বুধবার, ২৭ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২২ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জে সংবাদকর্মীর কন্যাকে অপহরণ চেষ্টায় অভিযুক্তদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন সংগঠনের
  •   লক্ষ্মীপুরে মাদকসহ বাবা ও দুই ছেলে আটক
  •   চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশের অভিযানে বিভিন্ন মামলার ৮ আসামী আটক
  •   ফরিদগঞ্জ পাকহানাদার মুক্ত দিবস পালন
  •   যৌথ অভিযানে কচুয়া থানার লুণ্ঠিত পিস্তলের ৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার

প্রকাশ : ২৬ জুন ২০২৩, ০০:০০

বঙ্গবন্ধুর ভাষাশৈলী : কথ্য ও লেখ্যরূপ
পীযূষ কান্তি বড়ুয়া

কোনো ব্যক্তির ব্যক্তিসত্তা নির্মাণ করে মুখ্যত তার ভাষা। ব্যক্তির পারিবারিক সংস্কৃতি, পারিপার্শ্বিকতা, শিক্ষা-এসব কিছু তাকে সমৃদ্ধ করলেও অন্যের কাছে তাকে ভাষাই উপস্থাপন করে যথাসামর্থ্য।ে কাজেই ব্যক্তির মুখের ভাষা এবং লেখার ভাষার অনন্য শৈলী ব্যক্তিচরিত্র অধ্যয়নে অতীব জরুরি। ভাষার ব্যবহারের মাধ্যমে যেমন প্রকাশ পায় তার শেকড়লগ্নতা ও মৃত্তিকামগ্নতা, তেমনি ব্যবহৃত ভাষা দিয়েই আমরা তার নম্রতা, ভদ্রতা, মানবিকতা, সাহসিকতা প্রভৃতি যাচাই করতে পারি। ব্যক্তির ভেতরের মানুষটাকে প্রকট করে তোলে তার ব্যবহৃত শব্দমালা, যার ললিত বাণীতেই ফুটে উঠে সুর আর কর্কশ বাণী ও বচনে আমরা পাই অসুরের দেখা। ব্যক্তির সাজ-পোশাক, আহার-বিহারে আর্থনীতিক শক্তি ও সমৃদ্ধির প্রকাশ ঘটলেও ব্যক্তির ভাষায় শিক্ষা ছাড়াও তার অন্তরের শুভময়তার পরিস্ফুটন হয়। ভাষা কোনো ব্যক্তির ব্যক্তিত্বের পরিমাপক। ভাষার উপযুক্ত ব্যবহার তার দেশপ্রেমকেও বিজ্ঞাপিত করে। ভাষা কেবল ভাব বিনিময়েরই বাহন নয়, ভাষা ব্যক্তির অভ্যন্তরীণ সুন্দর-অসুন্দরকে ক্যানভাসে রূপায়িত করে তোলারও এক অনন্য হাতিয়ার। ব্যক্তির ব্যবহৃত ভাষার অধ্যয়নই আমাদের জানিয়ে দেয় তার দূরদর্শিতা ও নেতৃত্বের শক্তি এবং প্রাজ্ঞতাকে। চর্যাপদের ভাষার অধ্যয়ন যেমন আমাদের তৎকালীন মানুষের প্রজ্ঞাকে প্রজ্ঞাপিত করে, তেমনি এর মাধ্যমে আমরা তাদের আধ্যাত্মিক কোমলতাকেও স্পর্শ করতে পারি। ভাষার ব্যবহারে যিনি সত্যিকারের এক নান্দনিক শিল্পী, তিনি আমাদের সারাবিশ্বের একমাত্র রাজনীতির কবি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাঁর ভাষার ব্যবহারে নেতৃত্ব যেমন প্রকট ছিল, তেমনি ছিল মানবিকতার কোমলতা। একদিকে জন্মণ্ডজনপদের সোঁদা মাটির গন্ধমাখা শব্দের ব্যবহার, আর অন্যদিকে অবিশ্রান্ত পড়ুয়া এক পরিশীলিত মানুষের ভাষার ব্যঞ্জনা, এ দুয়ের সমন্বয়ে মুজিব নির্মাণ করে নিতে পেরেছিলেন নিজস্ব ভাষাভঙ্গি।

