প্রকাশ : ২৫ ডিসেম্বর ২০২১, ০০:০০
গত আশ্বিনের মেঘলা দিনের কথা। এই তো সেদিনের কথা মনে হয়। মেঘ আর থামে না। ধুম্বকার মেঘ! সারা দিন সারা রাইত টিমটিম টিমটিম। হাটবাজার সব বন্ধ। আনাজপাতি কেনা হয় না। শীতের শসা পাকিয়ে শিকায় ঝুলিয়ে রাখেন চাচি। কী সোন্দর অলদা রঙ শসার। বর্ষাকাল এলে বিশেষ করে মেঘবাদল যদি থামতে না চায়, রহিমা চাচি তার পছন্দের শসার খাট্টা রাঁধেন। পরিমাণ মতো দুধ জ্বল দিতে দিতে ঘন করার পর, কোরানো নারিকেল-চিনি-এলাচি-তেজপাতা-দারুচিনির সঙ্গে অতি অল্প পরিমাণ ঢেঁকিচাটা চালের গুঁড়া দিয়ে পাকা শসার খাট্টা রেঁধেছিলেন চাচি। রাত্রিকালে। সারা রাত খাট্টা ঠা-া হবে। সকালে মিষ্টিটা জমে ওঠার পর যে একটা দেখার মতো জিনিস হয় তা আর বলার মতো না। চাচি’র মতো এই রকম সোন্দর শসা খাট্টা কেউ রাঁন্ধে কিনা রফিকের জানা নাই। সেই খাট্টার মতো সোয়াদও আর ইহজগতে আছে বলেও তার জানা হয় নাই। রফিকের ইহজগত খুবই ক্ষুদ্র। সে নিজে আর তার পেট। রসুই ঘরের শিকায় ঝুলানো জমতে দেয়া সেই খাট্টা রাইতেই অর্ধেক শেষ। পাতিলে আঙ্গুলের গভীর দাগ।
কে খাইছে খাট্টা! কে খাইছে খাট্টা?
রফিক নিতান্ত গোবেচারা ভালোমানুষ সেজে চোখ নিরীহ মাটির সমতলে রেখে বিনয়ী ভঙ্গিতে চাচিকে সান্ত¡না দেয়। চাচি, মনে অয় ওলা বিলিডায় শসার খাট্টা খাইছে গো। তারে রাইতে দেখছি রসুই ঘরের পিঁড়ায় আঁচড় দিতে। এই কাম বিলাই ছাড়া আর কে করবো কন? বিলাইডা একটা বদমাইশ চাচি। আঁন্নে কইলে বদমাইশটারে আডার বস্তায় ভইরা যুগি বাড়ির চিতা খোলায় ছাইড়া দিয়া আসি। তার এট্টা উচিৎ শিক্ষা অওয়া দরকার চাচি। নইলে কন, এক্কেবারে রাঢ়ীবাড়ির খেয়া পারাইয়া নদীর ওইপারে চরমেশার চরে ছাইড়া দিয়া আসি। সাত চড়ে যার রা নাই, তার কথার জোয়ারেই, তখন, রহিমা বেগমের আর বুঝতে বাকি থাকে না, তার শখের শসা খাট্টা কে খাইছে। সকাল বেলা ফজরের নামাজের পর, তসবিহ’র গোটা জপতে জপতে ধেঁন্ধার সঙ্গে কথা কইতে ইচ্ছা করে না রহিমা বেগমের। শিকায় ঝুলানো শসার খাট্টা আর যেই হোক ওলা বিলি যে খায় নাই এইটা তিনি বোঝেন। তাছাড়া এ বাড়ির ধারে কাছেও ওলা বিলি নাই। রহিমা বেগম মনে মনে ভেবে রেখেছিলেন, তার বাপেরেও এট্টু খাট্টা পাঠাইবেন রফিকরে দিয়া। বাবা তার হাতের রান্না খুব পছন্দ করেন। বাপের বাড়ি বেশি দূরে না। চৌরাস্তার পরে যে দলালদীঘিÑসেখানেই গাছতলা গ্রামে তার বাপের বাড়ি। বাপ কোমর সোজা কইরা দাঁড়াইতে পারেন না। গুঁজা অইয়া হাঁটেন। বাড়িতে ভাল-মন্দ রাঁন্ধন অইলে বাপের কথা খুব মনে পড়ে রহিমা বেগমের। কয়দিন আগেও লাল রাতার মাংস মুগের ডাল দিয়া ঝোল ঝোল কইরা বাপ মা’রে পাঠাইয়া দিছিলেন। শসার খাট্টা আর বাপের কপালে নাই। মনটা খারাপ হয় তারÑরফিক্কার খাসলৎ দিন দিন খারাপ অইতাছে।
