রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৮ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।

প্রকাশ : ০৬ নভেম্বর ২০২১, ০০:০০

পালকি ও একটি নাকফুলের কাহিনি
অনলাইন ডেস্ক

মধ্য দুপুরে শিরিষ গাছের ডালে তার পাতাগুলো জনপদটির গহীন নীরবতায় কান পেতে স্তব্ধ হয়ে আছে। কিন্তু জীবনের প্রয়োজনে, উঁচু ডালে, বোবা পাতার আড়ালে লুকিয়ে থেকে যে ঘুঘুটি ডাকছিলো, তার কণ্ঠ থেকে ঝ’রে পড়ছিলো একটি বিদায়বেলাকার বিষণ্ন-করুণ সুর। সুতরাং সেখানে ইহলৌকিকতার বদলে সপ্তম আসমানের রহস্য থমকে থেকে অবসন্ন। সেই সুরের বিলাপে চরাচর ভাষাহীন এক বায়বীয় আবেশে কান পেতে আছে। লোকবিদায়ের পর, কিছু পূর্বে শিরিষ গাছটির তলে একটি মাটির চুলা জীবনের প্রয়োজনে, আগুনের ব্যস্ততার পর অবসর পেয়েছে। ছাইগুলোর ভেতর এখনও আগুন নিভেনি। গত রাত থেকে যা কিছু রান্না হয়েছে-সবই কেমন অচঞ্চল, গম্ভীর, সতর্ক। একটু আগেই আতরবানুকে বিদায় দিয়ে এ বাড়ির গৃহিণী অযুফা, ঘুঘু পাখিটির মতোই কাঁদছেন। চারিদিকে চৈত্রমাস-‘নিন্দাপতি’ পোকার মতো একটানা সেই ক্রন্দন পরকালের প্রতিভূ হয়ে নিরানন্দ-শঙ্কিত কিছু লোকজ অন্তরে বাজছে।

চৈত্রমাসের কাঠফাটা রোদের ভেতর একটি একলা পালকি বহন করে নিয়ে গাঁয়ের এ-বাড়ি ও-বাড়ির ফাঁকে ফাঁকে বনজ সুনসান স্তব্ধ জমিনের আইল ধরে দুজন মাত্র বেহারা হেঁটে চলেছে। তাদের ঘর্মাক্ত শরীরের নিম্নাঙ্গে মলিন লুঙ্গি, উর্ধ্বাঙ্গ খালি। মাথায় তেলতেলে গামছা। পালকির পেছন পেছন জনাকয়েক যাত্রী। তাদের ঠ্যাং-এর চলমান বিক্ষেপে অনিচ্ছুক ভাব স্পষ্ট, সেখানে যৌথ গতির কোনও আনন্দ নাই। রুমাল মুখে, লাল মোজা পায়ে, দূর থেকেও জ্বলে-ওঠা সেই রঙ হেঁটে চলেছে সদ্য বিয়ে করা জামাইটি, লিকলিকে কালো মুখ, তবে একটা লাজুক ভাব রুমাল-চাপা মুখটিতে রোদ পড়ে ঝলকে উঠছিলো। তার মুখ ভর্তি গোল গোল দেবে যাওয়া দাগ, এককালে হয়ে যাওয়া বসন্তের ক্ষতগুলো স্থায়ী হয়ে রফিক মিয়ার মুখটিকে ভিন্ন মাত্রা দিয়েছে। ফলে তার লাজুক হাসিটি সর্বদা নির্মল। পালকিতে তারই নয়াবউ আতুরি।

আলপথে হাঁটতে হাঁটতে রফিক মিয়া ভেবেছে, পালকির ভেতর টুকটুকি বউটা না জানি কি করছে! কিছুদিন পূর্বে, গরুর জন্য ঘাস কাটতে যাওয়ার পথে, সে, খাঁ বাড়ির পার্শ্ববর্তী যুগি বাড়ির কালো গাব গাছটির তলে, জীর্ণ মন্দিরটির সামনে ক্ষণিক দাঁড়িয়ে থেকে, দুর্গা মূর্তি দেখে বিস্মিত হয়েছিলো। একবার অপলক ভেবেছিলোÑকী সুন্দর! ক্যামনে বানাইছে!

