প্রকাশ : ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০০:০০
আজ দশই জানুয়ারি। কোনো একসময় এইদিনটা নিয়ে বেশ উত্তেজনা অনুভব করতাম। এক অন্য রকম ভালো লাগা মিশে থাকতো এইদিনে। ছিলো ভিন্ন রকম অনুভূতি আর আবেগের মাখামাখি। কিন্তু আপাতত সেই অনুভূতি-উত্তেজনা কিছুই আর সক্রিয় নেই৷ অনুভূতির বিপরীতে অনেকটা সময়ের মতোই অতীতে হারিয়েছে সব। সমগ্র আগ্রহ হেরে বসে আছে অভিমান, ঘৃণা আর অপমানজুড়ে।
এক বছরে তিনশো পঁয়ষট্টি দিন, তার মধ্যে বারোটা মাস, প্রতিটা মাসে গড়ে ত্রিশ-একত্রিশ দিন করে; যার মধ্যে দশই জানুয়ারি বারোটা মাসের মধ্যে একটা মাস, আর ত্রিশ-একত্রিশটা তারিখের মধ্যে একটা তারিখ।
সুতরাং এই একটা তারিখের তেমন বিশেষত্ব বের করে সবার সামনে উপস্থাপন করা সম্ভব নয়। সম্ভব হলে অবশ্য, সময় মতো জানিয়ে দেবার অনেক শুভাকাক্সক্ষী পাওয়া যেতো। কিন্তু সেটা সম্ভব হয়নি বলেই এই সামান্য অনুভূতির আবেগমাখানো দিন কোনো মানুষ কোনোকালে মনে রাখেনি, রাখার কথাও না।
মানুষের মন বড় অদ্ভুত। প্রতিনিয়ত এমন এমন কর্মকা- ঘটাতে ইচ্ছে করে যে, তা প্রায় অসম্ভব। অবশ্য এমন আবদার শুনলে যে কেউ পাগল বলে সম্বোধন করবে, কিংবা অট্টহাসিতে ফেটে পড়বে। আর আমার শুভাকাক্সক্ষীর আবদারও কিছুটা তেমনই। আর তাছাড়াও আজকালকার লোকজন বেশ উন্নত ধাঁচের। একটু চালাক না হলে চলা মুসকিল। তাদের কাছে আধুনিকতার ছোঁয়া বসন্তের রোগের মতো।
এইতো কিছুদিন আগের ঘটনা। এমন বিজয় দিবসের নামে স্পিকার এনে ডিজে গান, হিন্দি গান বাজাচ্ছে। এখানে বলে রাখা ভালো যে, ডিজের মানেটা আজ পর্যন্ত আমার কাছে অজানা। আর প্রায় সবাই যে ডিজের মানে বুঝে সেটাও আমি বিশ্বাস করি না। অদ্ভুত ধরনের সব মানুষ, বর্তমানের সবচেয়ে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে কয়েকদিন আগে দেখলাম এক লোককে জিজ্ঞেস করা হলো
-‘জেব্রাক্রসিং কি’
লোকটা বললো,
-নাম শুনেছি কিন্তু ঠিক মনে পড়ছে না, যে কি। রং দেয়ার যন্ত্র হবে হয়তো। তারও কয়েকমাস আগে জিপিএ-ফাইভ পাওয়া কিছু ছাত্রছাত্রীদের কাছে সংবাদ মাধ্যমের কিছু ভাই বাংলাদেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্য নিয়ে কিছু প্রশ্ন করেছিলো, তার মধ্যে একটা প্রশ্ন ছিলো,
-অপারেশন সার্চলাইট কি?
-অপারেশন করার সময় যে লাইট ব্যবহার করা হয় তার নাম অপারেশন সার্চলাইট।
শিক্ষার্থীদের এমন বাক্রুদ্ধ করা উত্তর শুনে সংবাদ মাধ্যমের ভাইরা অবাক হয়েছে কি না জানি না। তবে আমজনতার মধ্যে যারা দেখেছে তারা যে অবাক না হয়ে থাকতে পারেনি তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
আর সেই অবাক হওয়া আমজনতার মধ্যে আমিও একজন। সুতরাং আকাশে মেঘ দেখে বৃষ্টির আন্দাজ করার মতোই ডিজের মানে না জানার আন্দাজটুকু বেশ ভালোভাবেই করতে পারছিলাম।
লজ্জা বলতে মানুষ যা বুঝে, বেশির ভাগ অস্বস্তিকর পরিস্থিতিই লজ্জাজনক। অবশ্য সেটা যদি প্রকাশ্যে না হয় তাহলে লজ্জা কথাটুকু অনায়াসে কেটে দিয়ে কেবল অস্বস্তিকর বলা যায়।
আমার স্কুলজীবনে কিছু শিক্ষকদের একটা বিশেষ বৈশিষ্ট্য ছিলো যে, ছাত্ররা পড়া না পারলে তাদের নিতম্বে বেত্রাঘাত, আর ছাত্রীরা পড়া না পরলে হাতে! মাধ্যমিকের প্রথম তিনটা বছর ছেলে-মেয়ে আলাদা বসাতো বলে নিতম্বের কষ্টটুকু অস্বস্তিকর লাগলেও লজ্জা তেমন লাগতো না। কিন্তু ছেলে-মেয়ে একসাথে বসানোর পরও যখন নিতম্বে অত্যাচার করতেও স্যাররা কার্পণ্য করতেন না, তখনই অনুভব হতে লাগলো অস্বস্তিকর পরিস্থিতির মাঝে ‘লজ্জাৎ।