এখন সে রুটি বানাতে অত্যন্ত মনোযোগী। তবে চোরা চোখে বার কয়েক দেখে নিয়েছে পুকুর ঘাটের দিকেÑচাচি কখন আসে কে জানে। কুট্টি হাজীকে নিয়া সমস্যা নাই। তার এক চোখ কানা। আরেক চোখে কেতুর। কয়েকটা রুটি সাবাড় কইরা ফালাইলে বুইড়া কিছুই টের পাইব না। মুখে দেয় দেয় করেও বার বার নিজেকে সামলে নিয়েছে সে। কিন্তু সে বড়ই ভোককাতুরে। তার পক্ষে হয়তো আর বেশিক্ষু সহ্য করা সম্ভব হবে না। একটা কিছু মুখে দিতেই হবে। মুখের ভেতর তিতকুটি তিতকুটি পানি আইসা ভইরা গেছে। ছিঁড়িৎ কইরা সেই তিতা পানি ছুঁড়ে দিয়ে রফিক নিজের বানানো আটার রুটি দিকে লোলুপ ভঙ্গিতে তাকিয়ে থাকে। কিছু একটা না খাইলে আর নিজেকে রক্ষা করতে পারবে না সে। শরীর কাঁপছে। সবকিছু কেমন বে-দিশা বে-দিশা লাগছে। মাথাটাও মনে হয় ঘুরতেছে। চোক্ষে জুঁনি দেখা শুরু হইছে।
এই সব ভাবনার ভেতরই দাদা আইসা হাজির। সঙ্গে চুলা গুতানো বেতের লাঠি। আসলে তার সর্বক্ষণের সঙ্গী লাঠিটাই, লাঠিতে ভর দিয়ে হাঁটেন। বিশেষ করে মাটির চুলাটা দেখলেই যেন গুতানোর আশায় তার বয়স্ক শরীরটা পিলপিলায়! হাত চুলকায়।
ও দাদা, রঙ চা খাইবেন এট্টু?
বানাইছচনি? দেঃ এট্টু! এক ঢোক খাই। বেতের মোড়ায় বসতে বসতে বললেন কুট্টি হাজী।
বন দাদা। চা দিতাছি।
বড় বউ কই? পোলাপানের নাস্তা কি অইছে ? ওরা তো এক্ষু আইবো কাচারি ঘর থেইক্যা। পোলাপাইনের ভোক লাগছে না, হ্যাঁয়?
চাচি গেছে পুকুর ঘাডে। দুনিয়ার বাসন কোসন নিয়া গেছে। কন ত দাদা, চাচি’র কি উচিৎ অইছে এ্যাতো জিনিস নিয়া পুষ্কুনিতে যাওয়া? আমি কী করতে আছি, হ্যাঁয়? ঘাস খাইতে?
কথা ত মিডা মিডা ক’ছ। লক্ষু সুবিধার মনে অইতাছে না রে রইক্ক্যা! আইচ্ছা দে আট্টু মিডাই দে চা’য়ে। এই ব’লে কুট্টি হাজী পুরনো চিনামাটির পেয়ালাটা এগিয়ে ধরেন। বিহান বেলা এক কাপ রঙ চা তার অতি প্রিয়। এক হাতে চায়ের কাপ, অন্য হাতের লাঠি দিয়ে তিনি চুলার জ্বাল ঠেলে ওকে, রফিককে সাহায্য করার চেষ্টা করেন। দুই চুমুকের আরামের পর ফোকলা মুখ থলথল করে জিজ্ঞেস করেন, আইচ্ছা, রফিক্ক্যা, এই যে তুই বউমা’র শসার খাট্টাডা খাইয়া আঁইডা করলি কামডা কি ভালা? তুই ত বিরাট চোর অইতেছচ দিন দিন! দুধকেলা দিয়া তোরে ত আর পোষ মানান যাইবো না দেখছি!
