শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২২ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।
  •   রাষ্ট্রীয় পদে আসীন হচ্ছেন খবরে আসামিপক্ষে শুনানি করলেন না সমাজী।

প্রকাশ : ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০

রাজনৈতিক মতাদর্শ এক পাশে রেখে খেলার মাঠে সবার পরিচয় হোক শুধুই খেলোয়াড়
শামীম হাসান ॥

ফরিদগঞ্জ উপজেলায় ক্রীড়াবান্ধব বহুমাত্রিক মানুষের কথা বললে যে ক’জন মানুষের নাম উচ্চারিত হয় তাদের মধ্যে একজন আনোয়ার হোসেন সজিব। ফরিদগঞ্জের বিশিষ্ট এই ব্যবসায়ী বাজার ব্যবসায়ী কমিটির নির্বাচিত সাংগঠনিক সম্পাদক। ব্যবসায়িক ব্যস্ততার ভিড়ে খেলাধুলার জন্যে সময় ঠিকই বের করে নেন। উপজেলায় ক্রীড়া সংগঠন করতে গিয়ে শত প্রতিবন্ধকতার শিকার হওয়া সত্ত্বেও নীরবে তা সয়ে গেছেন ক্রীড়াঙ্গনে সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টির স্বার্থে। তাঁর কাছে ক্রীড়াঙ্গনে লেগে থাকাটা একটি সংগ্রামের মতোই। যে সংগ্রামের মধ্য দিয়ে জন্ম নিবে স্থানীয় অসংখ্য প্রতিভাবান ও উদীয়মান খেলোয়াড়।

১৯৯৬ সালে একজন ফুটবলার হিসেবে খেলার জগতে যাত্রা শুরু করা এই মানুষটি বর্তমানে দায়িত্ব পালন করছেন নিজ এলাকা রূপসা উত্তর ইউনিয়নে নিজের হাতে গড়া সূর্য তরুণ স্পোর্টস্ ক্লাবের সভাপতি হিসেবে। এছাড়া ফরিদগঞ্জ উপজেলা সদরস্থ শ্রেষ্ঠ ক্রীড়া সংগঠন ফরিদগঞ্জ স্পোর্টস্ ক্লাবের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন দীর্ঘ সময় ধরে। ব্যবসা পরিচালনার পাশাপাশি একাধারে ফরিদগঞ্জ বাজার ব্যবসায়ী কমিটির পরিচালনায় ভূমিকা রাখছেন তিনি। দায়িত্ব পালন করœে সাংগঠনিক সম্পাদকের। সাংগঠনিক এতো পদবীর চাইতে এ মানুষটির সবচেয়ে বড় পরিচয় হচ্ছে তিনি একজন খেলাপাগল ক্রীড়াবান্ধব ভালো মনের মানুষ। সেই সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত রাখছেন সামাজিক ও মানবিক নানান কর্মকাণ্ডে।

চাঁদপুর কণ্ঠের ক্রীড়া পাতার ধারাবাহিক প্রতিবেদনের এই পর্বে থাকছে আনোয়ার হোসেন সজিবের ক্রীড়াঙ্গন নিয়ে ভাবনা, প্রত্যাশা ও স্বপ্নের কথা।

ক্রীড়াকণ্ঠ : কেমন আছেন?

আনোয়ার হোসেন সজিব : আলহামদুলিল্লাহ, ভালো।

ক্রীড়াকণ্ঠ : বর্তমান সময়ের আগে তরুণ-কিশোর আনোয়ার হোসেনের কত সাল থেকে ক্রীড়াঙ্গনে সক্রিয়ভাবে বিচরণ ঘটেছিলো?

আনোয়ার হোসেন সজিব : ছোটবেলা থেকেই খেলাধুলাকে ভালোবাসতাম। খেলতে এবং খেলা দেখতে ভালো লাগতো। তবে ১৯৯৬ সালে একজন ফুটবল খেলোয়াড় হিসেবে যাত্রা শুরু হয়।

ক্রীড়াকণ্ঠ : একজন খেলোয়াড় থেকে ক্রীড়া সংগঠক হয়ে উঠলেন কিভাবে?

আনোয়ার হোসেন সজিব : নিজ গ্রাম গাব্দেরগাঁওয়ে স্থানীয় মাঠে খেলার পাশাপাশি এলাকার খেলা পাগল মানুষগুলোকে এক গণ্ডিতে রেখে সুশৃঙ্খলময় খেলা পরিচালনার মাধ্যমে সকল প্রকার অদৃশ্য অপশক্তিমুক্ত আদর্শ এলাকা নির্মাণের লক্ষ্যে ১৯৯৭ সালে আমি ‘সূর্যতরুণ স্পোর্টস্ ক্লাব’ প্রতিষ্ঠা করি। সেই থেকেই ক্রীড়া সংগঠক হিসেবে যাত্রা শুরু।

ক্রীড়াকণ্ঠ : ফুটবল, ক্রিকেট নাকি ব্যাডমিন্টন--কোন্ খেলায় আপনি পারদর্শী?

