প্রকাশ : ০৫ মার্চ ২০২২, ০০:০০
শুরুতেই বলছি সময়ের ছাঁচে নয়, সাহিত্যের মাপকাঠিতে ফেলে পড়তে হবে এই কাব্যগ্রন্থকে। পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন এবং সবচেয়ে নতুন একটি অভিজ্ঞতা হচ্ছে ভালোবাসা বা প্রেম। যা প্রকাশে কবিতা প্রচ- শক্তিশালী একটি মাধ্যম। এটা আমাদেরকে যতোটা আলোড়িত, আন্দোলিত, উদ্বেলিত করতে পারে সাহিত্যের অন্য কোনো মাধ্যমের পক্ষে তা ততোটা অনুকূল হয় না। কবিতা আমাদেরকে উজ্জীবিত করে প্রেমে-দ্রোহে-বিপ্লবে এবং শান্তিতে। শক্তি ও সাহস জোগায় বেদনা ও হতাশায় এবং উদ্বেলিত করে আনন্দে।
‘দ্রোহ ও ভালোবাসা’ কাব্যগ্রন্থটি এতোটাই জীবন্ত যে অমর শব্দগুলো মনের কাছে রাখা যায়। প্রথম কাব্যগ্রন্থের লেখক হিসেবে আনিস ফারদীনকে একজন জাত-কবি বলে আমি মনে করি। কারণ তার কিছু কবিতা এতোটাই শক্তিশালী যে, প্রথমেই বলছি কবিতাগুলো একবার পড়ে পৃষ্ঠা উলটালে আপনি কিছুই খুঁজে পাবেন না এতে, যেমন পাইনি অধম আমিও। না পাওয়ার কারণও আছে। বিশ্ববিখ্যাত চিত্রকর্ম মোনালিসাতে হুট করেই সৌন্দর্য দেখতে পাবেন না আপনি। তবুও তা জগদ্বিখ্যাত এর একমাত্র কারণ অতি সৌন্দর্য সহজে চোখে ধরা দেয় না তা অনুভব করতে হয়। আর এর জন্যে আপনাকে কল্পনার উপর প্রবল জোর দিতে হবে, হারিয়ে যেতে হবে তার সৃষ্ট ‘প্রতিচ্ছবির অন্তরালে’ কিংবা ‘অন্তিম ডাকে’! অমূল্যের জাতিতে হাত কেটে যায় তার ‘মন ভাঙে মুক্তির বার্তা’, ‘মহানায়ক ও বাংলাদেশ’ কিংবা ‘মুখোশ মানুষ’ পাঠে।
দারুণ প্রচ্ছদ এবং কবির দুর্দান্ত জেদি কলমের অনবদ্য উপস্থাপনা তৃষ্ণার্ত পাঠকের মননে অপার শান্তি বিরাজে সক্ষম এমনই দ্রোহ, ভালোবাসা, সভ্যতা-স্বদেশ ও চলতি সমাজের নানারূপ নিয়ে লেখকের ৮০টি কবিতার এক দারুণ সম্ভার এই কাব্যগ্রন্থটি! তার কলমে রটুক অযুত-নিযুত কাব্য, এগিয়ে যাক সাহিত্যের একনিষ্ঠ সাধনা। প্রতিটি পাঠকের অন্তরে অমর হোক তার অক্ষরের গাঁথুনি।
প্রিয় লাইন : আমি ভুলে যাব আমার সব অতীত,/পৃথিবী ছেড়ে লুফে নিবো তোমাকে,/তোমার উষ্ণতাকে। (সিলমোহর)!
মনে দাগ কাটার মতো কিছু পঙক্তি তার বইজুড়েই বিদ্যমান। সমালোচনার মতো আসলে তেমন কিছু খুঁজে পাইনি আমি। তবে মাঝে মাঝে মনে হয়েছে কিছু কবিতা আরেকটু সংক্ষিপ্ত হতে পারতো, পরিসমাপ্তি আরেকটু অর্থবহ হলে ব্যাপারটা দারুণ রোমাঞ্চকর হতো।
সবশেষে বলতে পারি, কবিতা-খেকোরা এই বই লুপে নিবে আশা করি। তাদের ক্ষুধা মিটানোর রসদ এই ভা-ারে উন্মুক্ত। আর আমার মতো বাতিকগ্রস্ত পাঠক যারা আছেন তারা এই বইটি এক বসাতেই শেষ করতে পারবেন বলে মনে করি। কারণ এটি আপনাকে ক্লান্ত করবে না কখনোই। শুধু অস্থির করবে তুলবে এর প্রচ- উন্মাতাল করা দুর্দমনীয় ছন্দে। যা একবাক্যে অনবদ্য! কবির সমৃদ্ধি কামনা করি সেই সাথে পরবর্তী বইয়ের অপেক্ষা।