প্রকাশ : ২৫ মার্চ ২০২৩, ০০:০০
চাঁদপুর জেলা শহরের ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ চাঁদপুর সরকারি কলেজ। গত ২৪ ও ২৫ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার ও শনিবার দুদিনব্যাপী ৭৫ বছরপূর্তি উদযাপন করা হয়। এই ৭৫ বছরে বহু জ্ঞানী-গুণী মানুষ সুশিক্ষিত হয়ে দেশ-বিদেশে উচ্চ পর্যায়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে নিজেদেরকে নিজ নিজ জায়গায় প্রতিষ্ঠিত করে গড়ে তুলেছেন। দুদিনের আয়োজনে ছিলো অসাধারণ কিছু মুহূর্ত। যা জীবন চলার স্মৃতিতে সবসময় জাগ্রত হয়ে থাকবে মনের গহীনে। এ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কলেজের প্রাক্তন সিনিয়র ছাত্র/ছাত্রীগণ আনন্দঘন সৌহার্দ্যময় পরিবেশে ফেলে আসা অতীত স্মৃতিতে বারবার হারিয়ে গেছেন। অনুষ্ঠানের দুদিনের পর্বেই ছিলো সাংস্কৃতিক আয়োজন। আর অনুষ্ঠান ভেনু ছিলো চাঁদপুর স্টেডিয়াম।
আমি ছোটবেলা থেকেই সাংস্কৃতিক ভাবধারায় এবং সংগঠন করে আসছি। তাই চাঁদপুর সরকারি কলেজের ৭৫ বছরপূর্তি উদযাপন উপলক্ষে সংগীতশিল্পী তালিকায় কে কে আছেন সেই ভাবনাই মনে ছিলো, আর সময় পার করছিলাম। পরে তো যথাসময় এসেই পরলো!
প্রথমদিন সঙ্গীত পরিবেশন করলেন দেশবরেণ্য কিংবদন্তি সঙ্গীতজ্ঞ কণ্ঠশিল্পী শ্রদ্ধেয় সাবিনা ইয়াসমিন। সাথে আরো ছিলেন কাউয়ালি গানের শিল্পী ও রকস্টার ব্র্যান্ডসঙ্গীত শিল্পী। প্রথম পর্বের অনুষ্ঠান উপস্থাপন করেছেন এবং সঙ্গীত পরিবেশন করেন চাঁদপুরের কৃতীসন্তান জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী শ্রদ্ধেয় দিনাত জাহান মুন্নী। মনে খুব আশা ও আনন্দ নিয়ে এক এক করে শ্রদ্ধেয় কণ্ঠশিল্পীগণের পরিবেশিত গান শুনলাম। মনটা হারিয়ে গিয়েছিলো সঙ্গীত ভুবনে। তবে একটা ইচ্ছে ছিলো শ্রদ্ধেয় কণ্ঠশিল্পী সাবিনা ইয়াসমিনের সাথে দেখা করবো, তাঁর পা ছুঁয়ে প্রণাম করবো। কিন্তু! তার কোনো পরিবেশ করতে ব্যর্থ হয়েছি।
যাক, তবে পরের দিন বিশেষ করে দুপুরের পর থেকে মনের ভেতর ঘুরপাক খাচ্ছিলো যে বাস্তবমুখী সঙ্গীতশিল্পী শ্রদ্ধেয় নচিকেতা চক্রবর্তী দাদা আমার প্রাণের শহর চাঁদপুর আসবেন! কাছ থেকে তাঁর গান শুনবো! মানুষটির কাছে যাবো, কথা বলবো, ছবি তুলবো ইস কী যে মনে আনন্দ তা সত্যিই বলে ও লিখে বোঝানোর কোনো ভাষা নেই।
নচিকেতা দাদার গাওয়া বৃদ্ধাশ্রমসহ জনপ্রিয় ৫টি গান শুনলাম। কিন্তু মনে প্রশ্ন জেগে রয়েছে, যে গান তো শুনলাম ঠিক আছে, তাঁর সাথে কথা বলা, ছবি তোলা হবে কি বা পারবো তো?
