বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১, ১৫ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬  |   ৩১ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর শহরের পাঁচ রাস্তার মোড়ে 'আল্লাহু চত্বর'
  •   চাঁদপুর কণ্ঠৈর কলামিস্ট এএসএম শফিকুর রহমানের ইন্তেকাল
  •   নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব পেল সেনাবাহিনী
  •   জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনে’ প্রধান উপদেষ্টার ১০০ কোটি টাকার অনুদান
  •   মেঘনায় নিখোঁজ দুই ভাইয়ের মরদেহ উদ্ধার

প্রকাশ : ০৪ জুন ২০২৪, ০০:০০

লাখো কণ্ঠের একটি কণ্ঠ, তারই নাম চাঁদপুর কণ্ঠ

কাজী আজিজুল হাকিম (নাহিন)
লাখো কণ্ঠের একটি কণ্ঠ, তারই নাম চাঁদপুর কণ্ঠ

কণ্ঠ এমন একটি প্রয়োজনীয় উপাদান যা মানব শরীরের জন্যে অনিবার্য। মানবদেহে কণ্ঠের কাজ হচ্ছে ধ্বনির মাধ্যমে অন্যকে সতর্ক করা, সুখ-দুঃখ ভালো-মন্দ সম্পর্কে জানানো-বোঝানো, নিজের কিংবা অন্যের প্রয়োজনীয় ও অপ্রয়োজনীয় বিষয়ে ভাব প্রকাশ করার স্বাধীনতা প্রকাশ। ঠিক তেমনই চাঁদপুর কণ্ঠ একটি মফস্বল শহরে দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে একই কাজ করছে তার নিষ্ঠা, সততা, বস্তুনিষ্ঠতা, নিরপেক্ষতা, সমাজের বাস্তব চিত্র তুলে ধরার মাধ্যমে।

একদিনে চাঁদপুর কণ্ঠ তৈরি হয় নি। সাপ্তাহিক থেকে দৈনিকে পরিণত হওয়ার পরপরই চাঁদপুর কণ্ঠের পেছনে শ্রম বেড়ে যায়। একটি পত্রিকা নিয়মিত প্রকাশনা করা অনেক বড় চ্যালেঞ্জিং কাজ। এই চ্যালেঞ্জকে মোকাবেলা করার জন্যে চাঁদপুর কণ্ঠের পেছনে দিন-রাত পরিশ্রম করতে হয়েছে। এই পরিশ্রমটি আমি নিজ চোখে দেখেছি এবং বাস্তবে উপলব্ধি করেছি। এই উপলব্ধি চাঁদপুর কণ্ঠের প্রতি ভালোবাসা বাড়িয়ে দেয় বহু গুণ।

আমার জন্মের ২-৩ বছর আগে চাঁদপুর কণ্ঠের জন্ম হলেও আমি যখন বুঝতে শিখি, তখন থেকেই দেখেছি আমার বাবার পরিশ্রম। আমার বাবা হচ্ছেন দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠের প্রধান সম্পাদক কাজী শাহাদাত। তিনি পত্রিকাটির জন্যে এতোটা নিবেদিত যে, পত্রিকাটি সকালে পাঠকের হাতে সুন্দর ও সাবলীলভাবে বস্তুনিষ্ঠতার মাধ্যমে প্রকাশ না হওয়া পর্যন্ত মনে শান্তি পান না। তাই তো তিনি পত্রিকাটি শুদ্ধ, নির্ভুলভাবে বের করার জন্যে দিনে এবং রাতে অফিসেই পড়ে থাকতেন। তিনি বাসা থেকে সকালে যেতেন এবং দুপুরে আসতেন। এসে বাসায় খাবার খেয়ে কিছু সময় রেস্ট নিয়ে আবার অফিসে চলে যেতেন। বাসায় আসতেন রাত ৩টা থেকে ৪টায়। এর মাঝে কখনো কখনো অফিসের কাজের চাপে দুপুরের খাবার খেতে দেরি হয়ে যেতো। বহুবার বাসায় আসতে পারেন নি বলে আমি তাঁর জন্যে অফিসে খাবার নিয়ে গেছি। মাঝে মধ্যে রাতে কাজ শেষ করে আসতে আসতে ভোর হয়ে যেতো। তারপর এসে বাসায় খাবার খেতেন। কখনো কখনো অফিস সহায়ক দিয়ে রাতের খাবার নিয়ে যেতেন। এর মাঝে আরো বহু ঘটনা রয়েছে। এতেই বুঝা যায় তিনি কতোটা নিবেদিত আছেন এবং ছিলেন চাঁদপুর কণ্ঠের প্রতি।

