প্রকাশ : ১১ জানুয়ারি ২০২২, ০০:০০
এক.
লোকমানের কাজ খুন করা। মানুষ খুন। কাজটা তার পেশা ছিলো একসময়, এখন নেশা হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিদিনই কাউকে না কাউকে খুন করার জন্যে তার হাত নিশপিশ করে। কিন্তু প্রতিদিন সে খুন করে না। প্রতি মাসের শেষ সোমবার কেবল সেই কাক্সিক্ষত দিন আসে। কখনও কখনও এমন বছর গেছে, সে সাত-আটটি খুন করেছে। আবার কোনো কোনো বছর কেবল দু’-একজন তার হাতে অকালে প্রাণ হারায়। যারা প্রাণ হারায় তাদের প্রতি লোকমানের বিন্দুমাত্র মায়া হয় না। বরং একজনকে পরপারে পাঠাতে পারলে সে এক ধরনের আনন্দ পায়। আনন্দের ব্যাপ্তি এতই বৃহৎ হয়, সেদিন রাতে স্ত্রীর সাথে বারবার সে সহবাস করে। গান গায়। গরু গোশত এনে খিচুড়ি রান্না করতে বলে স্ত্রীকে।
লোকমানের স্ত্রী তাহমিনা হঠাৎ হঠাৎ দিশেহারা হয়। কোনো কূলকিনারা খুঁজে পায় না। বুঝতে পারে না তার স্বামী এত খুশি কেন। কখনো সখনো যদি জিগ্যেস করে, তবে লোকমান খটখট করে হাসে। যদিও উত্তর দেয় না। যদিও কখনো দেয়, বলে, ‘তোর জন্যে সতীন আনবো, আর একখান নিকা করবো আমি!’ তাহমিনা আর এর পরে কথা বাড়ায় না। সেও হাসে। দশ বছর সংসার করার পরও লোকমানকে তার অপরিচিত ঠেকে। মনে হয়, তাহমিনা তাকে এই প্রথম দেখছে। স্বামীর স্বভাব চরিত্র সে জানে না। অন্য আটদশজন স্ত্রীর মতো সে এসব ব্যাপার তলিয়ে দেখতে যায় না। ফলে লোকমানের খুনে স্বভাবের কথা তাহমিনা কখনো আঁচ করতে পারেনি।
দুই.
লোকমান অন্য কোনো কাজ করে না। না চাকুরি, না ব্যবসা-বাণিজ্য। লোকমান সবাইকে বলে, বাপের জমানো টেকা আছে। অনেক টেকা। কথাটা মিথ্যে নয়। তবু লোকমানের কাজ মাসে একটা খুন করা। অনেকেই আছে, ভিন্ন জগতের মানুষ, যারা নারী, মদ, রক্ত নিয়ে কারবার করে, কেবল তারাই লোকমানকে ভালো করে চেনে। তারাই তাকে খুনখারাবির কাজ দেয়। টাকার বান্ডেল দিয়ে বলে কাকে খুন করতে হবে। সে মোতাবেক লোকমান তাদের সরিয়ে দেয়। তবে মাসে একটার বেশি খুন সে করে না। যদিও প্রতিটি দিনই তার হাত রক্তের জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে, তবুও।