পালকির ভেতর যে কন্যা বসে আছে, রফিক ভেবেছে লাল টাঙ্গাইল শাড়িতে পেঁচানো সে যেন একটা ‘দুর্গা।’

মাইয়াডা নাকি শাড়িও পড়তে জানে না। বিবাহ আসরে এইসব কথা দু-একজন কানে কানে বলে ঠাট্টা করেছে তাদের বাড়ির নতুন জামাইকে। রফিক রুমাল মুখে হয়তো সামান্য এক টুকরো হেসেছিলো।

বেহারাদের চলার গতি মন্থর, পালকি কাঁধে নিয়ে মুখে ‘আল্লাহা বোল’ গান নাই। বরং যতোটা সম্ভব সকলেই যেনো এক অজানা আশঙ্কায় সন্তর্পণে ত্রস্ত। অন্য সময় বেহারারা তো নিজেরাই ঘুঙুর পায়ে নেচে, গ্রাম নাচিয়ে পালকি কাঁধে প্রতিটি ঘরের আগদুয়ারে, বকশিসের আশায় গান গেয়েছিলো-‘লা ই লা হা কলমা পড়ো ভাইরে, নানুপুরের মাইয়্যা আনছি ঢকের গুষ্টি নাইরে! লা ই লা হা কলমা পড়ো ভাইরে!’

তবে লাল-সবুজ রঙিন পাতলা ঘুড়ি-কাগজে নকশা কেটে পালকিটি সাজানো। যে নকশা কেটেছে, তার শিল্পরুচি সরল গাঁয়ের মতোই নির্ভেজাল-যেনো বা হাশরের ময়দানে এইটুকুই জীবনের আশালতা হয়ে পালকিটির কাষ্ঠনির্মিত দেহের সঙ্গে দুলে দুলে চলছে।

কৃষকদের ফসলী ক্ষেতে চৈত্র মাসের আগুন। কিছু কিছু গম-তিল-তিশির জমিন। কিছু কিছু মুগডাল। সরিষাও ঝুনা-ঝরঝরা হয়ে নুয়ে পড়েছে। তাছাড়া কিছু কিছু জমিনের ফসল এখন, মনে হয় ক্ষত-বিক্ষত এক কেয়ামতের ময়দান। পদতলে পিষ্ট, থেঁতলানো।

ডাকাতিয়া নদীটির তীর দিয়ে, সর্দারবাড়ি পেরিয়ে হেমা মাঝির খেয়া পার হয়ে, পালকিটির গন্তব্য-টু। টু অতি উঁচু মোঘলাই ব্রিজটি থেকে বেশি দূরে নয়, রফিক মিয়ার বাড়ি। ব্রিজের কঙ্কালসার শাদা রেলিংটি দেখা দিতে এখনও অনেক দেরি। হেমাঙ্গ মাঝির খেয়াঘাটে, সাপখোপের পদচারণায় পূর্ণ যে বয়স্ক বট গাছটিÑএখানকার ইতিহাসের অন্যতম সাক্ষী, তারই ছায়ায় পালকিটি রেখে, এখন বেহারাগণ ক্লান্তি নিবারণে নদীতে নেমে কচুরির জমাট আবরণ সরিয়ে, কুঁজো হয়ে দু হাতের অঞ্জলিতে কয়েক ঢোক পানি খেয়েছিলো। তবু নির্বাক কচুরির তলে কিছু জীবন বেহারাদের কর্দমাক্ত পায়ের চঞ্চলতায় নড়ে উঠেছিলো। যাত্রীগণের মনে কী জানি কি এক অজানা ভয়।

