সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২১ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।

প্রকাশ : ২৫ ডিসেম্বর ২০২১, ০০:০০

এক সন্ধেবেলায়
সোহানুর রহমান অনন্ত

কপালের লাল টিপটি ছুঁয়ে এক ফোঁটা ঘাম এসে পড়লো চোখের সামনে। আজও মোহিনী ওর স্বামীকে দেখেছে আরেকটি মেয়ের সঙ্গে। যদিও এটা এখন আর নতুন কিছু নয়। মোহিনী নিজে একটি বেসরকারি ব্যাংকে চাকরি করে। তার স্বামী দেশের নামকরা ব্যবসায়ীদের একজন। অনেক টাকা। হয়তো টাকার কাছেই বিক্রি হয়ে গেছে মোহিনী। বিক্রি হয়ে গেছে ২৫টি বছর ধরে বিন্দু বিন্দু করে গড়ে ওঠা সব চাওয়া-পাওয়া। প্রতিদিন এই সময়টিতে মোহিনীর বাড়ি যাওয়ার তাড়া থাকে। কিন্তু আজ আর তাড়া নেই। এর আগেও ওর স্বামীকে অন্য মেয়ের সঙ্গে দেখেছে। শুধু দেখা নয়, আরো বেপরোয়া জীবনযাপনের ব্যাপারটিও সে জানে। কখনো এতো খারাপ লাগেনি যতোটা আজ লাগছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে একটি গাছের নিচে এসে বসলো মোহিনী। অনেক দিন পর আসা হলো এখানে। একটি শুকনো পাতার দিকে তাকিয়ে আবারও ভাবতে থাকে সে। ওর স্বামীর চরিত্রে যে সমস্যা আছে, সেটা টের পায় বিয়ের দেড় বছরের মাথায়। হয়তো কাজের মেয়েটি প্রেগন্যান্ট না হলে, তা-ও জানা হতো না তার। প্রথম প্রথম খারাপ লাগলেও এখন কেমন যেনো বিষয়টি সয়ে গেছে। যে মনের বাঁধনে আটকায়নি, সে কী করে মুখের কথায় আটকাবে? তার স্বামী যখন পাশের রুমে অন্য মেয়েদের সঙ্গে মধুর হাসাহাসি করে, সে তখন বারান্দায় দাঁড়িয়ে একদৃষ্টিতে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে। তার চোখ দিয়ে ঝরে পড়া অশ্রুতে চাঁদের ফিকে আলো ঝলসে ওঠে। সে একটি মোমের পুতুল-সবই জানে, তবুও কিছুই যেনো জানে না। প্রতিবাদ যে কখনো করেনি এমনটি নয়, করেছিল; কিন্তু লাভ হয়নি। মানুষ অনেক সময় অভ্যাসের দাস হয়ে যায়। তার স্বামীর বেলায় তেমনটিই ঘটেছে। মাঝেমধ্যে ইচ্ছা হয় ছেড়ে চলে যাই। সে ভাবে, বিয়ে তো মানুষ জীবনে একবারই করে। তাই বাধ্য হয়েই একসময় নিশ্চুপ হয়ে গেছে। চোখটা কেমন যেনো ঝাপসা হয়ে আসে মোহিনীর। একটি ছোট্ট মেয়ে এসে বেশ জোর গলায়ই বলছে, ‘ফুল লাগব আফা ফুল, তাজা ফুল।’ মোহিনী একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে ফুলগুলোর দিকে। মোহিনীর মনে পড়ে যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া অবস্থায় সুজয়ের সঙ্গে কাটানো সময়গুলোর কথা। তখন প্রতিটি সকাল হতো নতুন একটি স্বপ্নের সূচনা দিয়ে। পাগলের মতো সুজয় তাকে ভালোবাসতো। যখনই সুজয়ের সঙ্গে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আসতো, একটি গোলাপ কিনে তার খোঁপায় গুঁজে দিতো। কপালে টিপ না থাকলে গোলাপের পাপড়ি দিয়ে টিপ বানিয়ে দিতো। যতোই অভিমান করুক না কেনো, সুজয়ের ভালোবাসার কাছে তার অভিমান পরাজিত হতো। সুজয় মোহিনীকে আলতো করে ছুঁয়ে বলতো, ‘মাঝেমধ্যে আমার মনে হয় আমার প্রতিটি রক্তের বিন্দুজুড়ে মিশে গেছ তুমি। তুমি না থাকলে কেমন যেনো রক্তবিন্দুগুলো চলতে চায় না। থেমে যায়। তখন খুব কষ্ট হয় আমার। প্রচ- কষ্ট হয়।’ সুজয়ের চোখের দিকে তাকিয়ে লাজুক হাসি দিতো মোহিনী। কিভাবে যে সময় চলে যেতো! নিয়তির কাছে পরাজিত হয়ে, মা-বাবার পছন্দে সুজয়কে রিক্ত করে মোহিনী সংসার সাজায় ধনাট্য এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে। সে তখনো বুঝতে পারেনি, জীবনের অঙ্কটা এভাবে ভুল হবে, যার ফল কেবল শূন্যই থেকে যাবে। এবার ঘাম নয়, চোখের কোণ থেকে অশ্রু ঝরে পড়লো মোহিনীর। ফুল হাতে মেয়েটি আবারও বললো, ‘আফা নিবেন না?’ ‘হ্যাঁ নেবো, দাম কত?’ ‘দুইটা ২০ টাকা।’ ব্যাগ থেকে টাকা বের করে দেয়। নিজেই খোঁপায় ফুল গুঁজে দেয়। কপালে নতুন করে গোলাপের পাপড়ি ছিঁড়ে টিপ পরে।

আজ কেনো যেনো সুজয়কে খুব দেখতে ইচ্ছা করছে মোহিনীর। আচ্ছা, সুজয় কি এখন দেখলে তাকে চিনতে পারবে? বড় একটি দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে মোহিনী। সন্ধ্যার আঁধার নেমে এসেছে চারপাশে। মোহিনীর চোখে বৃষ্টি, নিজের প্রতি ঘৃণার বৃষ্টি। মনের আনাচে-কানাচে আজ সুজয়ের স্মৃতিগুলো ডুকরে কাঁদছে। অধিক সম্পত্তির চেয়েও যে ভালোবাসাটা বেশি জরুরি তা বোধ হয় বুঝতে পেরেছে মোহিনী। যদিও বড্ড দেরি হয়ে গেছে, নাগরিক জীবনে একটু ভালোবাসার বড্ড বেশি প্রয়োজন। অন্ধকারটা ভালো করেই নেমেছে এবার। হালকা আলোয় নিজেকে খুঁজে ফেরে মোহিনী। খুঁজে ফেরে হারানো অতীত। কপাল থেকে খসে পড়ে গোলাপের টিপ। বাতাসে এলোমেলো হয় চুলগুলো। অন্ধকারে সবুজ ঘাসের ওপর হেঁটে বেড়ায় একা একা। আকাশের তারাগুলো সাক্ষী হয়ে থাকে। আস্তে আস্তে নীরব হতে থাকে চারপাশ। নীরব হয়ে আসে মোহিনীর মনের উত্তাল সাগর। তবুও আজ অন্ধকারে হারাতে খুব ইচ্ছা করছে ওর। বাড়ি ফেরার তাড়া নেই আজ।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়