আনোয়ার হোসেন সজিব : নির্দিষ্ট করে একমাত্র খেলা হিসেবে একটি খেলাকে অধিকতর অগ্রাধিকার কখনোই দেইনি, বরং মৌসুমভিত্তিক সব খেলাতে নিজেকে সম্পৃক্ত রেখেছি। সেজন্যে ফুটবল, ক্রিকেট ও ব্যাডমিন্টন এই তিন খেলাতেই নিজে সমানভাবে পরিচর্যার মাধ্যমে দক্ষতা অর্জন করেছি।

ক্রীড়াকণ্ঠ : ক্রীড়াঙ্গনে আপনার ব্যক্তিগতভাবে মনে রাখার মতো বড় সাফল্য কী?

আনোয়ার হোসেন সজিব : ২০০২ গাব্দেরগাঁও মাঠে টি-টুয়েন্টি ক্রিকেটে অপরাজিত ব্যক্তিগত ১২৭ রান ও একই ম্যাচে বল হাতে ১৬ ওভার ম্যাচে ৭ উইকেট নেয়া ছিলো স্মৃতিতে থাকা বড় সাফল্য।

ক্রীড়াকণ্ঠ : উপজেলার গণ্ডির বাইরে যাওয়ার সুযোগ হয়েছিলো কী?

আনোয়ার হোসেন সজিব : উপজেলার কাউনিয়া ও উপজেলার বাইরে রায়পুর মার্চেন্ট মাঠ, রাখালিয়া, রামগঞ্জ সহ অনেক স্থানেই খেলেছি। সফলতাও পেয়েছি।

ক্রীড়াকণ্ঠ : নিজের ক্যারিয়ারে স্মরণীয় কোনো ম্যাচের কথা মনে পড়ে কী?

আনোয়ার হোসেন সজিব : আমাদের স্থানীয় মাঠ বড়ালীতে ১৬ ওভারের ম্যাচে ৬১ রানে অল আউট হওয়ার পর ক্যাপটেন হিসেবে বিচক্ষণতার মাধ্যমে ৩ রানে দলকে জিতিয়েছিলাম। আরেক ম্যাচে উপজেলার ১৫নং রূপসা ইউনিয়নের মালের ভাংতি মাঠে আমার দল ৬৪ রানে অলআউট হওয়ার পরও ম্যাচে জয় পাওয়া এবং ৭১ রানে দল অল আউট হওয়ার পরও ৪ রানে ম্যাচ জিতে নেয়া স্মরণীয় ঘটনা বৈকি।

ক্রীড়াকণ্ঠ : তরুণ প্রতিভাবান খেলোয়াড় বেরিয়ে আসার জন্যে করণীয় কী হতে পারে বলে আপনি মনে করেন?

আনোয়ার হোসেন সজিব : খেলার কোনো বিকল্প নেই। ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০৭ পর্যন্ত কিশোর বয়সী থেকে শুরু করে মধ্য বয়সী পর্যন্ত সবাই যেভাবে মাঠমুখী ছিলো, বর্তমানে সেটি নেই বললেই চলে। যে কারণে প্রতিভাবান মুখ তেমন একটা বেরিয়ে আসছে না। বর্তমান সময়ে অত্যাবশ্যকীয় কাজ হলো ছেলেদের মাঠমুখী করা এবং তাদের নিয়মিত খেলার ব্যবস্থা রাখা।

ক্রীড়াকণ্ঠ : আপনারা যখন নিয়মিত খেলতেন, ওই সময়ে সবচেয়ে বেশি সাপোর্ট কার কাছ থেকে পেতেন?

আনোয়ার হোসেন সজিব : আমরা যখন এআর পাইলট হাই স্কুল মাঠে খেলতাম সে সময়ে একজন খায়ের ভাই ছিলো, সব সময়ে বল কেনাসহ খেলার আনুষঙ্গিক কাজে সহযোগিতার পাশাপাশি উৎসাহ যোগাতেন। বলা বাহুল্য, খায়ের ভাই খুব বেশি বিত্তশালী নন, একজন কৃষক হয়ে যে সাপোর্টটুকু তিনি আমাদের দিতেন তা ছিলো অকল্পনীয়। সে সময়ে হয়তো বিষয়টি উপলব্ধি করতে পারতাম না, তবে এখন ক্লাব পরিচালনা করতে গিয়ে তা অনুধাবন করি। একজন সাধারণ কৃষক হয়েও ক্রীড়াঙ্গনের জন্য কতটা অবদান ছিলো তাঁর। পরবর্তীতে এসে ক্রীড়াঙ্গনের পথচলায় উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক নুরুন্নবী নোমান ভাই, ফরিদগঞ্জ পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জাকির ভাই এবং ফরিদগঞ্জ স্পোর্টস্ ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান জিয়া ভাইয়ের সাপোর্ট সবসময় পেয়েছি। এমনকি এখনো যে কোনো আয়োজনে এ মানুষগুলোকে কাছে পাই সবসময়।