ধুত্তরি বুইড়া! বুইড়ারে চা দেওয়াই ভুল অইছে। রুটি বেলতে বেলতে সে কুট্টি হাজী’র উপর বিরক্ত। এখন বুড়া এখান থেকে গেলেই সে বাঁচে। চা বানিয়ে দেয়ার জন্য এখন যারপরনাই অনুশোচনা হচ্ছে। দেয়া অনুচিৎ হইছে। আড় চোখে একবার বুড়ার দিকে ধারালো দৃষ্টি ছুঁড়ে মেরে রুটি বেলতে মন দেয় সে। রাগের ঠেলায় কাঠের পিঁড়ি-বেলুন টকাস টকাস শব্দ করে।
দাদা, লাডি দিয়া চুলার মুখ গুতাইয়্যেন না ত! চুলা গুতাইয়্যা কয়বার চুলা ভাঙছেন মনে আছে ? এইভাবে সে বুড়ারে টাইট দেয়। বিশেষ করে শীতের রাইতে কুট্টি হাজী’র ঘন ঘন প্রস্রাব ধরে। এট্টু পর পর ঠাস কইরা দরজা খোলেন, হারিকেন হাতে নিয়া টাট্টিখানা বা ঘরের ছাঁন্দায় কাঁঠাল গাছের গোড়ায় কাম সারেন। তখন শীত তারে ধরে। একটু ওমের জন্য টুকটুক করে রসুই ঘরে চুলার আগুন খোঁজেন। হাতের লাঠিটা দিয়ে চুলার ভিতর গরম ছাই খোঁজেন। উত্তাপ খোঁজার সেই গুতানিতে প্রায়ই মাটিলেপা চুলা ভাঙে। চুলার উপর হয়তো তার পুতের বউ কিছু একটা আঁচে দিয়ে রেখেছেন গুতানিতে সব কাইৎ!
অকস্মাৎ রফিকের বিরক্তি দেখে কুট্টি হাজী ভারী কাচের চশমার ভিতর থেকে কটমট করে তাকান। চা শেষ করে, লাঠি হাতে ঘরের দিকে চলে যান তিনি। বউ আসলে নাস্তা দিব। সুতরাং এই ফাঁকে সুর করে একটু তাওয়ারিক শরীফ পড়ার বাসনা জেগেছে তার।
বেশ ক’টা রুটি বানানো এবং স্যাঁকা হয়ে গেছে। চাচি আসতে দেরি করছে। তিনি এখনও পুষ্কুনিতে। চাচি’র দেরি দেখেই যেন দমিত ভোক কুঁইচ্চা মাছের মতো পেটের ভিতর তারে পুনরায় খোঁচায়। সেই খোঁচানিতে বমি বমি ভাবের উদ্রেক হয়। নাড়িভূড়িতে প্যাঁচ লেগে পুনরায় তিতকুটি পানি বার হয়ে আসে মুখ দিয়ে। পিত্তগলা পানি। রুটি বেলা আর চুলার মুখে বার বার গমের খড় ঢুকাইতে ঢুকাইতে অবস্থা কাহিল। মাঝে মাঝে ধোঁয়ায় চোখ আঁন্ধা হইয়া যায়। চুলারও একখান পেট মাশাল্লাহÑমাগো মা! পাটের খড়, ধানের খড়, গমের খড় Ñসব খাইয়া শ্যাষ! সব শ্যাষ অইলে তারপর আইবো বস্যাকাল। তার জন্য ছাড়াবাড়ি থেকে বস্তা বস্তা পাতা কুড়িয়ে রেখেছে সে। মান্দার গাছের লাকড়ি করে রেখেছে। এখন উঠানে চেঁঙ্গি দেয়া আছে মান্দারের লাকড়ি। বস্যাকালে কামে লাগবো।