অপরাধ জগতে লোকমানের কুখ্যাতি আছে। তাকে নিয়ে নানা গুঞ্জন রূপকথার মতো। লোকমান কোনোকালেই সেদিকে কান দেয়নি। বরং গোপনে সে নিজের কাজ নিজে করে গেছে। এমন নিরুত্তর স্বভাবের কারণে লোকমানকে নিয়ে গুঞ্জন একটুও কমেনি। বরং বেড়েছে। এ নিয়ে সে গর্ববোধ যে করে না, তা নয়। সে হাসে। নিজের কাছে ভালো লাগে। খুন করা যে একটা ঘৃণ্য অপরাধ এ কথা তার কখনো মনের ধারেকাছে আসেনি। বরং মাঝে মাঝে মানুষের শত্রুতার ধরণ দেখলে তার খটখট হাসির রেশ আরও ছড়িয়ে যায়। কখনো এমন হয়েছে, মা চাচ্ছেন তার ছেলে দুনিয়াছাড়া হোক। আবার কখনো মেয়ে চাচ্ছে তার বাবাকে সরিয়ে দিতে। তখন লোকমানের আর নিজেকে খুনি বলে মনে হয় না। মনে হয় সে কোনো নাটকের পার্ট করছে। সে একটা চরিত্র মাত্র। এই চরিত্র হতে গিয়ে লোকমানের টাকা-পয়সা খারাপ জমেনি। এমনও দিন গেছে, এক খুনের জন্যে সে দশ লাখ টাকা পেয়েছে। আবার দশ হাজার টাকাও পেয়েছে। জীবনের মূল্য দশ হাজার টাকা মাত্র! এখন লোকমান টাকার দিকে তাকায় না। টাকা ঢের আছে। তার তিন প্রজন্ম চলেফেরে খেতে পারবে।
লোকমান কেবল খুনের দিকে তাকায়। টাকা না দিলেও এখন হয়তো সে খুন করতে দ্বিধা করবে না। কারণ, লোকমান ভাবে, খুন করা বন্ধ করলে সে নিজেই মরে যাবে। এই ধারণা যে মানসিক, সে মানসিক রোগী-লোকমান নিজেই বুঝতে পারে। তারপরও ডাক্তারের কাছে সে যেতে পারে না। ডাক্তারকে গিয়ে কী বলবে? ডাক্তার সাহেব আমাকে বাঁচান। আমার খুন করার রোগ হয়েছে। খুন না করতে পারলে মনে হয় আমি বাঁচবো না। আমার চিকিৎসা করুন। ডাক্তারের কাছে যাবার কথা ভাবলে লোকমানের হাসি আরও বেড়ে যায়। ডাক্তার হয়তো এমন কথা শুনে চিকিৎসা রেখে আগে পুলিশকে কল করবে। বলবে, এ-ই লোকটা ভয়ংকর কিলার! একে নিয়ে যান। হা-হা। বিছানায় শুয়ে শুয়ে লোকমান এসব ভাবে আর হাসে। মনে মনে হাসে। তারপর হঠাৎ তার মনে পড়ে আজ তাহমিনা ঘরে নেই। মনে মনে হাসবে কেন? লোকমান জোরে খটখট করে হাসতে থাকে। অবশ্য তার হাসি শোনার জন্যে সেখানে কেউ থাকে না।
তিন.
তাহমিনা তার মায়ের বাড়িতে গেছে। লোকমান ঠিক করেছে আজ যেহেতু তাহমিনা নেই, তাই সে ঘরেই ঘুমাবে, খাবে-দাবে, আবার ঘুমাবে, টিভি দেখবে। নিজের মনে হাসবে। অবশ্য তার মনটা খুঁতখুঁত করছে। তাহমিনাকে সে অনেক ভালোবাসে। পৃথিবীতে লোকমানের কেবল এই একটি জিনিসের উপরই মোহ আছে। সেটা তাহমিনা। কী ভেবে লোকমান তাহমিনার মুঠোফোনে কল দেয়। ফোনটা বাজতে বাজতে একসময় থেমে যায়। এরকম কয়েকবার হয়। কেউ ফোন তোলে না। লোকমানের বুক ধুকপুক ধুকপুক করে। তাহমিনা কল ধরছে না কেন। পথে কি কোনো সমস্যা হলো? কোনো অসুবিধা? গাড়ি অ্যাক্সিডেন্ট করলো কি-না? লোকমান শোয়া থেকে উঠে বসে। তাড়াহুড়া করে একটা শার্ট গায়ে দিয়ে সে বেরিয়ে পড়ে। গন্তব্য তাহমিনার মায়ের বাড়ি।