কবি ও লেখক সুমন দত্ত আমার সাথে। তাকে বারবার বলছি, দাদা গতকাল শ্রদ্ধেয় সাবিনা ইয়াসমিনের সাথে দেখা করতে পারিনি, তবে আজ যদি নচিকেতা দাদার সাথে ছবি তুলে রাখা এবং কথা না বলতে পারি তবে জীবনের পথচলায় এ ব্যর্থতা আমার থেকে যাবে। অবশ্য সুমন দত্ত আমার মনের অবস্থা দেখে সাহস দিতে লাগলেন।
আমার কাছে ৭৫ বছরপূর্তির সাংস্কৃতিক উপ-কমিটির আহ্বায়ক শ্রদ্ধেয় অজয় ভৌমিক ও বড়ভাই সাংবাদিক আলম পলাশ, জহিরউদ্দিন বাবর ভাই, আবু সায়েম ভাইকে ফোন করলাম কেউ ফোন কল ধরলেন কিন্তু কথা বোঝা যাচ্ছিলো না। কেউ ফোন কল ধরলেন না।
২৫ ফেব্রুয়ারি রাত প্রায় ১১টা ৪০ মিনিট মোটরসাইকেল নিয়ে অনুষ্ঠান থেকে বাড়ি ফিরে আসার সময় মনে হলো সার্কিট হাউজ গিয়ে দেখি কী অবস্থা। পরে সার্কিট হাউজ গেলাম এবং গিয়ে জানলাম শ্রদ্ধেয় গীতিকবি কবির বকুল ভাই আছেন। সার্কিট হাউজে থাকা জয় চন্দ ও পলাশ দাশকে পেয়ে সব খোঁজখবর জেনে নিয়ে গভীর রাতে নিজ গৃহে ফিরে আসলাম। সারারাত চোখে ঘুম নেই! শুধু ভাবছি সকালে সার্কিট হাউজ গিয়ে নচিকেতা দাদাকে দেখতে পাবো তো?
২৬ ফেব্রুয়ারি সকাল প্রায় ১০টার মধ্যে পৌঁছে গেলাম সার্কিট হাউজ। আমার মনের গভীরের স্বপ্নটা বাস্তব হয়ে গেলো! বাস্তব গানের সুরস্রষ্টা নচিকেতা দাদাকে কাছ থেকে পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তোলবো কথা বলবো আর অপেক্ষা করতে পারছিলাম না। মনের মাঝে বিশাল খুশির জোয়ার বইছে। কবির বকুল ভাই নচিকেতা দাদার সাথে সাক্ষাতের জন্য অপেক্ষা করতে বললেন। এর ফাঁকে সার্কিট হাউজের জয় ও পলাশ দাসসহ বেশ কয়েকজন অতিথিদের বিদায়ের জন্য সকল কিছু প্রস্তুত করছেন। শ্রদ্ধেয় কবির বকুল ভাই সার্কিট হাউজের বারান্দায় এসে মোবাইলে কথা বলছেন। আমি তাঁকে তাঁর কথা বলার ফাঁকে জিজ্ঞেস করলাম, বড় ভাই আপনারা কী বাইরোডে গাড়িতে যাবেন, তো কথা বলতেই তিনি আমায় বলেন ১২টার রফরফ লঞ্চ করে যাবো।
এর মধ্যেই তবলশিল্পী কৈলাস দা আসলেন এবং আমাকে দেখে হেসে বলেন, আরে কী অবস্থা কেমন আছো পলাশ? আমি বললাম, কৈলাস দা আমি ভালো, আপনি কেমন আছেন? বহুদিন পর দেখা হলোসহ ইত্যাদি। তখন খুব মিস করতে থাকলাম আমার সঙ্গীতগুরু শীতল ঘোষাল ও গীতিকবি মোখলেসুর রহমান মুকুল কাকুকে। আজ তাঁরা দুজনই প্রয়াত!
সকাল ১১টা ২০ মনিেিট নচকিতো দাদা হাসি-খুশি মনে কক্ষ ছেড়ে বের হলেন, তিনি কবির বকুল ভাইকে বলতে শুনলাম বকুল চলো...। এ সময় নচিকতো দাদা সার্কিট হাউজে থাকা জয়সহ সকলকে বললেন, ভালো থেকো আসি।
আমার সৌভাগ্য নচিকতো দাদার একটি ব্যাগ আমি হাতে নিয়ে গাড়ি পর্যন্ত নিয়ে এসেছি এবং তা তিনি দেখলেন। এরপর দাদা বলেন, আমার কাঁধের ব্যাগটি কোথায়? তখন কবির বকুল ভাই এগিয়ে এসে বলেন, হ্যাঁ দাদা তোমার কাঁধের ব্যাগ এইতো আছে। ব্যাগে তো তোমার মোভ রয়েছে, এটাই তো না কি? কবির বকুল ভাইয়ের কথা শুনে নচিকতো দাদা হাসলেন।
আমি একফাঁকে বললাম, দাদা চাঁদপুর থেকে ঢাকা খুব আরাম করে আনন্দ নিয়ে লঞ্চ করে পৌঁছে যাবেন। যা আপনার খুব ভালো লাগবে এবং অনেক দিন মনে থাকবে। তখন তিনি হেসে বললেন, হ্যাঁ তাই তো বকুল বললো।
আমি আমার ভিজিটিংকার্ড দাদার হাতে দিলাম। ওনি কার্ডটি দেখলেন। আমি বললাম, দাদা মিঠুন চক্রর্বতীর নামে সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন করছি আজ ২৬ বছর। মিঠুন দাদা জানেন। নচিকেতা দাদা বলেন তাই নাকি! খুব ভালো। কার্ডটি তাঁর পকেটে রেখে দিলেন।