মুজিবের মুখের ভাষা নির্মিত হয় তাঁর অনলস পাঠাভ্যাস, ব্রতচারী আন্দোলনে সম্পৃক্ততা, তাঁর শিক্ষকবৃন্দের প্রতি কিংবদন্তিসম শ্রদ্ধা এবং সাহিত্যের প্রতি অবিচল অনুরাগের পরিপূরক সমন্বয়ে। তিনি কেবল মাতৃভাষা আন্দোলনে রাজপথে লড়াই করেননি, জেলের ভেতরে থেকেও তিনি অনশনে নিজেকে মৃত্যুমুখী করে তুলেছিলেন। ইংরেজিতে বিশ্ব গণমাধ্যমগুলোতে তিনি সাক্ষাৎকার দিলেও জাতিসংঘে এবং চীনের শান্তি সম্মেলনের মতো বৃহৎ পরিসরে তিনি পরিকল্পিতভাবেই বাংলায় ভাষণ প্রদান করেছেন, যাতে ভাষা হিসেবে বাংলার মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হয়। সর্বস্তরে বাংলা ভাষা প্রচলনে তাঁর গৃহীত পদক্ষেপসমূহ বাংলা ভাষার ইতিহাসে অমর। তিনিই একমাত্র রাষ্ট্রপ্রধান যিনি সংবিধানে বাংলাভাষাকে এককভাবে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেন। ভাষার প্রতি যাঁর এতো দরদ, তাঁর মুখের ও কলমের ভাষা অবশ্যই অনুকরণীয় দৃষ্টান্তের হবে, সেকথা বলাই বাহুল্য। শৈশবে মাসিক বসুমতী, সওগাত, আনন্দবাজার, মোসলেম ভারত ইত্যাদি পত্রিকা পাঠ করে মুজিব নির্মাণ করেন তাঁর পাঠ-অভিরুচি। সাথে তাঁকে উস্কে দেয় ‘বিশ্বমানব হবি যদি/শাশ্বত বাঙালি হ’, এই আহ্বানের পুরোধা গুরুসদয় দত্ত। এর সাথে যুক্ত হলো দক্ষিণাঞ্চলের মাটিমাখা ভাষা। তাঁর সাত মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে যে অমর পংক্তি তিনি রচনা করেন, ‘বাংলার মানুষকে আর দাবায়া রাখতে পারবা না’, এর মধ্যেই গন্ধ পাওয়া যায় তাঁর দক্ষিণ বাংলার নদীসিক্ত কোমল পলিমাটির। তিনি যখন চাঁদপুরে এসে বলেন, ‘কি চাঁনপুরের ভায়েরা, তোমরা কি চোর-বাটপারদের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে পারো না,’ তখন বুঝতে আর বাকি থাকে না, মুজিবের ভাষা মৃত্তিকালগ্ন মানুষের ভাষা। কিন্তু এই মুজিবই যখন বাহাত্তরে প্রত্যাবর্তনের পর বলেন, ‘দুর্নীতি আমার কৃষক করে না, দুর্নীতি আমার শ্রমিক করে না, দুর্নীতি করে শিক্ষিত মানুষেরা’, তখন তাঁর ভাষা আর পলিমাটির কোমলতা লালন করে না, হয়ে উঠে আগ্নেয় শিলার মতোই কঠিন। তাঁর এই হুঁশিয়ারি ভাষা আমাদের কোমল পিতা নয়, কঠিন শাসকের শাসনকে মনে করিয়ে দেয়। তিনি যখন আমলাদের সেবক হতে বলেন, তখন তাঁর ভাষার ব্যবহারে তিনি হয়ে উঠেন অতি ধার তরোয়ালের মতোই তীক্ষè। লন্ডন