ০৬ জুন ২০২৪, ০০:০০

চাঁদপুর কণ্ঠ : যে অনুভূতি হিরন্ময়

মুহাম্মদ আরিফ বিল্লাহ
চাঁদপুর কণ্ঠ : যে অনুভূতি হিরন্ময়

সংবাদপত্র সমাজের সুখ-দুঃখের কথা বলে। ভাঙ্গা-গড়ার কথা বলে। সত্য সুন্দরের কথা বলে। সমাজের দর্পণ হিসেবে কাজ করে। যার দিকে তাকালে সমাজের ভাল-মন্দ দেখা যায়। সমাজকে সুন্দর করতে, আলোকিত করতে সৃজনশীল সংবাদপত্রের কোনো বিকল্প নেই। চাঁদপুর কণ্ঠ এমন প্রতিটি গুণাবলি ধারণ করে পূর্ণ করেছে তিন দশক। কেউ যদি অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে চাঁদপুর কণ্ঠের দিকে তাকায়, তাহলে দেখবে চাঁদপুর জেলার সাফল্য, সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে কত না সৃজনশীল মনোভাব লুকিয়ে আছে পত্রিকার প্রতিটি পাতায়।

সৃষ্টিশীল মানুষের গতির অস্ত্র হলো সংবাদপত্র। এই গতি মানুষকে আগামীর স্বপ্ন দেখায়। একজন সংবাদকর্মী, লেখক-কবি তাদের সৃজনী-মনোভাবকে যৌক্তিক কাঠামোয় দাঁড় করিয়ে যুগান্তরের সেতুবন্ধন করে থাকেন। যে সেতুর উপর দিয়ে মানুষ এক যুগ থেকে অন্য যুগে প্রবেশের সুযোগ পায় অনায়াসেই।

একজন সংবাদকর্মী সমাজের ভালো এবং মন্দ নিবিড় পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে জনসমক্ষে তুলে ধরার চেষ্টা করেন, অসহায়ের চোখে আশার আলো জ্বালানোর চেষ্টা করেন। আর সমাজের সবল ব্যক্তিদের মধ্যে যারা দুর্বলের উপর চড়াও হওয়ার চেষ্টা করেন তাদের সতর্ক করেন, যেন কখনো অন্যায় কাজে প্রবৃত্ত না হন। এ কাজটি অত্যন্ত দুরূহ। সংবাদপত্রের মাধ্যমে এ ধরনের দুরূহ কাজ হয় বলেই সংবাদপত্র আগামীর কথা বলে। দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠ সম্ভাবনাময় আগামীর কথা বলে।

আমার লেখালেখি শুরু হয় ১৯৯৫ সালে। তখন ঢাকার তেজগাঁও নাখালপাড়া মাদ্রাসায় ফাযিল (স্নাতক) ১ম বর্ষে পড়ি। সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয় ও সমস্যা নিয়ে দৈনিক ইনকিলাব ও দৈনিক ইত্তেফাকে চিঠিপত্র কলামে নিয়মিত লিখতাম। এরপর থেকে প্রেম হয়েছে চাঁদপুর কণ্ঠের সাথে।

১৯৯৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর অথবা ২০০০ সালের ১ জানুয়ারি দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠে আমার প্রথম লেখা প্রকাশিত হয়। লেখাটি ছিল বিংশ শতাব্দী ও একবিংশ শতাব্দীর শুরুর তারিখ নিয়ে। আমার যদ্দুর মনে পড়ে, প্রবীর মিত্র নামের একজন লেখক ২০০০ সালের ১ জানুয়ারিকে একবিংশ শতাব্দীর শুরু ধরেছিলেন। আমি তার বিরোধিতা করে হিসেব কষে দেখিয়েছিলাম ২০০১ সালের ১ জানুয়ারি হবে একবিংশ শতাব্দীর প্রথম দিন। আমার লেখার শিরোনাম ছিল বিংশ শতাব্দী ও একবিংশ শতাব্দী নিয়ে বিতর্ক। দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠ অফিসে লেখাটি পাঠিয়েছিলাম আমার বন্ধুবর এ এ বিল্লালের মাধ্যমে। যার সাথে আমার আত্মার সম্পর্ক বিদ্যমান। যিনি এখনো পত্রিকাটির বিশেষ প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছেন। এভাবেই চাঁদপুর কণ্ঠের সাথে আমার পথচলা শুরু।

