প্রকাশ : ৩০ মে ২০২৪, ০০:০০
চাঁদপুর কণ্ঠ এবং পাটোয়ারী নিউজপেপার এজেন্সী
চাঁদপুর কণ্ঠ জন্মের আগেই এই জেলায় কয়েকটি পত্রিকা ছিলো। তবে এতো দ্রুত জনপ্রিয়তা পায়নি। সাপ্তাহিক থেকে দৈনিকে রূপ নিয়ে আজ অবধি নিজের চলমান শক্তি সবার ওপরেই ধরে রেখেছে। এর একমাত্র কারণ এই পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক আলহাজ্ব অ্যাডভোকেট ইকবাল-বিন-বাশার এবং প্রধান সম্পাদক কাজী শাহাদাত। আমার মরহুম মামা মোঃ নুরনবী পাটোয়ারীর সঙ্গে কাজী শাহাদাত মামার ছিলো খুবই ঘনিষ্ঠতা।
মামা নুরনবীর পত্রিকার স্টল চাঁদপুর কোর্ট স্টেশনের প্লাটফর্মে। একদিন কাজী শাহাদাত মামা সেই স্টলের সামনে এসে দাঁড়ালেন। আমি মামার চেয়ারের পাশে টুলে বসা। কাজী শাহাদাত মামাকে দেখে নুরনবী মামা চেয়ার ছেড়ে দাঁড়িয়ে গেলেন। মামার দাঁড়ানো দেখে আমিও কিছু না বুঝে দাঁড়িয়ে গেলাম। তাঁর প্রতি বিশেষ একটা সম্মান, শ্রদ্ধাবোধ দেখলাম মামার মাঝে। পরবর্তীতে কুশল বিনিময় করে কাজী শাহাদাত মামা চলে গেলেন। এরপর মামা শুরু করলেন কাজী শাহাদাত মামার গল্প--তিনি চাঁদপুর কণ্ঠের প্রধান সম্পাদক, আমার গুরু। আজকের এই পাটোয়ারী নিউজপেপার এজেন্সীর পেছনে আমার গুরু কাজী শাহাদাত ভাইয়ের অবদানই বেশি। তিনিই আমাকে সর্বপ্রথম দৈনিক জনতা পত্রিকার এজেন্সীশীপ এনে দিয়ে সংবাদপত্র ব্যবসায় জড়িত করেন। তখন সংবাদপত্রের মূল ব্যবসা ছিলো আসলাম খান সাহেবের কাছে। তাদের পত্রিকা আসতো লঞ্চযোগে--বেঙ্গল ওয়াটারে। আর নুরনবী পাটোয়ারীর অর্থাৎ পাটোয়ারী নিউজ পেপার এজেন্সীর দৈনিক জনতা পত্রিকা আসতো বাসে। খুব দ্রুত সময়ে পাঠকের হাতে পত্রিকা পৌঁছায় পাটোয়ারী এজেন্সী এবং জনতা পত্রিকা অনেক জনপ্রিয়তা পায়।
উল্লেখ্য, তখন জনতা পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি ছিলেন কাজী শাহাদাত মামা। নুরনবী মামা কাজী শাহাদাত মামার হাত ধরেই এই পত্রিকার ব্যবসায় এসে পাটোয়ারী নিউজপেপার এজেন্সী দাঁড় করান। চাঁদপুর কণ্ঠ এবং পাটোয়ারী নিউজপেপার এজেন্সী দুটোতেই কাজী শাহাদাত মামার বিশাল ভূমিকা আছে। আমার মনে পড়ে, চেয়ারম্যান করিম পাটোয়ারী সাহেব যেদিন মারা গেলেন, সেদিন চাঁদপুর কণ্ঠ বিশেষ বুলেটিন বের করলো। সেদিন হকারের সাথে একত্রিত হয়ে নুরনবী পাটোয়ারী মামাও পত্রিকা বিলিকারক সেজেছিলেন। চাঁদপুর কণ্ঠ বিক্রির রেকর্ড চাঁদপুরে আজ অবধি কোনো পত্রিকা ভাঙ্গতে পারেনি। একদিন প্রায় ১০/১২ হাজার পত্রিকা বিক্রি হয়েছিলো। যা পরবর্তী দিন চাঁদপুর কণ্ঠে নিউজ হিসেবে ছাপা হয়।
মামা নুরনবী পাটোয়ারী ২০১৬ সালে মারা গেলে মামার ব্যবসা আমি দেখভাল করি। চাঁদপুর কণ্ঠ শুধু পাটোয়ারী নিউজপেপার এজেন্সী নয়, বর্তমানে এই প্রতিষ্ঠান যিনি দেখভাল করেন অর্থাৎ আমি জসীম মেহেদীকেও লেখক হিসেবে তৈরি করেছে। মামার দোকানে নিয়মিত বসার কারণে আমি নিয়মিত চাঁদপুর কণ্ঠ পড়তাম।
চাঁদপুর কণ্ঠের নিয়মিত অনেক বিভাগ আছে, যেমন : সাহিত্যপাতা, নারীকণ্ঠ, পাঠক ফোরাম ইত্যাদি। পাঠক ফোরাম দেখার প্রতি আমার ঝোঁক ছিলো বেশি। নিয়মিত চাঁদপুর কণ্ঠ পড়তাম ঠিকই, শনিবার পাঠক ফোরাম আমার দেখা চাই। পাঠক ফোরাম দেখতাম আর ভাবতাম, যদি আমি এখানে প্রকাশিত সুন্দর সুন্দর কবিতা, গল্পের মতো আমার কবিতা, গল্প প্রকাশ করতে পারতাম। একদিন ঠিকই একটা কবিতা লিখে চাঁদপুর কণ্ঠের পাঠক ফোরাম বিভাগের নামে পাঠালাম। পরের শনিবারে সেটি ছাপা হয়ে এলো। সে যে কী আনন্দ! এরপর কবিতা, গল্প, কৌতুক চাঁদপুর কণ্ঠে লিখতাম। চাঁদপুর কণ্ঠ আমাকে পাঠক ও বিক্রেতা থেকে লেখক হিসেবে তৈরি করে তুললো।
আমার মনে পড়ে, বিভাগীয় সম্পাদক শাহাদাৎ হোসেন শান্ত মামার লেখাসহ বিশ্ব ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে পাঠক ফোরামের একটা বিশেষ সংখ্যা বের হয়। সেদিন পাঠক ফোরামের জন্যে চাঁদপুর কণ্ঠ বেলা ১২টার মধ্যে শেষ হয়ে যায়। এতো জনপ্রিয় চাঁদপুর কণ্ঠ! আজও জনপ্রিয়। চাঁদপুর কণ্ঠ এ জেলার অতন্দ্র প্রহরীর ন্যায় মানুষের হৃদয়ে প্রাণ হয়ে আছে।
লেখক : কবি, গল্পকার ও নাট্যকার এবং অভিনেতা।