হয়ে দিল্লিতে নেমে তিনি যে সম্বোধনে পালাম বিমান বন্দরে অপেক্ষমান জনতাকে সম্বোধন করলেন, তাতে এক কৃতজ্ঞ প্রতিবেশীর ন¤্র সৌজন্য প্রকাশিত হয়ে পড়ে। তিনি যখন বলেন, ‘আমার এই যাত্রা বাস্তবায়নের প্রচেষ্টায় আপনারা অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন, করেছেন বীরোচিত আত্মত্যাগ,’ তখন মুজিবকে দেখতে আসা স্বজনদের শোণিতপ্রবাহে বয়ে যায় প্রশান্তির পেলব ধারা।

মুজিবের ভাষা নির্মাণে রবীন্দ্রনাথের কবিতারা যেভাবে ফল্গুধারার মতো পুষ্টি যুগিয়েছে, নজরুলের কবিতারা তাঁকে সাম্যের যে পাঠ শিখিয়েছে, তাতে মুজিব অনায়াসেই বলতে পারেন, ' বিশ্ব আজ দুই ভাগে বিভক্ত, শোষক আর শোষিত। আমি শোষিতের পক্ষে।' রবীন্দ্র-নজরুল অন্তরে ধারণ করে মুজিব মানবিক হয়ে উঠেন তাঁর বচনে-ভাষণে। তাঁর সংবেদী মন তাই সঙ্গত কারণেই বলে উঠে, ‘বালুর দেশের মানুষের মনও বালুর মতো উড়ে বেড়ায়।' মুজিবের ভেতরে যে একজন উঁচুমানের সাহিত্যিক বিরাজ করেন, তা তাঁর তাজমহলের বর্ণনা, লাহোরের ভূ-প্রকৃতির বর্ণনা হতেই টের পাওয়া যায়। তিনি যখন হলদে পাখির বর্ণনা দেন কারাগারের রোজনামচায়, তখন মনে হয় কোনো এক কথাসাহিত্যিক তাঁর উপন্যাসের সূচনাটুকু করলেন। মুজিবের ভাষাকে দৃঢ়তা দিয়েছে বার্ট্রান্ড রাসেলের উচ্চমানের প্রবন্ধ, রিডার্স ডাইজেস্টের কলাম আর তাঁর বাঙালি জাতীয়তাবাদের অনির্বাণ চেতনা। আলবেরুনির (কিতাবুল হিন্দ) ভারততত্ত্ব তাঁর চিন্তার প্রসারতাকে বাড়িয়ে দিয়েছে। ফলে তাঁর ভাষায় এসেছে সমুদ্রের উদারতা। বন্ধুবর শহীদুল্লাহ্ কায়সারের 'সংশপ্তক' কিংবা এমিল জোলার ‘তেরেসা রেকুইন’ জাতীয় উপন্যাস তাঁকে যুগিয়েছে জীবনের মানবীয় টানাপোড়েনের ভাষা। ফলে তিনি যখন বলেন কোনো জেলখাটা আসামির কথা, তখন তারা আর আসামি থাকে না, তারা হয়ে যায় এক একজন আর্ত মানুষ, যাদের জন্যে পাঠকের মন হয়ে যায় বেদনায় বিগলিত কোমল।

বেশকিছু নতুন পরিভাষা আমরা যেমন মুজিবের কাছ থেকে পাই, তেমনি জানতে পারি কিছু বিভিন্ন অঞ্চলের আঞ্চলিক প্রকাশভঙ্গি। দক্ষিণাঞ্চলের দাওয়ালদের কথা আমরা মুজিবের লেখা থেকেই জানতে পারি, যারা নিজ এলাকা ছেড়ে দূর-দূরান্তে গিয়ে শ্রম বিনিয়োগ করে জমির ধান কেটে দেয় আর নিজেরা কর্তিত ধানের ভাগ নিয়ে আসে নৌকায় করে। দাওয়ালদের তিনি খুব সহানুভূতি নিয়ে তাঁর লেখায় তুলে ধরেছেন, যা আমাদের সামনে মুজিবের দীনদরদী ব্যক্তিসত্তাকে উন্মোচিত করেছে। তিনি গানের অর্থ না বুঝেও শুধু গায়কীর কারণে কাওয়ালদের নিজের পকেট খালি