সারাটা পথ লোকমান ঘামে। পথের আর শেষ হয় না। উত্তপ্ত দুপুর শ্বশুরবাড়ির দূরত্ব আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। যখন লোকমান শ্বশুরবাড়িতে পৌঁছলো তখন সেখানে কোনো ভিড় ছিলো না। ঘরে ঢুকে সে শাশুড়িকে সালাম দেয়। পাশেই তাহমিনা বসা। লোকমানকে দেখে সে অবাক হয়। শাশুড়িও অবাক। বিস্ময় গোপন না করেই তিনি বলেন, বসো জামাই। বসো বসো। লোকমান বসার ধারধারি যায় না। তাহমিনাকে বলে, তোর ফোন কই? এতবার কল দিছি...। স্বামীর জলদগম্ভীর কণ্ঠ শুনে তাহমিনা একটু থতমত খায়। বলে, ‘আওনের সোময় মোবাইলটা হারায়া গেছে।’ তাহমিনার কথাতে লোকমান কোন মনোযোগ দেয় না। মনে মনে সে স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ে। মোবাইল হারিয়েছে, ব্যাপার না। কিন্তু তাহমিনার যে কিছু হয়নিÑ এ-ই ঢের। এসব ভাবতে ভাবতে লোকমান আবার নিজের বাড়ির পথ ধরে। শাশুড়ি বলে, জামাই, থাকবা না?...একটু জিরিয়ে যাইতা? লোকমান একবার তাহমিনার দিকে, আরেকবার শাশুড়ির দিকে তাকায়। কিছু বলে না। হাঁটতে থাকে। সামনে একটা রিকশা পেলে উঠে যাবে। মাঝপথে গিয়ে লোকমান আবার খটখট করে হাসে। খুন করতে গিয়ে যার একবারও হাত কাঁপেনি, কারো জন্যে কোনো মমতা বা দুঃখবোধ হয়নি, অথচ সে আজ স্ত্রী ঠিকঠাক মতো পৌঁছতে পারলো কিনা জানতে এতোটা পথ উদ্বিগ্ন হয়ে ছুটে এসেছে। রিকশাওয়ালা লোকমানের হাসির শব্দে রিকশার গতি মন্থর করে। বলে ভাই, হাসতাছেন ক্যান? লোকমান বলে, মনের দুঃখে হাসতাছি। দুঃখে...। রিকশা চলতে থাকে।
চার.
লোকমানের আজ আনন্দের দিন। আজ সোমবার। মাসের শেষ সোমবার। কিন্তু লোকমান যেন সেই আনন্দের ভেতর নেই। খুন করতে গিয়ে সে কখনো ধরা পড়েনি। কেউ কখনো তাকে সন্দেহ করেনি। পুলিশের খাতায় তার নামও নেই। তবু বারবার তার মনে হচ্ছে আজকের খুন করতে গিয়ে সে হয়তো ধরা পড়বে। পুলিশ তাকে নিয়ে যাবে থানায়। তারপর ফাঁসিতে ঝোলাবে। পুলিশ কিছু জানতে পারবে এমন ভয় লোকমানের মনে ছিলো না। কেননা, তার কাজ সবসময়ই নিখুঁত। সেটা একটা বাচ্চাকে মারতে গেলেও। বাচ্চার কথা মনে পড়তেই লোকমানের মনে পড়ে তার কোনো ছেলেমেয়ে নাই। ডাক্তার অবশ্য বলেছে, বাচ্চা না হবার পেছনে লোকমানই দায়ী। শুয়ে শুয়ে সে ভাবে, তাহমিনাও অদ্ভুত মানুষ। কখনো স্ত্রীকে বাচ্চা হওয়া, না হওয়া নিয়ে আফসোস করতে দেখেনি সে। এ সংক্রান্ত কোনো কথা সে একদিনও তোলে না। এসব ভাবতে ভাবতেই লোকমানের দৃষ্টি রান্নাঘরের দিকে যায়। তাহমিনা রান্নাঘরে খিচুড়ি রাঁধছে। ফোনে আবার কার সাথে যেন কথা বলছে। কী বলছে