খেয়াঘাটে হেমা নাই। নৌকাটি ওপারে ঝিম মেরে আছে-এপার থেকেও ঝিমঝিম কম্পমান রোদের আবহে বেশ দেখা যায়। হেমাঙ্গ দাসের বাড়িটি ওপারেই, নদীর দিকে নুয়ে পড়া বাঁশঝাড়টির আড়ালে। হয়তো বহুক্ষু যাত্রী পায় নাই, কিংবা ক্ষুধার্ত, তাই খেতে গেছে, এক্ষুণি এসে পড়বে। নদী ও নৌকা ব্যতীত হেমাঙ্গ মাঝির আর কোনও জীবন জিজ্ঞাসা নাই। তবে এখনকার জীবন এখন গুমট, থরথর আতঙ্কের দৃশ্যমান ছায়া খুবই দীর্ঘতর হয়ে উঠেছে। কদাচিৎ যে ক’জন যাত্রী আসে, তাদের শঙ্কিত মুখে-চোখে ইহলোকের চিহ্ন অনুপস্থিত, যেন ঘটিবাটি-পোলাপান-বউ-ঝি’রা ‘লেইত’ বেঁধে পরকালের উদ্দেশেই পারাপার হয়, নদীর কোন পাড়ে তাহাদের সেই মহপ্রস্থান পরবর্তী তীর্থ-গন্তব্য হেমা মাঝি তাহা জানে না। কখনও বা দল বেঁধে অতি সতর্ক যুবকেরা যায়Ñতাদের কারো কারো হাতে ত্যানা পেঁচানো ভারী কিছু হেমা অনুভব করে তাঁর নিরাকার বিশ্বাসের নিকট বলে, ‘মা তুই রক্ষা করিস!’ কিন্তু হেমা এখন নাই। ফলে নদী ও খেয়াঘাট হেমার নৌকার মতোই পরিত্যক্ত।

বটগাছে দু-একটি কাক। তারা পালকি ও রুমালমুখি, পায়ে লাল মোজা পরা জামাই দেখে বিস্ময়ে বার কয়েক কা কা করেছে। বেহারাদের সঙ্গে পালকির পিছু পিছু যে ক’জন যাত্রী-তাদের মুখে কথা নাই। বউটির ছোটো বোনটি ‘বুজির লগে যামু’ বলে আনাড়ি করেছিলো, কেঁদেওছিলো। পালকি ছোটো, জায়গা কম। তাই পুতলিকে অন্যদের সঙ্গে হেঁটেই আসতে হয়েছে। এখন বটতলে সকলের থমথমে মুখভাব তার বুজির লগে শ্বশুর বাড়ি যাওয়ার আগ্রহে ঘুম নেমে আসে। তাকে বৌটির পালকিতে তার কোলে দেয়া হয়। তখন পুতলির মুখ যেন এক অমল হাসির কুয়া, গালে দু’টি টোল।

লাজুক বৌ আতরবানু-আতুরি। বয়স তেমন হয় নাই। চোদ্দ-পনের। গায়ে গতরে বাড়ন্ত। দেশকাল ভালা না। শকুনের চোখ পড়ার আগে বিবাহের তড়িগড়ি। আতরের বাপ-মা এই ক’মাস ধরে দুঃশ্চিন্তায় রাত কাটায়। তাহাদের রাত্রিকালীন ঘুম হারাম, দু চোখের পাতা এক হয় না দুঃস্বপ্ন-কল্পনায়। গাঁয়ে আরো যাদের কন্যাসন্তানের সবে মাত্র বুক উঠেছে কি উঠে নাই, সেইসব কন্যাদের সবারই বিবাহের একটা গুঞ্জন শোনে এ পাড়া ও পাড়া। আতুরিকে নিয়ে কয়েকদিন নিজের বাপের বাড়ি ইসলামপুরে কাটিয়ে এসেছিলেন তার মা অযুফা। সেখানেও অবস্থা গুম গুম। লোকজন যেনো নিজেদের ভিটেমাটি বাসন কোসন ফেলে কোথাও পালিয়ে যেতে পারলে বাঁচে। অযুফার আরো দুই বোন বাপের বাড়িতেই আশ্রয় নিয়েছে। গাদাগাদি অবস্থা। বেশিদিন থাকা যায় নাই।

