প্রকাশ : ৩০ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০
ভাদ্র মাসের রোদ তাল পাকার কথা মনে করিয়ে দেয়। তবে এ বছর ভাদ্রের শুরু থেকে এ পর্যন্ত বৃষ্টিই হয়েছে। যার কারণে রোদ্রের তাপের খুব একটা প্রভাব প্রভাব পড়েনি। তবে বাজারে যে সকল তাল ফল পাওয়া যায় তার অধিকাংশই বাপ-দাদার রোপণ করা তাল গাছের ফল। নতুন প্রজন্মের রোপণ করা তালগাছে ফল এখনো আসেনি। এভাবেই কথাগুলো জানালেন তাল বিক্রেতা রফিক মিয়া।
ভাদ্র মাস এলেই মনে পড়ে তালের কথা। আর তালের কথা মনে হলে অজান্তেই তাল পিঠা খাওয়ার জন্যে মন আকুলি-বিকুলি করে ওঠে। অসাধারণ এই তাল পিঠা। বারমাসে তেরো পার্বণের বাংলাদেশে সব সময়ই পাওয়া যায় বিভিন্ন ফল। ভাদ্রমাসের ফল তাল একটি সুস্বাদু ও লোভনীয় ফল। কথায় বলে ভাদ্র মাসে তাল পাকা গরম পড়ে। আর পাকা তালের মৌ মৌ গন্ধে ভরে যায় চারিদিক।
‘ভাদ্র মাসের তাল না খেলে কালে ছাড়ে না বলে’ বাঙালি সমাজে প্রবাদও রয়েছে। তবে বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে এখন ভাদ্র মাসের পূর্বেই বাজারে পাকা তাল উঠতে দেখা যায়। এ বছর শ্রাবণের প্রথম দিক থেকেই বাজারে পাকা তাল উঠতে শুরু করেছে। বাংলাদেশে তালের প্রাচুর্য ও জনপ্রিয়তার কারণে বাঙালির শিল্প-সাহিত্যে তাল ও তালগাছের ওপর রচিত হয়েছে অনেক গল্পকথা, কল্পকথা, গান, কবিতা, প্রবাদ, প্রবচনসহ বিভিন্ন রচনাবলি।
তারপর তালগাছে বাসা বেঁধে থাকা বাবুই পাখি আর বানর নিয়ে ইশপের সেই যে মজার গল্প। মনে পড়লেই তো ফিক করে হাসি চলে আসে। তালগাছ নিয়ে কত শত যে কিচ্ছা-কাহিনি, কিন্তু তাল নিয়ে সত্যিকারের তথ্যগুলো কি আমরা জানি?
তালগাছ কিন্তু দীর্ঘজীবী। পৃথিবীর বহু দেশে তালগাছ আছে। এই গাছ কমবেশি ১০০ বছর বাঁচে। আর এই দীর্ঘজীবনের প্রায় পুরোটা সময়ই ফল দেয়। তাল যখন কাঁচা থাকে, তখনো খাওয়া যায়, তখন বাজারে পানি-তাল হিসেবেই বিকোয়। যখন পাকে, ঘনকালো রং ধারণ করে; স্বাদও পাল্টে যায় সম্পূর্ণ। তালের নির্যাস চুলায় জ্বাল দিয়ে নিয়ে ঘন করে খেতে হয়। আবার না জ্বালিয়েও খাওয়া যাবে। এই তালের রস থেকেই স্বাদের সব পিঠাপুলি তৈরি হয়।
পাকা তাল খুব অল্প সময়ের জন্যে পাওয়া যায়। এর প্রস্তুত প্রণালী একটু কঠিন। তবুও স্বাদের তুলনায় কষ্ট কিছুই না। আসুন জেনে নেই কেমন করে তাল বড়া তৈরি করা যায়--
তাল বড়া তৈরির প্রণালী
প্রথমে সুঘ্রাণ যুক্ত পাকা তাল সংগ্রহ করুন। খোসা ছাড়িয়ে তালের আঁটি আলাদা করে নিন। একটা তালের দুই থেকে তিনটি আঁটি থাকে, এগুলোকে নিয়ে হাত দিয়ে কচলাতে থাকুন। মাঝে মাঝে সামান্য পানি ঢালুন। এইভাবে একটি একটি করে তালের আঁটি হাত দিয়ে ভালো করে কচলিয়ে তরল তাল আলাদা করুন। রসগুলো পাতলা সুতি কাপড় দিয়ে ছেঁকে ফেলুন। তবে পানি খুব বেশি দিলে তাল পাতলা হয়ে যাবে, তাই পানি অল্প করে দেবেন, যাতে কেবল তালের ঘন গোলা বের হয়।
উপকরণ
১) তরল তাল
২) চালের গুঁড়া
৩) চিনি
৪) কোরানো নারকেল বা দুধ
৫) এক চিমটি লবণ
সকল উপকরণ পরিমিত পরিমাণে একটি পাত্রে ভালো করে মিশিয়ে নিন। প্রয়োজনে চেখে দেখে নিন সব ঠিক আছে কি না। এরপর মিশ্রণ থেকে হাত বা চামচ দিয়ে গোলাকার করে নিয়ে গরম ডুবো তেলে ছেড়ে দিন। মাঝারি আঁচে বাদামী করে এপিঠ-ওপিঠ ভেজে নিলেই তৈরি হয়ে যাবে মজাদার ঐতিহ্যবাহী তালের পিঠা।