তারপর বিভিন্ন বিষয়ে থেমে থেমে লেখা পাঠানো হতো। চাঁদপুর কণ্ঠের অফিসটি তখন চাঁদপুর শহরের গুয়াখোলা রোডের চারতলা ভবনের নিচতলায় ছিলো। চাঁদপুর কণ্ঠের অফিস যখন চাঁদপুর প্রেসক্লাব সংলগ্ন রেডক্রিসেন্ট ভবনের তৃতীয় তলায়, তখন ২০১১ সাল থেকে সংবাদকর্মী হিসেবে কাজ শুরু করি। শুধু চাঁদপুর কণ্ঠে কাজ করার সুবাদে অনেক সম্মাননাও পেয়েছি। অনেক কারণেই চাঁদপুর কণ্ঠে কাজ করা গর্বের এবং সৌভাগ্যের।

আজ থেকে ত্রিশ বছর আগে দুপাতা মেলে অঙ্কুরিত কচি পাতার মতো বেড়ে ওঠা শিশু চাঁদপুর কণ্ঠ কৈশোর পেরিয়ে আজ জ্ঞান-বিজ্ঞান, শিক্ষা-সংস্কৃতি, শিল্পকলায় যৌবনদীপ্ত টগবগে তরুণ। লেখক, পাঠক, সংবাদকর্মী, যোগ্য সম্পাদনা পরিষদ সব মিলিয়ে চাঁদপুর কণ্ঠ জেলায় স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখা পত্রিকার এক অনন্য নাম। জাতীয় ছুটি ব্যতীত নিয়মিত প্রকাশিত পত্রিকা চাঁদপুর কণ্ঠ। আমার অভিজ্ঞতায় বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠিত যতগুলো জাতীয় দৈনিক পত্রিকা রয়েছে, যে সকল কারণে পত্রিকাগুলো জনপ্রিয়তা পেয়েছে, দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠ তাদের থেকেও স্বতন্ত্র কিছু কাজ করে জাতীয় পত্রিকার পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কাজ হলো : পত্রিকাটি জেলার গণমানুষের পাঠ চাহিদা বিবেচনায় রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, শিক্ষা, সংস্কৃতি, সাহিত্য চর্চা এবং মানবিক চাহিদাগুলো মূল্যায়ন করে বিভিন্ন পাতা প্রকাশ করে। প্রত্যেকটি পাতা প্রকাশের জন্যে দায়িত্বশীল বিভাগীয় প্রধান রয়েছেন। যাদের তত্ত্বাবধানে নিয়মিত প্রকাশ হয় সাহিত্যপাতা, শিক্ষাঙ্গন, সুচিন্তা, পাঠকফোরাম, ক্রীড়াকণ্ঠ, চিকিৎসাঙ্গন, ইসলামীকণ্ঠ, শিশুকণ্ঠ, কৃষিকণ্ঠ, প্রবাসীকণ্ঠ ইত্যাদি।

চাঁদপুর কণ্ঠ তাঁর দূরদর্শী চিন্তার মাধ্যমে জেলার গণমানুষের স্বাভাবিক চিন্তাধারা, নীতি-নৈতিকতা, রাজনৈতিক ধ্যান-ধারণা ও সামাজিক সচেতনতা নিয়ে ভাবনাগুলোর সরল বিবরণ পত্রিকার পাতায় তুলে ধরেছে। ‘সরলে-গরলে’ শিরোনামে পত্রিকার প্রধান সম্পাদক কাজী শাহাদাত তাঁর অভিজ্ঞতার ঝুলি থেকে মানুষের মনের কথা বের করে আনার জন্যে প্রয়োজনীয় প্রশ্নগুলো তৈরি করে পত্রিকার প্রতিনিধিদের দিয়ে দিতেন। এর মাধ্যমে রাজনৈতিক বলয়ের নেতৃত্ব মানুষের কল্যাণে কী পরিকল্পনা করে থাকেন, একজন ব্যবসায়ী তার ব্যবসা সম্প্রসারণে কীভাবে ক্রেতা এবং বিক্রেতার মাঝে সমন্বয় সাধন করেন, জেলার ছোট বড় বাজার, উপজেলা শহর, জেলা শহরের নেতৃত্বে যারা রয়েছেন তারা নগরায়ন নিয়ে কী ভেবেছেন, একজন শিক্ষাবিদ শিক্ষা উন্নয়নে তার কী পরিকল্পনা, একজন সমাজসেবক সমাজের ইতিবাচক পরিবর্তনে কী ধরনের ধ্যান-ধারণা নিয়ে কাজ করেন, একজন উদ্যোক্তা কীভাবে সেটি হওয়ার জন্যে উদ্বুদ্ধ হলেন--এই কথাগুলো চাঁদপুর কণ্ঠ দীর্ঘ সময় ধরে প্রকাশ করেছে। ফলস্বরূপ জেলার সমস্যা আর সম্ভাবনাগুলো এক কাগজে এক পাতায় অবলোকন করেছে জেলার দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গ। এর পাশাপাশি দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠ বিতর্ক ফাউন্ডেশন গঠন, চতুরঙ্গসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত থেকে চাঁদপুর জেলাকে ব্র্যান্ডিং জেলায় রূপান্তরিত করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে বলে আমি বিশ্বাস করি।

