শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২১ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।
  •   রাষ্ট্রীয় পদে আসীন হচ্ছেন খবরে আসামিপক্ষে শুনানি করলেন না সমাজী।

প্রকাশ : ২৮ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০

চাঁদপুরে একই জমিতে তিন ধরনের ফসলের চাষাবাদ

কৃষিকণ্ঠ প্রতিবেদক ॥
চাঁদপুরে একই জমিতে তিন ধরনের ফসলের চাষাবাদ

চাঁদপুরের বিশাল এলাকা জুড়ে একই জমিতে বছরে তিন বা ততোধিক ফসল চাষ করে ব্যাপক সফলতা লাভ করেছে বেশ ক’টি গ্রামের কয়েক শতাধিক কৃষক। এ সকল ফসল চাষের পাশাপাশি একই জমিতে একই সাথে বেশ কয়েক রকমের সাথী ফসল চাষ করছেন তারা। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া এ এলাকার কৃষকরা বেশ ক' বছর ধরে এ পদ্ধতি ব্যবহার করে বছরে লাখ লাখ টাকা আয় করছেন।

চাঁদপুর সদর উপজেলার কুমারডুগী, ঘোষেরহাট, মহামায়া, চাঁদখাঁর দোকান এলাকা, কৃষ্ণপুর, কেতুয়া, আলুমুড়া এলাকার কৃষকগণ এখন এ জাতীয় ফসল উৎপাদনে নিজেদের ব্যস্ত রেখে চলছেন। এ পদ্ধতি অনুকরণ করতে পারেন জেলার অন্য কৃষকগণ।

সম্প্রতি সরজমিনে চাঁদপুর সদর উপজেলার কুমারডুগী মাঠে গেলে দেখা যায়, এ মাঠের কৃষকগণ গোল আলু তুলছে। প্রতিটি জমিতে নারী-পুরুষ আর শিশুরা বেশ উৎসাহের মধ্য দিয়ে ছোট ছোট টুকরিতে ভরে নির্ধারিত স্থানে আলু স্তূপ করেছে। সে স্তূপের আলু বেশ ক’জন বাছাই করছে কয়েক ভাগে বিভক্ত করে। এর মধ্যে সবচে’ ভালো ফলটা চলে যাবে বীজ আলু হিসেবে কোল্ড স্টোরেজে। বাকিগুলো দরদামের হেরফেরের ভিত্তিতে বাজারে বিক্রি হবে। যেসব জমিতে গোল আলু তোলা হচ্ছে, সে একই জমিতে আলু তোলার কমপক্ষে ১৫ দিন আগেই লাগানো হয়েছে দুন্দুল, করলা, চিচিঙ্গা কিংবা বরবটি। আলু তোলার সাথে সাথে পরবর্তী ফসলের জন্যে তৈরি করা হচ্ছে মাচা। এ মাচায় করলা, চিচিঙ্গা গাছ বেড়ে উঠবে। ২ থেকে আড়াই মাসের মধ্যে ফলন আসবে। ফলন তোলা হবে জ্যেষ্ঠ মাস পর্যন্ত। জ্যেষ্ঠ মাসের শেষের দিকে জমিতে বর্ষার পানি আসলে ধান, পাট কিংবা লাড়কির জন্যে ধইঞ্চা লাগানো হবে। কার্তিক মাসের দিকে ধান কাটা শেষ হলেই আলু রোপণের জন্যে জমি তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়বে এ অঞ্চলের কৃষকরা। আর অগ্রহায়ণ মাসে আলু রোপণের পরে ৯০ দিনের মধ্যে আলু তোলা হবে। এভাবেই এ অঞ্চলের কৃষকগণ বছরের বারো মাস ফসল উৎপাদনে নিজেদের ব্যস্ত রাখেন।

