প্রকাশ : ০৬ আগস্ট ২০২২, ০০:০০
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
পুলিশ শুভর মাকে কল দিয়ে করে নিজের পরিচয় দেয়। শুভকে নিয়ে আগামীকাল সন্ধ্যায় থানায় নিয়ে আসার জন্যে বলে তদন্ত কর্মকর্তা মেহেদী হাসান।
শুভর মা বলে, কেনো?
- ওর সাথে ওসি স্যার কথা বলতে চান। প্রয়োজনে আপনি সাথে করে নিয়ে আসবেন। যদি না আসেন তবে আমরা গিয়ে নিয়ে আসবো। এটা গ্রামের মানুষ ভালো চোখে দেখবে না। তাছাড়া আমরা আপনার ছেলেকে সন্দেহ করছি।
শুভর মা পুলিশের সাথে কথা না বাড়িয়ে ঠিক আছে বলে কল কাটে। এবার চিন্তায় পড়ে যায় শুভর মা রাহেলা বেগম। শুভ তখনো বাসাতেই ছিলো। আইইএলটিএস কোর্স করতে ঢাকায় যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে সে। ছেলেটার মন খারাপ। নুপুরের ঘটনার পরপরই ঢাকায় সবকিছু ঘোছানো শুরু করে শুভর মামা। শুভর মামা ঢাকায় একটি প্রাইভেট কোম্পানির সহকারী ম্যানেজার হিসেব চাকুরি করেন। পরিবারের সবাই ঢাকাতেই থাকেন। ওদিকে যেহেতু নিপু খুব বেশি নীরব হয়ে গেছে। তাই বিষয়টি আর শুভ শেয়ার করেনি। শুভর মা এবং মামার কথায় আজই ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা করে। যাবার সময় নিপুদের বাড়িতে গিয়ে দেখা করে এসেছে। নিপুর সাথেও কথা বলেছে।
- দোস্ত মন ভালো নেই। জানি তোরও মন ভালো নেই। না থাকারই কথা। কী থেকে কী হয়ে গেলো বুঝে উঠতেই পারলাম না। মা এবং মামা ঢাকায় সব ঠিক করে রেখেছে তাই রওনা দিলাম। আমারও মনটা ভালো নেই। ভালো থাকবেই বা কী করে? তুইতো সব জানিস। নুপুরকে আমি কতোটা ভালোবেসে ফেলেছি। আসলে মানুষের জীবনে কতো কিছুই হয়। আবার কতো কিছুই হয় না। দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে সে।
শুভর কথার জবাবে নিপু খুব বেশি কিছু বলে না। শুধু বললো, যা। ভালো থাকিস। আমাকে আগামীকাল থানায় যেতে বলেছে। না হয় আমি তোর সাথে যেতাম। বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে আসতাম।
- যা দেখা কর। ভিতু হস্ না। সাহস রেখে কথা বলিস্। যা হবার হয়েতো গেছেই। তোর কথায় যেন গ্রামের মানুষ বিপদে না পড়ে। যেহেতু পুলিশ তোকে ডেকেছে নিশ্চয়ই তোর কথার সূত্র ধরে একটা ক্লু বের করবে। করুক। তাতে তোর বা আমার কোনো সমস্যা নাই। তবে গ্রামের সহজসরল মানুষ কেউ যেনো বিপদে না পড়ে। সমগ্রবিষয় খেয়াল রেখে কথা বলিস। তবে যেহেতু মেডিকেল রিপোর্ট বলছে এটি হত্যা। সেহেতু হত্যার বিচারও হওয়াটাও জরুরি।