ক্রীড়াকণ্ঠ : একজন ক্রীড়া সংগঠক হিসেবে আপনার দেখা উপজেলার কয়েকজন সম্ভাবনাময় ক্রিকেটার ও ফুটবলারের নাম বলুন।

আনোয়ার হোসেন সজিব : সাম্প্রতিককালে কিশোরদের মধ্যে আয়মান, ইয়াছিনদের মতো বেশ কয়েকজনের ক্রিকেটারের ক্যাপাসিটি বেশ ভালো। আর ফুটবলের মাঠে তারিকুলতো নিয়মিত আলো ছড়াচ্ছে। পিয়াম, রাহিম আছে ফর্মে।

ক্রীড়াকণ্ঠ : আপনার প্রিয় ফুটবলার কে? কোন্ দল সমর্থন করেন?

আনোয়ার হোসেন সজিব : প্রিয় ফুটবলার লিওনের মেসি এবং দল হিসেবে আর্জেন্টিনাকে সমর্থন করি। আর ক্লাব ফুটবলে বার্সার সাপোর্টার।

ক্রীড়াকণ্ঠ : আপনার প্রিয় ক্রিকেটার কে?

আনোয়ার হোসেন সজিব : ভারতের শচীন টেন্ডুলকার। কারণ শচীনের ঠাণ্ডা মাথার কৌশলী ক্রিকেট সবসময়ে উপভোগ করতাম।

ক্রীড়াকণ্ঠ : ব্যাকরণিক ক্রিকেট দল হিসেবে বিশ্বের কোন্ দলের খেলা উপভোগ করেন?

আনোয়ার হোসেন সজিব : নিউজিল্যান্ডের।

ক্রীড়াকণ্ঠ : দেশীয় ক্রিকেটারদের মধ্যে প্রিয় খেলোয়াড় কে?

আনোয়ার হোসেন সজিব : ক্যাপ্টেনসিতে মাশরাফি বিন মর্তুজা এবং ব্যাটিং ও ক্যাচের দিক থেকে তামিম ইকবাল।

ক্রীড়াকণ্ঠ : বর্তমান সময়ে ক্রীড়াঙ্গনকে এগিয়ে নিতে কোন্ বিষয়ে নজর দেয়া সবচেয়ে বেশি দরকার বলে আপনি মনে করেন?

আনোয়ার হোসেন সজিব : খেলার মাঠে রাজনৈতিক বিভাজনের প্রভাব খুবই দুঃখজনক। রাজনীতিকে রাজনীতির জায়গায় রেখে খেলার মাঠে, খেলার উন্নয়নে ক্রীড়াবান্ধব হয়ে সবাইকে এগিয়ে আসা উচিত। রাজনৈতিক মতাদর্শ এক পাশে রেখে খেলার মাঠে সবার পরিচয় হোক শুধুই খেলোয়াড় কিংবা ক্রীড়া সংগঠক।

ক্রীড়াকণ্ঠ : উপজেলার দর্শক বান্ধব ও ক্রীড়া উৎসবমুখর কয়েকটি টুর্নামেন্টের নাম বলুন।

আনোয়ার হোসেন সজিব : রূপসা গোল্ডকাপ ক্রিকেট টুর্নামেন্ট, পাইকপাড়া গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট ও ধানুয়া ক্রিকেট টুর্নামেন্ট।

ক্রীড়াকণ্ঠ : স্থানীয় ক্রীড়াঙ্গনকে নিয়ে কি কোনো স্বপ্ন দেখেন?

আনোয়ার হোসেন সজিব : হ্যাঁ অবশ্যই। স্বপ্ন দেখি উপজেলার অন্যতম ক্রীড়া সংগঠক জিয়াউর রহমান জিয়া এবং আহসান হাবীবসহ স্থানীয় ক্রীড়া সংগঠন ও স্থানীয় একাডেমির সহযোগিতা নিয়ে নিয়মিতভাবে টুর্নামেন্ট আয়োজনের।

ক্রীড়াকণ্ঠ : আপনার এলকার স্থানীয় ক্রীড়াঙ্গনকে সারা বছর মাঠের খেলায় সক্রিয় করতে করণীয় কী হতে পারে বলে আপনি মনে করেন?

আনোয়ার হোসেন সজিব : তরুণদের অবশ্যই মাঠের খেলায় ফিরতে হবে। ইন্টারনেটের দিকে অহেতুক না ঝুঁকে কিশোর-তরুণদের অবসর সময়টা কাটুক মাঠের খেলায়, তবেই ফিরবে খেলার সুদিন।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়