প্রকাশ : ১৫ জানুয়ারি ২০২২, ০০:০০
প্রায় এক দশক আগে এক স্নিগ্ধ সকালে পীযূষ দাদার সাথে আমার প্রথম সাক্ষাৎ। বঙ্গবন্ধু আবৃত্তি পরিষদের আয়োজনে তিনদিনের আবৃত্তি কর্মশালায়। অবশ্য দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠে লেখালেখির সুবাদে পীযূষ কান্তি রায় চৌধুরী নামটি খুব পরিচিত ছিলো।
কর্মশালায় খুব আগ্রহ নিয়ে অংশ নিই। সেখানেই দাদাকে সামনাসামনি প্রথম দেখা। কথাও হয়েছিলো প্রথম। কর্মশালায় দাদার সাথে খুব প্রয়োজনীয় দু-একটা কথা বলেছিলাম। কথা বলার পর দাদাকে একজন পরিশুদ্ধ ও মার্জিত মানুষ মনে হয়েছে। ধীরে ধীরে দাদার সাথে সম্পর্ক নিবিড় হয়ে উঠে। যে কারণে আমাকে বঙ্গবন্ধু আবৃত্তি পরিষদের সদস্য করা হয়। পরে সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়েছিলো। দিনদিন আমার ব্যস্ততা বাড়তে থাকে। তাই দাদার সাথে কিছুটা দূরত্ব তৈরি হয়। দূরত্ব ছিলো দেহের, মনের নয়। সবশেষ সংগঠনের কমিটি গঠনের আগে আমার সাথে কথা বলেছিলেন। আমাকে সাধারণ সম্পাদক হওয়ার প্রস্তাব করেছিলেন। আমি অপারগতা প্রকাশ করি। আমার কথায় দাদা মনক্ষতুœ হলেন। কিন্তু প্রকাশ করলেন না। রাগ-ক্ষোভ ফুসে রাখার ক্ষমতা দাদার ছিলো। তাইতো মনে কষ্ট পেলেও তা লালন করলেন না। উল্টো সাধারণ সভায় আসার জন্যে বিনীতভাবে বললেন। আমি কথা দিয়েছিলাম আসবো। কিন্তু আসতে পারিনি। যদিও সংগঠনের কিছুকিছু সভা ও কার্যক্রমে অংশ নেয়ার খুব চেষ্টা করেছি। সবশেষ দাদার শেষ বিদায়ের মাসখানেক আগেও দেখা হয়েছিলো। নতুনবাজার মন্দিরের সম্মুখে। দাদা বলেছিলেন, বাসায় এসো কথা আছে। ব্যস্ততার কারণে আসবো বলে দ্রুত চলে এলাম। তারপর আর দেখা হলো না। দেখা হবার সুযোগও আর তৈরি হবে না কখনো। দাদাকে দশ বছর আগে যেমনটি দেখেছি। শেষ দেখা পর্যন্ত একই রকম মনে হয়েছে। কোনো পরিবর্তন চোখে ধরা পড়লো না। ভেতরে ভেতরে কতোটা দুঃখ বয়ে বেড়িয়েছেন আমি বুঝতে পারিনি।
সেদিন সন্ধ্যা খুব ব্যস্ত সময় পার করছি। ফেসবুকেও ঢু মারার সময় পাচ্ছিলাম না। রাত সাড়ে সাতটার দিকে ফেসবুকে ঢু মারতেই কবি ও লেখব বন্ধুবর মুহাম্মদ ফরিদ হাসানের একটি ম্যাসেজ আসলো। ম্যাসেঞ্জার ওপেন করতে দেখলাম পীযূষ দা আর নেই। আমি হতবম্ভ হয়ে গেলাম। কি করবো বুঝতে পারলাম না।
এতো সতেজপ্রাণ মানুষটি কেনো এতো দ্রুত ওপাড়ে আশ্রয় নেবেন আমি কল্পনাতেও আনতে পারিনি। আমার কোনেভাবেই বিশ্বাস হচ্ছিলো না। ফরিদ হাসানকে ফোন করলাম, সত্যতা জানলাম। এ একটা সময় মানুষ মিথ্যে বলে না। মজা করে না। তাই বিশ্বাস করতে বাধ্য হলাম। তবে পীযূষ দাকে আমি বিগত একদশক যে-রকম দেখেছি। আমার মন-মস্তিস্কে দাদাকে যেভাবে চিনে রেখেছে। সেভাবেই দাদার মুখ মনে ক্যানভাসে এঁকে রাখতে চাই।
তাই নিজে নিজে সিদ্ধান্ত নিলাম দাদার সবযাত্রা দেখতে যাবো না। দাদা আমার হৃদয়ে সতেজপ্রাণ হয়ে বেঁচে থাকুক। কিন্তু যখন কঠিন সত্যের মুখোমুখি হই, তখন কষ্ট পাই। হৃদয়ে হাহাকারের সুর বেজে উঠে। দাদার সাথে শেষবার দেখা করতে না পারার আক্ষেপ আমাকে পোড়াবে দীর্ঘদিন। আশীর্বাদ করি, দাদার আত্মা স্বর্গবাসী হোক। ওপাড়ে ভালো থাকুন পীযূষ দা।
লেখক : সাংবাদিক ও গল্পকার। সদস্য, বঙ্গবন্ধু আবৃত্তি পরিষদ, চাঁদপুর।