কিন্তু একটু পরই তো পোলাপানগুলি আইবো নাস্তা খাইতে। এই ফাঁকে একটা রুটি খেয়ে ফেলবে কি-না এই চিন্তায় চোঁক চোঁক করছে তার মুখ। জিহ্বায় আঠালো আঠালো ভাব জমে উঠেছে। বুড়া চলে যাবার পর, একটা রুটি সে বেশ বড় আর ভারি করে বানিয়ে পোড়া পোড়া করে খোলায় খুন্তি দিয়ে উল্টিয়ে পাল্টিয়ে ভেজেছে। এখন সেই আটার রুটি তার নাকে সুঘ্রাণ ছড়ায়। লাল গমের আটা বলেই এইরকম গন্ধ, সাদা রুটির এইরকম লোলুপ গন্ধ কখনও হয় না। এই লাল গম এদের নিজেদের জমিতেই চাষ করা হয় প্রত্যেক বছর। গম তোলা থেকে খাল পাড়ে পশ্চিম বাড়ির মিজানের গম ভাঙানো মেশিনে আটা ভাঙানো পর্যন্ত সব কাজই সে করেছে। মেশিন থেকে যখন গুঁড়া গুঁড়া আটা বার হয় তখনও একটা গরম সুগন্ধ তার অন্তরের ভিতর চারিয়ে বেড়ায়।
লাল আটার রুটির পোড়া পোড়া মায়াবী গন্ধটি তার ভোককে এখন দাউ দাউ করে উসকিয়ে দেয়ার পর সে রুটিটি দলাপাকা করে মুখটা দুই হাঁটুর মাঝখানে নুইয়ে এনে বেশ বড় করে হাঁ করে হাতের আঙুলের চাপে মুখগহ্বরে ঢুকিয়ে দেয়। অন্তরে চিন্তাÑচাচি এক্ষুণি পুষ্কুনির ঘাট থেকে চইলা আইবো। পোলাপানগুলিও আইবো ওজুদ মাওলানা’র কাচারি ঘর থেইক্যা। নিলাজ ক্ষুধার অন্তহীন মন্ত্রণা এবং সেই সঙ্গে কেউ দেখে ফেলার মিশ্রিত ক্রিয়ায় গলাধঃকৃত লাল আটার রুটিখান তখনও সে গিলতে পারে নাই। আকারে বড় আর দলা পাকানো রুটিটি চিবানোর চেষ্টা করেছে, রূপান্তরিত আকৃতি মোটা হয়ে যাওয়ায় বিপত্তি ঘটেছে। এত বড় রুটির দলা তার মুখের ছিদ্রের তুলনায় বেখাপ্পা হওয়ায় আটকে গেছে। দম বন্ধ হয়ে আসার উপক্রমে মার্বেল চোখ দুটি ভয়ানকভাবে বার হয়ে আসলে সে দেখে, তার পিছনেই, সদ্য ধোয়া চকচকে বাসন-কোসন হাতে দাঁড়িয়ে আছেন চাচি!