করে অর্থপুরস্কার দিয়ে আসেন এবং তাঁর এই কর্মকাণ্ড থেকে এটাই পরিষ্কার হয়ে যায়, মুজিব ভাষার ব্যবহারে অকপট ছিলেন। তিনি যা বলতে চাইতেন, তা সরাসরি বলতে পারতেন। মুজিবীয় ভাষায় গল্প বলার দক্ষতা অপ্রতিম। তিনি ছোট ছোট বিষয়গুলোকেও তাঁর ভাষাশৈলীতে আকর্ষণীয় করে তুলতেন। মুজিবের মুখে ইতিহাস জীবন্ত হয়ে উঠে। তিনি তাঁর ভাষণে-বচনে ইতিহাসকে এমনভাবে আত্মস্থ করে নিতেন, শুনলেই মনে হতো, মুজিব নিজেই নিজের কথা বলছেন। তিনি তাঁর ভাষায় খুব সহজেই কিছু কিছু চিকিৎসা বিজ্ঞান ও স্বাস্থ্যবিজ্ঞানের বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন, যা পাঠে মনে হয়, চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষা তাঁর যথাযথভাবেই আত্মস্থ হয়ে গেছে। মুজিবের লেখার ভাষা প্রগতিময়, কুসংস্কার বর্জিত এবং শক্তি সঞ্চারী। তিনি ভাষার মধ্য দিয়েই আমাদের স্বপ্ন দেখিয়েছেন এবং ভাষার মধ্য দিয়েই আমাদের শোণিতপ্রবাহে চেতনার সঞ্চার করেছেন।

একজন নেতার ভাষা কর্তৃত্ববাদী ভাষা হতে পারে না। নেতার ভাষায় খুব বেশি কোমলতাও সর্বদা বিরাজ করে না। নেতার ভাষায় আন্তরিকতা থাকে, মমতা থাকে, থাকে দৃঢ়তাও। শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর বক্তৃতার ভাষায় জনগণকে ধারণ করতেন। তিনি সর্বদাই শুরু করতেন, ‘ভায়েরা আমার’ বলে। এতে করে শ্রোতৃমণ্ডলি নিজেদের নেতার নিকটজন মনে করে। অর্থাৎ মুজিব তাঁর ভাষার শৈলীতে কর্মীদের প্রাণের গভীরে প্রবেশ করতে পারতেন। তাঁর ভাষার দৃঢ়তায় তিনি যখন বলেন, ‘রক্ত যখন দিয়েছি রক্ত আরো দেবো, তবু বাংলার মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাল্লাহ্’, তখন কর্মীর কাছে এ কেবল স্তোকবাক্য হয়েই থাকে না, হয়ে যায় প্রত্যয়দীপ্ত প্রতিজ্ঞা। মুজিবের ভাষা রসবোধে টইটম্বুর। বিন্দুমাত্র ব্যক্তিসত্তার অবনমন না ঘটিয়েও তিনি অবলীলায় রসিকতায় হাসিয়ে তুলতে পারেন শ্রোতাকে। তিনি যখন 'বিপদ, আপদ আর মুসিবদ' নিয়ে রসবোধে মেতে উঠেন, সে মুহূর্তে তাঁর সাথে সাথে হেসে গড়াগড়ি যায় সবাই। তাঁর ভাষায় তখন আর কাঠিন্যের আগল থাকে না, জমে যায় অন্তরের মজলিশ। মুজিব তাঁর ভাষা শৈলীকে ক্যাচিং ডায়লগের মতোও ব্যবহার করতে সিদ্ধহস্ত ছিলেন। এতে তাঁর কাজ হয়ে যেত সহজে ও স্বচ্ছন্দে। মোশতাককে রুই মাছের মুড়ো খেতে দিয়ে মুজিব বলেছিলেন, ‘তুই তো সবসময় আমার মাথা খাস্, নে এই মাছের মাথাটা তুই খা।’ মুজিবের এই কথায় এটুকু বুঝতে অসুবিধা হয় না, তাঁর ভাষা যেমন উয়িট সমৃদ্ধ, তেমনি অর্থদ্যোতকও বটে।