আমি যখন এসএসসি পাস করি, বাবা আমাকে চাঁদপুর কণ্ঠ অফিসে কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে কাজ করতে বললেন। আমি বাবাকে কিছুটা সহযোগিতা করার জন্যে অফিসের কাজে যুক্ত হলাম। গিয়েই তো বুঝলাম পত্রিকা প্রকাশ করা কতোটা কঠিন। একটি পত্রিকা বের করতে পত্রিকার নিউজের সঠিকতা ও নির্ভুল দিকটি যাচাই করতে হয়। এর জন্যে একজন কম্পিউটার অপারেটরসহ নিউজ এডিটরকে অনেক বেশি পরিশ্রম করতে হয়। নিউজ টাইপ করা, কারেকশন করা, নিউজ পড়ে নামানো, ট্রেসিংয়ের জন্যে নিউজ সাজানো, পেস্টিং বোর্ডে ট্রেচিং কেটে সাজানোসহ নানা রকম কাজ। যে কাজ অনেক ধৈর্য ও পরিশ্রম সহকারে করতে হয় গভীর রাত পর্যন্ত। কারণ ভালোভাবে সাজিয়ে, শুদ্ধভাবে পত্রিকা বের করতে না পারলে পাঠকের কাছে কোনো পত্রিকা গ্রহণযোগ্য হয়ে দাঁড়ায় না। সেটি চাঁদপুর কণ্ঠ পেরেছে এবং ভবিষ্যতেও পারবে। যার কারণে একজন সম্পাদকের সাথে কম্পিউটার অপারেটরদেরও করতে হয় অনেক পরিশ্রম। যার বাস্তব উপলব্ধি আমি নিজেই করেছি। গভীর রাতে অফিসের কাজ শেষ করে বাবার সাথে একসাথে বাসায় ফেরার সুযোগও হয়েছে আমার।

চাঁদপুর কণ্ঠের দীর্ঘ ৩০ বছরের জীবনে অনেক অভিজ্ঞজন কাজ করেছেন। কেউ আছেন আবার কেউ নেই। তাদের মাধ্যমেই বের হয়েছে ও হচ্ছে বিভিন্ন পাতা, যেমন : ইসলামীকণ্ঠ, সাহিত্যপাতা, পাঠক ফোরাম, ক্রীড়াকণ্ঠ, চিকিৎসাঙ্গন, শিশুকণ্ঠ, কৃষিকণ্ঠ, নারীকণ্ঠ, প্রবাসীকণ্ঠ, সংস্কৃতি অঙ্গন, ঈদসংখ্যা, সুচিন্তা এবং বিতর্কায়ন পাতাসহ বিভিন্ন দিবসের ক্রোড়পত্র। চাঁদপুরের মতো মফস্বল শহরে জাতীয় পত্রিকার মতোই সমান তালে একমাত্র চাঁদপুর কণ্ঠই নিয়মিত প্রকাশিত হয়েছে এবং হচ্ছে। নিয়মিত পাতাগুলোতে লেখালেখি করে অনেকেই কবি, লেখক, সাহিত্যিক, গবেষক, সাংবাদিক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন এবং তারা প্রত্যেকেই ভালো ভালো পর্যায়ে অবস্থান করছেন।

যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চাঁদপুর কণ্ঠের অনলাইন িি.িপযধহফঢ়ঁৎশধহঃযধ.২৪ বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। আছে ফেসবুক পেজ, গ্রুপ, ফেসবুক আইডি, ইউটিউব চ্যানেল। চাঁদপুর কণ্ঠ এখন ইলাস্ট্রেটরে ৪টি পাতা সাজিয়ে রাত ১১টার ভেতর ঢাকায় ছাপানোর জন্যে পাঠানো হয়, আগের মতো আর ভোর রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয় না। কিন্তু সেই সমপরিমাণ কাজ নিয়মিত করতে হয়।

অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে চাঁদপুরের অনেক পত্রিকার মধ্যে এখনো পাঠকের কাছে সবচে’ জনপ্রিয় এবং বহুল পরিচিত পত্রিকা চাঁদপুর কণ্ঠ। প্রবাসী পাঠকেরাও চাঁদপুর কণ্ঠ নিয়মিত পড়তে ভুলেন না, যেন চাঁদপুর কণ্ঠ পড়তে না পারলে দিনটিরই তাদের শুভ সূচনা হয় না।

আজ এই ৩০ বছরপূর্তিতে পাঠক, শুভাকাঙ্ক্ষী, লেখক, বিজ্ঞাপনদাতা, সম্পাদক এবং অফিসের সাথে যুক্ত সকল সহকর্মীকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা, অভিনন্দন ও শ্রদ্ধা। এছাড়া চাঁদপুর সদরসহ বিভিন্ন উপজেলায় যেসব সাংবাদিক রয়েছেন তাদেরকে আমার পক্ষ থেকে জানাই সম্মান, কারণ তারা সারাদিন চাঁদপুর কণ্ঠে নিউজ প্রেরণের জন্যে পরিশ্রম করেন।

চাঁদপুর কণ্ঠের ৩০ বছর শুধু সময় নয়। এই দীর্ঘ সময়ে রয়েছে অনেকের স্মৃতি, মায়া, পরিশ্রম, আবেগ, কষ্ট ও উত্থান। প্রচণ্ড ঝড়-তুফানের মধ্যেও পরদিন চাঁদপুর কণ্ঠ পেরেছে পাঠকের হাতে চাঁদপুরের খবর পৌঁছে দিতে। সেজন্যে হকারদের জানাই অন্তর থেকে দোয়া। যুগের পর যুগ আসে, কেউ কেউ হারিয়ে যায়। কিন্তু তার খ্যাতি চিরকাল রয়ে যায়। ঠিক তেমনই চাঁদপুর কণ্ঠের খ্যাতিও চিরকাল রয়ে যাবে ইনশাল্লাহ।

চাঁদপুর কণ্ঠের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ও প্রকাশক অ্যাডঃ ইকবাল-বিন-বাশার এবং প্রফেসর বিলকিস আজিজ আমার ঘনিষ্ঠ আত্মীয়। তাঁদেরও রয়েছে চাঁদপুর কণ্ঠের প্রতি অপরিসীম অবদান।

চাঁদপুর কণ্ঠের ‘চাঁদপুর কণ্ঠ বিতর্ক ফাউন্ডেশন’ নামে একটি সংগঠন আছে, সেটির বয়স ১০ বছর হয়ে গেছে। দীর্ঘ ১৫ বছর চাঁদপুর কণ্ঠ অনেক বিতার্কিক সৃষ্টি করেছে। চাঁদপুর কণ্ঠ একটি আলো। এই আলো সবসময় সবদিকে ছড়িয়ে পড়বে বছরের পর বছর। শুধু এতোটুকুই বলবো, চাঁদপুর কণ্ঠের এই দীর্ঘ পথচলায় যারা জড়িত রয়েছেন, কঠিন মুহূর্ত কিংবা আপনাদের সুখের মুহূর্তেও সর্বদা চাঁদপুর কণ্ঠের পাশেই থাকবেন। আমি মাঝে মাঝে চিন্তা করি, আমার বাবা চাঁদপুর কণ্ঠের শুরু থেকে এ পর্যন্ত তাঁর দক্ষতা ও শ্রম দিয়ে চাঁদপুর কণ্ঠকে এতোদূর এগিয়ে নিয়ে এসেছেন। ভবিষ্যতে যারা আসবেন তারা কি সেভাবে পারবেন? হ্যাঁ, এটাই চাওয়া--ভবিষ্যতে যারা এই দায়িত্বে আসবেন তারাও যেন তাঁর নীতি নৈতিকতা এবং শুদ্ধ বানানের পথ অনুসরণ করে চাঁদপুর কণ্ঠকে বহুদূর এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেন।

এই চাঁদপুর কণ্ঠ বহু যুগ ধরে যাতে চলতে পারে এবং পাঠকের হৃদয় জয় করে সমাজ আলোকিত করতে পারে সেই কামনা মহান রাব্বুল আল-আমিনের কাছে।

লেখক : কম্পিউটার অপারেটর, দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠ; সভাপতি (২০২৪-২৫), চাঁদপুর রোটার‌্যাক্ট ক্লাব।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়