এ অবস্থায় কী করবে সে বুঝে উঠতে না পেরে অন্তরাত্মায় দিশেহারা। না পারছে চিবিয়ে গিলতে না পারছে ওয়াক করে বার করে দিতে। এমতাবস্থায়, চাচির হঠাৎ আগমনে থতমত খেয়ে সে এখন বেকুব। মুখে আটকে-যাওয়া রুটির চাপে দুই গাল ফুলে বড় বড় সুপারি গোটার মতো হয়ে আছে। যে কোনও সময় ফেটে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। চেহারায় সে এক বিকট কিম্ভূত পরিবর্তন। বক যেমন তার গলার পরিসরের অতিরিক্ত প্রশস্ত মাছ শিকার করে গলা টানা দিয়ে আপ্রাণ বাঁচতে চায়, রফিকের অবস্থাও ঠিক সেরকমই হয়েছে।
অবস্থা বেগতিক দেখে বাড়ির গিন্নি রহিমা বেগমের হাত থেকে সদ্য ধোয়া ঝকঝকে বাসন-কোসন-পাতিল ঝরঝরাইয়া পড়ে যাবার যোগাড়। কোনওমতে সেসব মাটিতে রেখে তিনি বলেন, কী রে! কি হইছে তোর, রফিক, ও রফিক? কী রে, এমন করতেছচ ক্যা ? অবস্থা নাজুক বুঝতে পেরে রহিমা বেগম তার শ্বশুরকে ডাকাডাকি শুরু করলেন।
রফিক কথা কয় না। কথা বার হওয়ার উপায় নাই। বিপদগ্রস্থ বকের সমতুল্য কিংকর্তব্যবিমূঢ় অবস্থায় বার কয়েক গলা টানা দিয়ে শেষ পর্যন্ত রুটির দলাটি উগরে দিয়ে মাথা নিচু করে শ্বাস নেয়ার চেষ্টা করে সে। লজ্জা তাকে গ্রাস করে। সে কোনও কথা বলতে পারে না। এখন তার ভোক উবে গিয়ে সেখানে লজ্জার জমাটবাঁধা একটা গোল্লা পুড়ছে।
হায় হায় রে! তোর ভোক লাগছে ভালো কথা! আস্তা রুটি মুখে দিয়া তো মরতি এখন। এ কথা বলার পর রহিমা বেগম তার শ্বশুরকে পুনরায় ডাকাডাকি শুরু করলেন। আব্বা, ও আব্বা, এট্টু এদিগে আইয়্যেন। রফিকের অবস্থা খারাপ।
কুট্টি হাজী সুর করে তাওয়ারিক শরীফ পড়ছিলেন। পুত্রবধূর ডাকে ছুটে আসলেন। কী গো, কি অইছে বউ?
আব্বা, কিছু অয় নাই। আ¤েœ এট্টু ওয়াপদার বাজারে যান। বটু ডাক্তাররে ডাইক্যা নিয়া আসেন। যান এক্ষুণি যান আব্বা। রফিকের শরীলডা ভালা না। মনে অয় জ্বর আইছে। শ্বশুরকে আসল কথাটা চেপে গেলেন রহিমা বেগম।
একটু আগেই রফিক্ক্যা’র হাতে মিঠাই দিয়া বানানো রঙচা খাইছেন কুট্টি হাজী। তখন রফিককে তিনি টনটনা দেখে গেছেন। দুই মিনিটের মইধ্যে তার কী এমন অইলোÑমনে মনে এই মীমাংসা অনুসন্ধানে চুপ হয়ে আছেন তিনি। কিছুক্ষু মোটা চশমার ভিতর থেকে চোখ দুইটি যথাসম্ভব প্রসারিত করে বিষয়টা বুঝার চেষ্টা করেও কিছুই না বুঝে লাঠিতে ঠুক ঠুক শব্দ তুলে বটু ডাক্তারের খোঁজে ওয়াপদা বাজারের দিকে হাঁটা দিলেন কুট্টি হাজী।
সদ্যকৃত আপন অপকর্মে ভিতরে ভিতরে অনুশোচনার ভার অনুভব করে নিজের মাথাটা এখনও দুই হাঁটুর মাঝখানে গুঁজে রেখেছে রফিক। সে ভাবছে, আনাড়ি পেট আইজ তারে কী শরমের ভেতরই না ফেলল! এখন চাচি’র সামনে এই কালা মুখ সে কেমনে উঁচা করবে। ক্ষুধা তার থোঁতা মুখ ভোঁতা কইরা দিছে। মুখ থেকে বার হয়ে আসা রুটির সেই দলা পড়ে আছে চুলার পাশেই। রুটির কোনও দোষ ছিল না। রফিকের চোখ ভিজে ওঠে । উগরে দেয়া লাল আটার রুটির দিকে চেয়ে সে এখন ভাষাহীন, বোবা। (সমাপ্ত)