শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬  |   ৩৩ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর শহরের পাঁচ রাস্তার মোড়ে 'আল্লাহু চত্বর'
  •   চাঁদপুর কণ্ঠৈর কলামিস্ট এএসএম শফিকুর রহমানের ইন্তেকাল
  •   নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব পেল সেনাবাহিনী
  •   জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনে’ প্রধান উপদেষ্টার ১০০ কোটি টাকার অনুদান
  •   মেঘনায় নিখোঁজ দুই ভাইয়ের মরদেহ উদ্ধার

প্রকাশ : ৩১ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০

জন্মদিনে

সাদমান ত্বকী
জন্মদিনে

ক্রিং ক্রিং করে ঘড়িতে অ্যালার্ম বেজে চলছে। এ দিকে সাদমান ব্যস্ত, গুছিয়ে বের হতে। সপ্তাহের শেষ দিন। বিশেষ কারণেই একাডেমিক বন্ধ চলছে। ক্লাস, পরীক্ষার ব্যস্ততা নেই। তাড়াহুড়া করে হাতের কাছের নীল রঙের টি-শার্ট পরে বের হতে হতে কালো রঙের হাত ঘড়িটা পরছিল সাদমান। এই হাত ঘড়িটা তার বেশ প্রিয়।

আকাশ পরিষ্কার। রোদও বেশ। সাদা মেঘের দল ভেসে যাচ্ছে দিগন্তের পথে। রিকশার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বাসার সামনেই ঘামতে হচ্ছে সাদমানকে। অবশেষে রিকশার দেখা মিলল। রিকশা থেমে নেমে ঢাকা-ময়মনসিংহের ব্যস্ততম মহাসড়কের জাগ্রত চৌরঙ্গীর পাশে এবার রূপন্তীর অপেক্ষা। বলাকা বাস থেকে কিছুক্ষণের মধ্যেই নেমে এল রূপন্তী।

গোলগাল মুখের লম্বা করে এই মেয়েটা ভীষণ হাসতে জানে। না, হাসিতে তার গজদন্তিনী রূপ হয় না, গালেও টোল পড়ে না; তবু ভীষণ মিষ্টি তার হাসি। আজ পরেছে খয়েরি রঙের শাড়ি আর হাতে এক জোড়া চুরি। সাদামাটা এই সাজেই যেন সাদমান খুশি। কোথায় রূপন্তী আজকে সাদমানকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানাবে, সেখানে উল্টো রাস্তা পার হয়ে সাদমানই দুটো ফুল কিনে এনে রূপন্তীকে দিল।

২৫ জুলাই আজ। রোদ্রজ্জ্বল এই দিনে সাদমান কিংবা রূপন্তী কেউ-ই কোনো জরুরি প্রয়োজনে বাইরে আসেনি, সঠিক গন্তব্যও নেই। আশপাশে ঘুরে বেড়াবে, সাদমানের জন্মদিনে সঙ্গ দেবে; এইতো। ফুল হাতে নিয়ে দুজন আবার রিকশায় বসে পড়ল। বড় মাঠের দিকে গিয়ে তারা নামল।

সবুজ বিস্তর মাঠ। মাঠের কয়েক জায়গায় গ্রুপ করে বন্ধুবান্ধব মিলে বসে আছে, আবার কোথাও বাদাম, ঝালমুড়ি নিয়ে হকার হাঁকডাক দিচ্ছে। নদীর পাড়ে পা মেলে গল্প করতে করতে বিকেল নেমে এল ভীষণভাবে। রোদের তীব্রতা কমতে থাকল। পথচারীদের আনাগোনা বাড়ছে। এদিকে সাদমান আর রূপন্তীর কত কত গল্প যে শুরু হয়েছে শেষ-ই হতে চায় না। সন্ধ্যা নামার আগে ফুচকা খেতে খেতে তাদের পরবর্তী গন্তব্যে যাওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে যেন আরেক অধিবেশন শুরু হলো। পাখিরা নীড়ে ফিরছে। ফুটপাতের বাতিগুলো জ্বলে ওঠছে। পাশের রাস্তায় ছুটে চলা ব্যাটারিচালিত রিকশা আর ইজিবাইকে বাতি জ্বালিয়ে চলে যাচ্ছে পাশ কাটিয়ে। কেউ কেউ অযথাই হর্ন বাজাচ্ছে। সন্ধ্যার এই সময়ে যেমন পাখির কিচিরমিচির তেমনি মানুষের ভিড়ে শব্দেরা যেন অন্যরকম প্রাণ ফিরে পায়।

রিকশা না নিয়ে দুজনই হাঁটতে হাঁটতে রাস্তার পাশের এক টং দোকানে দাঁড়াল। রূপন্তীর পছন্দে দুই কাপ ধোঁয়া উঠা রং চা নিয়ে সন্ধের আলোয় দুজন কত কী ভাবছে কে জানে!

ঘুরাঘুরি আর গল্প তো হলো, এবার বাসায় ফেরার আগে একসঙ্গে রাতের খাবারের আবদার। পাশের রেস্তোরাঁয় গিয়ে খাবার অর্ডার দিয়ে অপেক্ষার সময়ে রূপন্তী তার পছন্দের ডিজাইনের কেক নিয়ে এসে এবার জন্মদিনের আনুষ্ঠানিক শুভেচ্ছা জানাল। যদিও একমাত্র রূপন্তীই সাদমানকে এবার প্রথম প্রহরে শুভেচ্ছা জানিয়েছিল, পরে আর কেউ মনে করেনি। রেস্তোরাঁর নিভু নিভু আলোয় লাবণ্যময়ী রূপন্তীকে দেখতে দেখতে সাদনামের চোখে ক্লান্তি নেই। নাগরিক কোলাহল পাশ কাটিয়ে রিকশা এসে থামল রূপন্তীর বাসার সামনে। গেইটের সামনে পড়ে থাকা বাগানবিলাস স্বাগত জানাল তাদের। রূপন্তী বাসার ভেতরে চলে গেল। দুতলায় উঠে বারান্দায় দাঁড়িয়ে বিদায় দেওয়ার পর পথে হাঁটল সাদমান।

সাদমান খুশি মনে রেলস্টেশনের দিকে যাচ্ছে। বন্ধু হয়ে রূপন্তীর তার জন্য একটি বিকেল উৎসর্গ করা নিয়েই তুষ্ট মনে একা একা হাসছে। রূপন্তী জানে না কিছুক্ষণের মধ্যেই পরের ট্রেনে করে সাদমান কমলাপুর স্টেশনে যাবে। আর সেখান থেকেই বেনাপোল এক্সপ্রেসের যাত্রী হয়ে সারা রাত যাত্রা করবে নতুন গন্তব্যের উদ্দেশে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়