বুধবার, ২৭ নভেম্বর, ২০২৪  |   ১৭ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জে সংবাদকর্মীর কন্যাকে অপহরণ চেষ্টায় অভিযুক্তদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন সংগঠনের
  •   লক্ষ্মীপুরে মাদকসহ বাবা ও দুই ছেলে আটক
  •   চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশের অভিযানে বিভিন্ন মামলার ৮ আসামী আটক
  •   ফরিদগঞ্জ পাকহানাদার মুক্ত দিবস পালন
  •   যৌথ অভিযানে কচুয়া থানার লুণ্ঠিত পিস্তলের ৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার

প্রকাশ : ১৬ এপ্রিল ২০২৩, ০০:০০

ওয়েট মেশিন
অনলাইন ডেস্ক

ক’দিন আগেও গুপ্তদা পশুর হাটে যেতেন ওয়েট মেশিন নিয়ে। সূক্ষ্মভাবে মাপতেন, যাতে কেজিতে না ঠকেন। পরে যখন ফিতার সাহায্যে গরু মেপে ওজন বের করার ব্যাপারটা সম্পর্কে তাকে জানালাম, তখন তিনি বিড়বিড়িয়ে বললেন, ‘এত দাম দিয়ে মেশিনটা কিনলাম, কোনো কাজেই যদি না লাগে!’

বল্টুটা ফট করে বলে বসল, ‘রাস্তার পাশে বসে পড়ো, গুপ্তদা। মানুষের ওজন মাপবে। জনপ্রতি পাঁচ টাকা। আগে ছিল দুই টাকা। মেশিন কেনার পয়সা উসুল হবে। লাভও থাকবে দিনশেষে।’

জবাবে গুপ্তদা কিছু না বলে সেই যে চলে গেলেন পরের এক মাসেও তার আর দেখা পেলাম না। হঠাৎ দেখি তিনি কাঁচা বাজারে গেলেও তার সেই ওয়েট মেশিনটা সঙ্গে নিয়ে যান। লক্ষ্য করলাম, একেবারে যথাযথ মাপ দেখে তিনি মাছ, শাক-সবজি, ফল-মূল ইত্যাদি কেনেন।

রবার্টের এক চাচা বাজারে ফল বিক্রি করেন। সেদিন তিনি রবার্টকে দোকানে বসিয়ে কোথায় জানি গেলেন। সে সময়ে গুপ্তদা ফল কিনতে সেই দোকানে গেলেন। তাদের দেখে বল্টু, হিটলু, আমিও এগিয়ে গেলাম।

রবার্ট আনাড়ি দোকানি। গুপ্তদার দেখা পেয়ে গদগদ। পারলে গুপ্তদাকে এক কেজির জায়গায় তিন কেজি দিয়ে দেয় এমন। কিন্তু গুপ্তদা বেশ বিনয়ী। তিনি কেজিতে এক গ্রামও বেশি নিবেন না। বরং দু-চারশ’ গ্রাম কম হলেও তার সমস্যা নাই।

হঠাৎ ভ্রাম্যমাণ আদালত এলেন।

ম্যাজিস্ট্রেট রবার্টকে দেখে মুচকি হেসে বললেন, ‘কী খোকা, মাপ ঠিকঠাক দিচ্ছো তো?’

রবার্টও কম রসিক নয়। বলল, ‘যুগ পালটেছে, স্যার। এখন আমরা—দোকানদাররা বেশি দিতে চাই। কিন্তু কাস্টমাররা নেয় না।’

ম্যাজিস্ট্রেট থমকে দাঁড়ালেন। কী জানি মনে করে তিনি মেশিনটা চেক করলেন। মেশিনের নিচ থেকে দঁড়ি, চুম্বক ইত্যাদি বের হলো।

‘এসব কী খোকা? এভাবে কাস্টমারকে ঠকানো হচ্ছে!’

রবার্ট থ!

তবে, গোমর ফাঁস হতে সময় লাগল না। অভিযোগ দাঁড়াল— গুপ্তদা এসব ব্যবহার করে ওজন বাড়িয়ে-কমিয়ে দোকানদারদের থেকে বেশি বেশি জিনিস হাতিয়ে নেন!

রবার্ট হঠাৎ বলল, ‘স্যার, আমি ভোক্তা অধিকার আইনে মামলা করতে চাই।’

উপস্থিত জনতা অবাক। এতদিন ভোক্তারা মামলা করত বিক্রেতাদের বিপক্ষে। এবার খোদ দোকানদার মামলা করতে চাইছে, তাও ক্রেতার বিরুদ্ধে!

মাজিস্ট্রেট গুপ্তদাকে জরিমানা করলেন। তার সাধের ওয়েট মেশিনটা সিজ করা হলো। কিন্তু তাতেও যদি শেষরক্ষা হতো!

গুপ্তদা উপস্থিত জনতার রোষানলে পড়লেন। মারের চোটে তার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় তৈরি হলো বিশালাকৃতির একেকটি আলু।

ওইদিনের পরে গুপ্তদার দেখা পাইনি আর। বল্টু, রবার্ট, হিটলু আর আমি যখন আলোচনায় বসি, গোটাকতক প্রশ্ন অবধারিতভাবেই ওঠে—

সেদিন গুপ্তদার শরীরে জেগে ওঠা আলুগুলোর ওজন কত হয়েছিল? (ইস... ম্যাজিস্ট্রেটের কাছ থেকে গুপ্তদার ওয়েট মেশিনটা চেয়ে নিয়ে যদি একটু মেপে দেখতাম!)

আচ্ছা, গুপ্তদার মেশিনটা সঠিক ওজন দিতো তো? নাকি বেশি দিত! তাহলে তো, গুপ্তদা এতকাল ঠকেই পণ্য কিনতেন। নিজে ঠকেও এভাবে জরিমানা দিতে হলো?

নাকি স্রেফ অভিনব উপায়ে ওয়েট মেশিনের ব্যবহারই গুপ্তদার জন্য কাল হয়ে দাঁড়াল।

এদিকে, মামলা ঠুকে জরিমানার যা ভাগ পাওয়া গেছে, রবার্ট তা দিয়ে আমাদেরকে নিয়মিতই ট্রিট দিচ্ছে। গুপ্তদার ওয়েট মেশিনটা থাকলে মন্দ হতো না। একটু বাড়ন্ত ভুড়ির ওজনটা মেপে দেখতে পারতাম!

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়