প্রকাশ : ১৯ ডিসেম্বর ২০২১, ০০:০০
একটি পতাকা পাবো বলে
একটি পতাকা পাবো বলে, একটি স্বাধীন ভূখ- পাবো বলে
সাড়ে সাত কোটি বাঙালির আশা, মনের ভাষা এক হয়েছিলো।
এক হয়েছিলো সব স্বপ্ন,
একটি স্বাধীন ভূখ-ের স্বপ্ন;
যে স্বপ্ন লক্ষ-কোটি জনতার মনে আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছিলো।
যে আগুন দ্রোহের, চেতনার
বজ্র কঠিন স্ফুলিঙ্গের
দেশমাতৃকার মুক্তির চেতনা।
হাতে হাত, কাঁধে কাঁধ মিলেছিলো
মিলেছিলো মনের সাথে মনের,
মিলেছিলো প্রতিবাদের ভাষা
মিলেছিলো তীক্ষè এক দৃষ্টি।
লক্ষ প্রাণের তাজা রক্ত
ওই পতাকার লালে মিশে গিয়েছিলো অবলীলায়-
যে লাল আজও ওই রক্তের সাক্ষী,
মুক্তির সাক্ষী;
একটি দেশের সাক্ষী।
ওই তর্জনী নির্দেশ, নেতার ভালোবাসা, দেখানো পথ
পিতার সাথে সন্তানের আত্মিক সম্পর্ককে
মুক্তির ভাষায় এক করে দিয়েছিলো,
গানের ভাষা মনে বাসা বেঁধেছিলো-
ওই শাসকের মনে এনেছিলো ত্রাস
পেয়েছিলাম একটি পতাকা।
যে পতাকা হৃদয়ের ভাষা, চেতনার ভাষা
আজও বয়ে বেড়ায়, হৃদয়ের সাথে হৃদয় মেলায়
স্বপ্নচূড়ায় পতপত করে উড়ে;
জানান দেয় সগৌরবে সত্তার, বাঙালি সত্তার, জাতির পিতার স্বপ্নের ভূখ-ের।
যে পতাকা রক্তকণিকার লোহিত কণিকাকে আজও
ন¤্রতায় ধরে রাখে
মুক্তির মন্ত্রে এখনো নেশা ধরায়-
বিশ্বলোকে পরিচয় করিয়ে দেয় সেই মুক্তিকামী জাতিকে
যারা সংগ্রামকে জীবন করে তোলে,
জীবনই যাদের সংগ্রাম।
যারা প্রতিবাদের ভাষায় গান গায়,
যারা স্বপ্ন দেখে শোষণহীন এক পৃথিবীর;
যে স্বপ্ন একটি পতাকার,
একটি লাল-সবুজ সার্বভৌম ভূখ-ের,
যে পতাকা আমাদের সকলের!!!
১৪ ডিসেম্বর, ১৯৭১
হাজার বছর পিছিয়ে দিতে উদ্ধত হয় কালো হাত
যে হাত রক্তে রঞ্জিত
যে হাত পাষাণ, বর্বর
যে হাত জীবনকে নিয়ে যায় আঁধারে।
নিশানা করে তোলে একটি রাত,
১৪ ডিসেম্বর, ১৯৭১
যে রাত পিছিয়ে দেয় হাজার বছর-
যে রাত বাঙালি জাতিকে কান্নায় ভাসায়, বেদনার ভাষায় কথা বলে;
যে রাত আপসহীনতায় আঘাত করে।
আঘাত আসে জাতির সূর্যসন্তানদের ওপর
যাঁরা দেশমাতৃকার মুক্তির দিশারি,
যাঁদের মগজ বুদ্ধিদীপ্ত ভাষার উপমা
যাঁরা আলো ছিলো এই জাতির;
যাঁদের স্বপ্ন ছিলো স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ।
সে মহান মানুষদের বর্বরোচিতভাবে হত্যা করা হয়
নিভিয়ে দেয় জীবনপ্রদীপ, দীপ্ত-ভাস্বর চিন্তায় রক্ত দিয়ে অম্লান হয় যে রাত;
আঘাত আসে রাতের আঁধারে, যে রাত বাঙালির দুঃখবোধের রাত।
যে রাত বাঙালির দুঃস্বপ্নের রাত
যে রাত হাজার জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটানোর রাত,
যে রাত সব আলো নিভিয়ে দিতে চায় আকস্মিক;
আধার রচনা করে।
যে রাত শ্বেতপাথরে নাম লিখিয়ে দেয় মুক্তিকামী বীরসেনানীদের,
মুক্তির পতাকা যাঁদের রক্তে ¯œাত-
বাংলাদেশ যাঁদের জীবন ছিলো,
যাঁদের নাম আজও বুকে ধারণ করে চলছে এই জাতি;
শ্রদ্ধাভরে গভীরচিত্তে
সালাম ওই বীরসেনানীদের।
তুমি যখন কাছে আসো
ক্ষুদীরাম দাস
তুমি যখন কাছে আসো
তখন মনে হয় আকাশ আমায় বৃষ্টি ঢেলে দেবে
তুমি যখন কাছে আসো
তখন মনে হয় ঝর্ণা আমায় শীতল করবে
তুমি যখন কাছে আসো
তখন মনে হয় একগুচ্ছ শান্ত মেঘ আমায় শিশির দেবে
তুমি যখন কাছে আসো
তখন মনে হয় বাগানের বকুলফুল আমায় ছুঁয়ে দিতে এসেছে।
তুমি যখন কাছে আসো
তখন মনে হয় সমস্ত শরীর আমার ¯িœগ্ধ জলকণায় পূর্ণ।
তুমি যখন কাছে আসো
তখন মনে হয় সূর্যের আলোয় আকাশটা নতুন রূপ লাভ করে।
তুমি যখন কাছে আসো
তখন মনে হয় ফুলে ফুলে ভরপুর আমার হৃদয়ের বাগান।
তুমি যখন কাছে আসো
তখন মনে হয় আমি-তুমি-জোনাকিরা খেলছি ছোঁয়াছুঁয়ি খেলা।
তুমি যখন কাছে আসো
তখন মনে হয় দুষ্টু পাখিরা কিচির-মিচির আনন্দে মেতে উঠে।
তুমি যখন কাছে আসো
তখন মনে হয় তোমার দু চোখের পাপড়িতে ঘাম জমেছে।
তুমি যখন কাছে আসো
তখন মনে হয় পায়ের নিচে ঝর্ণার জল, উপরে বিশাল আকাশ।