বাপের বাড়ি ছেড়ে যাওয়ার কাঁচা তরতাজা শোক, পালকির ঝাঁকুনি, জনপদের মেঘ-গুম-গুম গুমট ভাব-এসবের কারণে ঘোমটার ভেতর আতুরি ঘেমে একাকার। তবু নিয়ম মাফিক বিবাহোত্তর ‘লাজে’ চোখ বুঁজে রয়েছে। যেনো রাজ্যের লোক বউ দেখে ফেলেছে। দেখে ফেলাটা বড়োই শরমের বিষয়। ‘নিলাজ’-‘বে-লাজা’ হতে চায়না আতুরি। পালকির ভেতর যথাসম্ভব ঝুঁকে থাকে-কলাবউ। লাজে।

পুতলিকে পেয়ে ঘোমটার ভেতর এতোক্ষণে কিছু প্রাণ খুঁজে পেলো লজ্জাবতী আতুরি। বাপের বাড়ি ছেড়ে যেতে তার বুক ছিঁড়ে যাওয়া কষ্ট হচ্ছে। মায়ের ডুকরে ডুকরে কান্না এখন তাকে বড়োই বিমর্ষ করে তুলছে। জগতের অগোচরে ক’ফোঁটা অশ্রু বিসর্জন করে বালিকা বউটি।

খেয়া নৌকার মাঝি হেমাঙ্গ দাসের কোনও খবর নাই। নদীর ওপারে, বিধবার শাদা বেশধারী কোনও এক নারী বার দুই তিন মাটির ঠিল্লা ভ’রে পানি নিয়ে গিয়েছিলো। তার ঘোরতর কালো গায়ের রঙটি সূর্যের তপ্ত আলোয় জ্বলে উঠলে এপারে বসা পালকি বেহারা আর কয়েকজন যাত্রীÑযারা সম্প্রতি নবাত্মীয়Ñসেই দিকে চেয়ে থেকে হেমাঙ্গের উপর খুবই বিরক্ত। কেউ কেউ হয়তো ভেবেছে, ওটা হেমাঙ্গেরই কালা বউ।

দিনকাল ভালা না, হেমা হারামজাদা কখন আইবো-এ কারণে সকলেই দীর্ঘ হাঁটার পর অন্তরে অস্থির। তাহাদের মনে শঙ্কাও কম নয় বরং অত্যন্ত প্রবল। বেশিক্ষু বটতলে বসে থাকা এ সময় বোকামি, যখন পালকিতে আছে আতুরিÑআতরবানু। হেমা মাঝি এই ‘খেইনের সময়’ কি পূজা করতে গ্যাছেÑএকথা ভাবে কেউ কেউ। মূলত পথশ্রমে ক্লান্ত ক’জন যাত্রী নিজেদের নিরাপদ বোধ করছে না। যে কোনও সময় একটা অঘটন ঘটবে বা ঘটে যেতে কতক্ষুÑএই চিন্তায় তাদের কোটরাগত চোখ কোনও গন্তব্য খুঁজে পায় না। তাছাড়া গ্রামের পর গ্রাম এখন বিরান। বিশেষ করে যুবকেরা শেখ সাব-এর ভাষণ শোনার পর, গোপনে, নিয়মিত ‘আকাশবাণী’ শুনেছিলো। তারপর দলে দলে এরা গ্রামছাড়া। তাহাদের মুখ ও মুখরতার অভাবে গ্রামগুলো এখন ভৌতিক ভয়ের আখড়ায় পরিণত হয়েছে।