মুজিবের ভাষায় প্রমিত ভাষার পরিমিত ব্যবহারই শুধু ছিল না, বরং তাতে উপচে পড়তো উপযুক্ত বাগধারার মাধ্যমে আলঙ্কারিক নান্দনিকতা, সঠিক প্রবাদণ্ডপ্রবচনের প্রাজ্ঞতা। তাঁর লেখায় 'ভাতে মারব পানিতে মারব, শুভঙ্করীর ফাঁকি, বানরের হাতে শাবল, উপরের হুকুম, ঝাড়ু মারা, ভদ্রলোকের কিল খেয়ে কিল হজম করতে হয়, বার বার ঘুঘু তুমি খেয়ে যাও ধান, রতনে রতন চেনে, যেই না মাথার চুল তার আবার লাল ফিতা, পড়েছি পাঠানের সাথে খানা খেতে হবে সাথে, সাগরে শয়ন যার শিশিরে কী ভয় তার, অন্যের জন্য গর্ত করলে, নিজেই সেই গর্তে পড়ে মরতে হয়, যে মরতে শিখেছে, তাকে কেউ দমাতে পারে না, চোরা নাহি শোনে ধর্মের কাহিনী, ছেঁড়া কাপড়ের মতো ফেলে দেয়া, পাপ কোনোদিন চাপা থাকে না, কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলা ইত্যাদিসহ আরো অসংখ্য বাগধারা ও প্রবাদণ্ডপ্রবচন স্থান পেয়েছে। এইসব বাগধারা ও প্রবাদণ্ডপ্রবচন হতে এটা বুঝা যায়, ভাষার ব্যবহার ও ভাষার শৈলীতে শেখ মুজিব একজন অসাধারণ সিদ্ধহস্ত ব্যক্তি ছিলেন। তাঁর বচনে ও ভাষণে যে বাগধারা, প্রবাদণ্ডপ্রবচনগুলো স্থান পেয়েছে, সেগুলোর বৈচিত্র্যময়তা এবং শক্তিমত্তা অবলোকন করে আমরা বলতে পারি, মুজিবের মুখের ও কলমের ভাষা অত্যন্ত সমৃদ্ধ ও নান্দনিকতা সম্পন্ন। মুজিবীয় ভাষাশৈলীতে পল্লির সারল্য যেমন আছে, তেমনি আছে ‘যেই না মাথার চুল, তার আবার লালফিতা’-এই প্রবাদের মতো শ্লেষ। মুজিবীয় ভাষাশৈলী পাণ্ডিত্য দেখায় না, প্রশান্তি আনে প্রাণের গহীনে। মুজিবের নিজের কথাই কখনো কখনো প্রবচনীয় হয়ে যায় বা প্রবাদের যোগ্যতা অর্জন করে নেয়। চীনে গিয়ে মুজিব যখন বলেন, ‘আমরা পানির দেশের মানুষ’, তখন মনে হয় এটাই একটা মিথ, এটাই একটা প্রবচন। মুজিবের মুখের ভাষা যেন আমাদের প্রাণের ভাষা, এ ভাষায় কৃত্রিমতা নেই। তিনি যখন কাউকে বলেন, ‘তোর নাম কী’ কিংবা ‘কি রে পাগল, কেমন আছিস্’, তখন মনে হয় কোনো নেতা নয়, আমাদের কাছের স্বজনই কথা বলছেন। এই মুজিবই তাঁর মুখের কথা দিয়ে মন জয় করে নিয়েছেন পাহারাদার পুলিশদের, যারা তাঁকে বন্দি করে নিতে আসতো। মুজিবের লেখার ভাষায় একদিকে ছিল সান্ত¡নার প্রলেপ আর অন্যদিকে বেজে উঠত জাগরণের ডাক। মুজিব তাই মুখের ও লেখার ভাষাশৈলীতে আগাগোড়াই এক অনন্য জাদুকর, যাঁর ডাক শুনলেই মানুষ ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়ে সংগ্রামের ময়দানে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়