একটি পত্রিকা সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে কাজ করলে সমাজের কতোটা ইতিবাচক ফলাফল থাকতে পারে তার প্রমাণ চাঁদপুর কণ্ঠের শিক্ষাঙ্গন নিয়ে সাফল্য, সমস্যা ও সম্ভাবনার সিরিজ নিউজ। চাঁদপুর কণ্ঠ জেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন সমস্যা-সম্ভাবনা তুলে ধরে শিক্ষা আন্দোলনকে বেগবান করতে ভূমিকা পালন করেছে। শিক্ষাঙ্গনে ‘সাফল্য-সমস্যা-সম্ভাবনা’ শিরোনামে তথ্য নির্ভর সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশ পায় জেলার জনপ্রিয় এই পত্রিকায়। এর মাধ্যমে এই জেলার স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসার প্রকৃত চিত্র শিক্ষা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরে খুব সহজেই চলে আসে। এতে বিদ্যমান সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সমাধান করা শিক্ষা প্রশাসনের পক্ষে খুব সহজ হয়ে গিয়েছিলো। পাশাপাশি উল্লেখিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর সাফল্যের চিত্র সাধারণ মানুষ জানতে পেরেছে এই পত্রিকার কর্মকৌশলের মাধ্যমে।

চাঁদপুর কণ্ঠের পাঠকফোরাম পাতাটি চাঁদপুর জেলার লেখক সৃষ্টির এক অনন্য গাইড হিসেবে কাজ করেছে। বর্তমানে চাঁদপুরের সাহিত্যাঙ্গনে যারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন এদের অধিকাংশের সাহিত্যের হাতেখড়ি পাঠক ফোরামের মাধ্যমে। পাঠক ফোরাম লেখক সৃষ্টিতে অনন্য ভূমিকা পালন করেছে, যেটি একটি পত্রিকার ধারাবাহিক টেকসই চিন্তার ফসল।

যাঁদের সান্নিধ্যে চাঁদপুর কণ্ঠে কাজ করার স্মৃতি অনেক মধুর, তাঁদের অন্যতম কাজী শাহাদাত ভাই। এছাড়া মির্জা জাকির ভাই, গিয়াসউদ্দিন মিলন, এসএম আন্ওয়ারুল করীম, বিএম হান্নান, এএইচএম আহসান উল্লাহ, সেলিম রেজা ও সোহাঈদ খান জিয়া। সাহিত্য বিষয়ক তথ্য বিনিময় হয় যার সাথে বেশি, তিনি হলেন মুহাম্মদ ফরিদ হাসান।

সবশেষে কবির ভাষায় বলতে চাই ‘সকলের তরে সকলে আমরা, প্রত্যেকে আমরা পরের তরে’। দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠের কলম সৈনিকরা সত্য সুন্দরের পক্ষে সমাজ বিনির্মাণে সংবাদপত্রের জগতে দৃষ্টান্ত হিসেবে সমুজ্জ্বল হবে এই প্রত্যাশা ব্যক্ত করে এই নিবন্ধের যবনিকা টানছি।

লেখক : সাবেক সভাপতি, নারায়ণপুর প্রেসক্লাব; মতলব উপজেলা প্রতিনিধি, দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠ; সহকারী গ্রন্থাগারিক, নারায়ণপুর ডিগ্রি কলেজ, মতলব দক্ষিণ।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়