দুই গালের পাশে দুই হাতের তালু ‘কোশ’ করে চোঙ্গা বানিয়ে রণজিৎ বেহারা হাঁক ছাড়ে, যদিও অন্তর দুরুদুরু, বুক তৃষ্ণার্তÑ‘ও ও ও হে মা রে..।’

তার ডাক অন্য সময় হলে নির্লিপ্ত খেয়ামাঝি হেমার কান ‘বরা’ করে দিতো। কিন্তু এখন রণজিৎ-এর নিজেরই মনে হলো তার ভেতর থেকে কোনও শব্দই বের হয় নাই। বরং কানের ভেতর টুংক্কর টুংক্কর করে কী এক পোকা যেনো বেজে ওঠে, যার সাথে তুলনীয় বাজনা তার ক্ষুদ্র জীবনের লৌকিক ইতিহাসে কখনও শোনা হয় নাই। একারণে, নিজেকে আর রণজিৎ বাছাইড়া বলে মনেই হয় না এখন, অচেনা লাগে সবকিছু।

অন্যরা শুনেছিলো, ডাকাতিয়া নদীটির ওপারে ধাক্কা খেয়ে রণজিৎ বেহারার ‘হেমা’ ডাক কেঁপে কেঁপে প্রতিধ্বণিত হয়ে তাহাদের কর্ণকুহরে ‘ও ও ও হে মা রে-’ করে পুনরায় বেজে উঠছে।

নববধূটির স্বামী, রফিক মিয়া, লাল কটমইট্টা রঙের মোজা পায়ে-খুবই অদ্ভূত, তথাপি মুখের লাজুক ভাবটি অক্ষুণ্ন রেখে, আতর মাখা রুমালটি নাক থেকে নামিয়ে এখন বাম হাতের মুঠোতে পুরে, একটু আড়ালে নেমে, তিল ক্ষেতের ফুলে মৌমাছি-মুরব্বিরা সঙ্গে আছে, তাই ডান হাতের আঙ্গুলে চেপে একটা সতর্ক বিড়ি ধরায়। অনুসরণপ্রিয় তার বাল্যকালের ইয়ারের দোস্ত মুজাম্মেল ওরফে মুজা পাগলাও তিলক্ষেতের আড়াল থেকে মুতে এসে, বিড়িতে ভাগ বসায়। নতুন জামাইয়ের দিল উদার, সে মুজার হাতে বিড়ির প্যাকেটটি তুলে দেয়।

মুজা তার স্বভাবসুলভ নির্মল হাসিটি নিরবে ছড়িয়ে দিয়ে বলে ‘নে, খা, আত্মা ভইরা বিরি খা, হেমা আইজ আর আইব না! তুই বউ নিয়া এইহানেই শুইয়া পড়। কার বালে কইছে তোরে যুদ্ধের গ-গোলের মইধ্যে বিয়াডা করতে ? অহন ঠ্যালা বুঝ!’

এতে, রফিকের লাজুক মুখখানিতে অদ্যকার, বিবাহের দিনটির ইতিবৃত্ত ফুটে উঠছে। সে এখনও বউটিকে দেখে নাই। রাইতে একবার দেখার আগ্রহ জেগেছে। বিড়ি টানার আবশ্যকতাহেতু মুজা পাগলাকে সেকথা বলতে পারে নাই। কোত্থেকে যোগাড় করে সে একটা ‘বাইচা’রঙা পিরান পরেছে, মুজাকে ত দেখতে ভালাই লাগতেছে-একথা ভাবে রফিক মিয়া। সে বলে, ‘রাখ, এ্যাত ক্ষেপিছ না, হেমা আইবো রে, আইবো না কাসে ত ইন্ডিয়া যায় নাই।’ (চলবে)

[পরের পর্ব আগামী সংখ্যায় প্রকাশিত হবে]

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়