প্রকাশ : ১১ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০০:০০
ছোট্ট ছেলে আদনান ফুটফুটে চেহারার অধিকারী। ছেলেবেলা থেকেই বেড়েউঠা মাতুলালয়ে। তাই মামার হাস্যরসিকতামূলক কটু কথা সহ্য করতে করতে ধৈর্য ধরা শিখে গেছে আদনান। সহ্য না করেই বা উপায় কি! বাবার যে সামর্থ্য ছিলো না লেখাপড়া করানোর। মামার বাড়িতে থাকাকালীন ২/৩ জন বন্ধুও বানিয়েছিলো সে। একদিন বন্ধুদের সাথে ছিপ ফেলে মাছ ধরতে গিয়েছিলো, ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থেকে ঝুড়িভর্তি মাছ নিয়ে বাসায় ফিরে। সে কি কাণ্ড! সবাই যখন খালি ঝুড়ি নিয়ে বাসায় আসলো, সেখানে কি না আদনানের ঝুড়িভর্তি মাছ, প্রতিবেশী সবাই দেখে অবাক!
ধৈর্যশীলদের প্রতি ইঙ্গিত করে হাদিসে আছে, তোমরা ধৈর্য ধারন করো, ধৈর্যের প্রতিযোগিতা করো এবং যুদ্ধের জন্যে প্রস্তুত থাকো। আল্লাহকে ভয় করো, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পারো। (পারা : ৪, সূরা : আলে ইমরান, আয়াত : ২০০)।
হাঁটি হাঁটি পা পা করে আদনান সবে মাত্র ষষ্ঠ শ্রেণিতে পদার্পণ করলো। নতুন স্কুল, নতুন বন্ধুবান্ধব, নতুন বই, নতুন জায়গা, নতুন শিক্ষক। মোদ্দাকথা তার কাছে সবকিছুই নতুন ছিলো। আর এই নতুনত্বের সাথে খাপ খাওয়ানো সবার বেলায় যেমন কঠিন হয়। তেমনি আদনানের বেলায়ও সহজসাধ্য ছিলো না। আর এই নতুনত্বের সাথে খাপ খাওয়ানোর আগেই বাঁধলো গোলমাল।
ওইদিন ছিলো বুধবার। ৪র্থ পিরিয়ডের শারীরিক শিক্ষা ক্লাস চলছিলো। তখন আমাদের শারীরিক শিক্ষা ক্লাস নিতেন মোখলেছ স্যার। ভীষণ জেদি ছিলেন তিনি। মোখলেছ স্যার বরাবরের মতোই ক্লাসে ঢুকে চশমাটা নাকের ডগায় ঠিকমতো বসালেন। চশমার উপরিভাগ দিয়ে চোখ দুটোকে লাগছিলো যেনো খসে পড়ে যাচ্ছে। স্যার আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, আদনান তুমি আজকে পিটিতে অংশগ্রহণ করোনি কেনো? আমি কিছু না বুঝেই স্যারের মুখের উপর বলে দিলাম, স্যার এই পিটি করে কি হবে, প্রত্যেক দিন রোদে দাঁড়াতে ভালো লাগে না।
শুধু এই কথাটি বলার সাথে সাথে স্যার আমাকে অনেক কটু কথা বলেছিলেন সেদিন। যেটি সহ্য করার ক্ষমতা আমার তখনো হয়নি। আমি সবেমাত্র স্কুলে নতুন ভর্তি হয়েছি। আর আমার সাথে এমন বড় একটা অ্যাক্সিডেন্ট ঘটলো এই কথা ভেবে আমার তিনটি মাস চলে গেলো ধুঁকে ধুঁকে। স্কুল শেষে যখন বাসায় ফিরতাম, তখন আমার ওইদিনকার কথা মনে পড়লে আর ভালো লাগতো না। সবাই আমাকে নিয়ে ওইদিন কি রঙ্গ-তামাশাটাই না করলো! তারপরেও নিজের মনকে বোঝলাম, সময় এখানেই শেষ নয়, ধৈর্য ধরা শিখলাম। এটুকু বলে আদনান থামলো। সাথে এক গ্লাস পানিও পান করলো।
এই তিনমাসে সব কিছু ঠিক ঠাক করে নিজেকে আত্মবিশ্বাসী হিসেবে গড়ে তোলে আদনান। যে না, সেও ভালো কিছু করতে পারবে। কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস। একটির ধকল কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই দ্বিতীয় ধকল এসে পরে তার উপর। দশম শ্রেণীতে টেস্টে ফেল করা, তাও একবার দুবার না, পর পর তিনবার। আদনান যেনো নিজেকে নিজে বিশ্বাস করতে পারছিলো না তখন। তখন তার চোখেমুখে শুধুই হতাশার ছাপ দেখতে পাওয়া যেতো। একই ক্লাসে বার বার পড়ে থাকার কারণে জুনিয়রদের এবং ক্লাসের শিক্ষকদের নানা কটু কথা শুনতে হতো তার। কিন্তু সে ধৈর্যহারা না হয়ে রবাট ব্রুসের মতো নিজেকে তৈরি করে। ঠিক ৪র্থ বার মেধাতালিকায় সেরা হয়ে স্কুলের সুনাম বয়ে আনে।
আদনান বলে, কটু কথার জবাব দিতে হয় সাফল্যের মাধ্যমে। কখন ধৈর্যহারা হবেন না। আমি এই জীবনে কখনো ধৈর্যহারা হইনি। আর এর ফলস্বরূপ এখন আমি একজন গর্বিত সরকারি সেনা কর্মকর্তা। এটুকু বলে আদনান একবার ঢোক গিলে। তারপর সুন্দর একটি উক্তি বলে ‘জীবনে ধৈর্য কেউ কাউকে ধরে ধরে শিখায় না, সময়ের সাথে সাথে মানুষ এমনি ধৈর্য ধরা শিখে যায়’। পবিত্র কোরআনে আছে, ধৈর্যশীলদেরকে তো অপরিমিত পুরস্কার দেয়া হবে। ধৈর্য ধারনকারীর সাফল্য সুনিশ্চিত। (সূরা যুমার, ১০ আয়াত)।
* পাঠক ফোরাম বিভাগে লেখা পাঠানোর ঠিকানা