শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৩ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।

প্রকাশ : ২৬ জুন ২০২১, ০০:০০

সম্পর্কের পিছুটান
অনলাইন ডেস্ক

যমুনা নদীর তীরে বসে আছি। কচুরিপানা ভেসে চলছে স্রোতের সাথে। সেই দৃশ্য দেখেছি। আমার ঠিক পাশেই একটা মেয়ে বসে আছে। অনেক্ষণ ধরে। দেখেই মনে হচ্ছে এই বসে থাকা কারো জন্য অপেক্ষার নয় বিষণ্ণতার। ভালো করে তাকালাম। মেয়েটা খাটো। ফর্সাও নয়। একেবারে কুচকুচে কালো। তবে চোখের মণির মতো সুন্দর। একটা কালো মেয়ে যে এতোটা সুন্দর হতে পারে তা নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস করতাম না। আধুনিক যুগের ছেলে-মেয়েরা সাদা দেহকেই সুন্দর বলে। আসলে সুন্দর হলো যা দেখলে চোখ আরাম পায়, মন প্রশান্তিতে ভরে উঠে তাই সুন্দর।

ধীরে ধীরে সূর্য যেনো যমুনার গর্ভে চলে যেতে লাগলো। মেয়েটা আমাকে চমকে দিয়ে বললো, এই যে, ঘরে ফিরবেন না?

-না।

-কেনো?

-আজ নাকি সুপারমুন। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি সারা রাত মন উজার করে চাঁদ দেখবো। আপনি যাবেন না?

সে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো, ইচ্ছে নেই।

-আমি অনেক প্রশ্ন করার পরও উত্তর পেলাম না। শুধু দেখে গেলাম। একটা স্থির ভাস্কর্য। অথচ খোলা দুটো চোখ থেকে অনবরত পানি ঝরছে। আমিও বাধ্য হয়েই নিরবতা পালন করলাম। এভাবে কেউ কান্না করলে আমি শান্ত্বনা দিতে যাই না। কান্না করা ভালো। কেননা মনের অশান্তি চোখ দিয়ে বেরিয়ে যায়। ফলে কষ্টে থাকে না একটা পর্যায়ে। কাঁদতে না পারার মতো কষ্ট পৃথিবীতে আর দ্বিতীয়টা নেই।

একসময়ে জানলাম তার বিষণ্ণতার কারন। মেয়েটার বাবা-মা ছোটকাল থেকেই তার খালাতো ভাইয়ের সাথে বিয়ে ঠিক করেছে। দুই পরিবারেই রাজি। কিন্তু ছেলে জানতো না। মেয়েটা জানতো। অষ্টম শ্রেণিতে থাকতেই খালতো ভাই বিদেশে চলে যায়। আর দিয়া তার হবু স্বামীকে ভালোবাসতে থাকে! ওর খালতো ভাই মনির সাত বছর পরে দেশে ফিরছে।

দুই পরিবার বিয়ের তারিখ ঠিক করে। কিন্তু রফিক সোজাসুজি জানিয়ে দেয় দিয়ার মতো কালো মেয়েকে সে বিয়ে করতে পারবে না। দিয়া এটা শোনার পরেই এখানে এসে বসেছিলো। এতো বছরের ভালোবাসা আজ শেষ হয়ে গেলো। এক তরফা ভালোবাসা আজন্মই ভালো না। অথচ খালতো ভাইয়ের সাথে বিয়ে হবে বলে সে কোনো ছেলের সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলেনি। মাধ্যমিকে পড়ার সময় প্রেমের কত প্রস্তাব এসেছিলো প্রত্যাখান করেছে।

সেদিনের পরে দুদিন দেখা হলো না দিয়ার সাথে। আমি আমি মনে মনে তাকে খুঁজে চলছিলাম। দুদিন পরে আবিষ্কার করলাম আমরা দূর সম্পর্কের আত্মীয়! তার পর থেকেই প্রায় প্রতিদিনেই আমরা নিয়ম করে সেই জায়গায় বসে কথা বলতাম। একটা তুই-তুই সম্পর্কে গড়ে উঠে আমাদের মাঝে। আমি গবেষণার কাজে তিন মাস ধরে আছি জামালপুরে। উঠেছি আমার খালার বাড়িতেই। দিয়া আমার দূর সম্পর্কের মামতো বোন হয়। এই কয়েক মাসে তার অদ্ভুত অদ্ভুত আচরণ, আর জীবনদর্শন নিয়ে অসাধারণ কথা শুনতে শুনতে আমি প্রেমে পড়ে গেলাম! কিন্তু পিছুটানের জন্যে বলতে পারিনি। আমার জন্যেও আরেকজন অপেক্ষা করছে! আমি যেদিন চলে আসবো। সেদিন আমার ট্রেনের টিকেট কেটে দেয়া, ব্যাগ গুছিয়ে দেয়া, পথে খাওয়ার জন্যে তৈরি করে দেয়া সব দিয়াই করেছে। যেনো ওর স্বামী হই আমি। দেওয়ানগঞ্জ স্টেশনও সে আমাকে একা একা এগিয়ে দিতে আসলো! আমি তিস্তায় উঠে বসলাম। দেওয়ানগঞ্জ টু ঢাকা। জানালার পাশে সিট। আমার বিদায় বেলায় সে খুব হাসি-খুশি!

ঠিক তিনটা। ট্রেন প...প করে জানালো এখনই ছেড়ে দিবে। সে একটা চিরকুট হাতে দিয়ে বললো, ট্রেন ছাড়ার পর খুলতে। ট্রেন ছেড়ে দিলো। আমি তার দিকে তাকিয়ে আছি। সে-ও আমার দিকে অপলক হয়ে তাকিয়ে আছি। ট্রেন একটু দূরে আসতেই সে হাতে চুমো দিয়ে আমার দিকে ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দিলো! আমার অদ্ভুত এক অনুভূতি!

এক সময়ে ট্রেন অনেক দূরে চলে আসে। তাকে আর দেখা যায় না। আমি চিরকুট খুললাম। ‘অজান্তেই ভালোবেসে ফেলেছি’। আমার পিছুটান জেগে উঠে। জানালা দিয়ে চোখ যায় দূর থেকে দূরান্তে।

*পাঠক ফোরাম বিভাগে লেখা পাঠানোর ঠিকানা

[email protected]

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়