প্রকাশ : ১১ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০
এই যে জগৎ-জগতের রূপ, রস, ঘ্রাণ আমাকে ভীষণ মুগ্ধ করে। মুগ্ধ করে প্রকৃতি ও ঋতুর বৈচিত্র্যময় অনুষঙ্গগুলো। মানুষ, বৃক্ষ, ফুল, প্রকৃতি, জন্ম, বেড়ে উঠাণ্ডমৃত্যু, উন্মুক্ত প্রান্তর এই যে অনুষঙ্গগুলো তা জুতসই শব্দের মাধ্যমে ধরে রাখার মধ্যেই আনন্দ পাই। মানুষের দুঃখবোধ, পাওয়া, না পাওয়া, নাগরিক জীবনবৃত্তান্তের জটিলতা অথবা প্রান্তিক মানুষের সরলতা আমাকে প্রলুব্ধ করে। আমি প্রকৃতির একনিষ্ঠ পাঠক। তাই যখন মনের মধ্যে গেঁথে যায় তখন প্রকৃতির দু-একটা অনুষঙ্গ এবং আমার ব্যক্তিস্বাতন্ত্রবোধের অন্তঃক্ষরণকে যোজনা দেয়ার চেষ্টা করি।
আকুতি
নিশি, এ সব ভ্রান্ত ভেবো না
ভেবো না- এ কোনো পরণকথা!
মৃত্যু রেখে সুরধ্বনি কুড়ায়
যে প্রেমিক-
তার অতল গহীনের ক্ষতকে অবিশ্বাস করো না।
বুকের অসীম শূন্যতাকে উপহাস করো না।
দ্যাখ
যারা রাত জাগা পাখি ছিল
তাদের কারাভোগ হয়েছে
এই বুঝি-
একপক্ষীয় প্রেমের পরিণতি!
লাশকাটা ঘর থেকে শবদেহের
পোস্টমর্টেমের যে রিপোর্ট বেরিয়ে ছিল
তা পরাজিত এক প্রেমিকের আত্মচিৎকার।
প্রাচীন অভিসন্দর্ভে লেখা ছিল
প্রেমহীন পৃথিবী
যেনো একটা লাশকাটা ঘর।
একফোঁটা নীল
ভাবতে কষ্ট হয় যে-
তুমি আমাকে ভুলে গেছো,
হাঁটছো-চলছো
আয়নায় মুখ দেখছো নিশিদিন
মাথায় সিঁথি কাটছো নিয়ম করে।
শহর-বন্দর, অলি-গলি,
সংসার-সন্ততি
সোনা-জহরত,
আলো-আকাশ,
স্বপ্ন, কামনা-বাসনা
আরো কতো কী আছে তোমার!
অথচ আমি এক নীল জীবনের
প্যাভিলিয়নে ঘুমহীন পাখি
হেমন্তের গোধূলি
জলমগ্ন চোখে
আমাকে একবার ভালোবেসে ছিল।
এমন মধুর প্রবল প্রলোভন
তুমি বুঝি চেয়েছিলে, সখা!
শিশু
সমুদ্রের প্রতিটি ঢেউ
আমাকে ছোট করে দিচ্ছে
তোমাকেও পুনরায় বানাচ্ছে শিশু
আমরা প্রতিদিন হারাচ্ছি
মুখের ভাষা
মুখের গড়ন
ছোট হচ্ছে আমাদের পদচিহ্ন
ভালোবাসার রন্ধে রন্ধ্রে
এখন পোকামাকড়ের বসতি।
সমুদ্রের প্রতিটা ঢেউ
আমাদের মাথার উপর খেলা করছে
সমস্ত বাহুডোরে বিবর্ণ বিষাদ
ছোট হচ্ছে প্রিয় মানুষের মায়াবী পরশ।
আমি-তুমি নিশিদিন
চিরদিন ছোট হচ্ছি
শিশু হচ্ছি
ছোট হচ্ছে
আমাদের অসীম আকাশ অবিরাম
শিশু হচ্ছে আমাদের দুজনের সীমানা।
ক্ষরণ
প্রতিটা সিঁড়ি এক একটা ধাপ
মাড়িয়ে ঊর্ধ্বে উঠে যায়।
প্রতিটা ঘাট পিছু ফেলে যায়
অনন্তকালের দীর্ঘশ্বাস।
এক একটা গহীন রাত বিনীত সঙ্গমের
প্রতিটা কবিতা লালিত যাতনার অবগাহন
প্রতিটা দিন হাট-বাজার ও অগণিত পদচিহ্ন।
এক-একটা মৃত্যু প্রতিটা জীবন দিয়ে নির্মিত
এক একটা জন্ম অসংখ ক্ষতের নিবারণ।
এক একটা হাসি
অসংখ্য ঢেউয়ের আড়ালে লুকানো ক্রন্দন।
আকাশ নিবিড় স্বরে কথা কও
দূরের আকাশ,
নিবিড় স্বরে কথা কও
এবার বুঝি স্বপ্নের ঘোর কাটবে
প্রাচীন অথবা মৃত প্রেমিকেরা জেগে উঠবে
সাজাবে মধুর ফুলশয্যা
সারা রাত কেটে যাবে
পঙ্ক্তিমালার অতল গহ্বরে
আমাদের ডেকে নিবে
যেনো ভালোবাসা আদি-আনাদিকালের বিহিত।
এখন যারা ঘুমিয়ে গেছে
তাদের কোনো শোক নেই
অপেক্ষার পালা নেই,
হৃদয়ে কোন ব্যথা নেই
তারা শুয়ে আছে নিশ্চুপ।