ঘর থেকে সেটা অবশ্য লোকমান শুনতে পায় না। হয়তো মা ফোন করেছে। নয়তো ভাই, বা অন্য কেউ...। কী মনে হতেই লোকমান নিঃশব্দে উঠে রান্নাঘরের দিকে যায়। তাহমিনা ঘুণাক্ষরেও কিছু টের পায় না। সে চুলার আগুনের আঁচটা একটু কমিয়ে দিতে দিতে মোবাইলে কথা বলতেই থাকে। কার সাথে যেন সে তুমি তুমি করে কথা বলছে। লোকমান অবাক হয়। কী সুন্দর মোলায়েম কণ্ঠে তাহমিনা কথা বলছে। অদ্ভুত, এমন কোমল করে তো তাহমিনাকে কখনো সে পায়নি। লোকমান কানখাড়া করে। তাহমিনা হাসতে থাকে। ওপাশের কাউকে বলে, ‘না, না, আজ রাতে না। তুমি কাল এসো। আজ রাতে উনি বাড়িতে থাকবেন। একবার যদি... জানতে পারে... খুন করে ফেলবেন।’ লোকমানের চোখ বড় বড় হয়। তাহমিনা শহুরে শুদ্ধ ভাষায় কাকে কী বলছে...! আরও দু-চার কথা শোনার পর লোকমান ধীরে ধীরে রান্নাঘর থেকে সরে আসে। আবার নিঃশব্দে গিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ে। তাহমিনা শেষ পর্যন্ত পরকীয়ায় মত্ত হয়েছে? অথচ, তাহমিনাকে সে কত বিশ্বাস করতো। ছি! ছি! এই বয়সে এসে...।
ভীষণ রাগ চেপে বসে লোকমানের। হাত নিশপিশ করতে থাকে। তবু তাহমিনা ঘরে এলে সে হাসিমুখে বলে, কী রান্না হইলো তোর। স্ত্রী হাসতে হাসতে বলে, হইছে গো হইছে। দ্রুত খেয়ে লোকমান হাসিমুখে ঘর থেকে বের হয়ে যায়। আজ তার খুন করার দিন। তাকে খুন করতে যেতে হবে। সে ছুরিটা নিয়ে হাঁটতে থাকে। বাসস্ট্যান্ডে এসে আগের মতোই বাসে উঠে। ষাট বছরের এক বৃদ্ধকে খুন করতে হবে। কাছ থেকে দেখে বুঝার উপায় নেই লোকমান খুন করতে যাচ্ছে, অথবা কেউ বুঝবে না তাহমিনার বিশ্বাসঘাতকতায় তার বুকটা পুড়ে খাক হয়ে যাচ্ছে। লোকমানের মুখ নির্ভার দেখায়। বাস চলতে থাকে...
পাঁচ.
এই প্রথম সে খুন না করে বাড়ি ফিরলো। বৃদ্ধকে সে পেয়েছিলো কায়দা মতোই। এশার নামাজ পড়ে বৃদ্ধ একা একা বাড়ি যাচ্ছিল। লোকমান তার পিছু ধরে। রাস্তায় মানুষজন নেই। সে ইচ্ছে করলে বৃদ্ধের বুকে আমূল ছুরিটা ঢুকিয়ে দিতে পারতো। কিন্তু কিছুই করেনি। হাসিমুখে বৃদ্ধকে সালাম দিয়ে বলেছিলো, ‘মুরব্বি নামাজ পইড়া আসছেন বুঝি। সাবধানে যাইয়েন। দিনকাল ভালা না।’
ঘরে ফিরতে ফিরতে অনেক রাত হয়ে গেল। আর সব মাসের মতো ঘরে এসে লোকমান রাতের খাবার খায়। তারপর একসময় ঘরের বাতিটা নিভিয়ে তাহমিনার উপর চড়াও হয় সে। রমণে মজে গিয়েও লোকমান যেন আজ রমণের বাইরে। বারবার সে ভাবছিলো ফোনালাপের কথা। কে তাহমিনার সেই প্রেমিক? কে এই ধারালো ছুরি মারলো লোকমানের বুকে?