আর শোন্ তুই হয়তো আমার সাথে রাগ করে আছিস আমি কেনো নুপুরের লাশ দাহ করতে বারবার আপত্তি করেছি। এটার কারণ হচ্ছে, আমার কাছে মনেই হচ্ছে ও খুন হয়েছে। এভাবে একটা মেয়ে মরতে পারে না। নানা প্রশ্ন আমার মনে দানা বেঁধেছে। তাই পুলিশকে আমি অনুরোধ করেছি লাশ যেনো ময়নাতদন্ত ছাড়া পরিবারের কাছে না দেয়। এখন দেখ আমার ধারণাই সত্যি হয়েছে।
- তুই থাকলে তোকে নিয়ে থানায় যেতে পারতাম। সবার জন্যে ভালো হতো। আমার জন্যও ভালো হতো।
- আমিতো ব্যাগ গুছিয়ে নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসেছি। বাড়ি ফিরে গেলে মা রাগ করবে। বের হওয়ার আগে ওমানে বাবার সাথেও কথা হয়েছে। এখন আর বাড়ি ফিরে যাবো না। আমি চলে যাই। প্রয়োজন হলে আমি আসবো। আমি আগে সেখানে গিয়ে সবকিছু গুছিয়ে আসি। অবশ্য আগামীকাল থেকে ক্লাস শুরু হবে। তাই চলে যেতেই হবে। ভালো থাক, আমি আসিরে...।
নিপু মাথা নেড়ে শুভকে বিদায় জানায়। রাস্তার মাথা পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে যায় নিপু। এতো কাছের বন্ধু চলে যাচ্ছে নিপুর যেনো কোনো রকম লাগছে না। কোনো অনুভূতি নেই। শুভ ঢাকা পৌঁছে যায়। বাসে যেতে যেতে কতো শত ভাবনা শুভর মাতায় ঘুরপাক খায়। বারবার নুপুরের কোমল মুখ মনের আয়নায় ভেসে উঠে। আহ কী মায়া! কতো দরদ মেয়েটির শরীরজুড়ে। শুভ গ্রাম থেকে মা-ভাইকে ছেড়ে চলে যাচ্ছে এ নিয়ে তার অতটা ভাবনা নেই। যদিও মায়ের জন্যে মন কাঁদে। ভাইয়ের জন্যেও। চেনা-জানা পথঘাট। অথচ মায়া যেনো একটা জায়গাতেই কেন্দ্রীভূত। নুপুর শুধুই নুপুর। বুকের ভেতর ছন্দে ছন্দে সুর তোলে। গান গায়। নৃত্য করে। সব ভাবনা থমকে যায় যখন মনে হয় নুপুর নেই।
অবশ্য মানুষ যখন কিছু হারায় তার গুরুত্ব খুব বেশি মনে হয়। অথচ যুগে যুগে পৃথিবী থেকে হাজার হাজার গুরুত্বপূর্ণ মানুষ বিদায় নিয়েছে। এমন হলে পৃথিবীর পথ চলা থমকে যেতো। মূলত কারো জন্যে কোনো কিছু থেমে থাকে না। এই যেমন এখন শুভর মনে হচ্ছে তার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মূল্যবান সম্পদ হারিয়েছে আসলে তা কিন্তু নয়। এ শোক বা হারানোর বেদনা ঠিকই একদিন কাটিয়ে উঠবে শুভ। আরো প্রাণবন্ত জীবন ধরা দেবে রাজধানী নগরে। নগরের জীবন আরো রঙিন আরো বর্ণিল। একসময় এ অবারিত সবুজ গ্রামের কথাও ভুলে যাবে সে। ভুলে যেতে বাধ্য হবে। সময় সব জবাব দিয়ে দেয়। অবশ্য মনে পড়বে না তা কিন্তু নয়। মাঝে মাঝে স্মৃতির নৌকায় মানুষ ঘুরে বেড়ায়। এ বেড়ানো হয়তো আনন্দের নয়তো বেদনার। সবকিছু মাড়িয়ে জীবন চলতে থাকে জীবনের গতিতে। (চলবে)
[পরের পর্ব আগামী সংখ্যায় প্রকাশিত হবে]
* পাঠক ফোরাম বিভাগে লেখা পাঠানোর ই-মেইল : [email protected]