বুধবার, ২৭ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৫ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জে সংবাদকর্মীর কন্যাকে অপহরণ চেষ্টায় অভিযুক্তদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন সংগঠনের
  •   লক্ষ্মীপুরে মাদকসহ বাবা ও দুই ছেলে আটক
  •   চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশের অভিযানে বিভিন্ন মামলার ৮ আসামী আটক
  •   ফরিদগঞ্জ পাকহানাদার মুক্ত দিবস পালন
  •   যৌথ অভিযানে কচুয়া থানার লুণ্ঠিত পিস্তলের ৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার

প্রকাশ : ১১ জুন ২০২৩, ০০:০০

চলো আনন্দ মাখি
সোহেল নওরোজ

ঈদের আগে...

‘প্রতিবার ঈদে আমাকে কিছু একটা দাও। এবার না শুনে কিছু কিনবে না।’

‘কেন? আগে যা দিয়েছি, তার কোনোটাই তোমার পছন্দ হয়নি? আমার রুচি এত খারাপ!’

‘হেঁয়ালি কোরো না তো! যা বলছি শোনো। তুমি বরং টাকাগুলো আমাকে দিয়ো। যা কেনার আমি কিনে নেব।’

অবন্তীর মুখ থেকে কথাগুলো শুনে বেশ অবাক হয়েছিলাম। ও হঠাৎ টাকা চাইল কেন? আমার কাছ থেকে কখনো কিছু চেয়ে নেয়নি। আমিই বরং লাজলজ্জার মাথা খেয়ে প্রায়ই ওর কাছ থেকে টাকা নিই। বেশির ভাগ সময় যা আর ফেরত দেওয়া হয় না। এমনও হয়েছে অবন্তীর জন্মদিনে বা বিশেষ কোনো উপলক্ষে ওর কাছ থেকে টাকা নিয়ে উপহার কিনেছি। হাসিমুখে তা গ্রহণ করেছে। এবারই এমন জোর দিয়ে কোনো দাবি পেশ করল। আমাকে তা রাখতেই হবে।

ঈদের দিন...

-তোমার আসতে কতক্ষণ লাগবে?

-বড়জোর ২০ মিনিট।

-দেরি কোরো না যেন। আমি আর অপেক্ষা করতে পারছি না।

ঈদের দিনে বলেই অবন্তীকে ২০ মিনিটের কথা বলেছি। অন্যদিন হলে গন্তব্যে পৌঁছাতে ২ ঘণ্টা ২০ মিনিটের কম লাগত না। ফাঁকা রাস্তায় রিকশায় চলার অনুভূতিই আলাদা। সামনে একটা ফুলের দোকান দেখে রিকশা থামিয়ে একগুচ্ছ লাল গোলাপ কিনি। অবন্তী যে ঠিকানা দিয়েছে, তা আমার অপরিচিত। তবু রিকশাওয়ালার ওপর ভরসা করে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই সেখানে পৌঁছে যাই। সরু একটা গলির মাথায় গোলাপি রঙের শাড়ি পরে অবন্তী দাঁড়িয়ে আছে। ওর হাতে ফুলগুলো ধরিয়ে দিই।

এখানে কয়টা গোলাপ আছে?

-১০-১২টা হবে।

-আমি তোমাকে যেখানে নিয়ে যাব, সেখানে এর চেয়েও কয়েক গুণ বেশি ফুল ফুটে আছে। সে পুষ্প হয়তো বঞ্চিত, পরিচর্যার অভাবে ফুটে উঠতে পারেনি, কিন্তু এমন অনুভূতিশূন্য নয়।

আমাকে প্রায় টেনে নিয়ে যায় পুরোনো একটা ঘরের ভেতর। ভাঙা জানালা দিয়ে উঁকি দেওয়া আলোয় দেখি, অনেকগুলো শিশু সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছে। আমাদের দেখে সমস্বরে স্বাগত জানায়। পাশে বড় বড় দুটি পাত্রে রান্না করা খাবার। সেখান থেকে সুঘ্রাণ আসছে। খুশিতে অবন্তীর চোখ ছলছল। আপ্লুত কণ্ঠে বলে, সেদিন তুমি বিষয়টা ভালোভাবে না নিলেও আজ নিশ্চয় ভুল ভেঙেছে। আমি চেয়েছিলাম নিজের জন্য খরচ না করে টাকাগুলো দিয়ে পথশিশুদের জন্য কিছু করতে। আমি নিজের হাতে রেঁধেছি। আজ দুপুরে আমরা এদের সঙ্গে খাব। তোমার কোনো আপত্তি নেই তো?

আপত্তি দূরে থাক, আমার মুগ্ধতা ততক্ষণে সীমা ছাড়িয়ে গেছে। একবার অবন্তীর মুখের দিকে আরেকবার শিশুগুলোর দিকে তাকিয়ে খুশির মাত্রা নিরূপণ করতে গিয়ে বারবার ব্যর্থ হই। ক্ষুদ্র একটা উদ্যোগ যেভাবে বিভেদ ভুলিয়ে সবাইকে সমান আনন্দে ভাসিয়ে দিচ্ছে, এর চেয়ে মধুর দৃশ্য পৃথিবীতে খুব বেশি আছে কী?

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়