পরদিন বেলা করে লোকমান ঘুম থেকে উঠে। তার মনে পড়ে আজ রাতে তাহমিনার প্রেমিক আসবে। দিনটা কোনোমতে ঘরে কাটিয়ে সন্ধ্যা হলে লোকমান আর দিনের মতো বেরিয়ে পড়ে। দোকানে যাবে। মানুষজনের সাথে আড্ডা দিবে। তাস পিটাবে। তারপর রাত করে ঘরে ফিরবে। এমনটাই প্রতিদিনের রুটিন। কিন্তু আজ সন্ধ্যায় বের হয়েও লোকমান আবার গোপনে ফিরে আসে। সে দোকানে যায় না। অন্ধকারের ভেতর ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে ঘরের দক্ষিণ কোণে। এখান থেকে ঘরের দরোজা স্পষ্ট দেখা যায়। তাহমিনার প্রেমিক যদি ঘরে ঢুকে তাহলে লোকমান তাকে দেখতে পাবে। রাত বাড়ে। মশা কামড়ায়। দূরে একটা কুকুর ডেকে ওঠে। কিন্তু লোকমান রা করে না। স্থির দাঁড়িয়ে থাকে। যদিও সে মনে মনে প্রার্থনা করে, আল্লাহ, কেউ যাতে না আসে। কেউ যাতে না আসে। তাহমিনার উপর সে বিশ্বাস ঠিক রাখতে চায়। তাই এমন প্রার্থনা। তাহমিনা এরই মধ্যে কয়েকবার ঘর-বাহির হয়েছে। কিন্তু লোকমানকে দেখেনি। ঘণ্টাখানেক পর একটা ছায়া ঘরের দরোজায় এসে পড়ে। লোকটা দরোজায় দুটো টোকা দেয়। মুহূর্তেই দরোজা খুলে যায়। ঘরের আলো পড়ে লোকটার মুখে। এক সেকেন্ডের মধ্যে ঘরে ঢুকে গেলেও লোকটাকে চিনতে লোকমানের অসুবিধা হয় না। শেষ পর্যন্ত ফজলু মাস্টার! লোকমান টের পায় ঘরের লাইট বন্ধ হয়ে গেছে। ঘরের ভেতরকার দৃশ্যের কথা ভেবে লোকমান ঘামতে থাকে। ভেতরটা চিনচিন করছে। গলাকাটা গরুর মতো সে দপাতে দপাতে দোকানের দিকে রওনা হয়। তারপর চা খায়। অন্যদের খাওয়ায়। তাস পেটায়...। রাত বাড়ে। আরও কিছুক্ষণ পর অন্যসব দিনের মতো সে ঘরের পথ ধরে...।
ছয়.
একটা মাস কেটে যায়। তাহমিনা আগের মতো আছে। লোকমানও। সেদিনের পর আরও ক’দিন ফজলু মাস্টার এসেছিলো। লোকমান কেবল পাহারা দিয়ে গেছে। কিছু বলেনি কাউকে। স্ত্রীকেও কিছু টের পেতে দেয়নি। বসে বসে মাসের শেষ সোমবারের প্রতীক্ষা করে লোকমান। কাক্সিক্ষত দিনটা এলে লোকমান ছুরি নিয়ে বেরিয়ে পড়ে। কিন্তু সে কাউকেই মারে না। ছুরিসমেতই ফিরে আসে ঘরে। তাহমিনা তাকে খিচুড়ি বেড়ে দেয়। রাতটা আহ্লাদে কাটে। কিন্তু পরদিন গ্রামে ছড়িয়ে যায়, লোকমানের বউকে নিয়ে ফজলু মাস্টার পালিয়েছে। সারা গ্রাম ছি-ছি করে। লোকমানকে দেখলে মানুষজন আফসোস করে। লোকমান কাতর চোখে তাকায়। কাউকে কিছু বলে না। তার বলার কিছু অবশ্য নেইও।
সাত.
এক সোমবারে লোকমানকে তার ঘরের আড়ার সাথে ঝুলতে দেখে প্রতিবেশীরা। দেহটা নিথর, জিহ্বা বের হয়ে গেছে।
ক’দিন পর, গ্রাম থেকে বহুদূরে শহরের কাছে নদীতে দুটি লাশ পাওয়া যায়। লাশ দুটির মুখ এসিড দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। তবে বুঝা যায় লাশের একজন নারী, অন্যজন পুরুষ। তাদের দুজনের বুকেই ছুরির একাধিক ঘা আছে। সেই লাশের খবর লোকমানদের গ্রামেও এসে পৌঁছে। কেউ কেউ সেই অজ্ঞাত লাশের জন্যে আফসোস করে।
আরও কয়েকবছর পেরিয়ে যায়, তাহমিনা আর ফজলু মাস্টারের খোঁজ মেলে না।