কুমারডুগী এলাকার আরশাদ গাজীর ছেলে বিল্লাল গাজী (৩৫) জানান, আলু উঠানোর প্রায় ১৫ দিন আগে করলা, দুন্দুল, জিঙ্গা লাগানো হয়েছে। বৈশাখ পর্যন্ত এ ফসল উঠানো হবে। এর পরেই ধান লাগানো হবে। স্থানীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত কৃষি কর্মকর্তা পারভিন স্যার মাঝে মধ্যে আসেন, তবে কোনো সহযোগিতা পাওয়া যায় না।

একই এলাকার ওহাব গাজীর ছেলে তাজুল ইসলাম (৪০) জানান, তিনি নিজে ১শ’ ৩২ শতাংশ জমিতে এবার আলু চাষ করেছেন। আলু ওঠানোর পরে ভুট্টা চাষ করবেন। ভুট্টার পরেই ধান দেবেন। কৃষি অফিস থেকে কোনো ধরনের সহযোগিতা পাননি বলে প্রতিবেদককে জানান।

একই মাঠের কৃষক হারুন গাজীর ছেলে খোকন গাজী (৩৫) জানান, আমি এবারে ২ কানি (২শ’ ৪০ শতাংশ) জমিতে আলু চাষ করেছি। এর মধ্যে প্রায় ৮শ’ মণ আলু উৎপাদন হয়েছে। আর সব ব্যয় হিসেব শেষে আয় হবে প্রায় ১ লাখ টাকা।

কৃষ্ণপুর এলাকার ইদ্রিস পাটোয়ারীর ছেলে আক্তার পাটোয়ারী বলেন, দুন্দুল ও করলা রোপণের ২ মাসের মধ্যে ফলন আসবে। আবার আমরা অনেক সময় এ জমিতে শুধু করলা কিংবা দুন্দুল চাষ করি। অনেক সময় এক জমিতে একই সাথে সাথী ফসল হিসেবে ২ থেকে ৩ রকমের ফসল উৎপাদন করে থাকি। কৃষি কর্মকর্তা থেকে কোনো সহযোগিতা পান নি বলে সরাসরি জানিয়ে দেন এ কৃষক।

কৃষ্ণপুর মাঠের জমি চাষ করেন এমন একজন কৃষক জিন্নাত আলীর ছেলে ইসমাইল। ৪২ শতাংশ জমিতে আলু চাষ করেছেন। আলু ওঠানোর আগেই করলা লাগিয়েছেন। করলা গাছের বয়স প্রায় ২৫ দিন হতে চলছে। রোপণের ৬০ দিনের মধ্যে ফলন তোলা হবে।

ইসমাইল জানান, কৃষি কর্মকর্তারা বলেছেন, তিনি সপ্তাহে একদিন অফিস করেন। প্রয়োজন হলে তার অফিস শাহমাহমুদপুর ইউপি কার্যালয়ে গিয়ে পরামর্শ আনতাম। এক ফসল জমিতে থাকাবস্থায় আরেক ফসল চাষকে আন্তঃফসল উল্লেখ করে স্থানীয় উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোবারক হোসেন বলেন, বিভিন্ন এলাকায় এ জাতীয় ফসল উৎপাদন হয়ে থাকে।

কৃষকদের অভিযোগের বিষয়ে মুঠোফোনে এ কর্মকর্তা বলেন, এদের অভিযোগ সত্য নয়। চাঁদপুর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষকদের অভিযোগের বিষয়ে জানান, শত শত কৃষকের মন রক্ষা করা তো আমাদের সম্ভব নয়। আমাদেরকে সরকার যে সকল প্রকল্প দেয় তার একটা সীমাবদ্ধতা আছে। সরকার থেকে কিছু পায়নি কৃষকগণের এ অভিযোগের প্রশ্নে এ কর্মকর্তা বলেন, আমরা শুধু রোগ বালাইয়ের বিষয়ে কৃষকদেরকে পরামর্শ দিয়ে থাকি।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়