ছোটবেলা থেকেই ক্লাসের একটা মেয়েকে খুব ভালো লাগতো। ‘পরী’-হ্যাঁ এটাই তার নাম।
অবশ্য তার সৌন্দর্যের সামনে পরী নামটাও হার মানায়। তার প্রতি প্রেম জন্মায় ক্লাস-থ্রি থেকে। তখনও অবশ্য প্রেমের সঠিক মানে জানা ছিলো কি না জানি না। আর প্রেম বলেও যে কিছু একটা হয় সেটাও জানা ছিলো না। বিষয়টা নিয়ে একেবারে ভিন্ন রকমের অনুভূতি অনুভব করতাম; একেবারেই ভিন্ন ধরনের! আর এই ভিন্ন ধরনের অনুভূতির মধ্যে একটা জিনিস লক্ষ্য করতাম যে, অন্য আট-দশটা ছেলে-মেয়ের সাথে কথা বললে আমার যেমন লাগে পরীর সাথে কথা বলতে তেমনটা লাগে না। সেই অনুভূতিটুকু একেবারেই আলাদা অনুভূতি। বিশেষ করে এতো গ্রহণযোগ্য যে, সব কথারই শেষ আছে, সবার কথাই শেষ হয় কিন্তু তার সাথে কথা বলতে না লাগতো বিরক্তিবোধ আর না-ই অনুভব হতো কথার সমাপ্তির। বরং এমনটা মনে হতো যে, আরো কিছু সময় কথা বলার দরকার ছিলো; বোধ-হয় আরো কিছু কথা বলা বাকি রয়ে গেছে। তার প্রতি প্রেম সেই সেকেল থেকে শুরু, তার পরবর্তী সাত বছরেও একই সাথে একই প্রতিষ্ঠানে অধ্যায়রত ছিলাম। ভালোই চলছিলো দিন। সে জানে আমি তার ক্লাসমেট অথচ গত সাত বছর নিরবে নিভৃতে তাকে আমি ভালোবেসে আসছি এটা কিন্তু সে জানে না। কি দারুণ এক ব্যপার তাই না! ভাবুন আপনার! সে যদি জানতো আমি তাকে ভালোবাসি তাহলে তার অনুভূতি কেমন হতো! কিংবা কি ভাবতে সে! কি-ই বা উত্তর দিতো? ভাববার বিষয় তাই না! হ্যাঁ এই ভাববার বিষয়টুকুও বাস্তবে রূপ নিয়েছিলো স্কুলজীবনের শেষ বছরে...।
দুই.
-রবিউল কাকার পুত!!
ছেলে বন্ধুদের ক্ষেপানোর জন্য তার বাবার নাম-ই যথেষ্ট। আর নামের মাঝে কাকা আর শেষে, বন্ধুকে পুত বলে সম্বোধন করা যে কি আনন্দের সেটা অবশ্য পাঠকদের বলে বোঝাতে পারবো না। তবে পাঠকদের মাঝে যারা এই সময় আর এই একই ঘটনা পার করেছেন তারা অবশ্য অতি সহজেই উপলব্ধি করতে পারবেন।
প্রায়ই লাইব্রেরিতে গিয়ে দলবেঁধে হাজিরা খাতা আর অভিভাবক ডায়েরি দেখার সৌভাগ্য হাতছাড়া করতে চাইতাম না। অবশ্য আমার বন্ধুরা-ও অনেকে আমার মতোই এসময় হাতছাড়া করতে নারাজ। কোনো মতেই হাতছাড়া করতে চাইতো না সেই মোক্ষম সুযোগগুলো।
বন্ধু-বান্ধবদের জন্ম-ইতিহাস থেকে শুরু করে চৌদ্দপুরুষ পর্যন্ত যা কিছু স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে আছে, তার প্রায় সবটাই আমরা নিয়মিত চুষে নিতাম মগজ ভরে। আর এমন দুষ্টুমির মাঝেও যে বিষয়টা কখনোই ভুলতাম না সেটা হতো, ‘পরীর’ তথ্যগুচ্ছ।
পাঠক অবশ্য বিরক্ত হয়ে মনে মনে প্রশ্ন করতে পারেন, এ-যুগে কারো নাম পরী হয় নাকি? কিংবা অনেকেই হয়তো ভাববেন গল্প তো গল্প-ই বোধহয় কোনো একটা কাল্পনিক নাম ধরে নিয়েছে।
হ্যাঁ তা-ই; একটা কাল্পনিক নাম-ই ধরে নিয়েছি, অবশ্য এরও একটা বিশেষ করাণ আছে। আর সেই কারণটা হচ্ছে সঠিক নাম প্রকাশের অনীহা। কেননা তার নাম প্রকাশ আমার জন্য কোনো ভাবেই সুখময় নয়; হবে না। উল্টো এর জন্য বিপদেও পড়তে পারি। তবে হ্যাঁ এতটুকু জানলে অবশ্য সমস্যা নেই যে, সে আমার ক্লাস থ্রির প্রেম হলেও সেই প্রেমর পূর্ণতা কখনোই হয়নি, যাকে অবশ্য জোর দিয়েই একপাক্ষিক প্রেম বলা চলে। কারণ সে কখনোই আমায় ভালোবাসেনি আর কখনো ভালোবাসে বলেও মনে হয় না। তো! তথ্যগুচ্ছ ঘেঁটে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টা পেলাম সেটা হলে ‘পরীর’ জন্মদিনের তারিখ। (আগামী সংখ্যায় সমাপ্য)